পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দিন আজ। দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটার ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। নীরব ব্যালট বিপ্লবের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন সারাদেশের কোটি কোটি ভোটার। নিষেধাজ্ঞামূলক নির্বাচনী পরিবেশে ৩০ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯৩৭, ১৯৭০, ১৯৯১ সালের নির্বাচন যেমন ইতিহাসে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাঁক ঘুরিয়েছে; তেমনি আজকের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি চাই, একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটাই আমাদের কাম্য। নতুন ভোটার, তরুণ, নারী ভোটারসহ সব বয়সের ভোটারদের ফজরের নামাজ পড়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবেই তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও, তবেই বাংলাদেশ’। এমনকি সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিন, আমরা আপনাদের আশপাশে থাকব’।
আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে ‘অসমতল পরিবেশে নির্বাচন’ হিসেবে অবিহিত করেছেন। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভাষায় এটা ‘অগণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন’। দেশের সুশীলসমাজ, বিরোধী দল ও মিডিয়ার ভাষায় ‘একপক্ষীয় প্রচারণায় নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’। পুলিশি জুলুম-নির্যাতন, বাধা-বিপত্তি এবং মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক ছড়ানো এবং জায়ান্ট দুই প্রতিপক্ষের দাঁতে দাঁত ঠোকাঠুকি বিবাদের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রশাসন-পুলিশ-নির্বাচন কমিশন-আদালত সব পক্ষ থেকে এক পক্ষকে জিতিয়ে দেয়ার কূটকৌশলের মধ্যেই মানুষের ভোট দেয়ার প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে আজ ভোট বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশেও লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন ভোট দেয়ার জন্য। যে কোনোভাবেই হোক তারা গণতান্ত্রিক অধিকার ‘ভোট’ দিয়ে আগামীর ‘শুভদিন’ গড়তে চান। ইনকিলাবের ব্যুরো, আঞ্চলিক অফিস, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সংসদীয় আসন ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে ভোটের চিত্র তুলে ধরেন। তাদের তথ্য, শীতের মধ্যেই জবুথবু মানুষ ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারেন সে জন্যই কেউ ব্যবসা-পারিবারিক বা অন্য কোনো কাজ রাখেননি। কারো কারো মধ্যে ভোট দেয়ার পরিবেশ নির্বিঘ্ন থাকবে কি না তা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও অন্যেরা তাদের অভয় দিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার উৎসাহ দিচ্ছেন।
গণতন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে তা নির্ভর করছে আজকের ভোটের ওপর। বিশ্বসভায় দেশ ‘গণতান্ত্রিক’ ‘নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক’ নাকি ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ হিসেবে চিহ্নিত হবে তা নির্ভর করছে মানুষ ভোট প্রয়োগ করতে পারল কি না তার ওপর। তাই এই নির্বাচন ‘ইতিহাসের পাতায়’ জায়গা করে নেবে। মূলত বাংলা মুল্লুকে প্রথম নির্বাচন হয় ৭৫০ সালে পাল বংশের শাসনামলে। ‘পাল’ শব্দের অর্থ হলো ‘রক্ষাকর্তা’। ওই সময় বৌদ্ধধর্মাবলম্বী গোপালকে সমাজের ১০ জন মিলে সামন্ত রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন। গোপাল ২০ বছর বাংলা মুল্লুক শাসন করেন। এর হাজার বছর পর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ উদ দৌল্লার পরাজয়ের পর ইংরেজদের শাসন শুরু। জনগণের ভোট বলতে যা বোঝায় সেটা হয় ১৯৩৭ সালে ইংরেজ শাসনামলে। