Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণের রাজনীতিতে উন্মোচিত হতে পারে নতুন দিগন্ত

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরিশালের তিন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতার যথাযথ মূল্যায়ন দক্ষিণাঞ্চলে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চায় যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি বিরোধী দলের সাংগঠনিক কর্মকা- সক্রিয় করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
তাদের এ মনোনয়ন দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে পারে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও কোন্দল থেকে বিএনপি’র এসব নেতৃবৃন্দসহ মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরত রাখার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে মহলটি। সম্প্রতি ঘোষিত নতুন কমিটিতে বরিশাল সদর আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ার এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। শিরিন বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভাল করবেন। এক্ষেত্রে তিনি মুজিবুর রহমান সারোয়ারের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
২০১৪সালের বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনকেন্দ্রিক দেশব্যপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার পর থেকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকা-ে যে স্থবিরতা চলছিল, সংগঠনের নেতৃত্বে এসব নতুন মুখ তা থেকে কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে এখনো এ অঞ্চলে অনেক জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোতে নিস্ক্রিয় এবং পদ আগলে থাকা নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সংগঠনটি। পটুয়াখালী ও ঝালকাঠীসহ কোন কোন জেলা কমিটির শীর্ষে থাকা অনেক নেতা মাসের পর মাস ঢাকায় থেকে এলাকায় সংগঠন ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দলের সর্বনাশ করেছেন। অনেকে পুলিশ ও সরকারী মহাজোটের সাথে তোষামোদ করে এলাকায় বিরোধীদলীয় রাজনীতি করতে গিয়েও নিজের মত দলের রাজনৈতিক চরিত্রকেও বিসর্জন দিয়েছেন। এসব নেতৃবৃন্দ মাসের পর মাস এলাকায় আসেন না। কর্মীদের সাথেও দূরত্ব বেড়েছে অনেক। শুধু কিছু গণমাধ্যম কর্মীকে ম্যানেজ করে মনগড়া কিছু খবর প্রচারেই তাদের ‘বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক তৎপড়তা’ সীমাবদ্ধ।
তবে সম্প্রতি দলটির কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন আশায় ভাল কিছু আশা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীগণ। মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান সারোয়ার ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৮২সালে এরশাদের সামরিক শাসনামলে তাকে গ্রেফতার করে ব্যাপক নির্যাতন চালান হলেও তিনি দল ছাড়েননি। আর ১৯৯১-এর নির্বাচনে দল ক্ষমতায় আসার পরে বরিশাল সদর আসনের এমপি আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রথমে স্পীকার ও পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অনেকটাই কম বয়সে মূল সংগঠনের হয়ে ’৯১-এর ডিসেম্বরে বরিশাল সদর আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন সারোয়ার। এরপর থেকে কোন নির্বাচনে তার পরাজয় ঘটেনি। ১৯৯৬ ও ২০০১-এর নির্বাচনে সারোয়ারের বিজয়ে ভোটের ব্যবধান ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। ২০০৩সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন দলীয় বিদ্রোহী ও আওয়ামী লীগসহ সম্মিলিত বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করে।
সিটি মেয়রের দায়িত্বে থাকাবস্থায় ১/১১-এর পরিবর্তনের পরে আবারো গ্রেফতার হতে হয় সারোয়ারকে। এসময় তাকে টানা দশ দিন রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালায় সেসময়ে সেনা সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন এজেন্সী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। টানা প্রায় দেড় বছর কারাবাশের পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে সারোয়ার আবারা বরিশাল সদর আসনে ১৪দলীয় জোটের মনোনয়ন লাভ করেন। তৎকালীন সরকারের নেপথ্য চালিকা শক্তির সব অপতৎপারতার পরেও সারেয়ার বরিশাল সদর আসন থেকে জনগনের ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এর পর থেকে দল আর কোন সাধারন নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সারোয়রও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি। এমনকি ২০১৪-এর বিতর্কিত নির্বাচন বিরোধী আন্দোলনেও তিনি বরিশালের রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থেকে দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচী সমুহ বাস্তবায়ন করেছেন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে ছাত্র জীবনে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। সে থেকে বরিশালে যুবদল ও বিএনপির রাজনীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০১-এর সাধারন নির্বাচনে তিনি বরিশাল-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্র্বাচন করেছেন। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির রাশেদ খান মেনন ও আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর মত প্রার্থীদের বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি হন আলাল। এমনকি একজনের জামানতও তখন বাতিল হয়। এর পর থেকে আলাল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সম্পৃক্ত হন। প্রথমে জাতীয়তাবাদী যুব দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। মূল দলেরও যুব বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১/১১ সরকার গঠন থেকে বিগত ও বর্তমান মহাজেট সরকারের শাষনামলে আলালের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। ২০০৭ থেকে গত আট বছরে আলালের করাবাসের সময়কালও দু’বছরের অধিক বলে জানা গেছে। এবারের কমিটিতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব লাভকে ‘আলাল-এর প্রতি যথাযথ মূল্যায়ন’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
বিলকিস জাহান শিরিনও ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপি’র রাজনীতির প্রতি সম্পৃক্ত হন। বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ-বাকসু’র নির্বাচিত এজিএস ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভ’মিকা ছিল শিরিনের। পরবর্তীতে বরিশালে বিএনপি’র সব ধরনের আন্দোলনের সাথে শিরিনের সম্পৃক্ততা থাকলেও কেন্দ্রের সাথেও তার নিবিড় যোগাযোগ ছিল। দলীয় চেয়ারপার্সন সারোয়ার ও আলালের মত শিরিনকেও যেকোন আন্দোলন সংগামে মাঠে দেখেছেন। আর এসবেরই যোগ্য মূল্যায়ন হয়েছে এবারের নতুন কমিটিতে। শিরিনকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তবে এখন বরিশালের এসব তরুণ নেতৃত্ব দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কতটুকু অবদান রাখতে সক্ষম হবেন তা দেখার অপেক্ষা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের এবং এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থে কাজ করারও তাগিদ দিয়েছেন মহলটি। নচেত দলীয় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মত রাজনৈতিক সচতেন মানুষের মধ্যেও হতাশা আর ক্ষোভ বাড়তে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণের রাজনীতিতে উন্মোচিত হতে পারে নতুন দিগন্ত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