Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দ্রে কেন্দ্রে বাধা ভোটারদের

সরেজমিনে রাজধানীর ভোট কেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাজধানী ঢাকায় ভোটের সার্বিক চিত্র ছিল ভিন্নরকম। নৌকার প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক;অন্যদিকে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের তেমন দেখা যায়নি। অধিকাংশ ভোটদেন্দ্রে দেখা গেছে কিছু তরুণ নৌকা প্রতীকের ব্যাস পড়ে পাহারা দিচ্ছেন। সেখানে ধানের শীষসহ অন্য কোনো প্রার্থীর প্রতিনিধি নেই। তারা ভোটারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভোট দেয়ার জন্য ভিতরে ঢুকাচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকায় ভোট দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, কেউ কোথায় ভোট দেবেন জানাতে চান। নৌকায় ভোট যারা দেবেন তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। অন্য প্রতীকে যারা ভোট দেবেন বা কাকে ভোট দেবেন জানাতে অস্বীকার করেন তাদের বিকেল ৩টার পর আসেন বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। রাজধানী ঢাকার শতাধিক কেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কেন্দ্রে আগের রাতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা রাত কাটান। তারা কেন্দ্রে খিচুরি রান্না করে খেয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন আশপাশের সাধারণ মানুষ। এমনকি প্রার্থীদের ওপর পুলিশের সমানেই আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ইনকিলাব স্টাফ রিপোর্টাররা যে চিত্র তুলে ধরেন তা এমন ঃ- ঢাকা-১১ আসন বাড্ডার ৬৪ নং কেন্দ্রে দেখা যায়, একটি ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পৃথকভাবে নারী ও পুরুষের ভোট নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। বাইরে সবাই নৌকার নেতাকর্মী ও সমর্থক। প্রত্যেকের গলায় নৌকার প্রচারণা কার্ড ঝোলানো। কেন্দ্র ও আশপাশের দেয়ালে কেবল মহাজোট প্রার্থী এ কে এম রহমত উল্লাহর পোস্টার ঝোঁলানো। পুরো এলাকার কোথাও ধানের শীষের কোন নেতাকর্মী বা সমর্থককে দেখা যায়নি। এমনকি দেয়ালে বা কোথাও ধানের শীষের পোস্টার দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের সামনে ভোটরদের মাঝারি একটি লাইন ছিল। প্রত্যেককে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য আগেই বলে দিচ্ছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত নৌকার নেতাকর্মীরা।
৬টি বুথে আওয়ামী লীগের ৬ জন এজেন্ট থাকলেও দু’একজন লোক নিজেদের বিএনপিসহ অন্যান্য দলের এজেন্ট বলে দাবি করে। তাদের কয়েকজনের কথায় সন্দেহ হলে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়। তখন তাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের সিল-স্বাক্ষরহ ছবিযুক্ত যথাযথ পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এজেন্ট পরিচয়দানকারীরা সদুত্তর দিতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর এক নারী এজেন্টকে দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখে তাকে থামানো হয়। ওই নারী বলেন, তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, কেন্দ্রের মোট ভোটা সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫১ জন। সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ ভোট কাস্ট হয়েছে। ৬টি বুথে নৌকার ৬ জন, ধানের শীষের ৫ জন, লাঙলের ৪ জন ও হাত পাখার একজন করে এজেন্ট আছেন বলে তিনি দাবি করেন।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশের এসআই আব্দুল মান্নাফ বলেন, সকাল পর্যন্ত ধানের শীষের কোন এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনি। ৮টার পর চারজন এজেন্ট আসেন। কিন্তু তাদের পরিচয়পত্রের সাথে সিলসহ ছবি যুক্ত না থাকায় তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। পরে প্রিসাইডিং অফিসার অনুমতি দিলে তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
