পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অবশেষে সারাদেশে সেনাবাহিনীর টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভাগীয়-জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামের হাট-বাজারে সেনা টহল দেখা গেছে। গতকাল ঢাকা সিটির বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়। ‘সেনা মাঠে নেমেছে’ এ খবর দ্রুত শহরময় ছড়িয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। সেনাবাহিনীর টহল দেখে নতুন ভোটার, নারী ভোটার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি কাটতে শুরু করেছে। পুলিশি বাধা আর হামলার আশঙ্কায় যারা ভোট দেয়া নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছিলেন, তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার ব্যাপারে আস্থাশীল হয়ে উঠছেন। তাদের অভিমত সেনাবাহিনী ভোটকেন্দ্রে থাকলে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। বিশেষ করে নতুন ভোটার ও নারী ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন।
ভোটের ৩০ ঘণ্টা আগেও পুলিশের জুলুম নির্যাতন এবং গ্রেফতার চলছেই। প্রচারণা বন্ধ হওয়ার পরও গতকাল ধানের শীষ প্রতীকের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বাসায় পুলিশি অভিযান হয়েছে; গ্রেফতার হয়েছে ব্যাপক। পুলিশ কোনো কোনো প্রার্থীর বাড়ি কয়েক ঘণ্টা করে ঘেরাও করে রাখে। এর মধ্যেই সেনা টহল দেখে আতঙ্কিত-উদ্বিগ্ন মানুষ বলাবলি করছেন, মাঠে সেনা থাকলে ভোট দেয়ার পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে। মানুষ ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। তবে ভোটকেন্দ্রে সেনা উপস্থিতি থাকলে নির্বাচনের চিত্র পাল্টে যাবে।
নির্বাচন কমিশন ১৫ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর ঘোষণা দিলেও ২৪ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়। এই কয়েকদিন জেলা পর্যায়ে সেনাবাহিনী দেখা গেলেও ঢাকায় সেনা টহল তেমন চোখে পড়েনি। তবে ২৭ ডিসেম্বর রাতে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে সেনাবাহিনী ৩৮৯টি উপজেলায় বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকায় ১৫২৩টি টহল পরিচালনা করেছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মোট ৩৯৯৮টি টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। টহলের পাশাপাশি সেনাবাহিনী তার নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছে।
ইনকিলাবের ব্যুরো, অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটের পরিবেশের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সবাই যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে যান সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নতুন ও নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এলাকায় যারা ত্রাস করছেন, প্রচারণায় বাধা দিয়েছেন এবং যারা অন্য প্রার্থীদের পোস্টার লাগাতে দেননি তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে মানুষ আশাবাদী হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ সেনা বাহিনীর গাড়ি দেখে একে অন্যকে ‘সেনা মাঠে নেমেছে’ খবর দিচ্ছেন। সেনা টহলের দৃশ্য দেখে ভোট দেয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারগুলোর চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই ‘সেনা মাঠে নামা’ নিয়ে আলোচনা করছেন।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল ও যানবাহনে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। ছুটির দিনে ফাঁকা সড়কে যানবাহনের সংখ্যা যদিও কম। তবু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল, তল্লাশি ও চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। তারা সেনাবাহিনীর টহল জোরদার ও যানবাহনে তল্লাশি চালানোকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। ভোটের আগে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থান রয়েছেন তারা। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, গুলশান বনানী, মহাখালি, বাড্ডা ও রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ-র্যাব পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। বাংলা মোটর এলাকায় সেনা সদস্যদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এ সময় রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনে তারা তল্লাশিও চালায়।
বাংলামোটর এলাকায় প্রাইভেটকার চালক হামিদুর রহমান জানান, সেনাবাহিনীর তল্লাশি আমার খুব ভালো লেগেছে। সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝে এবং আমরা কোনো সমস্যা ছাড়াই ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে পারব যদি সেনাবাহিনী মাঠে থাকে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকা এবং সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করা খুব জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার ভোটটি দিতে চাই, আমার পছন্দের প্রার্থীকে। এ জন্য সেনাবাহিনী মাঠে থাকতে হবে বলে তিনি দাবি জানান।
সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা টহল ও যানবাহনে তল্লাশি করছি। সাধারণ মানুষও আমাদের সহযোগী করছেন। আমরা ভোটারদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছি। তল্লাশি চলাকালে সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ করা গেছে।
তিনি আরো বলেন, টহলের পাশাপাশি সেনাবাহিনী তার নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
উল্লেখ, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন উপলক্ষে ৩৮৯টি উপজেলায় সেনা ও ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। এ ছাড়া যে ছয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে তার কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে তিনজন করে সশস্ত্রবাহিনী সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
