পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নৌকার প্রার্থীদের জয় জয়কার হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটদানে বাধা, এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ, ২১ জনের প্রাণহানি, ধানের শীষের ৫১ জনসহ প্রায় শতাধিক প্রার্থীর ভোট বর্জন, আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব আচরণ, হামলা-পাল্টা হামলাসহ নানা অনিয়ম আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয় ২৯৯ আসনে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার ভোটার ভোট দিতে বাধা পেয়ে ফিরে গেছেন। গ্রামের চিত্রও ছিল প্রায় অভিন্ন।
গতকাল মধ্যরাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় ফলাফল ঘোষণা চলছিল। নির্বাচন কমিশন প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ২৫৬ জন, বিএনপির ধানের শীষে মাত্র ৬ জন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে ২০ এবং অন্যান্য ২ জনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। ঐক্যফন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে। স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী ভোটের চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা, জনগণের সংশ্লিষ্টতা সবকিছু মিলে একটি হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি আমি অবলোকন করছি, উপলব্ধি করছি এবং অনুভব করছি। ৫০ বছরেও আমি এমন নির্বাচন দেখিনি’।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়। স্থগিত গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি। বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দু’একটি স্থানে ‘বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ ছাড়া সারাদেশে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ভোট শুরুর পর থেকেই এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করে। ইসিতে তারা একের পর এক অভিযোগও দেন। কিন্তু ইসি ছিল নির্বিকার। নির্বাচন কমিশন অবাধ-নিরপেক্ষ-সুন্দর নির্বাচনের দাবি করলেও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম ভোট দেয়ার পর স্বীকার করেন ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের পুলিশ এজেন্ট দেখতে পাননি। মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আমার কাছে বহু অনিয়মের খবর আসছে। কিন্তু আমি একাই কী করতে পারি। আমার একার কিছু করার নেই। অনিয়মের কারণে ২২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুবার জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোট। এবার টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পথে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এক দশক পর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এবারই প্রথম ৬টি আসনে সব ভোটার ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়।
নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পর বেশ কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলের পর এখন মোট প্রার্থী এক হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকিরা দল মনোনীত। দেশে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রতীক থাকলেও এ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে অর্ধেক সংখ্যক দলই দুই মেরুতে ভিড়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা ও তরীকত ফেডারেশনের ১৪ জনকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয় ২৬টি আসন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ১৪৮টি আসনে মুক্তভাবে দলীয় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিজেপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনপিপি ও পিপিবির ৪৩ প্রার্থী।
নির্বাচনের সময় গতকাল ঢাকায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোটের সার্বিক চিত্র ভিন্নরকম। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক; অন্যদিকে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের তেমন দেখা যায়নি। বহু কেন্দ্রে ধানের শীষের পুলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। অধিকাংশ ভোটদেন্দ্রে দেখা গেছে কিছু তরুণ নৌকা প্রতীকের ব্যাচ পড়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিচ্ছেন। সেখানে ধানের শীষসহ অন্য কোনো প্রার্থীর প্রতিনিধি চোখে পড়েনি। তারা ভোটারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভোট দেয়ার জন্য ভিতরে ঢুকাচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকায় ভোট দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, কেউ কোথায় ভোট দেবেন জানাতে চান। নৌকায় ভোট যারা দেবেন তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। অন্য প্রতীকে যারা ভোট দেবেন বা কাকে ভোট দেবেন জানাতে অস্বীকার করেন তাদের বিকেল ৩টার পর আসতে বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। রাজধানী ঢাকার শতাধিক কেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। হাজার হাজার ভোটার ভগ্নমনে ভোট দিতে না পেরে ফিরে যান। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভোট দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সামনেই এসব ঘটছে অথচ তারা নীরব দর্শক হয়ে দেখছেন। কোথাও কোথাও আইন শৃংখলা বাহিনীকে নৌকায় প্রার্থীদের পক্ষ্যে কাজ করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কেন্দ্রে আগের রাতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা রাত কাটান। তারা কেন্দ্রে খিচুরি রান্না করে খেয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন আশপাশের সাধারণ মানুষ। এমনকি প্রার্থীদের ওপর পুলিশের সমানেই আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে।
