Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বার্তা দিয়েছেন

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সাধারণ ভোটার, ধানের শীষের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী বার্তা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল (শনিবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার বার্তা হলো- ৩০ ডিসেম্বর আপনাদের সুযোগ আসবে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তিলাভের। দেশকে মুক্ত করার। সকল হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের এক একটি ভোট নিশ্চিত করতে পারে জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ফলাফল না নিয়ে আপনারা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। আপনারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন।
তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পড়েই ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি। ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করবেন। ভোট দিয়ে কেন্দ্রের আশপাশে থাকবেন। আপনারা শুধু সাধারণ ভোটারই নন, ভোটারদের অতন্দ্র প্রহরী। ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেল তা নিশ্চিত না হয়ে সাদা কাগজে সই করবেন না। কোন অবস্থাতেই প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না। ফলাফল নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনাদের মাধ্যমে ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বলতে চাই-সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনগণ অগণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করা শুরু করেছে। জনগণের শক্তির কাছে দুর্বৃত্তরা পরাজিত হবেই, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
তিনি বলেন, বিস্তৃত বাংলার কুটিরে, নদীর ঘাটে, ধানের ক্ষেতে, বটের ছায়ায়, শহরের বুকে, নির্জন প্রান্তরে, পদ্মার চরে, মেঘনা-যমুনা-করতোয়া-ধলেশ্বরীর টেউয়ের চূড়ায় সর্বত্রই ধানের শীষের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। সুতরাং এই ধানের শীষের প্রতীক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক। নিপীড়িত মানুষের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীক, আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতীক, শান্তি-উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক, দু:শাসন থেকে মুক্তির প্রতীক। সবশেষে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই-‘এদেশ কাড়তে যেই আসুক/আমরা সাহসে বেঁধেছি বুক/আমরা নইকো ভীরুর জাত/দেবো নাকো হতে দেশ বেহাত
রিজভী বলেন, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি বরখেলাপ করে জনগণের সঙ্গে প্রতিমূহুর্তে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতাসীনরা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। আর এজন্য তাদের সামনের বাধাগুলো সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। প্রথমে তারা সবচেয়ে বড় বাধা মনে করেছে খালেদা জিয়াকে। তাঁকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়েছে। বন্দী করে এখন নানাভাবে জুলুম করা হচ্ছে। নির্দোষ বেগম জিয়াকে কারান্তরীণ করা ছিল একতরফা নির্বাচনের পূর্বাভাস। বেগম জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তাকেই ভয় পেয়েছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সেই জন্যই নির্বাচনী মাঠে মোকাবেলা করার সাহস না পেয়ে তাঁকে বন্দী করা হয়েছে।
বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালিয়েছে জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িকের ধারাবাহিকতায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এর মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে চরম মাত্রায়। তফশীল ঘোষণার পর মামলা-হামলা-গ্রেফতারের স্পিড লিমিট নাই। যেন এই নির্বাচনের চ‚ড়ান্তক্ষণে সারা বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী করেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। গত ৮ নভেম্বর হতে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১১ হাজার ৫০৬ জন নেতাকর্মী, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯৫৭টি। শুধু গতকালই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জন নেতাকর্মীকে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার আহাজারী নয়, শুধুই ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, জাকিরদের সন্তান-ভাইবোন-বাপ মায়ের গুমরে ওঠা কান্নাই নয়-এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গোটা দেশটাকেই অনাচার-অবিচার-লুন্ঠনের অভয়ারণ্য করে তুলেছে। সাশ্রয়ী জ্বালানীর ব্যবস্থা না করে চড়া দামে বিদ্যুৎ দিয়ে সরকার আত্মীয় স্বজনদেরকে, বিডিআর হত্যাকান্ডে সহকর্মীদের অবিরল অশ্রুধারায় কফিন কাঁধে নিয়ে চলেছে সেনা কর্মকর্তারা। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে মেধাবীরা চাকরি পান না, পান দলীয় লোকরা। শেয়ার বাজার গিলে ফেলে দেশের বিক্ষত-বিকৃত অর্থনীতি। জমার চেয়ে খরচ বেশী। দমন-পীড়ণের ভয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয় না, তবে গুঞ্জরিত হয়।
বিএনপি নেতা বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর খুনী কে? এর উত্তর দিতে পারেনি সরকার। পোশাক কারখানায় শুধুই সারি সারি লাশ। হলমার্ক, ডেসটিনি, সরকারি ব্যাংক হরিলুট, পদ্মা সেতুসহ দুর্নীতি কেলেঙ্কারীতে ভরা আওয়ামী আমল। সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল কাহিনী সবার মুখে মুখে। আওয়ামী নৃশংসতার মঞ্চে রক্তাক্ত কিশোর শ্রমিক বিশ^জিৎ, নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবু, ঢাকার ছাত্রদল নেতা জনি, চাঁদপুরে ছাত্রদলের লিমন, রতন, বিএনপি নেতা আবুল ছৈয়ালসহ হাজার হাজার বিরোধী দলীয় লোকজনদের লাশ। এদের আমলে সবচেয়ে আলোচিত অপরাধ ছিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা। এই আমলে ছয় বছরের শিশু পরাগ মন্ডল অপহৃত হয়, সেই অপহরণের কাহিনী মর্মস্পর্শী ও বেদনাবিধুর। দুস্কৃতিকারিরা পরাগ মন্ডলকে ছিনিয়ে নিতে তার মা লিপি মন্ডলের বুকে গুলি করে এবং বড় বোন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী পিনাংকি মন্ডলের পায়ে গুলি করে। এরকম হাজার হাজার অপহরণ ঘটেছে। এদের আমলে সুন্দরবন, পদ্মা, মেঘনা, কুশিয়ারা, সুরমাসহ অসংখ্য নদী-নালা সব শুস্ক ও বিপন্ন। গত বছর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে মেয়াদ শেষের ৮২ দিন আগে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার মাধ্যমে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। রিজভী বলেন, গত দশ বছর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলে দেখা যাবে শুধু আতঙ্ক, ভয়, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা,সহিংসতা, রক্তপাত আর বিরোধী দলসহ ভিন্ন মত ও বিশ্বাসের ব্যক্তিদের দমনের দশক। গণতন্ত্রের অস্থিমজ্জাকে নিংড়িয়ে নিয়ে গোরস্থানে পাঠানের দশক। বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ফাঁসির মঞ্চে তোলার দশক।