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের প্রজা-কৃষক শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপমহাদেশের কৃষকদের নিয়ে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কৃষক প্রজা পার্টি (কেএসপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোট দেয়ার রেওয়াজ চালু হয়। এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর ’৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভোট বিপ্লব। মূলত ’৫৪, ’৭০ ও ’৯১ সালের নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের জন্য ছিল ঐতিহাসিকভাবে তৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘ ২৮ বছর পর নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভোট বিস্ফোরণের অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শফিউল আলম জানান, ভোটের নায়ক-মহানায়ক ভোটারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট অলি-গলি, হাট-বাজার, চায়ের দোকান, যানবাহন সবখানেই মানুষের কথাবার্তায় ঘুরেফিরে উঠে আসছে ভোট আর ভোট। দিকে দিকে সবার মুখে একই মনের বাসনা। আজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপারে কিংবা ইভিএমে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রবল ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন নারী-পুরুষ, তরুণ-যুবা ও বয়োবৃদ্ধ ভোটাররা। ধনী-গরিব দিনমজুর, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, গৃহবধূ, আলেম-ওলামা, দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে চাটগাঁর ভোটার অদম্য আগ্রহ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন একেকজন একেকভাবে। ‘আমি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাব। আমি ভোট দেবোই। আমার ভোট মূল্যবান, আমিও যাব। পরিবারের ভোটার সবাইকে নিয়েই ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবো। পাড়া-প্রতিবেশীরা মিলে আমরা যাব ভোট দিতে। নতুন ভোটার হয়ে জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে যাব বন্ধুদের সঙ্গে। ভোটদানের চান্স এবার মিস করছি না’ ইত্যাদি। যে যার পছন্দের মার্কা দেখে ভোট দেবেন। তবে সবার কথা হলো- ‘আমি ভোট দেবোই’। অনেকেই বলেছেন, আজ বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের মতো প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আছড়ে পড়বে ভোটারের জোয়ার। বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি নির্বাচনী এলাকায় পৌনে এক কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে অবিচল ও ব্যাকুল। এর ফলে ঘটতে যাচ্ছে ভোটের বিস্ফোরণ। ভোট বিপ্লব দেখার অধীর অপেক্ষায় গোটা চট্টগ্রাম। অনেকে বলছেন জনতার ব্যালটের শক্তির উত্থান এবং বিজয়ের দিন আজ। চাটগাঁর মানুষ এমনিতেই ভোটের দিনে উৎসবে মেতে ওঠেন। তার ওপর চলতি ২০১৮ সালে দেশজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘ভোট’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী মাঠে হামলা-মামলা, বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি আগে থাকলেও আজ ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে এমন জোরালো বিশ্বাস ভোটারদের মনে বদ্ধমূল। ভোটের মিশনে মাঠে থাকা সেনাবাহিনীর ব্যাপক টহল তৎপরতা দেখেও মানুষের মনোবল কয়েক গুণ চাঙ্গা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ভোটদানের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসুন ভোট দিন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটার-জনতার বাঁধভাঙা ঢল নামবে। এমনটি ধারণা পাওয়া গেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষজনের কথায়। বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং ইনকিলাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা-উপজেলা সংবাদদাতাদের মাধ্যমেও পূর্বাভাস মিলেছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণের মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় জানা যায়, আজ ভোট প্রদানকে ‘সব কাজের আসল কাজ’ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে অন্য দিনের মতো তেমন ব্যস্ততা রাখেননি ভোটাররা। ছুটির দিনের সুবাদে অনেকের কাজের তাড়া নেই। তাই যার যার ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোটদান করাই ‘আসল কাজ’। অনেকে বলেছেন সকালেই চলে যাবেন ভোটকেন্দ্রে। গৃহবধূরাও সাংসারিক কাজ সেরে রেখেছেন। কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যারা গ্রামের ভোটার ছুটি পেয়ে তারা ভোটদানের জন্য শহর ছেড়ে গ্রাম-জনপদে আছেন। শহরের ভোটাররা শহরেই আছেন। গত তিন দিনে ভোটের টানে গ্রামমুখী মানুষের স্রোতে বন্দরনগরী অনেকটাই ফাঁকা। ভোটের টানে মধ্যপ্রাচ্য ও বহু দেশ থেকে প্রবাসী অনেকেই দেশে এসেছেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় গতকাল সরেজমিন দেখা যায় ভোটকেন্দ্রের আশপাশে উৎসুক মানুষের আনাগোনা। কথা বলে জানা গেল তারা স্থানীয় ভোটার। ভোটের আগের দিন ভোট কেন্দ্রগুলোর হালচাল দেখতে যাওয়া। সবার চেহারায় স্বস্তি ও আস্থার ভাব। এ সময় অনেক এলাকায় সেনাবাহিনীর গাড়িবহর যেতে দেখে মানুষজন হাত নেড়ে স্বাগত জানায়।
