Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড় প্রকল্পে টাকা দরকার : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশে চলমান বড় বড় প্রকল্পের জন্য অর্থের প্রয়োজনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইএমএফের নতুন নির্বাহী পরিচালক সুবীর গোকর্ণের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখন বড় বড় যে অনেকগুলো প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলোর জন্য টাকা দরকার। উল্লেখ্য, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি গভীর সমুদ্র বন্দর, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার।
এসব প্রকল্পের জন্য তহবিল কীভাবে জোগাড় হবে- জানতে চাইলে মুহিত বলেন, গ্লোবালি টাকা পয়সা অনেক আছে এখন। বাট দ্য পয়েন্ট ইজ, হোয়ার ফ্রম উই শুড টেক ইট অ্যান্ড ফ্রম হোম?
বিশ্ব ব্যাংক কিংবা আইএমএফের ঋণের উপর নির্ভরশীলতা আস্তে আস্তে কমানো হচ্ছে কিনা-প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কমানোর কোনো চান্স নাই। উই ওয়ান্ট মোর ফ্রম দেম। দিস ইজ দ্য বেস্ট মানি দ্যাট উই ক্যান গেট।
চীনের বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নিজের সাম্প্রতিক বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে মুহিত বলেন, কারণ সেটা আরও এক্সপেনসিভ মানি। বাট ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং এডিবি যা পয়সা দেয়, আমি সব গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
বড় বড় প্রকল্পের জন্য ‘কমার্শিয়াল বরোয়িং’ করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু কমার্শিয়াল বরোয়িং তো হবেই। তবে অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো ‘স্টুপিডলি’ ঋণ নিয়ে কোনো সঙ্কটে পড়তে চান না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
আইএমএফের নতুন নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে নতুন কোনো প্রকল্পের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। তাদের পয়সায় আমাদের বেশি একটা কাজ হয় না। আমরা বলেছি, যখন প্রয়োজন হবে তখন ডাকব।
সুবীর গোকর্ণের সাক্ষাতের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, তিনি নতুন ইডি। ডিসেম্বরে জয়েন করেছেন। বাংলাদেশে এটা তার প্রথম সফর। তিনি কখনোই বাংলাদেশে আসেন নাই। তিনি মূলত বেসরকারি খাতের মানুষ। কিন্তু গত ৬ বছর রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তার অনেক কিছুই ভালো জানা শোনা আছে। তবে বাংলাদেশ তার কাছে একেবারেই নতুন।
আইএমএফের সদর দপ্তরে কী হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মুহিত বলেন, আজকে মনে হল, আইএমএফে বাংলাদেশের কনসালটেশন রিপোর্ট আলোচনা হচ্ছে। যেটা জাস্ট ওকে। এটাতে কিছুই বলার নেই, কেবল বলা হয়েছে, প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলো দেখাবে। সাধারণভাবে এটা ভালো।
মে মাসে সংসদে উঠছে নতুন শুল্ক আইন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী মে মাসে জাতীয় সংসদে নতুন শুল্ক আইন উত্থাপন করা হবে। আইন সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের মতামত থাকলে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানাতে হবে।
তিনি বলেন, এ অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে আরো নতুন শুল্ক আইন সংসদে উত্থাপন করার বাসনা আছে। সে কারণে আইনটি যাতে গ্রহণযোগ্য হয় এবং বর্তমান কাস্টমস আইনে কী পরিবর্তন করা দরকার আছে সেটা ব্যবসায়ীরা স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে জানালে উপকৃত হবো। এখনো সময় আছে। ব্যবসায়ীরা তাদের অভিযোগ এনবিআরকে জানাতে পারেন। আগামী মে মাসে আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হবে। এর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি ড্রাফট করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার অফিসার্স ক্লাবে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমাদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার লুৎফর রহমান।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজস্ব সংক্রান্ত মতবিরোধের সমাধান করতে এডিআর ব্যবস্থা চালু করা হয়। মূলত এটি একটি শালিসি ব্যবস্থা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই সুযোগটি তেমনভাবে গৃহীত হয়নি। যারা কর দেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? এই ব্যবস্থায় কি অসুবিধা আছে, কেন এ সুযোগ নেন না। ইতিমধ্যেই এডিআর প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছি। এ ব্যবস্থাটি যাতে আরো ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় সে জন্য সকলে মিলে ব্যবস্থা নেবেন। এডিআর কার্যকর হলে ক্রমবর্ধমান সংযোগ (প্রোগ্রেসিভ এনগেজমেন্ট) সহজ হবে। আর রাজস্ব আদায়ও সহজ হবে।
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের শুল্ক বাড়াতে-কমাতে আমার কাছে অনেক অভিযোগ, নালিশ, অনুরোধ আসে। আগামী মাস থেকে বাজেট কাজ শুরু করছি। আপনারা (ব্যবসায়ীরা) এখন থেকে বিভিন্ন লেভেলে বিশেষ করে এনবিআরকে এ বিষয়ে উপদেশ দেবেন। সেগুলো বিচেনা করা হবে।