বাড্ডার জয় এন্ড হোপ স্কুল ও সাতারকুল দ্বীন মোহাম্মদ দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে ভয়াবহ চিত্র। বাইরে বিএনপি না ঐক্যফ্রন্টের কর্মী-সমর্থক না থাকলেও একচোটিয়া দখল নৌকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। কেউ ভোট দিতে আসলে তাদেরকে পর্দার আড়ালে না গিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বলা হচ্ছে। কোন ভোটার অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও উত্তর বাড্ডা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র। অনেকে ভোট দিতে কেন্দ্রের সামনে লাইন দাঁড়ালেও তাদেরকে ঠিক সময়ে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বাড্ডা হাইস্কুলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই কেন্দ্রে ভেতরে ফাঁকা। আর ভেতরে ভোটারদের লাইন না থাকলেও বাহিরে নৌকা প্রার্থীর একটি নির্বাচনী কেন্দ্রে লাইন লক্ষ করা গেছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের বাহিরে কয়েকশ লোকজনের জটলা। সবাই সরকার দলীয় সমর্থক। এই আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম কেন্দ্রে আসেন ১০টায়। ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শামীম আরা। তিনি বলেন, আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সরকারদলীয়রা। তিনি বলেন, আমার নিজের কেন্দ্রে ৩২ জন এজেন্ট দিয়েছিলাম। ভোট দিতে এসে ৭-৮ জন পেয়েছি। বাকিদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একজন যুবদল কর্মী ভোট দিতে আসলে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া নানা অনিয়মের খবর পেয়ে অভিযোগ জানাতে বার বার সেনাবাহিনীর লোকজনকে ফোন করলেও কেউ সাড়া দেননি বলে জানান তিনি। ওই স্কুলে ৪টি কেন্দ্র থাকলেও কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের কোন ভিড় ছিল না। বিএনপি বা ধানের শীষের কোন কর্মী-সমর্থক কেন্দ্রের কাছে ভিড়লেই তাদেকে তাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। এক ব্যক্তি জোড়াজুরি করে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয় এবং আশপাশে থাকলে খবর আছে বলে হুমকি দেয় নৌকার নেতাকর্মীরা।
৪টি কেন্দ্রের তিনটিতে ধানের শীষের কোন এজেন্ট নেই। একটিতে এক ব্যক্তি নিজেকে ধানের শীষের এজেন্ট পরিচয় দিলেও সে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। ১৬ নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, বেলা ১২টা পর্যন্ত ৪টি বুথে ২ হাজার ৩৫ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪শ’ জনের ভোট কাস্ট হয়েছে। ১৭ নং কেন্দ্রের ২০৩৫ ভোটের মধ্যে ৩০ শতাংশের মতো, ১৮ নং কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৮৩ ভোটের মধ্যে ৭০০ ভোট এবং ১৯ নং কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৩৬ ভোটের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। ১৯ নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মারুফ হোসেন বলেন, বিএনপির এজেন্টকে পাইনি।
মালিবাগের চৌধুরী পাড়ার সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ ও বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। দাড়িয়ে থাকা ভোটারদের মধ্যে চরম অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। ভোট কেন্দ্রের প্রবেশ পথে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা রয়েছেন। দীর্ঘ সময়ে ভোট প্রদান করতে না পেয়ে ভোটাররা কেউ কোন কথা বলছে না। সাংবাদিক দেখেই অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে থাকেন সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে থাকার কথা। ৩-৪ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন এমন অভিযোগও করেন অনেকে।
এই কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় তিন তলায় ভোটের ব্যবস্থা। ৫ জন করে ডাকা হচ্ছে ভোটারদের। দেড়টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৪নং বুথে ভোট পড়েছে ৬৭টি। ৫ নং বুথে ভোট পড়েছে ৯৫টি। আর ২নং বুথে ভোট পড়েছে ১১৯টি। বাহিরে দীর্ঘ লাইন থাকলেও বুথ কক্ষ প্রায় ফাঁকা। অলস বসে রয়েছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, লাইন কেবল একটি। এ জন্য দেড়ি হচ্ছে। এর আগে উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। তবে বাহিরে ভোটারদের ভীড় থাকলেও ভেতরে তেমনটা লক্ষ করা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সৈয়দ জামান ইমাম বলেন, পোলিং এজেন্ট না আসলে আমার কি করার আছে।