চট্টগ্রামে সেনা টহলে ভোটে ইতিবাচক প্রভাব
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, ৩০ ডিসেম্বর ভোট উপলক্ষে সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) সকাল ৮ টায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার ইতি হওয়ার সাথে সাথেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেনাবাহিনীর টহল তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। নির্বাচনী মাঠে শান্তি-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা বিধানের লক্ষে সেনা টহলের প্রতি উৎসুক্য সাধারণ ভোটার-জনতা ব্যাপক কৌত‚হল নিয়েই আলাপ-আলোচনা করছেন। চাটগাঁবাসীর ইতিবাচক ও আশাবাদী মনোভাব লক্ষ করা গেছে আপামর মানুষের কথাবার্তায়। এদিকে সকাল ৮টার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার-প্রচারণা, মিছিল, মিটিং, মাইকিং, শোডাউন বন্ধ থাকলেও প্রার্থী, নেতাকর্মীরা কোথাও বসে নেই। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৯টি নির্বাচনী এলাকায় মহাজোট বনাম বিএনপি জোটের প্রার্থী ও তাদের সমর্থিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সর্বত্র ভোটার বা এলাকাবাসীর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়েই ব্যস্ত রয়েছেন। এই ব্যস্ততা, ছোটাছুটি চলবে আজ শনিবার অবধি। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে এখন আর প্রচারণার ডামাডোল নেই। এই সুবাদে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটারদের কাছাকাছি যেতে মরিয়া প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা।
নির্বাচনী এলাকার ভোটার জনগণের লাভের মাধ্যমে জনসমর্থনের পাল্লা ভারী করার লক্ষ্যে কৌশলী হয়ে প্রচারণার আড়ালে তৎপর রয়েছে সরকারি দল আ.লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। পোলিং এজেন্ট, ভোট কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনী কমিটি, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করছেন নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থী ও তাদের নেতা-এমপি-মন্ত্রীরা। অন্যদিকে মাঠের প্রচারের ঝামেলা না থাকায় সর্বশেষ সময়-সুযোগটুকু সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি জোট। ধানের শীষের প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের বাড়িঘরে হাজির হয়ে কুশল বিনিময় করে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের স্ত্রী, পুত্র কন্যাসহ পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়-স্বজনরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাসিমুখে কুশল বিনিময় এবং প্রত্যেক পরিবারের ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করছেন। বিএনপি জোটের নেতৃবৃন্দ বলছেন, তারা এখন আত্মবিশ্বাসে আরও বেশি বলীয়ান। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জনগণই তাদের সমর্থনের শক্তি। ভোটারের জোয়ারের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। বাড়ি বাড়ি কুশল বিনিময়ে ধানের শীষের তৃণমূলের মহিলা কর্মীদেরও বেশ তৎপর দেখা গেছে।
শুক্রবার বাদজুমা চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিটি মসজিদ চত্বরে উভয় জোটের প্রার্থী, নেতাকর্মী, প্রার্থীদের আত্মীয়-স্বজন, সমর্থকের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তারা মসজিদের ইমাম খতিব মুয়াজ্জিন, আলেম-মাশায়েখ, মুসল্লিদের কাছে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন। মসজিদে মসজিদে ইমাম খতিবগণ ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন যাতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয় এবং ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি যারা সহায়ক তারাই যেন জয়লাভ করেন এর জন্য বিশেষভাবে দোয়া ও মোনাজাত করেন। জুমার দিনে পাড়া-মহল্লায় প্রচারণাবিহীন অনেকটা নিরিবিলি ভোটের আমেজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। ভোটাররা ছুটির সুবাদে বাড়িঘরে অবস্থানকালে নৌকা বনাম ধানের শীষের ভোটের অঙ্কের আগাম হিসাব-নিকাশ করছেন। সেই সাথে যার যার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এমনিভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চোখ এ মুহূর্তে ৩০ ডিসেম্বর প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ওপরই নিবদ্ধ রয়েছে।
আলোচনায় সেনাবাহিনীর টহল : গতকাল চট্টগ্রামের সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীর সক্রিয় টহল। সেনাবাহিনীর টহল তৎপরতার ফলে মাঠে পুলিশি তোড়জোড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। এখানে-সেখানে মানুষজন গভীর পর্যবেক্ষণ করছেন সড়কে রাস্তাঘাটে সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত যানগুলোর চলাচল। সেই সাথে আগামীকাল (রোববার) নির্বাচনে ভোটদানের পরিবেশ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠছে কিনা তা নিয়েও সচেতন ভোটাররা মাঠের বাস্তব অবস্থা পরখ করছেন। সেনাবাহিনীর টহল তৎপরতার বিষয়ে চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে ইতিবাচক কথাবার্তা শোনা গেছে। অনেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভোটাররা এবার নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ ভোটটি দিয়ে ফের নিরাপদে ঘরেবাড়িতে ফিরতে পারবেন। সেনাবাহিনীর টহলের ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দলীয় ক্যাডার-সন্ত্রাসীরা উৎপাত করতে পারবে না। কারণ তাদের গ্রেফতারি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