যশোরে রাতেই ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্টদের করে দেয়া, ভোটারদের ভোটদানে বাধা, রাতেই ব্যালটে সিল মারাসহ নানা ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যশোর-৩(সদর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়িতে হামলা, প্রার্থীসহ তার সঙ্গে থাকা দু’জন সাংবাদিক আহত এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোটদানে ভোটারদের বাধার অভিযোগে জেলা রিটার্নি অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়ে। যশোর-৪(বাঘারপড়া) আসনে জাপা প্রার্থী এ্যাডঃ জহির রিটার্ণিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার লোকজনকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। যশোর-৫(মণিরামপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বারী অভিযোগ করেছেন, তার আসনের অনেক কেন্দ্রেই ভোটারদের যেদে দেওয়া হয়নি। গেলেও ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তার অভিযোগ রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। যশোর-১(শার্শা) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তির অভিযোগ প্রায় একই। যশোর পুলিশ সুপার মোঃ মঈনুল হক জানান, সদরের ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়িতে হামলা ও আহত ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, প্রার্থীদের অভিযোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করা হবে।
খুলনাঞ্চলের ১২ প্রার্থীর ভোট র্বজন
খুলনা ব্যুরো জানায়, বৃহত্তর খুলনার ১৪টি আসনের ১১টি আসনের বিএনপি প্রার্থী ও একটিতে জাপা’র প্রার্থী ভোট বর্জন করে। খুলনায় ধানের শীষের ৫ ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের এক প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোট গ্রহণের এক ঘণ্টার ভেতরে খুলনা- ৫ আসনের সব ভোটকেন্দ্রের কক্ষের দরজা বন্ধ করে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের পর থেকে শত শত ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ডুকতে দেওয়া হয়নি। বেশ কিছু নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী, রিটানিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়েছে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যে কারণে প্রহসনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।
সিলেটে ভোটের চিত্র
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি, কোথাও আবার দেখা গেছে কম উপস্থিতি। সরকার সমর্থকরা ভোটকে উৎসবমুখর বললেও নির্বাচনকে প্রহসনের নাটক বলছে বিএনপি সমর্থকরা।
দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইসরাব আলী ভোট কেন্দ্রে দুপুর পৌনে ১টার দিকে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। এসময় তারা জানান, ভোট কেন্দ্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হঠাৎ করে কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে একদল দুর্বৃত্ত। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও টহল পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই উপজেলার ৪ নং কুচাই ইউনিয়ন পরিষদ ভোট কেন্দ্রে দুপুর সোয়া ১টা গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রের বাইরে পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি। কেন্দ্রটির ভোটার ও গোটাটিকর এলাকার বাসিন্দা রুবেল আহমদ জানান, ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া এই কেন্দ্রে কোন কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও নতুন ভোটারদের আইডি কার্ড না থাকায় বিপাকে পরেছেন তারাও। তাই অনেককেই ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
কক্সবাজারে ভোটের হালচাল
বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারের ৪টি আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘাত সংঘর্ষে মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট গ্রহণ। এতে করে কক্সবাজারের মানুষ শুধু নয় সারা দেশের মানুষ আরো একবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হল। টেকনাফের লেদা প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে নৌকা সমর্থকরা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ধানের শীষের এজেন্ট দের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়। কক্সবাজার শহরের হাশেমিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা গুলাগুলি করে ধানের শীষের এজেন্ট ও ভোটারদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়। এছাড়া ভোট কেন্দ্রে অপেক্ষামান ভোটারদের বিজিবি সদস্যরা বলতে শুনাগেছে, আপনারা ঘরে চলে যান' ঝামেলা করবেন না। হাশেমিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ যুবলীগের একটি মিছিল ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাড়ানো শত শত নারী পুরুষকে সরিয়ে দেয়। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা ভোটারদেরও বের করে দেয় তারা। এসময় শত শত নারী পুরুষ কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।
