পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মত গতকাল রাজধানীর মিরপুর, টঙ্গী ও সাভারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় টঙ্গী ও সাভারে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশ ও শ্রমিকসহ অর্ধশত আহত হয়েছে। এরই মধ্যে সাভার ও টঙ্গী এলাকায় শতাধিক গামের্ন্টস বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাভারে বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে বিজিবি টহল দিচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ওই এলাকায় অবস্থান করছেন। যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে সেখানে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের পানি কামানের গাড়ি। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সাভারে গার্মেন্টস শ্রমিক সুমন হত্যাকারীর গ্রেফতার ও শ্রমিকদের দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এ সমাবেশ করেন তারা।
মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ-বিক্ষোভ
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে শেওড়াপাড়ায় আলফা ইউনিট ১ ও ২ লিমিটেডের শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেখানকার কয়েকটি গার্মেন্টস থেকে শ্রমিকরা নেমে রাস্তায় অবস্থায় নেন এবং যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। একইভাবে কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে রাজধানীর কালশীতে সড়ক অবরোধ করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষের আশ্বাস ও পুলিশের অনুরোধে দুপুরে উঠে যান শ্রমিকরা।
মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির বলেন, আমরা মালিকপক্ষকে ডেকে সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নিতে বলেছি। তারেদকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও আন্দোলন যদি করতেই হয় তাহলে কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ভেতরে করতে হবে। জনসাধারণের চলাচলে বাধা, জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তায় বাধা দেয়া যাবে না। পরে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শেওড়াপাড়ায় বিক্ষোভে অংশ নেয়া আলফা ইউনিট-১ লিমিটেডের পোশাক শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান স্যার আমাদের কথা দিয়েছিলেন আমাদের দাবি-দাওয়া মানবেন, কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজের মিল পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।
শ্রমিকদের দাবি ১০ দফা
আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিকরা গতকাল ১০ দফা দাবি দিয়েছেন। দাবিগুলো হলো-তিন গ্রেডের অপারেটরের বেতন ১২ হাজার টাকা করতে হবে, বেসিক ঠিক করতে হবে, ওভারটাইমের হার ঠিক করতে হবে, হাজিরা বোনাস ৬০০ টাকা করতে হবে, টিফিন বিল কমপক্ষে ৪০ টাকা করতে হবে, আয়রনম্যান পদে কর্মরতদের গ্রেড ৩ করতে হবে, ছুটির সব টাকা একসঙ্গে দিতে হবে, দাবি আদায়ের আন্দোলনে অংশ নেয়া কাউকে বরখাস্ত করা যাবে না, ৬ মাস ডিউটির পর মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে এবং পূর্ববর্তী সময়ে দেয়া কথা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গার্মেন্টসের মতো সরকারি হিসেবে বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও তা চালু করতে হবে।
আশুলিয়া শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ২০
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, গতকাল আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং প্রাথমিক চিকিৎসাও নিয়েছে তারা। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাভারে বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে টহল দিচ্ছে বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার জামগড়ার ছয়তলা, বেরন, ও জিরাবো-কাঠগড়া-বিশমাইল সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন জানান, শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় আশুলিয়ার জিরাবো-কাঠগড়া ও জামগড়াসহ বেশ কিছু এলাকার ২০/২৫টি পোশাক কারখানা একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি’র সদস্যদের সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার সামন দিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানায়, সকালে বেরন এলাকার এ.এম ডিজাইন কারখানার শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রেখে কারখানা থেকে সড়কে বেরিয়ে আসেন। এসময় শ্রমিকরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় ওই কারখানার শ্রমিকদের সাথে যোগ দেয় পার্শ্ববর্তী স্টার্লিং অ্যাপারেলস, উইন্ডি গ্রুপ, সেতারা গ্রুপ, ডিজাইনার জিন্সসহ প্রায় ১০/১২টি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দফায় দফায় টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঘটনায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের উপস্থিতিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে সকাল সোয়া ৮টায় থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আশুলিয়ার জিরাবো-কাঠগড়া-বিশমাইল সড়কের পার্শ্ববর্তী অন্তত ১৭টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তায় নেমে ওই সড়কের যানবাহণ চলাচলে বাঁধা দেয় এবং সড়ক অবরোধ করে গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ শ্রমিকদের হঠাতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে তারা পৃথক পৃথক স্থানে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। জিরাবো-কাঠগড়া-বিশমাইল এলাকার মাসকট নিট ওয়্যার, রেডিসন, রাতুল, ইউনিয়ন, কন্টিনেন্টাল, হ্যাশন কোরিয়া, সাউদার্ন মিলিনিয়াম, টেক্সটাউন, ক্রসফেয়ার, এভারগ্রীন, লিলি, এফজিএস, ডিআর, ফ্যাশন ফেয়ার, গ্রীন লাইফ, গ্লোরিয়াস, কমপ্লিট নিট ওয়্যারসহ ১৭টি পোশাক কারখানায় তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকরা চলে যায়। গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের পর আশুলিয়ায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩০টির বেশি পোশাক কারখানা ছুটি হয়েগেছে। শ্রমিকরা যে যার বাড়ি চলে গেছে। তবে শ্রমিকরা এখন ছাঁটাই আতংকের মধ্যে রয়েছে। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দেখে দেখে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের মানববন্ধন
সাভারে গার্মেন্টস শ্রমিক সুমন হত্যাকারীর গ্রেফতার ও শ্রমিকদের দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এ সমাবেশ করেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।