Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রার্থীর এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিইসির নির্দেশ

দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালনের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রার্থী ও প্রার্থীর এজেন্টদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। গতকাল শনিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনাদেন।
গনমাধ্যমের কথা উল্লেখ বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোথাও কোথাও প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানির কথা এসেছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। প্রার্থীর কোনো এজেন্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ না থাকলে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৮৬১ জন প্রার্থী মাঠে আছেন। সব দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্রচারে সারা দেশে মুখরিত হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রোববার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। নির্বাচনের ফলাফল হাতে না পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন অবস্থায় তারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। কেউ যদি অবৈধ ভাবে এজেন্টকে কক্ষ ত্যাগ করতে বলে তখন ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে। তিনি বলেন, কারো কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। কোন প্রার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন সিইসি। প্রার্থী ও ভোটাররা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে ভোট দিতে পারে।
সিইসি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলার সর্বস্তরের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছি। সহিংস ও নাশকতামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি। কোন মহল ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে কোন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে অবশ্যই দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণ করবে। কোন বাহিনীর নির্লিপ্ততার কারণে অথবা নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে অধিক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে তদন্ত করা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণমাধ্যমের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিইসি বলেন, প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে, তা কোনভাবেই কাম্য নয়। কোন এজেন্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন ফৌজদারী কোন অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা হয়ারনি করবে না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।এজেন্টদের দায়িত্ব অনেক, তারা প্রার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা প্রার্থীর স্বার্থে কাজ করেন। লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি আমরা। রোববার সকাল আট ঘটিকায় দেশব্যাপী এক সাাথে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশবাসীকে নির্বাচনের প্রস্ততি ও পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সমগ্র দেশ মুখরিত হয়েছে। মিছিল, সমাবশে, পথসভা, জনসভা, লংমার্চ, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রতিযোগিতামূলক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তুতি পর্বে দেশব্যাপী ৬৬জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৮০জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, কেন্দ্রভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩জন ভোটরের জন্য মোট ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্র, দুই লক্ষ ৬ হাজার ৭৭৭টি বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সব সামগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ নির্বাচনের মালামাল নিয়ে শনিবার রাতের মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। যে ছয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে সেসব আসনেও নির্বাচনী সামগ্রী ও জনবল পৌঁছে গেছে। ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী সামগ্রী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তদন্ত কমিটি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্মকর্তা রয়েছেন। নির্বাচন বিবেচনায় কেন্দ্রের অবস্থান সবার উপরে, কেন্দ্রের সাফল্যের ভর করে পুরো নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করে। সেখানে কর্তব্যে থাকেন প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ। তাদের প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে থাকে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সমুন্নত রাখা। প্রিজাইডিং অফিসার রাতের মধ্যেই নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। পুলিশ ও আনসার প্রহরায় নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। প্রিজাইডিং অফিসার রোববার সকাল সাতটার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার কাজ শুরু করবেন। তার সহযোগীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিবেন। নির্বাচন শুরু করার পূর্বে তিনি ব্যালট বাক্সগুলো সবাইকে দেখাবেন, ব্যালট বাক্স খালি আছে কিনা দেখিয়ে নেবেন। তারপর বাক্সটি তালাবদ্ধ করবেন।
রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বলবো, তারা যেন নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলেন, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেন। যাতে একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, নির্বাচনী প্রতিযোগিতা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, অনেক মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে , সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে, এটা কাম্য ছিল না। সহিংসতার কারণে যেখানে ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলে প্রতি আবারো অনুরোধ করতে চাই আপনারা আচরণবিধি মেনে চলুন। সহিংসতা পরিহার করুন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখুন, নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে সহযোগিতা করুন। ভোটার সাধারণের কাজে অনুরোধ করি, আপনার ভোট অতি মূল্যবান। কোন ভয়ভীতির কাছে নত স্বীকার করবেন না, স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