পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ভারত থেকে ফেনসিডিল আসা কমেছে। বিকল্প হিসেবে ফেনসিডিলসেবীরা ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে ইয়াবার ব্যবহার। বাড়ছে ব্যবসার প্রসারও। সরকারি হিসাবে, দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবায় আসক্তরাই একসময় ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনীতিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যসহ সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এই ব্যবসায় জড়িত হওয়ায় দেশে ইয়াবার ব্যবহার বাড়ছে দ্রুততার সাথে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, টেকনাফের একজন এমপির ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা দেশের সবাই জানে। এর বাইরে পত্রিকা ও মিডিয়ার খবরে সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় নজির তৈরি হয়েছে। এরপর তো আর বলা যাবে না যে তারা জড়িত ছিল না। তিনি বলেন, ইয়াবার বিস্তার এতোটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে, পরিবার থেকে শুরু করে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এর ভয়াবহতা কমানো সম্ভব নয়। এটাকে আইন দিয়ে আর বন্ধ করা যাবে না।
জানা গেছে, ভারত থেকে ফেনসিডিল আর আগের মতো আসছে না। ভারত সরকার সে দেশে ফেনসিডিলকে নিষিদ্ধ করেছে। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ফেনসিডিল তৈরী, উৎপাদন, ব্যবহার, বিক্রি ও সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে বৈধ কোম্পানীগুলো ফেনসিডিল তৈরী বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বেশ কিছু কোম্পানী অবৈধ পন্থায় ফেনসিডিল তৈরী ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। সেইসব কোম্পানীর ফেনসিডিল সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এখনও ফেনসিডিল আসছে তবে আগের মতো নয়। এখন যারা তৈরী করছে তারা নেশার জন্যই তৈরী করছে। ওই কর্মকর্তা জানান, কিছুটা দুস্প্রাপ্য হওয়ায় ফেনসিডিলের দাম আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এজন্য ফেনসিডিলসেবীরা ইয়াবার দিকে ঝুঁকেছে। দিন দিন বাড়ছে এর ব্যবহার ও ব্যবসার প্রসার।
মাদকসেবীদের মতে, সারাদেশেই সহজলভ্য মাদক হলো ইয়াবা। ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জেলা, উপজেলা, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও হাত বাড়ালেই ইয়াবা পাওয়া যায়। ইয়াবার প্রতি মাদকাসক্তদের বেশি ঝুঁকে পড়ার এটাও একটা অন্যতম প্রধান কারণ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, দেশে যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ে, তার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল এই ৫ বছরে দেশে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৮১ গুণ। ইয়াবা উদ্ধারের পরিসংখ্যানে এর সত্যতা মেলে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৮১ গুণ বেশি ইয়াবা ধরা পড়েছে। আটকের সংখ্যা থেকে হিসেব কষে এই তথ্য বের করেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১০ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭১৬টি, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮, ২০১৪ সালে ৬৫ লাখ, ১২ হাজার ৮৬৯ এবং ২০১৫ সালে ২ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫টি। তবে উদ্ধারের এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার অনেক ফারাক। খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই মনে করেন, এর চেয়ে বহুগুণ বেশি ইয়াবা বেচাকেনা ও ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইয়াবা একমাত্র মরণ নেশা যা সেবনকারীকে একদিন ব্যবসায়ী বানিয়ে ফেলে। পারিবারিকভাবেও ব্যবসায়ী তৈরী হচ্ছে। কারণ এটি আকারে ছোট বলে বেচাকেনায় ঝুঁকি কম। আবার ক্ষুদ্র জিনিস হলেও বিক্রিতে লাভ হয় কয়েকগুণ। শুধু নেশা কাজে নয় ইয়াবা এখন নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর জন্য ইয়াবাকে ব্যবহার করছে একশ্রেণির অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানীতে এমন কোনো থানা এলাকা পাওয়া যাবে না যেখানে ইয়াবা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়নি। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ইয়াবাকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো এবং মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করার নেপথ্যে কাজ করে পুলিশের সোর্সরা। তারাই হাতে করে ইয়াবা নিয়ে মানুষের পকেটে অথবা ঘরের কোনো স্থানে রেখে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দেয়। রাজধানীর শ্যামপুর, মিরপুর, কদমতলী, ডেমরা, মোহাম্মদপুর থানায় এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ইদানীং পুলিশের চেকপোস্টেও সোর্সরা নিরীহ মানুষের পকেটে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। উপায়ান্ত না দেখে ভুক্তভোগীরা পুলিশের দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা উদ্ধারের পর যে সব মামলা করা হয় সেগুলো দীর্ঘসূত্রতায় দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। ইয়াবার বিস্তারের নেপথ্যে এটাও একটা কারণ। র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সাড়ে চার হাজার, ২০১৫ সালে সাড়ে ছয় এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শুধু র্যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও আছে। কিন্তু এসব গ্রেফতারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার খুব একটা অগ্রগতি হয় নি। বরং সেগুলো ঝুলে আছে। বড় বড় চালান উদ্ধারের মামলার আসামীও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার পুরনো ব্যবসা নেমে পড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ইয়াবা চোরাচালানি, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি মামলা হয়। কিন্তু বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় এসব মামলার বেশিরভাগ ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।