আবার কেউ কেউ বলেন, রাস্তাঘাটে আরো আগেই সেনাবাহিনী নামলে ভালো হতো। এতো সহিংসতা, হানাহানি, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটতো না। পথে-ঘাটে সেনাবাহিনীর গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় পথচারীদের বলতে শোনা যায়, সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির আশা-আকাক্সক্ষা, ভরসা। তারা টহলরত থাকলে নিশ্চয়ই ভোটারদের নিরাপত্তা থাকবে, ভোটদানের আগ্রহ আরও বৃৃদ্ধি পাবে। গতকাল সকাল থেকে বন্দরনগরীর কাজির দেউড়ি, আসকার দীঘি, জামালখান, স্টেশন রোড, সিডিএ এভেনিউ, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম বন্দর, হালিশহর, বায়েজিদ, ষোলশহর এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহল তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা স›দ্বীপে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মহানগরী ও জেলা চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন সেনা ও নৌবাহিনীর এক হাজার ৪২৮ জন সদস্য। এর মধ্যে নগর ও জেলার ১৫টি আসনে এক হাজার ৩২৭ জন সেনা সদস্য এবং চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে ১০১ জন নৌবাহিনীর সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা রক্ষায় গত সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সারাদেশের সঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলেও সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রথম দু’দিন মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন, ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় বৈঠক করেছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে মাঠ পর্যায়ে টহল শুরু হয়। তবে গতকাল সকালে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষে পুরোদমে মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যগণ। জানা গেছে, মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিটি সংসদীয় আসনে দুই থেকে তিন প্লাটুন সেনা সদস্য নির্বাচনী মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার কিংবা ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রসহ সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করবেন।
হবিগঞ্জে চলছে সেনা তল্লাশি :
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জে চলছে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরাপদ করা এবং যে কোনো সহিংসতা রোধে এ টহল ও তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। জেলায় একটি ব্রিগেডের অধীনে দুটি ব্যাটেলিয়নে সাত-আটশ’ সেনা সদস্য কাজ করছেন। ৩৬০ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনে এর দায়িত্ব পালন করছেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে নির্বাচনে দি নিরাপত্তার জন্য করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ১০ হাজার সদস্য।
টাঙ্গাইলে টহল জোরদার
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল জোরদার করেছে। সকালে র্যাবের একটি দল শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে বহিরাগত কেউ আছে কিনা তা যাচাই করে দেখে। এ ছাড়া শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি চালান তারা। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার আটটি আসনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩টি টিম দায়িত্ব পালন করছে। এরমধ্যে ১২টি টিম ১২ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছে। একটি টিম রিজার্ভ হিসেবে রয়েছে।
লক্ষীপুরে সেনাবাহিনী টহল
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার চারটি সংসদীয় আসনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সকাল থেকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে পৃথকভাবে সেনাবাহিনীর টহল দিতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভোটরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৪৪৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৬টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সেনা তল্লাশি
ইনবিলাব প্রতিনিধি জানান, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও সাধারন জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করছে। মীরসরাইয়ে নির্বাচনী দায়িত্বরত সেনা ক্যাম্প প্রধান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ব্যাটালিয়ান কমান্ডার কর্নেল শরীফ বলেন, এখানে নির্বাচনী পরিবেশ বেশ সুষ্ঠুই দেখতে পাচ্ছি। তবুও নিñিদ্র নিরাপত্তায় আমাদের নিয়মিত টহলসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি কার্যক্রমও রয়েছে।
পাবনায় সেনা টহলে স্বস্তি
পাবনা জেলা প্রতিনিধি জানান, সাধারণ মানুষজন ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সর্বত্র টহল জোরদার রাখলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। দুর্বৃত্তরা তাদের অপকার্য করতে পারবে না। এই সব মানুষ মনে করেন দেশের গৌরব সেনাবাহিনী।
শিবচরে সেনাবাহিনীর ঝটিকা অভিযান
মাদারীপুরের শিবচরে সেনাবাহিনী ঝটিকা অভিযান ও তল্লাশি শুরু করেছে। বিকেলে সেনাবাহিনী ক্যাপ্টেন আদনানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যদের মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের পৌরসভা মোড়ের স্বাধীনতা চত্ত্বর সড়ক, প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে, শ্যামলীর মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে দেখা যায়। সেনা সদস্যরা এ সময় বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি চালায়। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র, হেলমেটসহ বিভিন্ন যানবাহনে অভিযান চালাতে দেখা যায়। কর্তব্যরত সেনাবাহিনী ক্যাপ্টেন আদনান বলেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঝটিকা অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।