এসময় দুই গাড়ি বিজিবি সদস্য সেখানে উপস্থিত হলে অপেক্ষামান নারী পুরুষকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলতে শুনাযায় 'আপনারা ঘরে চলে যান'। এদিকে কক্সবাজার, টেকনাফ, চকরিয়া, রামু ও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ভোট কেন্দ্র সমুহে রাতেই ব্যালট পেপারে নৌকার সীল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
এদিকে বিভন্ন কেন্দ্রে সকালে ভোটার দেখাগেলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ১০ টার পর থেকে কেন্দ্র ছিল ফাঁকা ও ভয়ে ভোটার শূন্য। অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে মার ধর করে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। আর সকালেই অর্ধশতাধিক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মার ধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। এসময় উখিয়ায় মহিলা মেম্বারসহ আহত হয়েছে ২০ জন এজেন্ট ও টেকনাফে আহত হয়েছে ৩০ জন এজেন্ট।
নোয়াখালীতে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাতে নোয়াখালী-১ চাটখিল আসনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমাবাজির মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা হয় বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব ও নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করেন।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি একাংশ) আসনে বিএনপি প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুক ভোট বাতিল করে পুন:নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রেরিত এক চিঠিতে জয়নুল আবদীন ফারুক অভিযোগ করেন যে, আজ ভোটের দিন বিরতিহীনভাবে যুবলীগ, ছাত্রলীগ পুলিশের সাহায্যে সেনবাগ আসনের ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টি কেন্দ্র পূরোপূরি দখল করে নেয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৬৫ জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আহতদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কুষ্টিয়ায় অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়ার ৪টি আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে এ অনিয়মের অভিযোগ করে ভোটাররা। ভোটারদের জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, একজনের ভোট অন্যজন প্রদান, ধানের শীষের এজেন্ট পরিচয়ে নৌকা প্রতিকের নেতাকর্মীদের এজেন্ট নিয়োগ, সরাসরি ভোট প্রদানে বাধ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন ভোটাররা। অভিযোগে জানা যায়, বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকের নেতাকর্মীরা ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভোটাররা। সবমিলে কুষ্টিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণের অভিযোগ করে ভোটাররা। পর্যবেক্ষণ কার্ড নিয়েও রীতিমত অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। কুষ্টিয়ার শতাধিক সাংবাদিক পর্যবেক্ষণ কার্ড পায়নি। দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কুষ্টিয়া সংবাদদাতাসহ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক, বৈশাখী টিভির প্রতিনিধিসহ মিডিয়ার সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণ কার্ড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চাঁদপুরে ধানের শীষের ৪ প্রার্থীর ভোট বর্জন
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, চাঁদপুরের ৫টি আসনে অংশ নেয়া ঐক্যফ্রন্টের ৪ জন ধানের শীষের প্রার্থী ভোট বর্জন করে পুনরায় তফসিলের মাধ্যমে ভোট গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন। প্রার্থীরা জানান, নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা প্রতিটি কেন্দ্রে ভয়ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তারা ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জিম্মি করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকের সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রেখেছে। দিনে প্রহসনের নির্বাচন শুরু হওয়ার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সামনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অবহিত করার পরও কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।
গাইবান্ধায় টিয়ারসেল নিক্ষেপ
স্টাফ রির্পোটার গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার ৪টি আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পরাণ সরকারি বয়েজ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে উচ্ছৃংখল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়লে দুই জামায়াত শিবির কর্মী আহত হন। পুলিশ জানায়, গাইবান্ধা শহরের জুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে ভোট গ্রহণ চলাকালে মোবাইল ফোনে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্টের কর্মীদের সাথে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের তর্কবির্তকের একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও শটগানের গুলি ছোড়া হয়।
