পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রচার-প্রচারণা শেষ। আগামী রোববার বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সম্প্রদায়ের কৌতূহল তুলনামূলক কম বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বিভিন্ন দেশের নামকরা সংবাদপত্র বা সামযয়িকীগুলোতেও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খুব একটা প্রতিবেদন দেখা যায়নি।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্যান্য প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোকে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে যে ধরনের তৎপর ভূমিকায় দেখা গেছে, এবার সে রকম দৃশ্যমান তৎপরতা বলতে গেলে অনেক কম। তা সত্তে¡ও, এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ভাবছে, তা বেশ কিছু গণমাধ্যম প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়ায় সংক্ষিপ্ত সঙ্কলন এখানে তুলে ধরা হলো-
দ্য গার্ডিয়ান : লন্ডন
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিখ্যাত ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান। গত বৃহস্পতিবার তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে রোববার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা রোববার নির্ধারণ হবে। দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে তুলে এনেছেন শেখা হাসিনা সরকার। কিন্তু তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণা রক্তক্ষয়ী হলেও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী রাজনীতিকরা চলমান পরিস্থিতিকে দেশটি স্বাধীনতার পর ৪৭ বছরের মধ্যে ‘সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর’ পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেছেন।
দ্য হিন্দু : ভারত
‘বাংলাদেশে তিক্ত প্রচারণা শেষ’ শিরোনামে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার এক নিবন্ধে লেখা হয়েছে- বৃহস্পতিবার ছিল বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিন। এদিন দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ওপরই মূলত ফোকাস করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ‘সুশাসন’ আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়েছে। ঢাকা শহরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের যুব সমর্থকদের দীর্ঘ র্যালি। তাতে লাউডস্পিকারে বাজছিল ‘ভোট ফর নৌকা’। এটি দলটির নির্বাচনী প্রতীক। অন্যদিকে ঢাকার রাজপথে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন অনুপস্থিত। তারা দাবি করছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, এক ডজনেরও বেশি দলের সমন্বয়ে মহাজোট নিয়ে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই মহাজোটে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার দল প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রার্থী তিনি প্রত্যাহার করতে পারেন। আওয়ামী লীগ ২৬০ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে, এর মধ্যে ৪৯ জন নতুন প্রার্থী।
অন্যদিকের পরিস্থিতি সম্ভবত অনেক বেশি জটিল। ২০ দলেরও বেশি দলকে নিয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠন করেছে বিরোধীরা। এর নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মূলে রয়েছে বিএনপি। তারা ২৫৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় নি দলটি। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু দ্য হিন্দুকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, এবার নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবো। কোনোভাবেই আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাবো না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন এক সময় আওয়ামী লীগের বড় মাপের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের সংবিধান রচয়িতা পার্লামেন্টারি কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দেখা হয় ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে। লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞ অরুপ রাহী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ নয় বিএনপি। তবে এখন তা আর কাজ করে না। ভারতের অনেক মিডিয়া এ বিষয়ে ভ্রান্ত নীতি অবলম্বন করে। আরও যুক্তি দেয়া হয় যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে জড়িত নয় বিএনপি এ কথা আর ধোপে টেকে না, যখন দেখা যায় তারা নির্বাচনে নিজেদের প্রতীক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর একজন অফিস বেয়ারারকে। ঢাকায় বিএনপির একজন কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িত নয়। এমনকি ভারত বিরোধী কোনো রকম অবস্থানকেও উৎসাহিত করে না।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, ব্রিটেন
কয়েকদিন আগে ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির এশিয়া বিষয়ক এডিটর এডাম উইথনালের লেখা প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়, বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের দিকে ঝুঁকেছে এবং কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ তার অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পুরো অঞ্চলে সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
চ্যাথাম হাউজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গারেথ প্রাইসকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, যেহেতু বাংলাদেশে কোনো নির্ভরযোগ্য জরিপ হয়নি নির্বাচনের আগে, তাই বলা মুশকিল ভোটাররা যখন ভোট দিতে যাবেন, তখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নাকি তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, কোনটিকে তারা বেশি গুরুত্ব দেবেন।
ড. গারেথ প্রাইস বলেছেন, এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, একজন গড় পড়তা বাংলাদেশি কী ভাবছেন? তারা এটা মনে করছেন কি না যে, বর্তমান সরকার ১০ বছর সময় পেয়েছে, এখন পরিবর্তন দরকার, নাকি তারা মনে করছেন, দলটি বেশ ভালোই চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, যদি শেখ হাসিনা ভোটে জেতেন, যেটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে কিছু বিক্ষোভ হবে এবং সেগুলো দমন করা হবে।
বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যা জানা জরুরি : আলজাজিরা
‘বাংলাদেশের নির্বাচন ২০১৮: আপনার কি জানা জরুরি’ শিরোনামে কাতারভিত্তিক আলজাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আলি রিয়াজ বলেছেন, দুটি কারণে বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ হচ্ছে, একনায়কতন্ত্রের অভিমুখ থেকে দেশের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়ার সময় এটা। দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমেই সঙ্কুচিত করে বিরোধীদল দমন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং সাধারণভাবেই ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের পতনের ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কখনো এমন হয়নি যে, ক্ষমতাসীন দল পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৪ কেবল এর ব্যতিক্রম। তবে বিএনপি বয়কট করায় ওটা কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না।
অতএব বাংলাদেশিরা পরিবর্তন চায় নাকি ধারাবাহিকতা সেটা তাদেরই ঠিক করতে হবে’, মন্তব্য আলি রিয়াজের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ভারত
ভারতীয় সাংবাদিক মানস ঘোষ ‘ব্যাটল ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লিখেছেন, এই নির্বাচন গত এক দশক ধরে শেখ হাসিনা যেসব নীতি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন, সেগুলোর জন্য এক লিটমাস টেস্ট।
তার মতে, শেখ হাসিনার এসব কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাবই পড়া উচিৎ নির্বাচনে। কিন্তু, এন্টি ইনকামবেন্সি অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু, পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বেলায় তার বিরোধীপক্ষ বিএনপির ভাবমূর্তি আরও বেশি খারাপ।
মানস ঘোষ আরও লিখেছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, সাংগঠনিকভাবে তারা একেবারেই ছত্রভঙ্গ। একটি নির্বাচনমুখী দল হয়েও বিএনপি যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল, সেটি ছিল তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল। তাদের সংগঠন যে কেবল শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছে তাই নয়, অনেকেই দল ছেড়েছেন এবং সংগঠন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
নিকেই এশিয়ান রিভিউ, জাপান
নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাভারেজ দিয়েছে জাপানের একটি সাময়িকী নিকেই এশিয়ান রিভিউ। তাদের গত সপ্তাহের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনই ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে, যার শিরোনাম ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ’।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। কিন্তু, একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা কি এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন?’
