Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডজন মামলায় সহস্রাধিক আসামি : গ্রেফতার ৪৪

সাভারে আট শতাধিক গার্মেন্টস কর্মী ছাঁটাই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মজুরি সমন্বয়ের দাবিতে টানা আট দিনের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শেষে কাজে যোগ দিয়েছে সাভারের আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। তবে আন্দোলনের কারণে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। বিক্ষোভের ঘটনায় আশুলিয়া এলাকার অন্তত ছয় কারখানায় ছাঁটাই করা হয়েছে তিন শতাধিক কর্মী। শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে এ সংখ্যা ৮ শতাধিক। কারখানা ফটকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন কারখানার পক্ষ থেকে অন্তত ১২টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ৪৪ জন।
জানা যায়, টানা আট দিনের শ্রমিক অসন্তোষের পর গত মঙ্গলবার থেকে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় ঝুলছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নোটিস। স্থানীয়রা জানান, আশুলিয়ার বুড়ির বাজার, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার লি., এফজিএস ডেনিম ওয়্যার লি. ও লিলি ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের ছবি সংবলিত ছাঁটাইয়ের তালিকা কারখানার মূল ফটকে ঝুলতে দেখা গেছে। এসব তালিকায় তিন শতাধিক শ্রমিকের নাম থাকলেও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত প্রায় আট শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এ সময় প্রায় ১০টি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিস ঝুলতে দেখা গেছে। টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয় না। তাই শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে থাকেন। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যারা নাশকতাকারী এবং ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন ছাঁটাইয়ের শিকার না হয়, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখা উচিত।
জানা গেছে, কারখানায় ভাঙচুরসহ মারপিট করে ক্ষতিসাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ১০ জানুয়ারি ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুস সালাম। ১১ জানুয়ারি এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আজিজ বাদী হয়ে ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আড়াইশজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এদিন একই অভিযোগে নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার প্রধান ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ১২ জানুয়ারি অরবিট অ্যাপারেলস লিমিটেডের শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। একই দিন মাহমুদ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহ আলম বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এছাড়া ১৩ জানুয়ারি হা-মীম গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন।
এছাড়া সাভার মডেল থানায় দায়ের করা দুটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি ২৪ শ্রমিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫০) করেছেন জেকে গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারিক হাসান। একই অভিযোগে সাভারের হরিণধরা এলাকার ডার্ড গ্রুপের দীপ্ত অ্যাপারেলসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা একটি মামলা (৬৯) দায়ের করেছেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান জানান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল শ্রমিক আন্দোলনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গার্মেন্টশিল্পকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। তারা এসব আন্দোলনে ইন্ধন দিয়ে এটিকে আরও বড় ও ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে তাদের শনাক্ত করেছি এবং অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
তবে সাধারণ ও নিরীহ শ্রমিকরা কোনো হয়রানির শিকার হবেন না বলে নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার বলেন, দোষী ও অপরাধীদেরই শুধু আইনের আওতায় আনা হবে। তাই সাধারণ শ্রমিকদের ভীতির কোনো কারণ নেই। যারা কাজ করতে চান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেবেন। গত বুধবার বিকালে আশুলিয়ার জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি এসব কথা বলেন।
পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে শ্রমিকদের গ্রেফতার, গুম, মামলা, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এ সময় গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) দফতর সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের মুক্তিরও দাবি জানানো হয়। এ সময় মানববন্ধনে জয়নাল আবদিনের মা ও বোনসহ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে জয়নাল আবেদীনের মা জোবেদা বেগম বলেন, জয়নাল আবেদীন তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায্য আন্দোলন করেছে। তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে তার মুক্তি দিন। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, জয়নাল আবেদীনকে সাদা পোশাক পরা পুলিশ তার বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত জয়নাল আবদীনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা তার সন্ধান ও তার মুক্তি চাই। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত শ্রমিকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। অনতিবিলম্বে এই গ্রেফতার নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, তা না হলে গার্মেন্ট শিল্পে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা থামবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শতাধিক গার্মেন্টস কর্মী ছাঁটাই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