পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : কেবল ভূমিসংস্কার ছাড়া পার্বত্য চুক্তির বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তি অনুযায়ী চারটি ব্রিগেড ছাড়া বেশির ভাগ সেনা ক্যাম্পও সরিয়ে নেয়া হবে। সেনা ক্যাম্পগুলো বেশির ভাগই তুলে নেয়া হয়েছে। চারটি জায়গায় কেবল চারটি ব্রিগেড থাকবে। বাকিগুলো সব সরিয়ে নেয়া হবে। এ জন্য রামুতে একটি সেনানিবাস করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে তাঁর সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবের পার্শ্ববর্তী স্থানে নির্দিষ্ট দুই একর জমির ওপর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভূমিসংস্কারের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন একাধিকবার গঠন করেছে। কিন্তু কমিশনের কাজ সন্তোষজনকভাবে এগোয়নি। কারণ, সেখানে কিছুটা অবিশ্বাস ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে এখনও যেসব কাজ বাকি রয়েছে, সেগুলো শেষ করার আশ্বাস দিয়ে সরকার ও জনসংহতি সমিতিকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন ২০০১-এর কতিপয় সংশোধনীর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে পর্যালোচনা চলছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সম্ভব সবকিছু করতেই সরকার প্রস্তুত রয়েছে। পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইন সংশোধনের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি সংস্কার কমিশন বারবার গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু এই কমিশনের কাজটা ঠিক মতো হচ্ছে না। সেখানে একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। বেইলি রোডে ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, উদ্বেগজনক, হতাশাব্যঞ্জক। অবিশ্বাস ও সন্দেহের দূরত্ব ক্রমাগত পৃঃ ৫ কঃ ২
চারটি ব্রিগেড ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের
বৃদ্ধি পাচ্ছে; পার্বত্যবাসীর মনে হতাশা ও নিরাশা চেপে বসেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্ভব হলো, তেমনিভাবে তার বিজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যারও যথাযথ সমাধান হতে পারে। পরে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় চুক্তি বাস্তবায়নে আলোচনার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’পক্ষকেই বসে ঠিক করতে হবে। ২০০১ সালে আমরা যে আইনটা করেছিলাম, সেখানে তারা কিছু সংশোধন চেয়েছেন। সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে যতটুকু করা সম্ভব, সেটা আমরা করে দেব। তিনি প্রশ্ন করেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘কেন অশান্তি থাকবে’।
তিনি স্মরণ করেন, পার্বত্যাঞ্চলে এক সময় সংঘাত ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই সংঘাত বন্ধে শান্তিচুক্তি করেছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়েছিলো। যদিও শান্তিচুক্তি এতো সহজ ছিলো না। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা আমরা বাস্তবায়ন করেছি। অথচ বিএনপি সেই শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তারা হরতাল ডেকেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে যখন অস্ত্র সমর্পণের আয়োজন করা হয়, তখন বিএনপি হরতাল ডাকে। তারা বলেছিল অস্ত্র সমর্পণ করা যাবে না। বিএনপি নেত্রী সে সময় বলেছিলেন, এই চুক্তি হলে নাকি ফেনী থেকে পুরো পার্বত্যাঞ্চল ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। দেশের ভেতর থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা হয়েছে। কেন হয়েছে তাও জানি না, তবু সেই চুক্তি হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ফিরেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেখানে এক হাজার ৩৬৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। ৮৭৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য ৮৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কারিগরি প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। থ্রি জি সুবিধাসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ’ বাতিল করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪’ প্রণয়ন করায় বোর্ডের কার্যপরিধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পাহাড়ের জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে তার সরকার রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রত্যন্ত এলাকায় আবাসিক সুবিধাসহ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন উপজেলা গুইমাড়া, নতুন থানা সাজেক এবং নতুন ইউনিয়ন বড়থলি গঠন করেছি। আওয়ামী লীগের গত ২০০৯-১৪ সরকারের সময়ই সার্কেল চিফের সম্মানী এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, হেডম্যানদের সম্মানী ১০০ থেকে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা এবং কারবারিদের জন্য ৫০০ টাকা সম্মানী চালু করার কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ অঞ্চলের জন্য পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদ মর্যাদার চাকরিতে ৫০ ভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গেষ্ঠীর কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটগুলো পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ধারা ও ঐতিহ্য এবং স্বকীয়তা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনেক সরকারি দপ্তর পার্বত্য এলাকায় স্থাপিত হয়েছে, বেড়েছে কাজের সুযোগ। পার্বত্যবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে পার্বত্যবাসীর যাতায়াত বেড়েছে। ঢাকায় অবস্থানের জন্য এতদিন তাদের নিজস্ব কোন ভবন ছিল না। রাজধানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি ঠিকানা করে দেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’ নির্মাণের জন্য বেইলী রোডে দুই একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়।
এ কমপ্লেক্সে এসে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যেন বুঝতে পারে, এটাই তাদের এলাকা। সেভাবেই এই কমপ্লেক্স করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমপ্লেক্সটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণপূর্ত মন্ত্রীর প্রতিও তিনি তাগিদ দেন। এই কমপ্লেক্স জাতীয় মূল স্্েরাত ধারার সাথে পার্বত্যবাসীকে যুক্ত করার কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করবে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বেইলি রোড অফিসার্স ক্লাবের পশ্চিম পাশে প্রায় দুই একরের যে জমিতে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, সেটি পাওয়া ‘সহজ হয়নি’ বলে সরকারপ্রধান জানান। আপনারা জানেন যে পাশে অফিসার্স ক্লাব। সেই প্রথম থেকে, যখন প্ল্যান হচ্ছে তখন আমি বলেছি যে, এখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের কমপ্লেক্স করা হবে। কিন্তু, আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এটা পাওয়া খুব কষ্টকর ছিল। শুধু প্যাঁচ আর প্যাঁচ। ঘটনাটা কী? ঘটনা আর কিছুই না। অফিসার্স ক্লাব এখান থেকে জায়গা নিতে চায়। আমি তাদের বলেছি, এই জায়গা আপনার পাবেন না। কেউ পাবেন না।
জায়গাটি নিয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট-এর বাংলো ছিল। গোলপাতার ছাউনি দেওয়া কাঠের ঘর, তার সামনে বিশাল বাগান। ওই বাগানে ছোটবেলায় আমাদের অনেক খেলাধুলা করার সৌভাগ্য হয়েছে। চুয়ান্ন সালে আমার বাবা যখন মন্ত্রী ছিলেন, মিন্টো রোডে ছিলেন, আমরা তখন এখানে আসতাম। ছাপান্ন সালে যখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি আব্দুল গণি রোডে ছিলেন, তখনও আমরা এ জায়গায় এসেছি।
তিনি বলেন, অনেক কষ্টে এই জায়গাটা উদ্ধার করে অবশেষে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং এটা আমার কাছে নির্দিষ্ট ছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি, তাদের জীবনমান সবকিছুর যেন প্রতিফলন ঘটে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে দ্রুত কমপ্লেক্স কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরকার হলে ডাবল শিফটে কাজ করান।
প্রায় দুই একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রকল্পে ৬ তলা ভবন,মাল্টি পারপাস হল, ডরমেটরী, প্রশাসনিক ভবন, জাদুঘর, লাইব্রেরী, ডিসপ্লে সেন্টার, থিয়েটার হল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বাসভবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবন থাকবে। বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মা দিবসে সব মা’য়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমার পিতা জেলখানায় বন্দী থাকাবস্থায় তিনিই পরিবারকে আগলে রেখেছেন। দলের নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ২৫ শে বৈশাখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তার ১৫৫তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।