Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনার জয় প্রভাব ফেলবে চীন-ভারত দ্বন্দ্বে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলটি রোববার জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে, টানা তৃতীয় ও সর্বমোট চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার রেকর্ড গড়েছে। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স’ নামে একটি জোট গঠন করে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি জিতেছে। যার ফলে হাসিনা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। কিন্তু এই জয় নির্বাচনী সহিংসতায় ১৭ জন মানুষ নিহত হওয়া এবং ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে।
বিরোধী দলীয় জোট, যা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে পরিচিত, এই নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোটের আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে দেশটি দুইটি শক্তিশালী দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে আবদ্ধ। এই দেশটিকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব কৌশলগত এজেন্ডা রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচন একতরফা ও ভোট কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও এতে ফলাফলে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। এটাও স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ পরিচালনা করবে এবং গত দশকে হওয়া আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে আরও শক্তিশালী হবে। ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশ (পূর্বের পূর্ব পাকিস্তান) একটি জনবহুল মুসলিম রাষ্ট্র যা তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের দ্বারা জাতিগত ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার পরে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল। সেই যুদ্ধে ঢাকার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিরিশ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ভারত এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের প্রথম দিকে বছরগুলোও রক্তাক্ত ছিল এবং জাতির প্রতিষ্ঠাতা, হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে হত্যার পরে, বহু বছর ধরে সামরিক শাসন ও বিক্ষোভ চলে, যা তার মেয়ের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রথম জয়ের মাধ্যমে অবসান হয় এবং হাসিনা সরকার গঠন করেন।
সেই সময় দেশের মোট রফতানী আয় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ও মাথাপিছু আয় ছিল ৪০০ মার্কিন ডলার। যার ফলে বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা পেয়েছিল। হাসিনার নেতৃত্বে জিডিপি এখন ২৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৬২০ মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন তার বড় কৃতিত্ব। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হাসিনা চরমপন্থী ও ইসলামী মৌলবাদী শক্তির সাথে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করেছেন। বিএনপি এই ধরনের চরমপন্থী দলগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যার ফলে দুই দলের মধ্যে তিক্ত রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি হয়।
ফলস্বরূপ, হাসিনার বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদিতা এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর অভিযোগ থাকলেও বাস্তবতা হলো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, তুলনামূলকভাবে মানবিক ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের নিরাপত্তায় দক্ষিণ এশিয়া ও মুসলিম বিশ্বের নিরাপত্তা সূচক ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ একমাত্র কার্যকর বিকল্প।
হাসিনার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি হচ্ছে, তার ঘরোয়া বিষয়সূচি একত্রিত করা এবং শক্তিশালী দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখলেও অবৈধ অভিবাসনসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলিক বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক জটিলতা রয়েছে।
বেইজিংয়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি, হাসিনা নয়াদিল্লীর সাথেও সহানুভূতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন। বর্তমানে, চীন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এবং শীর্ষ সামরিক সরবরাহকারী। এটি ভারতের সাথে সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ শিগগিরই চীনের কাছ থেকে কেনা সাবমেরিনগুলি পরিচালনা করবে, যা বঙ্গোপসাগরে নৌবহরকে গতিশীল করে তুলবে। বেইজিংয়ের জন্য বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান কৌশলগত কারণে আকর্ষণীয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ফ্ল্যাগশিপ বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে ঢাকাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
কিন্তু, ঋণের ফাঁদে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে চীনের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে হাসিনা এখনও সতর্ক রয়েছেন। নিঃসন্দেহে, নয়াদিল্লির সাথে ঢাকার জন্য সম্পর্ক জটিল এবং সম্প্রতি একটি অঘোষিত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, পাকিস্তান নয়, ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক প্রতিবেশী হচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতের এমন আচরণ করা উচিত যাতে ঢাকাকে প্রাচ্যের দুই বিকল্পের একটিকে বেছে নিতে না হয়। ভারতকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের দেশ যা সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে। বর্তমানে তারা ন্যায়সঙ্গত আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির প্রতীক। চীনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে ঢাকার সাথে তাদের সম্পর্ক এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে ভারতের উদ্বেগ প্রশমিত হয়ে সব পক্ষের জন্য লাভজনক একটি আঞ্চলিক কাঠামো তৈরী হয়। বর্তমানের চীন-পাকিস্তান-ভারত ত্রিভূজকে বিচ্ছিন্ন করতে সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য এটি হতে পারে আদর্শ সুযোগ। সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।



 

Show all comments
  • Alamgir kabir ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 1
    যা করার ভালই করেছেন! যা হবার ভালই হয়েছে! বিদেশীদের সাথে সংবাদ সম্মেলন শেষে স্বদেশীদের জন্য কি করতে চান সে বিষয়ে একটা ভাললাগার মত সংবাদ সম্মেলন আশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Codie Kidd ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশে যে কিভাবে মানুষের ভোটের অধিকার হনন করে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে সেটা তো চীন জানে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Nirjon Nahid ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    চীনারা অনেক ইনভেস্ট করেছে এই দেশে.
    Total Reply(0) Reply
  • Julekha Khanom ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট ডাকাতি সম্পন্ন হয়েছে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Limon Khan ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    Awoami leag rape our democracy we lost our independent & our nation shame on Election commission rest in peace
    Total Reply(0) Reply
  • ahmed ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    এমন নির্বাচনে আমি একজন ভোটার হিসেবে ব্যাথিত, লজ্জিত, অপমানিত । বিশ্ববাসী নিবিড়ভাবে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন । ২০১৮তে বিশ্বের কোথাও এমন প্রহসনের নির্বাচন হয় নাই ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    দলীয় সরকারের অধীনে একটা সুন্দর নির্বাচন করার সুযোগ সৃস্টি হয়েছিল কিন্তু ইসি,সরকারি দল, আদালত,পুলিশের অনভিপ্রেত ভূমিকার কারনে তা ভেস্তে গেল!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    এই দুই পরাশক্তি প্রতিবেশীর স্বার্থের হলি খেলায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন, সাধারণ মানুষ নির্যাতিত, আইনের শাসন, মানবাধিকার ভুলষ্ঠিত। তারা তো চাই মুসলিমরা মার খাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Mafij Uddin ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
    এমন নির্বাচনে আমি একজন ভোটার হিসেবে ব্যাথিত, লজ্জিত, অপমানিত । বিশ্ববাসী নিবিড়ভাবে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