পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোববারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ পকাশ করেছে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল) সহ কমপক্ষে ১৬টি সংগঠন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, নিষেধাজ্ঞামূলক নির্বাচনী পরিবেশে ৩০ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘোষণা করার পর থেকেই সুশীল সমাজ, বিরোধী দল ও মিডিয়ার ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এর মাধ্যমে খর্ব করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ক্ষয়ে আসা গণতান্ত্রিক স্বাস্থ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আর চাপ সৃষ্টি হয়েছে আসন্ন নির্বাচনের বিশুদ্ধতার ওপরও। গতকাল শনিবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি প্রকাশ করেছে আনফ্রেল। এতে স্বাক্ষর করেছে কমপক্ষে ১৬টি অধিকার বিষয়ক সংগঠন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আনফ্রেলের পর্যবেক্ষক আসার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা বিলম্বিত করার কারণে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়। তারপরও তারা বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর দৃষ্টি রাখছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা ও ভীতির কোনো স্থান থাকতে পারে না। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ১০ ডিসেম্বর। ওই সময় থেকে বিরোধী দলের গাড়িবহরে কমপক্ষে ৩০টি হামলা হয়েছে। ১৫৯টি সংসদীয় আসনে ২০৭টি সহিংসতা ঘটেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কমপক্ষে ৪৩ জন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। মারাত্মক আহত হয়েছেন তাদের ১৩ জন প্রার্থী। গ্রেফতার করা হয়েছে বিরোধী দলের ১৭ প্রার্থীকে। অন্যদিকে ২৩টি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীদেরকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন। উপরন্তু, রিপোর্টিং পিরিয়ডে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫ জন। আহত হয়েছেন ২৬৮২ জন। এ ছাড়াও বিরোধী দলীয় সদস্যদের প্রহার, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি আগুন দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া, নারী প্রার্থীদের ওপর হামলা, বিরোধী দলের নির্বাচনী র্যালিতে বাধা দেয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব হামলার উদ্দেশ্য একটিই। তাহলো বাংলাদেশি ভোটারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে খাটো করা।
বিরোধী দলগুলোর মতে, নভেম্বরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার পর পুলিশ তাদের ২১ হাজার নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে ক্ষমতাসীন দলের বিরোধীদের বিরুদ্ধে কল্পিত মামলার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে বলে বলছে বেশ কিছু মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ। এর মধ্যে বিরোধী দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন নেতারাও রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তার বিরুদ্ধে মানহানির ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এমন মামলা বলে দেয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। এমন এক নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সারা দেশ। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক নীতির বিরুদ্ধে হচ্ছে এ নির্বাচন।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শুধু প্রতিযোগিতামূলক ও পদ্ধতির মানা দিয়েই একটি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা সংজ্ঞায়িত করা হয় না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনী পরিবেশের গুণগত মান। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে নিজেদের কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের সংগঠন ও মিডিয়া বিধিনিষেধের মুখে পড়ছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে সাংবাদিকদের ওপর ৭২টি হামলা হয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৯ জনকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংক্রান্ত ইস্যুতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জনকে। বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষ ও সমলোচকদের কণ্ঠের বিরুদ্ধে কতটা প্রতিকূল তার একটি উদাহরণ ফটোসাংবাদিক ও অধিকারকর্মী ড. শহিদুল আলমকে গ্রেফতার। স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ মিডিয়ার সঙ্গে নাগরিক সমাজের কর্মকান্ড মিলে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মেরুদন্ড তৈরি হয়। এসব স্বাধীনতা খর্ব করা হলো এমন একটি সরকারের পরিচায়ক যা, জনগণের বিবেচনা ও জবাবদিহিতার ধার ধারে না। এতে বিশেষত, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি করে।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে প্রথম সারির মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হলো অধিকার। রাষ্ট্রবিরোধী, সরকার বিরোধী ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তারা মর্যাদাহানির মুখে পড়ে। নির্বাচন মনিটরিং ও নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মোতায়েনের ক্ষেত্রে অধিকার’কে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সংগঠনটির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা এতে দ্রুত নেমে গেছে। এটা ওই বিধিনিষেধেরই প্রতিফলন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৩৮ জন পর্যবেক্ষক। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এর মধ্য থেকে মাত্র ২৬ হাজারকে অনুমোদন দেয়া হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পিছনে রেখে এটা হবে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক ছিলেন ৮ হাজার ৮৭৮ জন এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন মাত্র চার জন। পক্ষান্তরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ছিলেন প্রায় এক লাখ ৫৯ হাজার। ২০০১ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এত কমে যাওয়া একটি অভিন্ন ইঙ্গিত দেয় যে, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে, প্রতিবন্ধকতার উপস্থিতিতে এবং নাগরিক সমাজের নির্বাচিত অংশকে এক্রিডিটেশন দেয়ার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী বাহিনী দ্বারা সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করা, আইনকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা, বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় এজেন্সিগুলোর ব্যবহার, নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিকূলতা ও মিডিয়াকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যকর একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে জনগণের মুক্ত বাসনাকে অবজ্ঞা করা হয় এবং তা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী নীতির বাইরে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশে নিয়ন্ত্রক এমন অবস্থায়, আমরা আসন্ন নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমাদের সংশয় প্রকাশ করছি, এ নির্বাচনকে যেকোনো যুক্তিতেই সুষ্ঠু ও অবাধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
এ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব ডমেস্টিক ইলেকশন মনিটরস, ইন্টান্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, সেন্টার ফর মনিটরিং ইলেকশন ভায়োলেন্স- শ্রীলঙ্কা, ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনস নেটওয়ার্ক-পাকিস্তান, কোমিতে ইন্ডেপেন্ডেনে পেমানতাউ পেমিলু-ইন্দোনেশিয়া, মালাভি ইলেকটোরাল সাপোর্ট নেটওয়ার্ক-মালাবি, মারুয়াহ-সিঙ্গাপুর, ন্যাশনাল সিটিজিন্সে মুভমেন্ট ফর ফ্রি ইলেকশন-ফিলিপাইনস, পিপলস এলায়েন্স ফর ক্রেডিবল ইলেকশনস-মিয়ানমার, পিপলস একশন ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনস-শ্রীলঙ্কা, পেরকুমপুলান উনতুট পেমিলু ডান ডেমোক্রাসি-ইন্দোনেশিয়া, ট্রান্সপারেন্সি মালদ্বীপ-মালদ্বীপ, জিম্বাবুয়ে ইলেকশন সাপোর্ট নেটওয়াক-জিম্বাবুয়ে ও কমিটি ফর ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনস ইন কম্বোডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।