পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ডায়েট প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে সামনে দশকগুলোতে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষকে খাওয়ানো যাবে। গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব খাবারে প্লেট ভরিয়ে রাখি, সেখানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। এর জন্য ‘দ্য প্লানেটারি হেলথ ডায়েট’ অর্থাৎ পৃথিবী সুরক্ষায় স্বাস্থ্যকর ডায়েট নামে একটি উপায় বের করা হয়েছে।
এই ডায়েটটি তৈরি করা হয়েছে গোশত এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ না দিয়েই। তবে প্রোটিন চাহিদার একটা বড় অংশ মেটাতে সেখানে বাদাম, বিভিন্ন ধরনের ডাল আর বীজ যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হল ডায়েট থেকে গোশতের পরিমাণ কমিয়ে বিকল্প প্রোটিনের উৎস্য খোঁজা। যেসব পুষ্টিকর খাবার আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ জন্মানোর ওপরও তারা জোর দেন।
খাদ্যাভ্যাসে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে : আপনি যদি প্রতিদিন গোশত খেয়ে থাকেন তাহলে ডায়েটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। তার মানে এই নয় যে, আর গোশতই খাবেন না। গোশত খাবেন, তবে পরিমিত হারে। যেমন রেড মিটের বার্গার সপ্তাহে একদিন। বড় আকারের স্টেক মাসে একবারের বেশি নয়। এছাড়া সপ্তাহের অন্য আরেকদিন মাছ বা মুরগির গোশত দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন।
আর বাকি দিনগুলোতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে হবে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন বাদাম, বীজ বা ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া নানা ধরনের ফল এবং সবজি খাওয়া বাড়ানোর কথাও জানান তারা। যেন সেটা প্রতিবেলার খাবার প্লেটের অন্তত অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকে। শ্বেতসারযুক্ত খাবার যেমন আলু বা কাসাভাও ডায়েটেযুক্ত করা যেতে পারে।
ডায়েটের পূর্ণ তালিকা : আপনি প্রতিদিন কোন কোন খাবার কী পরিমাণে খেতে পারবেন সেটা জেনে নিন। বাদাম দিনে ৫০ গ্রাম। সিমের বিচি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল দিনে ৭৫ গ্রাম। মাছ দিনে ২৮ গ্রাম। ডিম সপ্তাহে একটি অথবা দুটির বেশি নয়। লাল গোশত দিনে ১৪ গ্রাম। মুরগীর গোশত দিনে ২৯ গ্রাম। রুটি এবং চাল দিনে ২৩২ গ্রাম। আলুর মতো অন্যান্য শ্বেতসার সবজি দিনে ৫০ গ্রাম। দুগ্ধজাত খাবার দিনে ২৫০ গ্রাম। শাকসবজি দিনে ৩০০ গ্রাম এবং ফল ২০০ গ্রাম। এছাড়া এই ডায়েটে চাইলে ৩১ গ্রাম চিনি এবং ৫০ গ্রাম তেল যেমন জলপাই তেল যোগ করা যাবে।
এগুলোর স্বাদ কি অনেক খারাপ হবে : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলেছেন, না এসব খাবার মানেই যে স্বাদ ভাল নয়, এমনটা ভাবা ঠিক না। তিনি নিজেও এক সময় তিন বেলা লাল গোশত খেতেন। অথচ এখন তিনি নিজেকে এই স্বাস্থ্যকর ডায়েটের আওতায় নিয়ে এসেছেন। উইলেট বলেন ‘খাবারের প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে। আপনি হাজারো উপায়ে একটার সঙ্গে আরেকটা মিশিয়ে ওই খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন। আমরা কাউকে স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে এই ডায়েট প্রস্তুত করিনি। বরং এমন কিছু তৈরির চেষ্টা করেছি যেটা খাওয়া সহজ এবং উপভোগ্য’।
খাদ্যাভ্যাস কেন প্রয়োজন : ইট-ল্যান্সেট কমিশনের অংশ হিসাবে বিশ্বের প্রায় ৩৭ জন বিজ্ঞানীর একটি দলকে একত্রিত করা হয়। সেখানে কৃষি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন সেইসঙ্গে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। টানা দুই বছর গবেষণার পর তারা এই ডায়েট তালিকা তৈরি করেছেন, যেটা পরবর্তীতে ল্যানসেটে প্রকাশ করা হয়। এখন তাদের লক্ষ্য বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ডাব্লিউএইচও’র মতো সংস্থাগুলোর কাছে এই গবেষণা ফলাফল পাঠানো। যেন সব জায়গায় এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা যায়। ২০১১ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৭০০ কোটি। বর্তমানে এই সংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সালে সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে। বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে তারা এই গবেষণাটি করেন।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কি জীবন বাঁচাবে : গবেষকরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারে উন্নত দেশের মানুষ মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
ডায়েট কি পৃথিবীকে রক্ষায় সাহায্য করবে : গবেষকদের লক্ষ্য হল সামনের দশকগুলোয় বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যার সবার খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা সেটা পরিবেশের ক্ষতি না করেই। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো যাবে। জৈববৈচিত্রের যেসব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেগুলো রক্ষা করা যাবে। কৃষিজমি আর বাড়াতে হবে না এবং পানি সংরক্ষণ করা যাবে। শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে খাদ্যের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যরে হার কমিয়ে আনা, সেইসঙ্গে বিদ্যমান জমিতে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন কতটা বাস্তবসম্মত : এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় লাল গোশত খাওয়ার হার ব্যাপকভাবে কমাতে হবে। পূর্ব এশিয়াকে মাছের উপর নির্ভরতা এবং আফ্রিকায় শ্বেতসার সবজির খাওয়ার পরিমাণ কমানো প্রয়োজন।
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টকহোম রেসিলিয়েন্স সেন্টারের পরিচালক লাইন গর্ডন বলেন, ‘আগে কখনোই এই হারে এবং এই গতিতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়নি’। লাল গোশতের উপর কর বাড়ানো ডায়েটে পরিবর্তন আনার একটা উপায় হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।