২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি মানুষ। তারা এক যুগ অপেক্ষার পর এবার জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের ‘ক্ষুধা’ মেটাতে চান। সর্বত্র ভোটারদের মধ্যে এতটা ক্রেজিভাব অতীতে চোখে পড়েনি। ভোটের পরিবেশ নিরাপদ থাকায় বিশেষত মহিলা ও নতুন ভোটারদের ভোটদানে অদম্য মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে ভোটের জোয়ার। একই চিত্র লক্ষ করা যায় তিন পাহাড়ি জেলার তিনটি নির্বাচনী আসনেও।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ভোটারসংখ্যা ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৯ লাখ ১২ হাজার ৭৫ জন। মহিলা ভোটার ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৯০২ জন। ভোটকেন্দ্র এক হাজার ৮৯৯টি। ভোটকক্ষ ১০ হাজার ৮৮৭টি। দুই আসনে দুইজন রিটার্নিং অফিসারসহ ২৬ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রিজাইডিং অফিসার আছেন এক হাজার ৮৯৯ জন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ১০ হাজার ৮৮৭ জন ও পোলিং অফিসার ২১ হাজার ৭৭৪ জন। তাছাড়া অতিরিক্ত পোলিং অফিসারসহ ৩৪ হাজার ৫৬০ জনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৬ আসনের মধ্যে নগরীর চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাদবাকি ১৫টি আসনে কাগজের ব্যালেট পেপারে হবে ভোটগ্রহণ। ইভিএমের আসন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে ভোটারসংখ্যা তিন লাখ ৯০ হাজার ৪৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪ হাজার ২০৬ জন। মহিলা ভোটার এক লাখ ৮৬ হাজার ২২৫ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৪৪টি। ভোটকক্ষ ৯২০টি।
নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় রাজশাহীবাসী
রাজশাহী ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা রেজাউল করিম রাজু জানান, প্রচন্ড শীতে কাবু রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। এর মধ্যে ভোটের উত্তাপ আর উত্তেজনার কমতি নেই। সরব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হলেও ভোটকর্মী থেকে নির্বাচনী ক্যাম্পের কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনী কর্মকান্ড নিয়ে। অন্যদিকে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে চাপা উত্তেজনা। তারা মাঠের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। প্রচার-প্রচারণার ক’দিনে যেভাবে হামলা, জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে তাতে মনে শঙ্কা জেগে রয়েছে। মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশের টহল চলছে। সেনা উপস্থিতিতে মানুষ স্বস্তি খুঁজছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গত রাতেও তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে পোলিং এজেন্টদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজশাহী সদর আসনের বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, গত দু’দিনে তার ৩৯ জন কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। এর মধ্যে ১১ জনই পোলিং এজেন্ট। এ চিত্র প্রায় নির্বাচনী এলাকা। আর নাটোরে পোলিং এজেন্টরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী ক্যাডাররা বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করছে। গেলে পরিণতি ভালো হবে না। ফের আমরাই ক্ষমতায় থাকছি। এমন সব কথা বলছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, হামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যেতে। তারা মনে করছে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে ধানের শীষে ব্যালট বিপ্লব ঘটবে। ভোট নিয়ে তরুণদের উৎসাহের কমতি নেই। বিশেষ করে এবার যারা নতুন ভোটার হয়েছেন। আর গতবার যারা ভোটার হয়েও ভোট দিতে পারেননি। তারাও ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ভোট নিয়ে গত দু’দিন বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে আলাপকালে তারা এ নিয়ে কথা বলতে খুব একটা উৎসাহ দেখাননি। উল্টো প্রশ্ন করেছেন আপনারা সাংবাদিক খবর তো আপনাদের কাছে। মনে হয়েছে ভোটারদের মধ্যে কেমন যেন একটা অজানা আতঙ্ক ভর করে আছে। কোনো অশুভ শক্তি তাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে। নির্বাচন এলে আগে যেখানে পক্ষে- বিপক্ষে চায়ের কাপে ঝড় উঠত। এবার ছিল সব একপেশে। ভয়ে বিপক্ষের বিরুদ্ধে খুব একটা মুখ খোলেনি। ওঠেনি চায়ের কাপে ঝড়।
