Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাঁকা রাজধানী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নির্বাচনের পর রাজধানী গতকালও ছিল অনেকটাই ফাঁকা। নির্বাচনের জন্য একদিনের সাধারণ ছুটিসহ আগের দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় কর্মজীবিদের বেশিরভাগই চলে গেছেন ঢাকার বাইরে। এছাড়াও বছরের শেষদিনের আনন্দ কাটানোর জন্যেও কেউ কেউ ছেড়েছেন ঢাকা। থার্টিফার্স্ট নাইটে ডিএমপি’র নির্দেশনার কারণেও গতকাল রাজধানীবাসির অনেকেই বের হননি। প্রচন্ড কর্মব্যস্ত এই নগরীর সড়কগুলোতে নেই কোন যানজটের যন্ত্রণা। প্রায় ফাঁকা, রাজপথে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু’একটা গণপরিবহন চললেও এগুলো প্রায় যাত্রীশূন্যই বলাই চলে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানী স্বাভাবিক সময়ের প্রায় উল্টো। ফার্মগেটে দৌড়ে বাসে ওঠার তাগিদ নেই কোনো যাত্রীর, নেই দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। মহাখালীতে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে থাকা গাড়ি নেই, নেই মিরপুরের ১০ নম্বর গোল চত্বরে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীর সড়ক পারাপারের চিত্র। বনানী ও আশেপাশের সড়কগুলোতে নেই স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। মতিঝিল ও কারওয়ান বাজারের অফিস পাড়াগুলোতে পেশাগত কারণে মানুষের উপস্থিতি থাকলেও মধ্যাহ্নভোজে এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে নেই অন্যান্যদিনের মতো ব্যস্ততা। তবে কিছুটা ব্যস্ত ও যানজট দেখা যায় গুলিস্তান এলাকায়। কিন্তু তাও অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনেক কম।
রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টেও তেমন কোনো গণপরিবহন চোখে পড়েনি। ছিল না কোনো যাত্রীর চাপও। অনেকে ভোট দিতে এবং ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করেই অনেকে বাড়ি চলে গেছেন।
সাধারণত রাজধানীর রেলস্টেশন, বাস এবং লঞ্চ স্টেশনগুলোতে সবসময় যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় থাকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই এসব স্থান একেবারেই ফাঁকা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, রামপুরা এবং কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও কোথাও দুএকটা গণপরিবহন চলতে দেখা গেলেও সেগুলোতে নেই প্রত্যাশিত যাত্রী। আবার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার কিংবা অন্যান্য যানবাহনের পরিমাণও একেবারেই কম ছিল।
কমলাপুর এলাকার মুগদাপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহমদ বলেন, সারাবছরই এ এলাকাতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। একদিকে রেলস্টেশন অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলার বাস কাউন্টার। স্থানীয় লোকদের এসব সহ্য করেই থাকতে হয় বাধ্য হয়ে। কিন্তু গত তিনদিন ধরে যানজটের এই ঝামেলা না থাকায় তারা খানিকটা প্রশান্তিতে আছেন বলে জানান। এমন ঢাকা শুধু ঈদের ছুটি ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। তবুও এবার নির্বাচনের ছুটিতে বেশিরভাগ লোক ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় ভোট দিতে চলে গেনেছ। যে কারণে আবারও ফাঁকা ঢাকা পেয়ে ভালো লাগছে। তবে সারাবছর যদি এমন হতো কত ভালো লাগতো। কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব! এটা তো আশাও করা যায় না। প্রতিদিন যেভাবে মানুষ আসছে ঢাকায়।
রামপুরা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, ফাঁকা ঢাকায় গত দুতিনদিনে আমরা মহল্লার গলিতে ক্রিকেট খেলেছি। আমার বন্ধুদের কেউ কেউ নির্বাচনের দিন মূল রাস্তায়ও খেলাধুলা করেছে। অনেক আনন্দ করেছি আমরা। কিন্তু আর এক দুদিন পরই তো সব স্থানে মানুষের ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যাবে। এটা ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
নির্বাচনের ছুটির প্রভাব পড়েছে রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণপরিবহনের উপর। এসব গণপরিবহনগুলোর বাস কাউন্টার একেবারেই ফাঁকা। কোনো কোনো কাউন্টার বন্ধই রাখা হয়েছে যাত্রী না থাকায়।
সায়েদাবাদেন হিমাচল পরিবহনের কাউন্টারম্যান ছিদ্দিক বলেন, সবাই নির্বাচনের দুদিন আগেই গ্রামে চলে গেছে। যে কারণে এখন যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। এ কারণে কেউ কেউ কাউন্টারও বন্ধ রেখেছে গত দুদিন। তবে, ভোট দিতে কিংবা বার্ষিক পরীক্ষার পর যারা ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ এলায়কায় গেছেন তারা এখন ঢাকা আসতে শুরু করেছে। তাই, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
একই কথা বললেন কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকেট মাস্টার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভোটের দিন আর গতকাল একেবারেই কাউন্টার ফাঁকা ছিল। অনেকগুলো কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে যাত্রী না থাকায়। ঈদের সময়ও এতো যাত্রী সঙ্কট থাকেনি। এখন আবার ফেরার পালা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রিদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