পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : লন্ডনের নতুন মেয়র নিয়োগ সব সময়ই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকে, তবে যদি ঘোষণা করা হয় যে তিনি হবেন সাদিক খানÑ প্রথম মুসলিম মেয়র, এর তাৎপর্য আলাদা।
সাদিক খানের নিজের মতে, এ বিজয় ইরাক ও সিরিয়ার সব ঘৃণাকারীর কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করেছে। তা হল লন্ডন হচ্ছে সহিষ্ণুতা ও সম্মানের এক বাতিঘর। তবে এ দেশে যারা বাস করেন তাদের কাছে এটা কি অর্থ বহন করে? ব্রিটিশ মুসলমানদের কাছে তাদের সম্প্রদায় ও সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যের জন্য সাদিক খানের বিজয়ের তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। লন্ডনবাসী ৪৮ বছর বয়স্ক নাভিদ আখতার বলেন, এ হচ্ছে এক সন্ধিক্ষণ যখন আমাদের মধ্যকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উন্নাসিকদেরও স্বীকার করতে হয় যে আমাদের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর সমাজ। আমি তাকে ভোট দিয়েছি এ কারণে যে আমি মধ্যপন্থার দিকে ফিরতে চাইছি। বিশ্বে ক্রমবর্ধমানভাবে মেরুকরণ ঘটছে এবং আমাদের মত দ্বৈত-ঐতিহ্যের ধারক লোকদের জন্য তা ভীতিকর। আমি এক গর্বিত লন্ডনবাসী যে এখানে জন্ম নিয়েছি ও বেড়ে উঠেছি। একই সাথে আমি আমার পাকিস্তানি ঐতিহ্যের প্রতি সচেতন এবং আমার জীবনে, কাজে, প্রতিবেশী ও পরিবারের ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধের অনুসারী। এগুলোর কোনোটিই সাংঘর্ষিক নয়। আর লন্ডন হচ্ছে বাকি বিশ্বের কাছে সহিষ্ণুতা মর্যাদার এক উদাহরণ। আমি বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, যৌন প্রবৃত্তি অথবা কোনো রাজনীতিকের ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি যা দেখি তা হল যে তারা আমাদের ব্যাপারে খেয়াল রাখে ও সেবা করতে চায়, আমাদের শাসন করতে নয়।
পরবর্তী মেয়রদের তাদের জন্য কর্মপন্থা উদ্ভাবন করতে হবে। লন্ডনকে তার অধিবাসীদের প্রতি আরো যতœশীল হওয়া এবং তাদের আরো উন্নত জীবন উপহার দেয়ার জন্য কাজ করা প্রয়োজন। আমি কয়েক দশক ধরে বহু প্রতিবেশীকে দেখে বুঝতে পারছি যে নিষ্ঠুর অর্থনৈতিক চাপের প্রেক্ষিতে তাদের এ নগরী ত্যাগ করা ছাড়ার কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, আমি আশা করি যে খানের নিয়োগ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক হবে। এটাকে আমরা প্রতিবেশীদের কাছে পৌঁছার একটা সুযোগ হিসেবে দেখব যারা আমাদের ধর্মের ব্যাপারে অনুসন্ধিসু এবং মুসলমান হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। আমি আশা করি যে বৃহত্তর সমাজের মধ্যে তার অবস্থান পুন:নিশ্চিত করবে যে শান্তি, পারস্পরিক সম্মান ও উন্নতির ক্ষেত্রে মুসলমানরা অন্যদের চেয়ে আলাদা নয়।
নটিংহাম বাসিনী ৪৫ বছর বয়স্কা সাজাদাহ তারিক বলেন, খান জয়ী হয়েছেন তার নীতির কারণে, তিনি একজন মুসলিম বলে নয়। তার নির্বাচনী প্রচারণার কর্মসূচিতে কখনোই ইসলাম ছিল না। ধর্ম নির্বাচনের বিষয় হওয়া উচিত নয়, বৈচিত্র্য অত্যাবশ্যক। আশা করি খান মেয়র হিসেবে আবাসন ও পরিবহন বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন। আমি করি তিনি লন্ডনকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। এটা হবে তার উত্তরাধিকার, তিনি যে মুসলমান এটা তাৎপর্যহীন।
সাদিক খান মেয়র হওয়ার কারণে আমার জীবন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে এটা আমি মনে করি না। কিছু লোক মনে করে মুসলমানদের রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। আমি আমা করি অজ্ঞ ও অল্পজানা লোকেরা এখন কোনো মন্তব্য করার আগে দু’বার ভাববেন।