ভোটাররা বলছেন ভোটের দিন সকালে মাঠের অবস্থা দেখে তারা কেন্দ্রমুখী হবেন। অনেকে বলছেন সকাল সকাল ভোট দিয়ে চলে আসব। কেউ কেউ সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া ভোটের কথা স্মরণ করে বলছেন ডে-নাইটের ভোট হবে না তো। রাতের বেলা বেশ বাক্স ভরে যাবে।
প্রবীণরা ভোটের কথা নিয়ে বলছেন আগে ভোট ছিল উৎসবের আর এখন হয়েছে আতঙ্কের। আগে ভোটের দিন ঈদের দিনের মতো করে আনন্দ নিয়ে ভোট দিতে যেত। এখন যেতে হয় দুরু দুরু বক্ষে। মহিলারা সেজেগুজে ভোট দিতে লাইন ধরতেন। প্রচারকর্মীরা বিনয়ের সাথে ভোটারদের কাছে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতেন। এখন দিন বদলেছে। বিনয়ের স্থলে স্থান পেয়েছে ভয়ভীতি দেখানো। দলবদ্ধ হয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে মহড়া দেয়া। আর ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকা পুলিশের অবস্থা পুলিশ তুমি কার ক্ষমতা যার মতো। এমন অবস্থার মধ্যেও এবারো ভোটের মাঠে মানুষ যাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। ভোটের হাওয়া বলছে ভোটাররা মুখে বলছেন এক কথা আর বাস্তবে হয়তো হবে অন্য। আবার অনেকে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কেন্দ্রে যেতে পারলে ব্যালটে সিল দিয়ে মত প্রকাশ করবেন। ভোট নিয়ে থমকে আছে অনেক কিছু। বিয়ে সাদি সামাজিক অনুষ্ঠান শিক্ষা সফর পিকিনিকের মতো বিষয়গুলো।
ভোটাধিকার প্রয়োগে দক্ষিণ-পশ্চিমের ভোটার
যশোর ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মিজানুর রহমান তোতা জানান, খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসন এলাকায় আজকের ভোটে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান ঘটবে। ভয়কে জয় করে বুকভর্তি সাহস নিয়ে ভোট কেন্দ্রে মানুষের ঢল নামবে বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মানুষ ভোট দেয়ার জন্য প্রচন্ড আগ্রহী। নতুন ভোটাররা ভোট দেয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সব বয়সের ভোটাররা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘ভোট দেবো’। কনকনে শীতে জবুথবু বয়স্ক ভোটাররা ভোটের উত্তাপে রীতিমতো গরম হয়ে উঠেছেন। এক বৃদ্ধ ভোটারের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম চাচা ভোট দিতে যাচ্ছেন তো। জবাবে একরকম গরম হয়ে বললেন, কেন যাব না, ভোট দিতে অবশ্যই যাব। ভোট আমার অধিকার।
দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন জেলা ও সংবাদদাতা মাধ্যমে জানা গেছে, ভোটের দুই দিন আগে সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। ভোটাররা প্রস্তুত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। ভোটগ্রহণের ব্যাপারে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসাররা রয়েছে মাঠে। টহল ও চেকিং চলছে বিভিন্ন স্থানে। ভোটকেন্দ্রে যাতে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা না ঘটে তার দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি থাকবে তাদের। তাদের তৎপরতায় ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগে নির্বিঘ্ন হবে বলে মনে করছেন।
বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যাবতীয় সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। এখন শুধু ভোটারদের উপস্থিতি ও ভোট প্রয়োগের পালা। কোনোরূপ ‘ম্যাকানিজম’ না হলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ থাকলে অবশ্যই ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দসই প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারনে বলে সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল থেকে বলা হয়েছে।
বরিশালে ভোটকেন্দ্রে যেতে অধীর আগ্রহ