 

Show all comments
  • MD Milon Fokir ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    কারাগারে ভোটের ব্যবস্থা করা হোক,যারা কারাগারে আটক আছে তাড়া ও বাংলাদেশের নাগরিক ,বিএনপির 40% ভোট কারাগারে আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim Uddin ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    ডুবে যাওয়ার এক মুহূর্ত আগেও ফেরাউন জানতো না তার এত কঠিন পতন হবে, আর এভাবে আল্লাহ্ জালেমদেরকে ধ্বংস করেন..।
    Total Reply(0) Reply
  • আরেফিন জহির ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 0
    দেশটা তোমার আমার জনগণের তাই দেশ বাঁচাতে স্বৈরাচারের পতন চাই ....❤❤❤ 30 তারিখ নির্বাচনে সিলেকশনের সুযোগ নাই তাই সবাই মিলে কেন্দ্রে যায়....
    Total Reply(0) Reply
  • Sanjana Khan Arpa ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৪ এএম says : 0
    নিজেও কারাগারে,নেতা কর্মিরাও কারাগারে, আস্তে আস্তে বিএনপির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে,তাদের কিছু ব্যবহৃত জিনিসপত্র জাদুঘর এ সংরক্ষণ করা হবে। দেশ হয়ে যাবে আওয়ামীলীগের!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rasel Mia ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৬ এএম says : 0
    বার্তা ছারাই দেশবাসী নিজের স্বাদিনতা মুক্তির জন্যে মুক্তির মার্কাই ভোট দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর আহমাদ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 0
    ইনশায়াল্লাহ, সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাব, ভোট দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