ঢাকা-১২ আসন: আসনে গিয়েও চোখে পড়ে এমন চিত্র। কোথাও চোখে পড়েনি ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের। পুরো এলাকা ঝুড়ে কেবল বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের পোস্টার। দুপুরে ২টার পরে ফার্মগেটের সরকারী বিজ্ঞান কলেজে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রের ভেতরে বাইরে সবাই নৌকার কর্মী-সমর্থক। আশপাশের ত্রিসীমানায় কোথাও বিএনপির নেতাকর্মী বা সমর্থকদের ছায়া দেখা যায়নি। কেন্দ্রের ভেতরে এমনকি ভোটকক্ষেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল। তবে ধানের শীষের কোন এজেন্টকে ভেতরে দেখা যায়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফেরদৌস হাসান বলেন, সকাল থেকে বিএনপির কোন এজেন্ট আসেনি, অন্য নৌকার এজেন্টসহ অন্য প্রার্থীদের কয়েকজন এজেন্ট ছিলেন। তবে বিজ্ঞান কলেজ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ১ হাজার ৭০৩টি ভোটের মধ্যে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়।
এদিকে,তেজগাঁও মহিলা কলেজে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। সাংবাদিক পরিচয়ে ভেতরে ঢুকতে চাইলে অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ ওপরে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে ডেকে আনেন। তার সাথে ভেতরে গিয়ে ভোট কক্ষে একসাথে অনেককে ব্যালটে সিল দিতে দেখা গেছে। ওই প্রিসাইডিং অফিসার তখন ভোটকক্ষের লোকদের সরে যেতেও বলেন।
ঢাকা-৭ আসনের ভাগলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট থাকলেও অন্য প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট ছিল না।
ঢাকা ৮ আসনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের কোন লাইন নেই। কেন্দ্রের প্রবেশ করে জানা যায়, ধানের শীষ ও ল্ঙ্গালের কোট এজন্টে নেই। শুধুমাত্র নেীকা ও হাতপাখার এজেন্ট রয়েছেন। সাংবাদিক প্রবেশ করতেই প্রথমে বাধা দেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্র পরিচায় দেওয়ার পর কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও কমলাপুর শেরে বাংলা রেলওয়ে স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায় স্কুল প্রাঙ্গণের মাঠে নৌকার সমর্থকদের সবর উপস্থিতি।
ঢাকা ৬ ঃ
পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারে অবস্থিত সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে বাধা দেয় প্রবেশমুখে থাকা কয়েকজন যুবক। এছাড়াও টিপু সুলতান রোডের গ্র্যাজুয়েট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ নির্দেশ দিয়েছেন। কমর্রত সাংবাদিকেরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। পরে এএসআই শফিক জানান, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকা-৬ আসনের অন্তর্ভুক্ত গ্র্যাজুয়েট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হচ্ছে। কেন্দ্রে দুপুর পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি ছিল মোটামুটি। তবে এই কেন্দ্রে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। এ আসনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই তাদের জোট শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। ধানের শীষের প্রার্থী গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
