Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপির লক্ষ্য ঘাঁটি পুনরুদ্ধার অর্জন ধরে রাখতে চায় আ.লীগ

চট্টগ্রাম অঞ্চল

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মহাজোট বনাম বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যকার অধিকাংশ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। ১৯টি নির্বাচনী আসনের দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের আলাপ-আলোচনা ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত এমনই। অনেকেই বলেছেন, দুই জোটের লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। নতুন মুখ আর পুরনোর সমন্বয়ে চট্টগ্রামে উভয় জোটের প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ পক্ষে বিজয়ের ব্যাপারে সমানতালে আত্মবিশ্বাসী। আজ রোববার ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন এ অঞ্চলের প্রায় পৌনে এক কোটি ভোটারের কৌত‚হলী চোখ জোট-মহাজোটের লড়াইয়ের দিকেই।
উভয় জোটের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপকালে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, অতীতের জাতীয় নির্বাচনী ফলাফলের নিরিখে চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। বিএনপি জোটের লক্ষ্য পুরনো ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করা। অন্যদিকে বিগত এক/এগারোর সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে অর্জিত ফলাফলকে ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রীসহ বিশেষ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকায় প্রার্থী এমএ লতিফ এবং বর্তমান এমপিগণ জোরালো ধারণা ব্যক্ত করেছেন, মহাজোট চট্টগ্রাম অঞ্চলে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবে। জনসমর্থনের জোয়ার নৌকার পক্ষে। বিগত ২০০১, ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালের তুলনায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট একাদশ সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের শীর্ষ পর্যায়ের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, এবার ধানের শীষের প্রতি জনসমর্থন অত্যন্ত প্রবল। একদলীয় প্রচারণা করেছে বলেই সরকার পার পাবে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি জোট বা ঐক্যফ্রন্ট অধিকাংশ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। কেননা ভোটাররা ব্যালটে রায় দেয়ার জন্যই দশ বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন।
তবে চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকণ ভিন্নমত ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে উভয় জোটের প্রতি মানুষের মনোভাব, কথাবার্তায় বোঝা যায়, ২০০৮ সালের সাথে বর্তমান অবস্থার কিছুটা তুলনা করা যায়। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের মধ্যে মহাজোট পায় ১৪টি। বিএনপি জোট (চার দলীয় জোট) পায় মাত্র ৫টি আসন। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪টি জেলার ১৮টি আসনের মধ্যে বিএনপি জোট (চারদলীয় জোট) পায় ১৫টি। মহাজোট পায় মাত্র ৩টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের বছরেও বিএনপি জোট প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
এদিকে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ আসনে যেখানে হাড্ডাহাড্ডি দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন। সেখানে বিএনপি জোট, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের (স্বতন্ত্র ‘আপেল’) মধ্যকার চতুর্মুখী ফাইট হবে এমনটি বাঁশখালীবাসীর জোরালো ধারণা। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগের মহাজোট বনাম বিএনপি জোটের মধ্যকার দ্বিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ধানের শীষের নুরুল আমিন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং ধানের শীষে কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা এবং ধানের শীষে মোস্তফা কামাল পাশা। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) নৌকায় দিদারুল আলম এবং ধানের শীষে আসলাম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) মহাজোটের লাঙলে প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ধানের শীষে প্রার্থী কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে নৌকার প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং ধানের শীষে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী আংশিক) আসনে নৌকার প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ এবং ধানের শীষে এলডিপির মো. নুরুল আলম।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) নৌকার প্রার্থী জাসদের মঈনউদ্দীন খান বাদল এবং ধানের শীষে আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং ধানের শীষডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) নৌকায় প্রার্থী ডা. আফছারুল আমীন এবং ধানের শীষে আবদুল্লাহ আল নোমান। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ এবং ধানের শীষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী এবং ধানের শীষে এনামুল হক। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) নৌকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং ধানের শীষে সরওয়ার জামাল নিজাম। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) নৌকায় নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ছাতা প্রতীকে বিএনপি জোটের প্রার্থী এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) নৌকায় আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী এবং ধানের শীষে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি নৌকায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ধানের শীষবিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির লাঙলে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এবং আপেল প্রতীকে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা জহিরুল ইসলামের মধ্যকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