Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮%

এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

২০১৮ সাল শেষে প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের বছরে ছিল ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। একইভাবে অতিদারিদ্র্যের হার কমে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০৩০ সালের মধ্যেই দেশে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ।
২০০০ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০০৫ সালে তা ৪০ শতাংশে এবং ২০১০ সালে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। পাশাপাশি অতিদারিদ্র্যের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এক দশকে। ২০১৮ সাল শেষে অতিদারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৭ সাল শেষে ১২ দশমিক ১, ২০১৬ সালে ১২ দশমিক ৯, ২০১০ সালে ১৭ দশমিক ৬, ২০০৫ সালে ২৫ দশমিক ১ এবং ২০০০ সালে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্সের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীলতা পেয়েছে। যার ফলে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে ব্যাপকভাবে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়াও বাস্তবধর্মী কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মসংস্থান ও বাজারমুখী করা এবং সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে দারিদ্র্য বিমোচন আরো গতিশীলতা পাবে।
দরিদ্র মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও এতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আগের তুলনায় দারিদ্র্যের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের নতুন পকেট সৃষ্টি হয়েছে। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের চলমান কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনতে হবে। নগর দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে না পারায় ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের হার বাড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। নতুন এসব ঝুঁকি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমগোত্রীয় হিসেবে না দেখে বরং ভিন্নভাবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য পৃথক বিনিয়োগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় আনতে হবে, নগর দারিদ্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
জানা গেছে, দারিদ্র্যের ধরন ও আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। দিনাজপুর, বরগুনা, সাতক্ষীরা, মাগুরার মতো জেলাগুলোয় দারিদ্র্য হানা দিয়েছে। আবার গ্রামের দারিদ্র্য ও এর পরিবর্তনের বিষয়ে জানা গেলেও এখনো নগর দারিদ্র্যের বিষয়গুলো উঠে আসছে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আয় বৈষম্য। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রবৃদ্ধির কার্যকারিতা কমেছে। তাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে জোর দেয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, টেকসই কৃষি উন্নয়ন, আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা, জমির পুনর্বণ্টন, খাসজমি বরাদ্দে পরিবর্তন আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাত ধরেই দেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসছে। যে হারে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য কমছে তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হব। শূন্য দারিদ্র্যের হার অর্জনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে। জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে গুণগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শতাংশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