ঢাকা-৩, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষ, হাতপাখাসহ অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্ট বিহীন ভোট দিতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, সকাল সাড়ে ৯ টায় শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ সালাহ উদ্দিন আহমেদ কতিপয় কর্মী নিয়ে ভোট দিতে গেলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে গুরুত্ব জখম হন। তার কর্মীরা জানান, লাঙ্গলের সমর্থক মাসুক ও তাজুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দ্রুত উদ্ধার করে রাজধানীর এ্যাপোল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঢাকা-৪ আসনের বাকচর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর দেড় টায় অর্ধশত অপ্রাপ্ত যুবক লাঙ্গলের পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যালটে সীল মেরে বাক্সে ভরে। এসময়ে হাতপাখা মার্কা ও চরমোনাই পীর ছাহেবের প্রার্থী মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী উক্ত বুথে ঢুকে প্রকাশ্যে সীল মারতে দেখে হতবাক হন। তিনি দু’টি ব্যালট পেপারসহ কয়েকজন যুবককে ঝাপটে ধরে চিৎকার দিয়ে তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাহায্য চান। মূহুর্তের মধ্যে এসব যুবক ব্যালট পেপার ফেলে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন পুলিশ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বলেন, আমি কয়েকজন যুবকের অপতৎপরতা দেখে তাদের বাধার চেষ্টা করছি। মাজেদা জলিল মডেল স্কুল কেন্দ্রে হাতপাখার নিযুক্ত এজেন্ট ফোরকান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, লাঙ্গলের পক্ষের কর্মীরা সকাল ১১টার পর থেকে জাল ভোট দিতে শুরু করে। এ ব্যাপারে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। ৩ হাজার ৯শ’ ৮৪ ভোটারের এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবুল বাশার জাল ভোট দেয়া সর্ম্পকে বলেন, জাল ভোটের ব্যাপারে একটি প্রাণীও অভিযোগ দেয়নি। আমাকে অবহিত না করলে জানবো কি ভাবে ? উল্লেখিত কেন্দ্রটিতে উপস্থিত হয়ে হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী সাংবাদিকদের বলেন, লাঙ্গল মার্কা প্রার্থী বাবলার লোকেরা তান্ডপ চালিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে হাতপাখার নিযুক্ত এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে। তারা একটি মগের মুল্লুক পেয়েছে। এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনের আশা করিনি। কেন্দ্রে কর্তব্যরত অফিসাররা কোনো দায়িত্বই পালন করছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাঙ্গলের লোকেরা বুকে ব্যাচ পড়ে দলে দলে কেন্দ্রে বসে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তারা হাতপাখার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে এবং রাস্তার ওপর হাতপাখার কর্মীদের চেয়ার-টেবিল ফেলে দিয়ে তাঁড়িয়ে দিচ্ছে। ইউসুফ মেমোরিয়াল স্কুলে ১২টার মধ্যেই ব্যালট পেপার নেই বলে ভোটারদের তাঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। জুরাইন সরকারী প্রাইমারী স্কুল ও মেরাজনগর এইচ ইউসুফ স্কুল থেকে হাতপাখার নিযুক্ত এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলেন তিনি। পূর্ব কদমতলী ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা কেন্দ্রের হাতপাখা মার্কার এজেন্ট আবির ও নাসিম জানান, ল্ঙ্গালের কর্মীরা প্রকাশ্যে জাল ভোট দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাশেদুননবী বলেন, কিছু লোক ৪/৫টি জাল ভোট দিয়েছে । বাকি জাল ভোট ব্যাক্সে ফেলতে দেইনি। শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাঙ্গলের কর্মীরা গেইটের ভেতরে চেয়ার নিয়ে বসে থাকলেও সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। কেন্দ্রে আগত মৃত শষিমন সরকারের ১শ’ বছরের স্ত্রী অন্ন্যদা সরকারককে ভোট দিতে দেখে অনেকই হতবাক হন। দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট ছাড়াই ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা-৫ আসনের যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এ কে মাইনুল হক জানান, ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনি। যাত্রাবাড়ী বালক সরকারী প্রাখমিক বিদ্যালয়েও ধানের শীষের এজেন্ট চোখে পড়েনি। কুতুবখালি দাগুখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ২শ’ ৫০ জন ভোটারের মধ্যে ধানের শীষের এজেন্ট দেখা যায়নি। ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসায় সকল থেকেই ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্যকরা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