প্রতিবেদনে অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সব ধরনের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম এক সাফল্য কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশক ধরে ছয় শতাংশের ওপরে, দেশটির গার্মেন্টস শিল্প চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে। আর মাথাপিছু আয় ২০০৯ সালের পর থেকে তিন গুণ বেড়ে এখন ১ হাজার ৭৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। চরম দারিদ্র নেমে এসেছে নয় শতাংশের নিচে।
সাময়িকীর নিবন্ধে বলা হয়, এ রকম উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে যে সরকারের অধীনে, স্বাভাবিক অবস্থায়, তাদের ব্যাপক সমর্থন থাকার কথা। কিন্তু, বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে গণবিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। শেখ হাসিনার বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, যেভাবে কঠোর হাতে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দেবে না। প্রতিদিন বিরোধী সমর্থকদের যেভাবে ধরপাকড় করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে তাতে মনে হয় সরকারি দল তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
এতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ অতীতের কিছু নির্বাচনে জোরালো সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু, বিরোধী দলীয় কর্মীরা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পরপর পাঁচ বছরের দুটি মেয়াদের পর এখন কিছু ভোটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু, আবার অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, অনেকেই একমত হবেন যে, ক্ষমতাসীন দলের বিজয় (বাংলাদেশের) অধিকতর উন্নয়নের পক্ষে যাবে।
দ্য মিন্ট, ভারত
লন্ডনভিত্তিক লেখক সলিল ত্রিপাঠির একটি বিশ্লেষণ ছেপেছে ভারতের বিজনেস ওয়েবসাইট দ্য মিন্ট।
তিনি লিখেছেন, একমাত্র জ্যোতিষী আর জরিপকারীরাই নির্বাচনের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং প্রায়শই তারা ভুল প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে বসে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমার কাজ নয়। কিন্তু, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে না আসে, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার হবে।
সলিল ত্রিপাঠি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশি গল্পগাঁথায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নাকি আলোর পথের শক্তি, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দল আর তাদের বিরোধীরা নাকি অন্ধকারের শক্তি। কিন্তু, বাস্তবে আজকের আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাপূর্ব কালের আওয়ামী লীগের মিল খুব সামান্য এবং আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দেখতে অনেকটা ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকের বাকশালের চেহারা নিয়েছে। যখন কি না একদলীয় রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়েছিল, অন্যান্য দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের পেশীশক্তি নির্ভর একটি দল।
দ্য স্ক্রল, ভারত
ফাহাম আবদুস সালাম নামে একজন ভারতীয় বিশ্লেষক এই নিউজ ওয়েবসাইটে প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটি কি একটি ‘ম্যানেজড ইলেকশন’?
বাংলাদেশে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গত সেপ্টেম্বরে লিখেছেন, যদি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরবর্তী পার্লামেন্টে লজ্জাজনকভাবে একটি সংখ্যালঘু দলে পরিণত হতে পারে। এই অনুমান মোটেই বিস্ময়কর নয়। কারণ, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারাও নিজেদের সমর্থকদের কাছে এ রকম আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। এ থেকে যেটা বোঝা যায় তা হলো, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক মতের লোকজনই মোটামুটি একমত যে একটা ‘ম্যানেজড ইলেকশন’ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জেতা অসম্ভব। আর এ ধরনের একটা ‘ম্যানেজড ইলেকশন’, যেটাই সম্ভবত ঘটতে যাচ্ছে, তা ভারতের সহযোগিতা ছাড়া ‘ম্যানেজ’ করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যে ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে হতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সংস্থাকে তহবিল দিচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশ সরকার ভিসা এবং অন্যান্য সহযোগিতা না দেয়ায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন্স (আনফ্রেল) নামের এই সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এই মুখপাত্র তার বিবৃতিতে আরও বলেছেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ এবং সমবেত হওয়ার অধিকার থাকতে হবে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তাদের কাজ করতে দিতে হবে এবং কোনো ধরনের সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয়ভীতির হুমকি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে সবাইকে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় উৎসাহিত করছি, যাতে করে বাংলাদেশের সব মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ৩০ ডিসেম্বররের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের মত প্রকাশ করতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।