পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাংবিধানিকভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের একক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি মন্ত্রিসভার শপথের দিন ধার্য করেছেন সোমবার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ব্যস্ত সময় পার করছে প্রধানমন্ত্রী, নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণে। নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর আড়াই শতাধিক এমপি যেমন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রিত্ব পদের প্রত্যাশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন; তেমনি মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন তা দেখার জন্য সাধারণ মানুষ উদগ্রীব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের মন্ত্রী সভায় চমক থাকতে পারে।
নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, মন্ত্রিসভার ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের আগামীর রাজনীতি, সরকারের গতি-প্রকৃতি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন; তার দল বিরোধী দলে থাকবে, এবার সরকারে যাবে না। দেশের রাজনীতিতে অনেক দিন থেকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বি-টিমের ভ‚মিকা পালন করলেও এবার প্রকৃত বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করতে চান। আর আওয়ামী লীগ চায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে। এ জন্যই মন্ত্রিসভায় যারা আসছেন তাদের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত এবং আগামীর রাজনীতি পরিচ্ছন্ন করতে হলে পরিচ্ছন্ন, মেধাবী, যোগ্য এবং দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রণালয় চালাতে পারবেন এমন নতুন-পুরনো সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।
আর যদি দুর্নীতিবাজ-বিতর্কিত-মারদাঙ্গা মার্কা এমপিদের মন্ত্রিসভায় প্রাধান্য দেয়া হয়, তা হলে মানুষের কাছে অন্যরকম বার্তা যাবে। মানুষ ধরে নেবে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির বদলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় পেশিশক্তি প্রয়োগকে প্রাধান্য দিতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও চান যোগ্য নেতাদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়ে নতুন সরকারের গতি-প্রকৃতি গতিশীল করা হোক। বিতর্কিত ব্যক্তিদের এমপি করা হলেও মন্ত্রিসভায় তাদের নিয়ে সরকারকে গতিহীন ও বিতর্কিন না করাই শ্রেয়। টানা তৃতীয় মেয়াদ ও চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তবে এবারের মন্ত্রিপরিষদের তালিকায় নতুন পুরনোদের নিয়েই গঠন হবে। অনেক হেভিওয়েট মন্ত্রীও বাদ পড়তে পারেন। নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন সদস্য থাকবেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এবার মন্ত্রিসভায় ৬০-৬৫ সদস্যের মধ্যে হতে পারে।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস করেছেন। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রিসভায় কাদের নেবেন তাদের শপথ নেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেই নতুন মন্ত্রীদের গাড়ি, গাড়িচালক নির্ধারণ করে দেয়া হবে। নতুন মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি ও গাড়িচালক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথের জন্য আমন্ত্রণ ও নতুন মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন নিয়ে কর্মকর্তারা কয়েক দফা মিটিং করেছেন। শনিবার ও শুক্রবার ছুটির দিনেও খোলা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দুই দিনই অফিস করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমসহ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রীদের ফাইল তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। গাড়ি প্রস্তুত করেছে পরিবহনপুল। প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে বঙ্গভবনের। আগামী সোমবার গঠিত হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা।
প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবেন দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে। এদিকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাফতরিক কাজে কর্মব্যস্ত সময় পার করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার মন্ত্রিসভায় নতুন চমক থাকতে পারে। আমার কেন যেন মনে হয় বিশাল একটা চমক আসবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ের আওয়ামী লীগের পথচলা। তবে বিশাল জয়ের সঙ্গে বিশাল চমকও থাকত পারে। মন্ত্রিসভার বিষয়টা সম্পূর্ণই নেত্রীর বিষয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর এরিয়া, এখানে অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সরকার গঠন হতে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। দলটি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায়। আর তারা জোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।
নির্বাচনে জয়ের পর সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যেই ৩ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সরকার গঠনের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সরকার তথা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একাদশ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন সেভাবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের ৯ ভাগ এমপিদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ এমপি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন।
পুরোনো মন্ত্রীদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরে যাচ্ছেন, সেটা তিনি আগেই জানিয়েছেন। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী মতিউর রহমান, মোস্তাফা জব্বার, ইয়াফেস ওসমান ও নুরুল ইসলাম নির্বাচনের আগ দিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আছেন। এইচ এম এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন, তার জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে, এবার তার দলের কেউ মন্ত্রিত্ব নেবেন না। এ অবস্থায় ১০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদ এমনিতেই ফাঁকা।
অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই সময় শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও টেকনোক্র্যাট চারজনকে যুক্ত করে ৫২ মন্ত্রিসভার সদস্য হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।