ঈশ্বরগঞ্জে ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থী এ.এইচ.এম খালেকুজ্জামান স্থানীয় ভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন রাতেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে লাঙল প্রতীকে সীল মেরে ব্যালটবক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এমন আলামত পেয়েছেন ঈশ্বরগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড মহিলা কলেজ, খালবলা বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রায়ের বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেনগরসহ অন্তত ৩০টি কেন্দ্রে। এরপর সকাল বেলা উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট শুরু হলেও বেলা ১১টায় ৮৮ কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৫০টির অধিক কেন্দ্র দখল সহ প্রায় সবক’টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। দখলকৃত এসব কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সীল মারার অভিযোগ করেন ধানের শীষের প্রার্থী খালেকুজ্জমান। এ সময় ধানের শীষের এজেন্ট সহ পুলিশ ৫জন সমর্থকে কেন্দ্র থেকে আটক করেছে বলেও জানান তিনি । তিনি বলেন, চরদখলের মতো ভোট কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। এ অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবিহিত করলেও কেউ কার্যকর ভূমিকা রাখেনি।
ফেনীর বাতিল চায় বিএনপি প্রার্থীরা
মো: ওমর ফারুক, ফেনী থেকে জানান, ফেনীর ৩টি আসনে নির্বাচন বাতিল চেয়ে দুপুর ১২টার মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বিএনপি প্রার্থীরা। প্রার্থীদের অভিযোগ এবং সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর কোন এজন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে স্থানীয় এবং প্রার্থীদের অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী কর্মী, সমর্থক ও এজেন্টদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। স্থানীয় ভোটার এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন সড়কের পাশে ভোট কেন্দ্রের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি।
এদিকে ফেনী-২ সদর আসনের প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি তফসিল ঘোষণার পর থেকে নিজ গৃহে অবরুদ্ধ রয়েছেন জানিয়ে বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে তার কর্মী, সমর্থক ও এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। ভোটের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কেন্দ্র যেতে ভোটারদের নিষেধ করা হয়েছে। তার নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্তদের মারধর করা হয়েছে। তার নিজ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট আনোয়ার ও ফিরোজকে রাতেই মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ফেনী-৩ আসনের প্রার্থী আকবর হোসেন জানান, তার প্রতিপক্ষ মহাজোট সমর্থিত লাঙ্গলের প্রার্থী লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। ফলে তিনি অনেকটা গৃহবন্দি রয়েছেন। রাত থেকেই তার নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের মারধর এবং পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞা উপজেলায় নির্বাচন চলাকালে ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ২৫ জনকে।
রাতেই লক্ষীপুরে ৪টি আসনের অর্ধেক ভোট শেষ
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষীপুরে ৪টি আসনে রাতেই বেশিরভাগ কেন্দ্রের ভোট কেটে নেয় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ভোট শুরু হওয়ার আগেই প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্রে মারধর ও ভয়ভীতি বের করে দেয়া হয়। পরে নৌকার সমর্থকরা নৌকা প্রতীকের সিল মেরে বাক্্রভর্তি করে। লক্ষীপুর-৩ আসনের বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ সময় বেশ কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করে বলেন, কিসের ভোট, কার ভোট, কে দেয় ভোট। কিছুই বুঝিনা। রাতেই ছিল মুহমুহ ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ। মানুষ ছিল আতংকে। ছিল না কারো চোখে ঘুম। সকাল বেলায় কেন্দ্রে এসে শুনি ভোট দেয়া হয়ে গেছে। কি আর করব। কার কাছে দিব বিচার। এদের বিচার আল্লাহ করুক। আর কি কোন দিন নিজের ভোট দিতে পারবনা। এমন কাহিনী ছিল সাধারণ ভোটারদের মুখে মুখে। একই চিত্র ছিল লক্ষীপুর-১ রামগঞ্জ,২ রায়পুর ও ৪ রামগতি-কমলনগর আসনের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে। অপরদিকে ২ আসনের মকরধ্বজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে জোরপূর্বক আওয়ামী লীগ সমর্থিত আপেল প্রতীকে সিল মারতে গেলে সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে বাধে। এসময় নৌকার কর্মী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন ভূইয়াকে ভোটাররা মারধর করে। এছাড়া নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আপেল প্রতীকে সিল মারা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এসময় কেন্দ্রের বাহিরে আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়োজিত দুইটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাও ঘটে। এছাড়া ৪ টি আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে এ হামলা-সংর্ঘষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জে ভোট বর্জন