কার্ডিফের অধিবাসী ৫৮ বছর বয়স্ক আলি জাফারি বলেন, আমার দৃষ্টিতে মুসলিম মেয়রের অর্থ হচ্ছে এই যে পরিপক্ব গণতন্ত্রে মানুষকে ধর্ম, বর্ণ বা জাতিগোষ্ঠিভুক্ত পরিচয়ে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। আমি আশা করি খান বর্ণ সম্পর্কের উন্নতি করবেন এবং আবাসন সংকট মোকাবেলায় সাহায্য করাসহ পরিবহন ভাড়া হ্রাস করে লন্ডনকে চলমান রাখবেন। আমি চাইব যে খান ব্রিটিশ মুসলিমদের ইতিবাচক চিন্তা করার আহ্বান জানাবেন এবং ভুল করে সকল মুসলিমকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা না করার শিক্ষা দেয়ার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ দেয়ার একটি নীতি প্রণয়ন করবেন।
লন্ডনবাসী ৪৯ বছর বয়স্ক দাউদ গুস্তেভ বলেন, আমি চাই সাদিক খান সকল লন্ডনবাসীর মেয়র হবেন। লন্ডন ও তার বৈচিত্র্যের অর্থ এটি হচ্ছে বিশ্বের জন্য আশার বাতিঘর। আমি খানের জন্য ভোট দিয়েছি। আমি একজন অভিবাসীর সন্তান। স্বপ্রতিষ্ঠ ও সহানুভূতিপ্রবণ খান যতœশীল পুঁজিবাদের প্রতিনিধিত্ব করেন যার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে লন্ডন যদি আমরা আমাদের অসমতা সমস্যার বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেই। আমি আশা করি মেয়র তা অর্জন করতে পারবেন যা তিনি করতে পারবেন বলেছেন এবং আশা ও ঐক্য আনবেন।
ডারবিবাসী ৩২ বছর বয়স্কা জয়নাব কিদওয়াই বলেন, এটা যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিরাট গর্বের মুহূর্ত। এটা দেখিয়েছে যে বিশ্বের নাগরিকদের এখনো ইসলাম ও মুসলমানের উপর বিশ্বাস আছে। আমরা অন্যদের মতই সাধারণ। প্রচার অভিযানের গোটা সময়েই খানের মনোভাব ছিল বিস্ময়কর, তিনি কখনোই তার স্বপ্নকে পরিত্যাগ করেনি, বরং স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গেছেন। আমি আশা করি তিনি লন্ডনকে শীর্ষ বিশ্বমানের নগরে পরিণত করার কাজ অব্যাহত রেখে এ নগর ও এর নাগরিকদের জন্য চমৎকার কাজ করবেন যেখানে প্রত্যেকেই ও যে কেউই সমাদৃত বোধ করবে।
আমি মনে করি এটা সোমবার সকালে আমি যখন আমার অমুসলিম সহকর্মীদের সাথে বিশ্ব ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্তসার নিয়ে কথা বলব তখন এটা অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবে। আমি গর্বের সাথে উল্লেখ করতে পারব যে চূড়ান্তভাবে একজন মুসলিম এ মর্যাদাজনক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন যিনি আমার ও আমার সম্প্রদায়ের অনেক কাছের প্রতিনিধি।
লন্ডনবাসী ৩১ বছর বয়স্ক সুহাইব কাজি বলেন, আমি মনে করি না তিনি নগরীর সকল মুসলমানের অনুভূতির পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করেন। যেখানে তিনি মুসলিম হওয়ার কারণে সমালোচিত হন এ ধরনের বিষাক্ত প্রচারণায় তিনি তার ধর্মের ব্যাপারে গর্ববোধ করতে পারেন বলে আমার মনে হয় না। মহিলারা যখন জনসেবা প্রদানকারীদের সাথে কাজ করবেন তখন তাদের বোরকা আবৃত থাকা উচিত কি না প্রশ্ন করে তার মন্তব্য হতাশাজনক। যাহোক, দু’জন শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনি ভালো ছিলেন।
সম্পূর্ণ মুসলিম প্রেক্ষাপট থেকে আমি চাইব তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি সে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতি তিনি মোকাবেলা করবেন, বিশেষ করে সরকারী পরিবহনে প্রধানত নারীরা তার শিকার হচ্ছে। এটা বর্তমানে মুসলিম নারীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতির কারণ, বিশেষ করে যারা হিজাব/নিকাব পরে। সুতরাং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সূত্র দি গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।