পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর নাচে গানে উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত হল আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ও ‘জয় বাংলা জিতলো আমার নৌকা’ গানে পুরো সমাবেশ ছিল মুখরিত। টানা তিনবার আওয়ামী লীগের জয়ের পর ঐতিহাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছে। এ বিজয় আপামর জনতার বিজয়। এই সরকার জনগণের সরকার।
তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের রায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে। সরকার, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী সবাই মিলে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে। মাদক আর সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে বিজয় অর্জন করা যতটা কঠিন। রক্ষা করা আরও কঠিন। দায়িত্ব যখন নিয়েছি, সরকার গঠন করেছি। দেশের প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সবার সেবা করবে সরকার। যারা ভোট দিয়েছেন অথবা দেন নাই তাদের সবার জন্যই কাজ করবে সরকার। যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে; জনগণের সে মর্যাদা আমি রক্ষা করব। প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে হলেও ভোটের মর্যাদা রক্ষা করব। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
গতকাল বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের ১৯ দিন পর বিজয় উৎসব পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী ‘বিজয় উৎসবের’ মঞ্চে উঠেন ৩টা ৫ মিনিটে। শেখ হাসিনা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ঘটনার সাক্ষী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন শেখ হাসিনা; ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য দেন। তিনি প্রথমেই ৩০ লাখ শহীদ, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানান।
দুপুর আড়াইটার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিজয় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই হাতি-ঘোড়া, ঢাক-ঢোল, ব্যান্ড দল, ছোট বড় নৌকা ও নানা সাঝ সজ্জার মাধ্যমে সমাবেশে আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টায় আগেই পুরো এলাকা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলালীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। যুবলীগ নেতাকর্মীরা লাল-সবুজ টি-শার্ট পরিধান করে বিশাল শো-ডাউন করে যা দেখার মতো। রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকেও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চটি সাজানো হয়েছে দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে।
দুপুর ১২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন মমতাজ বেগম, ফাহমিদা নবী, সালমা ও জলের গান ব্যান্ড। গানে গানে সরকারের নানা উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর জয়গানের কথা ফুটে উঠে। সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ ‘শুকরিয়ারে শুকরিয়া, কোটি কোটি শুকরিয়া/ বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া’ গানটি উপস্থাপন করেন। মাঝে মাঝে হয়েছে কবিতা পাঠ। কবি রাসেল আশেকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবেদিত করে ‘আপনার জন্ম একটি নতুন সময়ের ইঙ্গিত’ কবিতা পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী আসন গ্রহণের পরেই সরোয়ার এবং জিএম আশরাফের গাওয়া এবারের নির্বাচনি থিম সংগীত ‘জয়বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’, শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন এবং ‘জয় বাংলা জিতলো আমার নৌকা’ গানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো অনুষ্ঠান স্থল।
বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশ শুরু হলে প্রথম বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। পরে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, মো. নাসিম। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তেব্যের আগে তাকে উদ্দেশ্যে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অভিনন্দনপত্র তুলে দেন তিনি।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বিজয় অর্জন করে এই নির্বাচনে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। যারা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সব রাজনৈতিক দল, সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই এই কারণে যে, তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছেন।
সমাবেশে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আমি মা-বোন, নারীদের, তরুণ প্রজন্মকে, এদেশের কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-তাঁতীসহ সর্বোস্তরের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই; যারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, যারা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনসহ তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে। আমরা এই দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বিজয় রক্ষা করে জনগণের সেবা করার দায়িত্ব পালন করা বিজয় অর্জন করার চেয়েও কঠিন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার রায় এটি। তাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা জনপ্রতিনিধিদের মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। জনগণ এই ভোট দিয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সরকার, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী সবাই মিলে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে। মাদক আর সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি কী পেলাম না পেলাম তার চেয়ে আমি কী দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। দেশের জনগণ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলব। এ সময় কবি সুকান্তের ভাষায়-এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এ বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। ওয়াদা করছি, দুর্নীতি, জঙ্গি, মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ জাতিকে উপহার দেব। আমি সব শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। আমার গ্রাম হবে আমার শহর। গ্রামে শহরের সব সুযোগ সুবিধা থাকবে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের উন্নত জীবন গড়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মোহাস্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার ও যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
যুবলীগের দৃষ্টিনন্দন শোডাউন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা হ্যাট্টিক বিজয়ে ‘বিজয় সমাবেশ’ কে দৃষ্টি নন্দন করে তুলে যুবলীগ। যুবলীগের দক্ষিণের লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে নৌকার ঢেউ তুলে ব্যাপক শোডাউন করে। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা, সবুজ গেঞ্জি, ক্যাপ ও লাল ফিতা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে সমাবেশে।
এদিকে যুবলীগের নিজস্ব গবেষণা ও প্রকাশনা সেল ‘যুব জাগরণ’ দুটি স্টল করে জনসভাস্থলের পাশে। এ দুটি স্টলে প্রায় ৪ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। জনসভার মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল নৌকার আদলে। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নির্দেশে এর নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে।
দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট প্রায় ৮০ হাজার ক্যাপ এবং ৩৫ হাজার গেঞ্জি বিতরণ করেন। সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুবলীগের দক্ষিণের নেতারা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে পতাকা নেড়ে, কখনো করতালি, হাতের কসরত (কদমফুল বানানো) এবং দিয়ে জনসভাকে মাতিয়ে রাখেন।
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, যুবলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। তার কন্যা রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। বিশাল বিজয়ে বিজয় সমাবেশকে দৃষ্টিনন্দন করতে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থিত থেকে জনসভাকে সফল করেছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে যুবলীগ মাঠে ছিল। আগামীতেও রাজপথে থেকে রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার উন্নয়নে এগিয়ে নিতে জনমত সৃষ্টি করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।