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের ৫টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এসময় তারা অভিযোগ করেন, বলেন, বিপুল ভোট কারচুপি, কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করায় এসব প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা
ব্রাহ্মনবাড়িয় জেলা সংবাদদাতা জানান, রাজঘর সরকারি প্রাথকিম বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায় জানান, পৌনে ১১টার দিকে মহাজোট প্রার্থী এ আসনে আসার পরপর দুর্বৃত্তরা তাঁর গাড়িতে হামলা চালায়। এ আসনে ছয়টি কক্ষের মধ্যে দুটি থেকে দুটি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ১৩টি বই শেষ হয়েছিল। তবে পৌনে ১১টা থেকেই ভোট গ্রহন বন্ধ রয়েছে। এদিকে, সোয়া ১১টায় পুনিয়াউটে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের কর্মীদের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। অর্ধশত ককটেল নিক্ষেপ করে। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৩ তলা বিশিষ্ট ভষ্মীভূত হয়। বাড়ির সামনে রাখা ২ টি মাইক্রোবাস আগুনে পুড়িয়ে দেয়। হামলাকারীরা বেশকিছু ককটেল নিক্ষেপ করে। ১৫টি ককটেল অবিষ্ফোরিত ককটেল বাড়ির বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে সিংহ মার্কার প্রতীক প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফুলবাড়িয়ায় গুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
ফুলবাড়িয়া উপজেলা ( ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহ-৬, ফুলবাড়িয়া আসনে পুলিশের পিস্তল ছিনতাই, গাড়ি ভাঙচুর, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮ টায় তেলিগ্রাম পূর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে পুলিশের এ এস আই জাহাঙ্গির আলমকে মারধর করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিস্তল ছিনিয়ে নেয়। গুরুতর অবস্থায় আহত পুলিশকে মচিমহায় ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ-৬, আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ-৬, ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনে ধানের শীষ প্রতীকের ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো: শরীফুল আলম বেলা ২টা ৩০ মিনিটে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি, গ্রেফতার, ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোটাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয় নাই ।
বগুড়া-৩ আসনে লাঙ্গলের সমর্থকদের কেন্দ্র দখল
আদমদীঘি (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বগুড়া-৩ আদমদীঘি-দুপচাচিয়া নিয়ে গঠিত আসনে সকাল থেকে মহাজোটের প্রার্থীর লাঙ্গলের সমর্থকেদের দখলে সব কেন্দ্র। কোন কেন্দ্রতেই ধানের শীষের পুলিং এ্যজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কয়েকটি কেন্দ্রতে থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাদেরও বের করে দিয়েছে এবং ধানের শীষের ভোটাদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুপুরের মধ্যে প্রায় সবগুলো কেন্দ্রতে মহজোটের সমর্থকরা দখরবাজরা লাঙ্গল মর্কাায় সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেন।
নারায়ণগঞ্জে জালভোট ও বাক্সে ভোট ভরে রাখার অভিযোগ
মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, ভোট বর্জন, পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া, জালভোট ও আগেই বাক্সে ভোট ভরে রাখার অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তবে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের স্বর্তস্ফুত দীর্ঘ লাইন যেমন ছিল আবার ভোটার স্লিপ নিয়ে ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মত। সব বুথে নৌকার পোলিং এজেন্ট ছিল। আর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বুথে ‘প্রকৃত’ ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। এছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিল না বললেই চলে। মজার বিষয় হলো-নারায়ণগঞ্জ-২ ও ৪ আসনের অধিকাংশ বুথে নৌকার লোক ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট সেজে বসেছিল। আড়াইাজার উপজেলার লেঙ্গুরদীতে এম বদরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বুথে এক পোলিং এজেন্ট ধানের শীষের ব্যাজ লাগিয়ে বসে আছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি কোন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট, সে বলে নজরুল ইসলাম বাবুর। অথচ ধানের শীষের প্রার্থীর নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর পাঠানো খাবারও তিনি খাচ্ছেন। জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে হেসে উঠেন।
