পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিবুল হক পার্থ : চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে দেশব্যাপী সহিংসতা লক্ষ করা যায়। ৬ ধাপের এই নির্বাচনে ক্রমেই বাড়ছে সেই সহিংসতা। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৫ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি। অনিয়মে ধারাবাহিকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া ভোটের কাজে নিয়োগ দেওয়া রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহাকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটের সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করা, বিশেষ প্রার্থীকে বেশি সুবিধা দেওয়া, জাল ভোট প্রদান, এজেন্ট বের করে দেওয়া এবং বিজয়ী প্রার্থীর পরিবর্তে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার মতো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে সব পক্ষে সমালোচনা থাকলেও নির্বাচনী পরিবেশে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি বলছে, নির্বাচনে শুধু ভোট নিয়ে অনিয়ম দেখাটা কমিশনের দায়িত্ব। বাকিটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়।
এদিকে নির্বাচনে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন ইসির মাঠ কর্মকর্তারা। এবারে ভোটে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। এদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ফল পাল্টিয়ে পরাজিতকে বিজয়ী করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভোট গ্রহণের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররও নানা অনিয়মের শীর্ষে রয়েছেন। নির্বাচনের দিনই নয় ভোটের আগের রাতেই অনেক স্থানে সিল মেরে বাক্স ভরার কাজ সেরে ফেলেছেন তারা। এসব অভিযোগে এখন পর্যন্ত শতাধিক প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। কারাদ-ও হয়েছে কয়েকজনের। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, অনেক স্থানেই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক, ব্যাংকারসহ সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তসাশিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং অফিসার করা হয়। ভোটকেন্দ্রের রক্ষক বা অভিভাবকের দায়িত্বে থাকেন তারা। তারা ভক্ষক হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আইনেই ভোট চালু ও বন্ধের সব ক্ষমতা রয়েছে প্রিজাইডিং অফিসারের। অথচ প্রিজাইডিং অফিসাররা অনিয়মে কেন্দ্র বন্ধ না করে বরং নিজেরাই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন।
নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ বলেন, ভোট অনিয়মে প্রিজাইডিং অফিসারদের জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। নোংরা মানসিকতাসম্পন্ন ঘৃণিত ব্যক্তিরাই এ ধরনের কাজ করতে পারেন। তবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা অনিয়মে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন। ইতোমধ্যে বেশকয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউপি ভোটের তফসীল হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৬ ধাপের এই ভোটের এরই মধ্যে সহিংসতা অতীতের যেকোন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ভোটের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে পারিবারিক পর্যায়ে। এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে অংশ নেওয়া সবক’টি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন পর্যাবেক্ষক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এমনকি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সবাই ইসির কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীর অভিযোগ পড়েছে অন্তত ৫ হাজার। ইসি সচিবালয়ে অভিযোগের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। প্রতিদিনই পত্রিকায় অনিয়মের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। তবে কোন গরজ নেই ইসির। হয়তো অভিযোগ অস্পষ্ট বলে নতুবা মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েই শেষ করছে তারা। এতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ৩য় ধাপের ভোট থেকেই বহু সম্ভাব্য প্রার্থী ভোটের মাঠ ছেড়ে দিয়েছে। নির্লিপ্ত ইসির কর্মকর্তারাই অনিয়মে জড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু দুয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তার সঠিক পরিপালন হচ্ছে না।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, সেখানে তাদের কাছে অনিয়ম নিয়ে তথ্য প্রতিবেদন আশা করাটাও ঠিক নয়। বরং তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট আদায় করে নেয়া নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
ইসি সূত্র বলছে, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই শতাধিক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের খবর আসে ইসিতে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখানো হয় মাত্র ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এর বাইরেও বেশ কিছু কেন্দ্রে দুপুরের পরে আবার কোথাও এক বা দুই ঘণ্টা বন্ধ রেখে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৮০ ভাগের উপর ভোট পড়েছে। যাকে নজিরবিহীন এবং অসম্ভব বলেছেন খোদ ইসির কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের রিপোর্ট ছাড়া এ পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নজির খুবই কম। ইসির নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায় থেকে সব সময় পরিস্থিতি সন্তোষজনক দেখানো হয়। শনিবারের নির্বাচনেও হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া কোথাও কোনো সহিংসতার তথ্য নেই ইসির কাছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৭০৩টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা অব্যাহত থাকে। শুধু অভিযোগ আসেনি মাঠপর্যায় থেকে। যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হয় ইসি।
বৈঠকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন একজন কমিশনার। গণমাধ্যম ও প্রার্থীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অভিযোগ আসছে তার সিকি পরিমাণ চিত্রও ফুটে ওঠেনি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের রিপোর্টে। এ ব্যাপারে একজন কমিশনার জানান, মাঠপর্যায় থেকে রিপোর্ট না এলে আমাদের কিছু করার নেই। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের উচিত গণমাধ্যমের খবর ও প্রার্থীদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া। কিন্তু তা করছে না ইসি। ফলে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে না তারা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখওয়াত হোসেন বলেন, যেখানে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় শিথিলতা রয়েছে, সেখানে এই ব্যাপারটির আর তেমন কি। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ধরে নিয়েছেন এই কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিবে না। তাই রিপোর্ট পাঠিয়ে লাভ কি? তা ছাড়া কমিশন তো নিজেই বলেছে, তাদের করার কিছু নেই। প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কর্মকর্তাদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে আসলে কমিশনের কোনো মাথাব্যথাই নেই। তা অনেকটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে কোনোমতে সময় পার করছেন।
৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ
সদ্য শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ভোটগ্রহণের সময় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে পাঁচ ভোট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ ও চান্দিনা উপজেলার তিনটি কেন্দ্রের পাঁচজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন।
তিনি জানান, শনিবার চতুর্থ ধাপের ইউপি ভোটে কুমিল্লার তিন উপজেলায় অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউপির যুগিরহাট হোসেনিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার মোবারক হোসেন ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউপির আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনিয়মের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে জন্য বলা হয়েছে।
চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউপির নোয়াগাঁও দাখিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধেও মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।