পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের ভোটের চিত্র ছিল এমন। ভোটকেন্দ্র প্রথম দর্শনে মনে হয় ‘শান্তিপূর্ণ’! ভোটারদের দীর্ঘ লাইনও ছিল। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারা, রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনীর ব্যাপক টহল, ভ্রাম্যমাণ আদালতও ছিল। অথচ অধিকাংশ এলাকায় নীরবেই ভোটকেন্দ্র দখল করে নৌকার পক্ষে কেন্দ্রের ভেতরে হরেক রকম কৌশলে চলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। গতকাল বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ নির্বাচনী আসনে ‘অবাধে’ ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপারে যথেচ্ছভাবে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়।
শান্তিপ্রিয় সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েই জানতে পারেন তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ভোটারদের আস্তে-ধীরে ভোট দেয়ার সুযোগের আড়ালে নৌকার ক্যাডার-কর্মীরা আরেকদিকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশের সামনেই ভোটকেন্দ্রের আশপাশে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করতে দেখে গেছে। তাদের তাড়া খেয়ে অনেক ভোটার প্রাণে বাঁচতে পালাতে দেখা যায়। বিএনপি জোটের ধানের শীষের প্রার্থীদের অধিকাংশ এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে দাঁড়াতে পারেনি ক্যাডারদের তান্ডবের মুখে। পুলিশসহ সমগ্র প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
ভোটারদের মধ্যে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোররাতে ও পরে সুকৌশলে নৌকার এজেন্টরা কেন্দ্র দখলে নিয়ে ইচ্ছেমতো ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সভর্তি করার খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা প্রকাশ্যে ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোথাও নির্বিকার আবার কোথাও ছিল সহায়ক। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই নগরীর লালখান বাজার মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা চড়াও হয়ে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়। এরমধ্যে মাওলানা মহিউদ্দিন নামে একজন পোলিং এজেন্টকে ধরে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা মাদরাসায় ভাঙচুর চালায়। আশপাশের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে। এসব তান্ডব চালানোর আগে নৌকার কর্মীরা বুথ দখল করে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। সকাল ১১টায় কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল কেন্দ্রের বাইরে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে আটকে রেখে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নৌকার এজেন্ট ও কর্মীরা বুথ দখল করে ইচ্ছেমতো ব্যালট পেপারে সিল মারে, ভর্তি করে ব্যালট বাক্স। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় হরিহারা ভোটকেন্দ্রে সকাল ৯টা নাগাদ ধানের শীষের ৬ জন পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়ে ৩ জনকে ভোটকেন্দ্রের পেছনে গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে ক্যাডাররা।
এছাড়া নগরীর চর চাক্তাই মাদরাসা, নাসিরাবাদ সরকারি গার্লস হাই স্কুল, পলিটেকনিটক ইনস্টিটিউট, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বিএড কলেজ কেন্দ্রসহ অনেক ভোটকেন্দ্রে নৌকার ক্যাডার-কর্মীরা চড়াও হয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি সৃষ্টি, তাড়িয়ে দেয়া এবং ধীরগতিতে ভোট কাস্ট করে ভেতরে বুথ দখল করে পাইকারিভাবে নৌকা মার্কায় সিল মারার মহোৎসবে মেতে উঠে।
অথচ ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই সকাল ৭টা, সাড়ে ৭টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি আসনসহ জেলার ১৬টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার ভোটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাছাড়া নগরী ও জেলার সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলিতে যানবাহন চলাচল না থাকা সত্তে¡ও মহিলা-পুরুষ বিশেষ করে নবীন-তরুণ ভোটাররা উৎসাহ-আগ্রহ নিয়ে পায়ে হেঁটে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু তারা নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে যখন ভোট দিতে পারেননি হতাশ হয়ে ফিরেন। এ অবস্থায় সর্বত্র মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ আর হতাশা। চট্টগ্রামবাসী অধিকাংশ ভোটারেরই নিজের ভোটটি নিজে দেয়ার এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা অধরাই রয়ে গেল।
নৌকার লোকদের ভোটের সুযোগ