বরিশাল ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা নাছিম উল আলম জানান, উৎসাহের চেয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনে আজ বহু কাক্সিক্ষত জাতীয় নির্বাচন। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৬২ লাখ ৩০ হাজার ভোটার আজ একটি ভোট দেয়ার লক্ষ্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও তাদের সে আশা কতটুকু পূরণ হবে তা নিয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন। তবে বেশিরভাগ ভোটারই ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন শেষ পর্যন্ত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে গতকাল সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই ছিল এক ভিন্ন পরিবেশ। কনকনে ঠান্ডার সাথে ভোটের আবহাওয়ায় রাস্তাঘাটে জনমানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়ভাবে কম। বিধিবিধান অনুযায়ী যানবাহনও ছিল সীমিত। বরিশাল মহানগরীতেও সাধারণ মানুষের চলাফেরা ছিল যথেষ্ট কম। এমনকি শনিবার যেসব ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকত, তার গেটও গতকাল ছিল বন্ধ।
তবে এসব কিছুর পরও দক্ষিণাঞ্চলের ভোটাররা একটি ভোট বিপ্লব ঘটাতে পারেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করলে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার দুই হাজার ৬৭৭টি কেন্দ্রের ১৩ হাজার ৩৯৭টি বুথে ভোটাররা হাজির হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন। এবারো দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র বিশেষ গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে। এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত ১ জন করে সশস্ত্র পুলিশ ছাড়াও ২ জন সশস্ত্র আনসার এবং আরো ১০ জন করে লাঠিধারী আনসার থাকছে। বরিশাল মহানগরীর ১৭৪টি কেন্দ্রে সশস্ত্র পুলিশ থাকছে ৩ জন করে। এছাড়াও বিজিবি ও র্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। সেনাবাহিনী কি ধরনের টহলে থাকবে না ক্যাম্পেই স্ট্যান্ডবাই ফোর্স হিসেবে থাকবে তা জানা যায়নি।
তবে আজকের বহু কাক্সিক্ষত ভোট দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের কাছে বহুল আলোচিতও। ২০১৪ সালের পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কোনো সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ফলে সবার কাছেই এবারের ভোট যথেষ্ট আগ্রহের। সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় জনমনে ক্ষোভও রয়েছে। এমনকি এবারের নির্বাচনের আগে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ধড়পাকরসহ অপছন্দের প্রার্থীদের প্রচারণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধার মুখে নির্বাচন কমিশনের বার্থতায় সাধারণ মানুষের আস্থা অনেকটাই বিনষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কমিশন দক্ষিণাঞ্চলে নির্বাচনের কোনো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি বলেও মনে করছে মহলটি।
এখন নির্বাচনের দিন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশসহ পরবর্তী দিনগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে বরিশালের স্পর্শকাতর এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করেছে।
নোয়াখালীর ভোটাররা প্রস্তুত
নোয়াখালী ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, কাক্সিক্ষত নির্বাচনে নোয়াখালীর কয়েক লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত। দীর্ঘ এক যুগ পর নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটার তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে এসেছে। এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, কয়েক লাখ তরুণ ভোটার। জীবনে প্রথম ভোটার হওয়ায় তারা মহা খুশি। তাই কাক্সিক্ষত ভোট প্রদানের জন্য তারা উন্মুখ হয়ে আছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটেছে নোয়াখালীতে। বিশেষ করে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে হাজার হাজার প্রবাসী ছুটে এসেছে নিজ ঘরবাড়িতে। শীতের আমেজে ভোট দেয়ার পাশাপাশি কিছুদিন দেশে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ছুটি কাটানোর লক্ষ্যে প্রবাসীরা ছুটে আসে। উল্লেখ্য, প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে নোয়াখালীর ৬টি আসনে কমবেশি প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, মামলা ও পুলিশের আটকের প্রেক্ষিতে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়। বিজিবি মোতায়েনের পরও নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে এখনো শঙ্কা কাটেনি। জেলার ৬টি আসনে ধানের শীষ প্রার্থীরা জানান, হামলা, মামলা ও হুমকিতে বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট হতে চাইছে না অনেকে। যারা ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট হবে তাদের নির্বাচনের পর বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ধানের শীষ প্রার্থীরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকের প্রশ্ন- তারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না? তবে প্রশাসন থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের কথা বলা হলেও সাধারণ ভোটাররা এখনো সন্দিহান, নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কি না? নোয়াখালীর ৬টি আসনে বিভিন্ন পেশার কয়েক শতাধিক ভোটারের সাথে আলাপ করলে তারা ইনকিলাবকে জানান, সুষ্ঠু পরিবেশে তারা যেন ভোট দিতে পারে প্রশাসনের প্রতি তাদের সেটাই একমাত্র দাবি।
বগুড়ায় উন্মুখ ভোটার
বগুড়া ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মহসিন রাজু জানান, আজ ভোট। এবার এ জেলায় ভোটার সংখ্যা ২৫ লাখ। এর অর্ধেকই নারী ভোটার । প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নতুন ভোটার। পুরাতন, পুরুষ, নারী ও নতুন ভোটার ভোট দিতে উন্মুখ সকলেই। শিডিউল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, গণগ্রেফতার, মামলা সত্তে¡ও কেউই ভোটের দিনে ঘরে বসে থাকবে না, সবাই সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবে বলেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঢাকায় গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিক আহমেদ জানাল, ভোট উপলক্ষে দেশে আইছি, সকালেই ভোট দিমু, তারপর কি হচ্ছে, দ্যাখমু।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী রুহি ও জাবি ছাত্র সাকিব নতুন ভোটার। তারা জানালেন, কাকে ভোট দেবো আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে ভোট আমরা দেবোই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না ভোটের দিনে। বেশ কয়েকজন নারী ভোটার জানাল, আজ রান্নাবান্না পরে হবে আগে ভোট, তারপর অন্য কিছু...
এদিকে বগুড়ার সাতটি আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে। প্রিজাইডিং অফিসাররা নির্ব্চনী মালামাল বুঝে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন।
বগুড়ায় ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত থাকবেন ১৫ হাজার ৩৭৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৯২৬ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮১৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৯ হাজার ৬৩৪ জন পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে, ভোটগ্রহণের জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বগুড়ার সাতটি আসনে ৯২৬টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৬শ’ সেনা সদস্য, ১৬ প্লাটুন বিজিবি, প্রায় ২ হাজার পুলিশ এবং ২৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসনে মহাজোট, ঐক্যফ্রন্ট, বামজোট, ইসলামী আন্দোলন, ন্যাপ, এনপিপি, স্বতন্ত্র সব মিলিয়ে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। জিয়ার জন্মভুমি বগুড়ার ৭ সংসদীয় আসনে ধানের শীষের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।
ময়মনসিংহে ভোটাররা মুখিয়ে
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শামসুল হক খান জানান, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারেননি। ৫ বছর পর আবার ভোট এসেছে। তাই ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন ময়মনসিংহের তরুণ ও সচেতন ভোটাররা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা। বিস্ফোরণোন্মুখ এমন পরিস্থিতিতে সাতসকালেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে অবস্থান করবেন।