তিনি বলেন, আমার হিসেবে শুল্ক সবচে পুরনো কর। এর আগে আয়কর, ভ্যাটের চিন্তা-ভাবনা কোথাও ছিল না। এক সময় ভাবতাম শুল্ক বিভাগ বিদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হবে না। শুল্ক বিভাগ থাকবে। আন্তর্জাতিকভাবে যতোই ফ্রি ট্রেডের দিকে যাবো ততোই শুল্কের পরিধি হয়তো কমে যাবে, কিন্তু শুল্কের যে কয়েকটি ক্ষেত্র আছে সেখানে আরো শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে। যেগুলো সমাজের জন্য ভালো নয়, দুশ্চরিত্রের সূচনা করতে পারে, ইন্ধন দিতে পারে তা রোধ করবে শুল্ক বিভাগ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পত্রিকায় দেখলাম দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতো ভালো যে এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে কোটিপতি রয়েছে। যারা কর দেয় তাদের ওপর বোঝা না বাড়িয়ে ওইসব ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে রাজস্ব আহরণের নামে সাধারণ মানুষ যাতে দুর্ভোগের শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সহজ করে কর আদায় করতে হবে। যাতে মানুষ ট্যাক্স দিতে চায়।
বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশগুলো ডবিউটিও’র বাণিজ্য উদারীকরণে সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু যখন দেয়ার সময় এসেছে তখন নীতি মানেনি। এখন উন্নত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক জোট গঠন করছে তাদের বাণিজ্য প্রসারে। যেমন টিটিপি, টিএআইপি, আরসিইপি। যা ডবিউটিও’র ধারণাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, বাণিজ্য উদারীকরণের সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিগত দিনগুলোতে শুল্ক-কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগামীতে আরো হবে। এখন কাস্টমস ডিউটিকে প্রতিরক্ষণের জন্য রাখা হয়। সম্পূরক কর, ভ্যাট ও আয়কর রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অভ্যন্তরীণ দক্ষতা বাড়ানো পরামর্শ দেন তিনি।
সোনা চোরাচালান সম্পর্কে তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলো স্বর্ণের চোরাচালান ধরা পড়ছে এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের ভারসাম্যহীনতা। এখন মুদ্রা বিনিয়ম হার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু স্বর্ণের দামের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। যতোদিন মুদ্রা বিনিময় হারে অনিশ্চতায় থাকবে ততোদিন স্বর্ণ চোরাচালানের প্রবণতা থাকবে।
শুল্কায়ন বিরোধ কমাতে পণ্যের ব্যবহার দেশে শুল্কায়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এখন খুব দ্রুত পণ্য পরিবর্তন হয়। কাস্টমসের তালিকা দ্রুত হারিয়ে যায়। তাই কর ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের বাণিজ্য ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। না হলে সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগে উন্নয়ন কর্মকা- বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন উন্নয়ন কর্মকা-ে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ২ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত আমলে উন্নয়ন বাজেট ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আমলে ছিল ২১ হাজার কোটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। এখনকার উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এটি সম্ভব হয়েছে এনবিআরের সহযোগিতার মাধ্যমে। এতেই বোঝা যায়, দেশের এই উন্নয়নে সরকার কতোটা আন্তরিক।
স্বর্ণ চোরাচালান সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে স্বর্ণ ধরা পড়ছে দেখে খুব লজ্জা লাগে। বাংলাদেশ কি স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হয়ে গেল? এতে কোন কৃতিত্ব নেই। এটা আমার, আপনাদের ও সরকারের দায়। ৬০০ কেজি স্বর্ণ ধরা পড়ছে ৬ হাজার কোটি নিয়ে যাচ্ছে। যার স্বর্ণ ধরা পড়ছে, সে আরেক চালানে ৫০ কেজি বেশি এনে টাকা তুলে ফেলছেন। এই স্বর্ণ চোরাচালন বন্ধ করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মাতলুব আহমেদ এনবিআরে প্রি-ইমপোর্ট এসেসমেন্ট ডেস্ক তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ডেস্কে আমদানিকারকরা পণ্য আনার আগে তাদের ইনভয়েস দেবেন। এখান পণ্যের শুল্ক নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এর ফলে কাস্টমস হাউজগুলোতে শুল্কায়নসংক্রান্ত বিরোধ তৈরি হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, কাস্টমসকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজস্ব ও জনবান্ধব আধুনিক ডিজিটাল কাস্টমস গড়ে তুলতে কাজ করছে এনবিআর। এর মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে। ডিজিটাল কাস্টমসের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে স্বচ্ছতা, সমতা, গুণগত সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে বলেও জানান তিনি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান বলেন, সেবার মনোভাব নিয়ে ও রাজস্ব আয় বাড়িয়ে সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
‘ডিজিটাল কাস্টমস: ক্রমবর্ধমান সংযোগ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দেশব্যাপী কাস্টমস দিবস উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সচিবালয়ে দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট, দশ টাকার একটি উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকার ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে এনবিআরের সামনে থেকে র‌্যালি বের হয়ে প্রেসক্লাবের বিপরীতে গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৭৯টি দেশে দিবসটি উদযাপিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বড় প্রকল্পে টাকা দরকার : অর্থমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