পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ রোববার বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ ও খবর প্রকাশ করেছে।
রয়টার্স‘বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় প্রার্থী হওয়ার ঝুঁকি’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে লিখেছে-বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় একটি ছোট জেলা আদালতের লাইব্রেরির মধ্যে বসে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার গায়ের কোট খুলে পিঠে ব্যান্ডেজে ঢাকা বেশ কয়েকটি শটগান পেলেটের আঘাত দেখালেন। এরপর ৬২ বছর বয়সী এ ব্যক্তি হেসে বললেন, আপনি ভাবছেন আমার লড়াই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। কিন্তু না, আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়ছি না। আমার লড়াই পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। রোববারের নির্বাচনে তিনি প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। তিনি দাবি করেন, গত ১৫ই ডিসেম্বর নোয়াখালীর একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করেছে। এ সময় তিনি তার শত শত সমর্থক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। হামলায় তার আরো প্রায় ৪০ সমর্থক আহত হয়েছে।
মপ্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুব উদ্দিন খোকন রাজধানী ঢাকা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সোনাইমুড়ি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ১৫ই ডিসেম্বর এখানেই সেই রক্তাক্ত সহিংসতা হয়েছিল। এ ঘটনার পর তিনি ঢাকা উচ্চ আদালতে নির্দিষ্ট ওই পুলিশ কর্মকর্তা, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে অবিলম্বে ওই এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেন এবং সহসাই সে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একটি পেলেট তার থুঁতনিতে আঘাত করে। পিঠে আঘাত করে ৫টি এবং পায়ে আঘাত করে আরো দুইটি পেলেট। সেখানে আরো দাবি করা হয়েছে, অবৈধভাবে পুলিশের গুলিতে আরো ৪০ বিরোধীদলীয় সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছে।
দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার তন্ময় দাস বলেছেন, খোকন অতিরঞ্জিত অভিযোগ করছে। হামলাকারী পুলিশ সদস্য নয়। হয়ত অন্তর্দ্ব›েদ্বর কারণে তার দলেরই কেউ এ হামলা করেছে। এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ. এম. ইব্রাহীমও এ বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে কিছু সহিংসতা স্বাভাবিক বিষয়। ওইদিনই খোকনের সমর্থকরা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করেছে। তিনি একজন আইনজীবী, তিনি মানুষদের বোকা বানাচ্ছেন। তার নিজ দলীয় কর্মীরাই তাকে গুলি করেছে। তন্ময় দাস বলেছেন, এ নিয়ে একটি তদন্ত চলছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। আমার মনে হয় এখানকার পরিস্থিতি ভালো। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। তিনি আরো জানান যে, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কোথাও ভীতি প্রদর্শন কিংবা হামলা করেছে এমন কোনো অভিযোগ তার কাছে আসে নি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় যেতে নির্বাচন করছেন। তার প্রচারণা বিতর্কিত হচ্ছে। দেশটির বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) দাবি করেছে, সরকার মূলধারার প্রচার মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশের নির্বাচনে উত্তেজনা তুঙ্গে’- শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে বলা হয়- রোববার ভোট দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এদিন তারা রায় জানিয়ে দেবেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক অভিযোগ থাকার পরও তাকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা উপহার দেবেন কিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে যে সহিংসতা দেখা গেছে তেমনটা প্রতিরোধ করতে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক ওইসব নির্বাচনে কম সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে এবং সবচেয়ে বড় বিরোধীদলীয় জোট ও তাদের মিত্রদের বর্জনের কারণে কলঙ্কিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্তে¡ও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো ও বিরোধীদলীয় নেতারা।
লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিক ও ‘দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট : দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটস আনকোয়াইট লিগ্যাসি’ বইয়ের লেখক সলিল ত্রিপাঠি বলেন, অকপটতা বা খোলোমেলা থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্তে¡ও এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল)-এর মতো নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের ভিসা বিলম্বিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। সিএনএনকে সলিল ত্রিপাঠি বলেছেন, ‘প্রশ্নটা হলো নির্বাচন চলার সময়ে সেখানে কি ঘটছে তা দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক থাকবে কিনা তা নিয়ে। আপনি চান একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু একটি সুযোগ হিসেবে সেটা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। যদি আপনি পর্যবেক্ষকদের আসতে না দেন, তাহলে কিভাবে আপনি এটা (সুষ্ঠুতা ও অবাধ) প্রমাণ করবেন?’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশে দমনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যাপক নজরদারি ও দমনপীড়নসহ কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ আতঙ্কের পরিবেশে ভূমিকা রেখেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ পক্ষপাতিত্বহীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে তারা বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর হামলার বিষয়কে এড়িয়ে গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণ করা উচিত হবে না যা দেখে বোঝা যায় তারা ক্ষমতাসীন দলের সম্প্রসারিত অংশ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে সহিংসতা হয়েছে তাতে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে বিরোধীদের। তারা যে অন্যায্য আচরণ করছে তা এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। প্রচারণা সংশ্লিষ্ট যেসব সহিংসতা হয়েছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টার্গেট করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।