নৌকার কর্মী আর তাদের পরিচিতরাই ভোট দেয়ার সুযোগ পেলেন। বাকিদের ফিরে যেতে হলো। ভোর থেকে ভোটকেন্দ্রের সামনে নৌকার ব্যাজধারীরা। ভোটারদের চেহারা দেখে মিলেছে কেন্দ্রে ঢুকার অনুমতি। তারাই ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-৯-১০ ও ১১ সংসদীয় আসনের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফজরের নামাজের পর ভোটকেন্দ্রের সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা যায়। তার আগেই সেখানে অবস্থান নেন নৌকার কর্মীরা। মানুষের জটলায় ঢুকে ভয়ভীতি আর হুমকি-ধমকি দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় বেশিরভাগ ভোটারদের। বেশিরভাগ কেন্দ্রে ছিল না ধানের শীষের কোন এজেন্ট। পতেঙ্গা এলাকায় দুই একটি কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল সেখানে ভোটও সুষ্ঠু হতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক এলাকার বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মহিলা ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার এসএম মেজবাহ উদ্দিন জানান, নৌকার কর্মীরা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক দফা ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে তাতে সিল মারতে চায়। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। তবে কতক্ষণ এভাবে ধরে রাখবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল তার। কেন্দ্রের ভেতরে নৌকার কর্মীরা গিজগিজ করছিল। গেইটে দেখা যায়, নৌকার কর্মীদের অবস্থান। একই চিত্র পাশের পুরুষ ভোটকেন্দ্রেও। সেখানে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, সাতটি বুথে দুই ঘণ্টার কমসময়ে ১২শ’ ভোট কাস্ট হয়। ১০টার পর কেন্দ্রে ভোটার ছিল না। গেইটে যথারীতি নৌকার কর্মীদের অবস্থান।
পিএইচআমিন একাডেমী স্কুলে চার হাজার ৫৯৮ ভোটের মধ্যে সকাল ৯টায় আড়াই হাজার ভোট কাস্ট হয়ে যায়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মধুসূদন দাশ দাবি করেন, খুব দ্রুতই ভোট হয়ে গেছে। নগরীর বারিক মিয়া বহুমূখী স্কুল কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট পাওয়া গেছে। প্রিসাইডিং অফিসার এসএম জোবায়ের হাসান জানান, সকাল ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় এক হাজার ভোট কাস্ট হয়েছে। ওই কেন্দ্রে ভোট দেন নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ। দক্ষিণ হালিশহর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও বিএনপির এজেন্ট ছিল। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই স্কুলের তিনটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়। একটি বুথে দেখা যায়, ৫২০ ভোটের মধ্যে তখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৫ ভোট কাস্ট হয়। নগরীর নিউ ঝাউতলা স্কুলে সকালেই অনেকের ভোট দিয়ে দেয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, নৌকার কর্মীদের বাধা ঠেলে কেন্দ্রে ঢুকে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এ সময় কয়েকজন ভোটারের চেঁচামেচিতে প্রিসাইডিং অফিসার তিনিসহ ওই ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেন। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে গেইটে ছাত্রলীগের পাহারা দেখা গেছে।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছাত্রলীগের পাহারা
ভোটকেন্দ্রের গেইটে ছাত্রলীগের পাহারা। দাড়ি টুপি দেখলে তাড়িয়ে দেয় তারা। নগরীর বাকলিয়া ও বহদ্দার হাট এলাকার ১০টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সাধারণ ভোটাররা আসতেই তাদের গেইট থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটারেরা। তবে প্রাণভয়ে কারও কাছে অভিযোগ দেয়ার সাহসও পাননি। নিরবেই ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন। র্যাব-পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা ছিলেন নিরব দর্শক। বেলা সাড়ে ১১টায় বহদ্দারহাটে একটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ হয়।
ভোটগ্রহণে ধীরগতি
রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল তিন হাজার ২৭৪। সকাল সাড়ে ১০টায় এক হাজার ভোট কাস্ট হয়। ভেলুয়ার দীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি ভোট কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলাসহ আট হাজার ৪৮৯ ভোটার রয়েছেন। এ দু’টি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও ভোট কাস্ট ছিল ধীরগতি। অনেক মহিলা ভোটার বিরক্ত হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। এখানেও পুরুষ ও মহিলা ভোটাররা এসেছিল ভোট দিতে। কিন্তু ধীরগতিতে ভোট কাস্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে অনেককে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে যান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।