পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- বহাল থাকার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীদের রাজপথে দেখা না গেলেও হরতালের প্রতিবাদে রাজপথে মহড়া দেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। হরতালবিরোধী মহড়া নিয়ে রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রকাশ্যে গোলাগুলি হয়। এতে কমপক্ষে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন থানার সদ্য নির্বাচিত নেতাদের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী মহড়া পালন করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে থানার নেতারা।
গতকাল রোববার সকালে এ শক্তির মহড়া দিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত থানা-ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এর আগে গত ৫ মে নিজামীর ফাঁসির দ- বহাল রেখে রায় পুনর্বিবেচনার আপিল খারিজ করে দেন আদালত।
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- বহাল থাকার প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে রাজধানীতে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশে এবং মহড়া দিয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হরতালবিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত এবং সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
সমাবেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় পাকিস্তান হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জামায়াতের ডাকা হরতালবিরোধী অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন তিনি। জামায়াতের হরতালকে অবৈধ উল্লেখ করে, জনগণ এ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কামরুল বলেন, এই রায়ের বৈধতা নিয়ে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন। পাকিস্তানের এই ভূমিকা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, পাকিস্তানের এ ধরণের মন্তব্যের কারণে পাক হাইকমিশনারকে তলব করে এর কড়া প্রতিবাদ যেন জানানো হয়। এছাড়াও আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারন সম্পাদক মাওলানা দেলোওয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম দক্ষিন গেটে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বেশকিছু আলেম-ওলামা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে সকাল ১০টার দিকে হরতালবিরোধী মিছিল-মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪৮নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন গেসু এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম অনু, মো. বোরহান আহমেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, সফিকুল ইসলাম সফিক, কাজী দেলওয়ার হোসেনসহ থানার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে প্রায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে স্টাফ কোয়ার্টার, সারুলিয়ায়। এতে উপস্থিত ছিলেন সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, জামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এরপর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃতে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়া হয় ডেমরা-রূপগঞ্জ সড়কে। অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে হরতালবিরোধী মিছিল হয়। আরেক সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের নেতৃত্বে হরতালের বিপক্ষে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করা হয়। ধানমন্ডি, বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাবে ও পল্টন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। এসব স্থানে তারা মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
হরতালে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীতে যুবলীগের সতর্ক অবস্থান
এদিকে, জামায়াতের ডাকা হরতালে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের হরতালবিরোধী তৎপরতা পর্যবেক্ষণের জন্য সংগঠনটি একটি টিম গঠন করে। আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান এ পর্যবেক্ষণ টিমের নেতৃত্ব দেন।
গতকাল রবিবার সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপুর্ন প্রবেশ মুখে সর্তক অবস্থান নিয়ে যুবলীগ নেতাকর্মীরা ফার্মগেট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, বাবুবাজার ব্রিজ, মিরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ করে।
যুবলীগ মহানগর উত্তর শাখা ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ, উত্তর শাখা সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।
যুবলীগ মহানগর দক্ষিন শাখা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু, শ্যামল কুমার রায়, জসিম উদ্দিন মাতুব্বর, মিল্লাত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা রওশন জামির রানা, এন আই আহম্মেদ সৈকত, মনিরুল ইসলাম হাওলাদার, মহানগর দক্ষিন শাখা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুন অর রশিদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।
অপরদিকে, জামায়াতের ডাকা হরতালবিরোধী মহড়াতে নিজেদের প্রাধান্যকে কেন্দ্র করে মিরপুর-১ এলাকায় আ’লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে। এতে দু‘পক্ষই প্রকাশ্যে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একে অপরের প্রতি গুলি ছোড়ে। এতে কমপক্ষে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
জানা যায়, রাজধানী মিরপুরের ১ নম্বর গোল চত্বরে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মহড়া ও মিছিলে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে মনোয়ার হোসেন (৩০), শামিম হোসেন (৩২), জাকির হোসেন (২৮), আল-আমীন (২৭), হাবিব (২৫), কোরবান (২৫), আবুল কালাম (৩৪), রাফি (২০), সুজন (২০), শুভ (২০), সবুর আলী (২৪) ও মো. ইব্রাহীমের (২৭) নাম জানা যায়।
যুবলীগ নেতা মো. সোয়েব জানান, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সংসদ সদস্য আসলামুল হকের নেতৃত্বে মিরপুর ১ নম্বর গোল চত্বরে হরতালবিরোধী মিছিল ও মহড়া বের হয়। এ সময় সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন ও আবুল কাশেম মোল্লার সমর্থকরা তাদের মিছিলে হামলা চালায়। শটগানের গুলিবর্ষণ করে।
মিরপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এমপি আসলাম সমর্থিত আফজাল হোসেন জুয়েল জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে এমপি আসলামের লোকজন হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন সমর্থিত একটি গ্রুপ হামলা চালায়। এরপর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছড়রা গুলি ছোঁড়ে। এসময় ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। আরও আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন।
মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ জানান, দুপুরে মিরপুর গোল চত্বর থেকে আওয়ামী লীগের একপক্ষ হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। এ সময় আওয়ামী লীগের অপরপক্ষ মিছিলে হামলা করলে এ ঘটনা ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।