সকাল পৌনে ৯টায় ফতুল্লার রামারবাগ এলাকায় রওজাতুস ছালেহীন মাদ্রাসার সামনে হাসনা বেগম নামে এক মহিলা ভোটার তার ছেলেকে বলছে, সিরিয়াল না পাইলে কি করা, বাসায় যাইগা। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সকাল বেলা চলে আসছি, ভীড় এর মধ্যে যেন না পড়ি। কিন্তু কার্ড আনছি, কার্ডের নম্বর দিয়া ভোট দেওয়া যায় না। এই নাম্বার দিয়া আরেকটা সিরিয়াল নম্বর বের করা লাগে। গেটের বাহিরে নম্বর দেয় বইলা পুলিশে পাঠাইলো ওই খানে খুঁজলাম একটা খাতায়, পাই নাই। দাড়ায় আছি আধাঘন্টা। কতক্ষণ দাড়ায় থাকুম। অনেকেই সিরিয়াল নম্বর পাইতাছে না। বাসায় যাইগা।
নরসিংদীতে রাতে ভোট ভোট খেলা
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে জানান, ভোটার আছে, ব্যালট নেই। ভোটারদের উপস্থিতি নেই, ব্যালট বাক্স ভরা। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদেরকে পিটিয়ে, ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার মধ্য দিয়ে নরসিংদীর ৪টি আসনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পলাশের ৮৮ টি কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের এজেন্টদেরকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ থানা যুবদলের সভাপতি নিসার খান। ভোট কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার প্রতিবাদ করায় পলাশের গয়েশপুর পদ্মলোচন হাই স্কুল ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট রাজুকে আহত করেছে আওয়ামী লীগের ভোটকর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল বারি এবং প্রার্থী আশরাফ হোসেন ভূঁইয়া ইনকিলাবকে জানিয়েছেন যে , নরসিংদীর প্রায় সব কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদেরকে বের করে দিয়েছে। কোন কোন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উশৃংখল ভোট কর্মীরা ইসলামী আন্দোলনের ভোটকর্মীদের কে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে। তারা আরো জানায় নরসিংদীর চারটি আসনের কা সব কটি আস নেই সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারেনি। সকাল ভোট কেন্দ্র থেকেই জানানো হয়েছে ব্যালট পেপার নেই।
নরসিংদীর -৪ টি আসনেই নির্বাচনের পূর্ব দিন রাতে আওয়ামী লীগ কর্মী এবং পোলিং অফিসাররা যৌথভাবে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। পোলিং অফিসার ও আওয়ামী লীগের ভোট কর্মীরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে যে ব্যালট পেপার নেই। ভোট দেয়া যাবে না। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। ব্যালট পেপার না থাকার কারণ জানতে চাইলে সবাইকে হুমকি-ধমকি খেয়ে বিদায় হতে হয়েছে। সকালের দিকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ভোটারদেরকে এই ধরনের হুমকি ধমকি দেয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ভোটাররা সারা দিন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পায়নি। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। ফাঁকা কেন্দ্রে বসে বসে আওয়ামী লীগের ভোট কর্মী ও পোলিং প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে একত্রে খানাপিনা করতে দেখা গেছে।
নাটোরে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, নৌকার এজেন্টকে ধানের শীষের এজেন্ট বানানোসহ নির্বাচনী পরিবেশ না থাকার অভিযোগ এনে নাটোরের তিনটি আসনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভোট বর্জনের মাধমে নাটোরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল আড়াইটায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এই ভোট বর্জন করেন। প্রার্থীরা জানান, প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারার মহোৎসব চলেছে। কোন ভোটকেন্দ্রেই ধানের শীষের কোন এজেন্ট থাকতে দেয়া হয় নাই, সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কক্ষ থেকে ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই বের করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে নিজের ভোটটাও দিতে যেতে পারেন নাই সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। নৌকা মার্কার কর্মীরা তার বাড়ি ঘিরে রেখেছে এবং তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
পাবনায় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর ভোট বর্জন
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পাবনায় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন বিএনপি জোটের ৩ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন । তবে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা এবং সহকারী রির্টানিং কর্মকর্ত দের কাছ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি জোট জামায়াতের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪৪টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। নিজেরাই সীল মারছেন। সে কারণে তিনি নির্বাচন বর্জন করলেন।
কুড়িগ্রামে সরজমিন নির্বাচনের চিত্র
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ৪টি সংসদীয় আসনে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হলেও কোথাও কোথাও জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল ৮টায় সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়াই ভোট গ্রহন শুরু হয়। সকালে শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি অনেক কম। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।