পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিবছর বর্ষা এলেই শুরু হয় তোড়জোড়। কিন্তু সেই তোড়জোড়ই সার! পানিবদ্ধতা থেকে একটুকুও নিস্তার নেই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের। বণিক-শিল্পপতিদেরও যেন মুক্তি নেই। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের তল্পিতল্পা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গিয়ে ‘মুক্তি’র উপায় খোঁজেন। আর যারা মাটি কামড়ে এখনও ব্যবসাপাতি নিয়ে পড়ে আছেন তাদের মনে নেই শান্তি। কেননা শুকনো মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যারা যে লাভের মুখ দেখেন বর্ষায় ও তার আগে-পরে পানিতে ভিজে বিপুল পরিমাণের মালামাল নষ্ট হয়ে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হয়। ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে প্রতিবছরই এভাবে ‘লাভের গুড় পিঁপাড়ায় খেয়ে ফেলে’!
অথচ বছরের শুকনো মৌসুমজুড়ে চাক্তাই খাতুনগঞ্জকে পানিবদ্ধতার অভিশাপমুক্ত করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএসহ সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থা ও বিভাগগুলোর যেন কোন গরজ নেই। বর্ষার আগেভাগে চাক্তাই খাল ও বিভিন্ন ছরা, নালা-নর্দমা পুনঃখনন ও সংস্কার, চাক্তাই খালের কর্ণফুলী নদীর মুখ বরাবর ড্রেজিং, খালের মুখে সুইচ গেইট তৈরি, সড়ক রাস্তাঘাট উঁচু করে মেরামত, চাক্তাই খালসহ বিভিন্ন খাল-ছরার মূল জায়গা (আর.এস, পি.এস, বি.এস ম্যাপ ও খতিয়ান অনুযায়ী) অবৈধ দখলকারীদের কঠোর হাতে উচ্ছেদ করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্তারা বরাবরই নির্বিকার।
তাছাড়া শত বছরের পুরনো অবকাঠামোর ওপর কোনোমতে টিকে থাকা চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, আছদগঞ্জের আমূল সংস্কার করে সেখানে আধুনিক যুগোপযোগী ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার দূরদর্শী কোনো পরিকল্পনা সিডিএ’র নেই। এসব দাবি-দাওয়া আর অন্তহীন সমস্যা-সঙ্কটের কথা দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাগণ সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরে আসছেন। কিন্তু শত দেন-দরবারেও আদৌ সাড়া মিলছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটের আওয়ামী লীগের সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরিপ্রেক্ষিতে চাক্তাই খাতুনগঞ্জকে ঘিরে চট্টগ্রামে জনপ্রত্যাশার কথাগুলো আবারও উচ্চারিত হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদগণ বলেছেন, চাক্তাই খালসহ এখানকার পানি নিষ্কাশনের মূল প্রবাহগুলো অবৈধ দখলকারীদের কব্জায় চলে গেছে। তাছাড়া খাল-নালাগুলোর পরিকল্পিত সংস্কার নেই। সংস্কারের নামে যা হচ্ছে তা আইওয়াশ মাত্র। তাছাড়া বর্তমান জরাজীর্ণ অবকাঠামোর সংস্কার এবং চাক্তাই খাতুনগঞ্জের যুগোপযোগী উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে এই বিরাট অঞ্চলজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা আরও গতিশীল হবে। বার্ষিক কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব জোগান দেয়াসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। এখন অনুন্নত ও অবহেলিত পড়ে থাকায় সমস্যাগ্রস্ত খাতুনগঞ্জ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের শিক্ষিতশ্রেণির ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ।
বাংলাদেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বনেদী ‘সওদাগরী পাড়া’। কালক্রমে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। দু’শ বছরের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ধারক সুবিশাল এই ব্যবসায়িক এলাকাটির প্রধান সমস্যা হচ্ছে পানিবদ্ধতা। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, অলিগলি, নালা-নর্দমাসহ অবকাঠামো জরাজীর্ণ ও নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। বিস্তীর্ণ এই সওদাগরী পাড়ার মূল প্রাণপ্রবাহ চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান খাল চাক্তাই খাল। নির্বিচারে দখল, দূষণ ও ভরাটের পরিণতিতে দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রামের বারমাইস্যা দুঃখ ও আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে চাক্তাই খাল ও এর সাথে যুক্ত খাল-ছরা, নালা-নর্দমাগুলো। একসময় চাক্তাই খাল দিয়েই মালামাল বোঝাই নৌকার বহর ভোর থেকে রাত অবধি ছুটে যেতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন গন্তব্যে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে চেপে বসেছে ফি-বছরের পানিবদ্ধতা। গত দুই-তিন বছরের বর্ষা মৌসুমে বর্ষা ও তার আগে-পরে মারাত্মক পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে দফায় দফায়। শত শত দোকান-পাট, গুদাম, আড়ত, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবদ্ধতার ভয়াবহতার তিক্ত অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিয়েছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। কেউ কেউ চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নিদেনপক্ষে একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু রেখে মূল অফিস চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় সরিয়ে নিয়েছেন।
এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে বার্ষিক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব রাষ্ট্রকে জোগান দেয়া হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের নিত্য ও ভোগ্য পণ্যসামগ্রীর হাতবদল হচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিনের অবহেলা ও নির্লিপ্ততা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অপরিকল্পিত, যথেচ্ছ উন্নয়ন যন্ত্রণার কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ অতীত গৌরব ও গুরুত্ব আজ হারাতে বসেছে। গেল বর্ষায় মারাত্মক পানিবদ্ধতায় পড়ে খাতুনগঞ্জ। সামনের বর্ষায় পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু চাক্তাই খাতুনগঞ্জই নয়; কোরবানীগঞ্জ, আছদগঞ্জ, রাজাখালীসহ নগরীর বিস্তীর্ণ প্রধান ব্যবসায়িক এলাকা বর্ষায় এবং তার আগে-পরে ডুবে যায়।
এ অবস্থায় পানিবদ্ধতার সঙ্কট উত্তরণের দাবি দিন দিন জোরালো হয়ে উঠেছে। বন্দরনগরীর দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ঠিকানা চাক্তাই খাতুনগঞ্জকে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থেই উন্নয়ন সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।