সচেতন ভোটাররা জানান, ভোটের দিন তারা কোনো বিশৃঙ্খলা চান না। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট প্রয়োগ করতে চান। কেন্দ্র দখলের সংস্কৃতি বহাল থাকলে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে।
দিনাজপুরে দোলাচলে মহাজোট-ঐক্যফ্রন্ট
দিনাজপুর অফিস থেকে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজুল হক আনার জানান, সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে ভোটের দামামা। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে দল ও প্রার্থিতা যতটা না সোচ্চার তার চেয়ে বেশি সোচ্চার ভোটাররা। শত বাধা পেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বৃদ্ধ থেকে তরুণ ভোটাররা। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোটারদের ওপর আস্থা না থাকা। কারণ শিক্ষিত তরুণ সমাজ যারা এবার ভোটের মূল নিয়ামক শক্তি তাদের বিবেক ও সচেতনতাই ক্ষমতাসীন দলকে ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আশা করছে বিজয় তাদের নিশ্চিত।
গতকাল শনিবার ভোটের আগের দিন আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর অঞ্চলে ঈদের আমেজ অনুভ‚ত হয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করার কথা তা ছিল না। ভোটের একদিন আগেই কেমন যেন নীরবতার পরিবেশ। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও প্রার্থীরা দিন ও রাত এক করে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। রাতের বেলা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে পুলিশের অবস্থান। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। অজানা আশঙ্কায় ভীতিকর পরিস্থিতি। নির্বাচনের আগে যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তাই হচ্ছে। ভোটারদের সাথে আলাপ করলে জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে যাবই। ভোট আমরা দেবোই। কাকে বা কোন মার্কায় ভোট দেবো তা ব্যালট বাক্সই বলে দেবে।
এবার দিনাজপুরের ৬টি আসনের মধ্যে দিনাজপুর সদর আসনটি ধানের শীষ প্রতীকশূন্য। অন্য ৫টি আসনের প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মামলা-হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিরোধী শিবিরে থাকা প্রার্থী-সমর্থক ও কর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় যে নীরবতা ও কৌশল অবলম্বন করেছে তাতে সরকারি দল আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে। মনে হয়েছিল নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটবে। কিন্তু তা না হয়ে নীরব নিস্তবতা। এ যেন ঝড়ের পূর্বাভাস।
তাহলে কি নীরব কোনো বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। পুলিশসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে ভোটের দিন ভোটারদের পদচারণাকে উপলব্ধি করার শেষ চেষ্টা চলছে। দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ইতিহাসের নুতন কিছু সৃষ্টির দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রধান দু’টি দল বা শক্তি মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট।
বাধাই মানবে না ভোটাররা
সিলেট ব্যুরো থেকে স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আমীন জানান, কোনো বাধাই মানবে না সিলেটের ভোটারা। ওরা যাবেই ভোট কেন্দ্রে। দল বেধে কেন্দ্রমুখী হবেন ভোটাররা। ভোট রাজনীতির মাঠে চলমান দমন- নিপীড়নে ভোটাধিকার প্রয়োগে জেদি মনোভাবে উজ্জীবিত ভোটাররা। সেলফ নিরাপত্তায় তারা যাবে ভোটকেন্দ্রে।
গত সিটি নির্বাচনে সকল বাধা ডিঙ্গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রে গেছেন ভোটাররা। কারণ অদম্য বাঙালি-বাংলাদেশীদের রক্তে ভয়কে জয় করার মানসিকতা চিরন্তন। সেই শক্তিতে আজও বলীয়ান তারা। চরম জেদি হয়ে উঠছেন সাধারণ ভোটাররা। দূর প্রবাস থেকে বার্তা আসছে আত্মীয়-স্বজনের কাছে, ভোটে যাও বদলাও বদলে দাও দেশকে। কোনো বাধা এলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে নিজ উদ্যোগে। তৃণমূলে মানুষের মধ্যে রণভাবনা, প্রয়োগের জুড়ি নেই। চলমান মামলা-গ্রেফতারে তারা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। চেনা-জানা মানুষগুলো শুধু দলীয় পরিচয়ের কারণে এখন কারাগারে। তা নিয়ে আফসোস, আর বেদনা পীড়া কাটছে মন-মগজে। তাই তারা প্রতিশোধ প্রতিহিংসার দহনে ফুঁসে উঠছে। তার বদলা নিতে চায় ভোটাধিকার প্রয়োগে। চোখের