পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আগে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবে নতুন মন্ত্রিসভা। আ হ ম মুস্তফা কামাল গত পাঁচ বছর ধরে দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
দীর্ঘদিন থেকে আলোচনায় ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন লোটাস কামাল। তবে আরো কয়েকজন নেতা ও অর্থনীতিবিদের নাম ছিল আলোচনায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখেছেন সফলতার সাথে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আ হ ম মুস্তফা কামালের উপর।
আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে কুমিল্লা-১০ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। পেশায় চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট আ হ ম মোস্তফা কামাল এবার নিয়ে এ পর্যন্ত চার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রণালয়ে সিলেট যুগের অবসান ঘটবে। শিক্ষা জীবন থকে শুরু করে ব্যবসা, ক্রীড়াঙ্গন ও রাজনীতিতে সফল আ হ ম মুস্তফা কামালের সংগ্রামী পথচলা নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। আগামী প্রজন্মের জন্য কার্যত তিনি আইকন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিসিবির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেট সংগঠক আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন কুমিল্লার লাকসামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাজী বাবরু মিয়া এবং মাতা মরহুম সায়েরা খাতুন।
দৃঢ় প্রত্যয়ী ৭১ বছর বয়সী আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ব্যবসায়ী হিসেবেও দেশ সেরাদের একজন। জীবনের উষালগ্ন থেকেই লক্ষ্যপূরণে আপসহীন এ মন্ত্রীর সংগ্রামী গল্প বিস্ময় জাগায়। আবার উদ্দীপ্ত করে নতুন প্রজন্মকে। মন্ত্রীর কষ্টে মোড়ানো শৈশব-কৈশোরের জীবনের এমন গল্প এখনও মানুষের মুখে মুখে।
অথচ শৈশবে পড়াশুনা চালানোর মতোই সামর্থ্য ছিল না লোটাস কামালের দরিদ্র বাবার। বেতন দিতে না পারায় স্কুলের খাতা থেকে একাধিকবার তার নাম কাটা পড়ে। এলাকার মানুষজনের টাকায় বেতন দিতে হয়েছে স্কুলের। ছাত্রজীবনে থাকতে হয়েছে মানুষের বাসা-বাড়িতে। সাফল্যের শিখড়ে উঠেও তিনি অবলীলায় অতীতের এই সব কাহিনী স্মরণ করেন। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করতে তার জীবনী হতে পারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
সেই কঠিন দু:সময় জয় করার গল্পের কথা প্রায়শই নিজের মুখেই তুলে ধরেন লোটাস কামাল। দারিদ্র্যের অন্ধকারে বেড়ে উঠা জীবনের কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেন।
সফল এই মন্ত্রীর জীবন কাহিনী যেন সাহস, নিরবিচ্ছিন্ন কঠোর পরিশ্রমের দৌলতে সাফল্যের অভিযাত্রায় মোড়ানো। অসীম দৃঢ়তায় তিনিই বলতে পারেন ‘আমি সফল মানুষ।’ তার মুখেই যেন মানায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সফল্য দেখিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
আ হ ম মুস্তফা কামাল শৈশবেও ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাণিজ্য ও আইন বিষয়ে স্নাতক পাস, এরপর অ্যাকাউন্টিংয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। বিশ্বের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী-দামি ডিগ্রি পেয়েছেন।
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে চার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আ হ ম মোস্তফা কামালের নাম লোটাস কামাল কেন, এমন প্রশ্ন দেশের অনেক মানুষের মনেই। এ উপাধির নেপথ্যও তাই অনেক সময় তুলে ধরতে হয় মন্ত্রীকে।
আহম মুস্তফা কামাল ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) চার্টার্ড অ্যাকাউনন্ট্যান্সি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হন। সেবার ওই পরীক্ষায় সর্বকালের সেরা নম্বর পেয়ে পাস করেন। আজো এ রেকর্ড তার কব্জায়। একমাত্র বাঙালি হিসেবে এমন বিরল কৃতিত্বের কারণেই ‘লোটাস’ উপাধি পান তিনি।
শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামালের শৈশবে আরেকটি স্বপ্ন ছিল একজন ভাল খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। জীবনের প্রারম্ভে ভঙ্গ হওয়া স্বপ্ন আবার নতুনভাবে বড় পরিসরে পূরণ করেছেন লোটাস কামাল। দু’দশকেরও বেশি সময় তিনি আবাহনী ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সংগঠক হিসেবে বার বার দলকে জিতিয়েছেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় অবদান রেখেছেন দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদে তাকেই ধরা হয় সর্বকালের সেরা সভাপতি। টানা চার বছর ছিলেন এ পদে। তাঁর সময়ে স্বাগতিক হিসেবে ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ। ওইবারের আয়োজন গোটা বিশ্বে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যায় টাইগারদের। বিশ্বকাপ সাফল্যের দিক থেকেও বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান উন্নযনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
মহিলা ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগও হয় তাঁর সময়ে। আন্তর্জাতিক মানের বিপিএল ও বিসিএল চালু হয় তার সময়েই। টাইগাররাও তার সময়ে জিতেছে বেশি। আর্থিকভাবে বিসিবিকে লাভবান করেছেন।
রাজনীতিতে আহম মুস্তফা কামালের হাতেখড়ি ছাত্র জীবন থেকেই। কলেজ জীবনের পুরোসময়ই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় তিনি তাঁর এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আহম মুস্তফা কামাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের দায়িত্ব পাওয়ার সংবাদে কুমিল্লার লাকসামে বইছে আনন্দের বন্যা। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শুভেচ্ছা জানাতে ভীড় করে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে। রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা নগরে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান চলতি দায়িত্বে থাকা অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। যিনি আজ সোমবার থেকে আহম মুস্তফা কামালের স্থলাভিশীক্ত হবেন। এছাড়া ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবতীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।