পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে ‘জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত’ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। প্রতিবাদী গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি ছুঁড়েছে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধীরাও গুলি ছুঁড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চার গ্রামবাসী কার গুলিতে নিহত হয়েছে সেটা স্পষ্ট হয়নি। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মমিনুর রশিদের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি সোমবার জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের কাছে পাঁচ পৃষ্ঠার যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে উঠে এসেছে এসব পর্যবেক্ষণ।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্থানীয় জনগণকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘পজিটিভ’ দিকগুলো জানানো হয়নি। এর মধ্যদিয়ে তাদের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করার পর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন।
মেজবাহ উদ্দ্নি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে জনগণকে সুফল কুফল বিশদভাবে বোঝানো হয়নি। এই সুযোগে একটি মহল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে না হয় সে চেষ্টা করেছে এবং বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য জনগণের মাঝে প্রচার করেছে। যার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী একটি পক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে ধারণা হয়েছে কায়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সেখানে পরিবেশ বিপর্যয় হবে, মানুষ সেখানে বসবাস করতে পারবে না।
এর কারণে পক্ষে বিপক্ষে দুইটি গ্রুপ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয় ঘটনার দিন দুইটি পক্ষ সমাবেশ ডাকে। স্থানীয় মাঠে দুইপক্ষ একসাথে সমাবেশ আহ্বান করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা জারি করার পরও মানুষ শান্ত হয়নি। যারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী তারা মারমুখী হয়ে উঠে এবং হাজার হাজার লোক পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘিরে ধরে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি ৩০ জন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল এবং তাদের ফিরে আসা কঠিন হওয়ায় পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি ছুঁড়ে। গুলি না করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিরাপদে ওই এলাকায় ছেড়ে আসতে পারতো না।
সংঘর্ষে পুলিশের সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধীরাও গুলি ছুঁড়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলেও কোন পক্ষের গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে বার বার বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর নাম উঠে এসেছে। স্থানীয় জনগণকে ও উপজেলা প্রশাসনকে এই প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
তদন্ত কমিটির প্রধান মমিনুর রশিদ বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা ছিল না বলে তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতিবেদনে জনগণের ‘বিভ্রান্তি দূর করতে’ উদ্যোগ নেওয়ার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তদন্তে বলা হয়, বাঁশখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ‘বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণকে ভুল বুঝিয়েছিল। এর মধ্যদিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হয় বলে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এ তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী সুপার (সদর) তরিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পিপি মনোরঞ্জন দাশ।
চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় গন্ডামারার বড়ঘোনায় ৬০০ একর জমিতে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলম। এপ্রিলের শুরুতে স্থানীয় বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে বসতভিটা রক্ষা কমিটির ব্যানারে স্থানীয়দের একটি অংশ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, এস আলম গ্রুপ পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে।
স্থানীয়দের অন্য একটি অংশ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান নিলে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যে গত ৪ এপ্রিল বিকালে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। ওই ঘটনার পর বাঁশখালীতে তিনটি মামলা হয়, যাতে আসামি করা হয় ছয় হাজার মানুষকে। পরের প্রায় দুই সপ্তাহ উত্তেজনা চলার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে।
গন্ডামারা ইউনিয়নবাসী বলছেন, ভিটে ও পেশা হারানোর শঙ্কা থেকেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন তারা। অন্যদিকে, এস আলম গ্রুপ ও প্রশাসন পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের ক্ষতি না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।