সামনে দেখছে, স্ত্রী কাঁদছে স্বামীর জন্য, বোন কাঁদছে ভাইয়ের জন্য। চরম এ হাহাকার কেবলমাত্র ভোট রাজনীতির জন্যই। তাই তারা মানতে পারছেন এহেন অবস্থাকে। অবস্থা উত্তরণে তারা চায় দিন বদল। দিন বদলের একমাত্র হাতিয়ার ভোটাধিকার প্রয়োগ। সে কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগে তারা ঘরে বসে থাকবে না। ভোটের মাধ্যমে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাবে তারা। পুরুষদের চেয়ে সিলেটের নারীরা অধিক আগ্রহী ভোট নিয়ে। গ্রেফতার-নির্যাতনে বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে সমবেদনা জানাচ্ছে বিশেষ করে দলের প্রতিবেশী নারীরাই। পাশে থাকার অঙ্গীকার করছে। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থায় তারা আস্থাশীল নয়। যাই হোক তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অপেক্ষায়। যা আছে নসিবে তাই ঘটবে কপালে, সেই ভাবনায় তারা শক্তিমান হয়ে উঠেছে। যদিও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ৪ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রত্যেক কেন্দ্রে থাকবেন পুলিশের সাদা পোশাকের একজন সদস্য। সেনা, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা থাকবেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। গ্রামীণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে সামাজিকভাবে প্রস্তুতি রয়েছে। ভোট নিয়ে কোনো পক্ষ শক্তি প্রয়োগ করলে তারা প্রতিরোধে নামবে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সামাজিক ব্যবস্থা সুরক্ষার প্রত্যয়ে। সামাজিক সচেতনতা ভোট নিয়ে এখন দারুণ দমন-নিপীড়নে এই ব্যবস্থায় ঢেউ উঠেছে। ঘুম থেকে উঠেই খবর পাচ্ছে, অমুকের ছেলে, অমুকের ভাইকে নিয়ে গেছে পুলিশ। অপরাধ সে রাজনীতি করে। গ্রামীণ সমাজে অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদী ভাষা হয় তীব্র। স্থানীয়ভাবেই সেই ব্যবস্থা প্রতিরোধ করা হয়। কিন্তু রাজনীতির ভাষায় যখন সামাজিক মানুষকে তটস্থ করা হয়, তখন হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ খোঁজে সমাজের সাধারণ মানুষ। সেই সুযোগ এসেছে ভোটের মাধ্যমে। স্থানীয় রাজনীতিক পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা ভোটকেন্দ্রে নিজদের আধিপত্য গড়ে তুলতে, প্রতিপক্ষ রাজনীতিক কর্মী-সমর্থককে তুলে দিচ্ছেন প্রশাসনের হাতে। কিন্তু এই নির্মমতার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে সমাজময়। চিন্তিত করে রাখা হচ্ছে রাজনীতিক পরিচয়ের কথিত সেই মানুষকে। সিলেট বিভাগের ১৯ সংসদীয় আসনের ২ হাজার ৮০৫টি ভোটকেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪৯ হাজার ৩০৬ জন সদস্য।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য ৪ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবার সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন ও ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ২০১ জন হলেন মহিলা ভোটার। ২ হাজার ৮০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার ৫৯৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ১৯ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১১৫ প্রার্থী।
সবারই প্রস্তুতি ভোট দেয়ার
খুলনা ব্যুরো থেকে স্টাফ রিপোর্টার আবু হেনা মুক্তি জানান, সবার নজর ভোটের মাঠে। বৃহত্তর খুলনার ১৪টি আসনে ৩৫ জন প্রার্থী এখন মাঠে। চারদিকে ভোট উৎসব। রাজধানীসহ বিভিন্ন কর্মস্থল থেকে এলাকায় ফিরেছে ভোটাররা। নানা সংশয়-সঙ্কট থাকা সত্তে¡ও সবারই প্রস্তুতি ভোট দেয়ার। খুলনার ছয়টি আসনেও ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের জন্য ৭৮৬টি কেন্দ্রের ৩ হাজার ৮৫৭টি কক্ষ প্রস্তুত করেছে প্রশাসন। সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট প্রশাসনও একইভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি।
সংশ্লিষ্ট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, খুলনা-২, বাগেরহাট-২, সাতক্ষীরা-২ আসনে ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম সরঞ্জাম এবং অন্য কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ব্যালট পেপার ভর্তি বস্তাগুলো প্রতিটি কেন্দ্রে নিয়ে গ<
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।