Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে উৎসাহের চেয়ে উদ্বেগ বেশি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাত পোহালেই সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকাতেও বহুল আলোচিত নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। পৌষের কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাটানা ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিজিবি বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে টহলে রয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে সেনাবাহিনীর একাধিক টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্পে রয়েছে। পুলিশি ধরপাকড়ও অব্যাহত আছে। নির্বাচনপূর্ব শেষ জুমায় গতকাল বরিশাল সদর আসনের মহাজোটপ্রার্থী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুখ শামিম নগরীর জামে স্টিমার ঘাট মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তার সাথে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দও ছিলেন।
অপরদিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এড. মুজিবুর রহমান সারোয়ার নগরীর কেন্দ্রীয় জামে কসাই মসজিদে জুমা নামাজ আদায় করে মুসল্লীদের সাথে কুশল বিনিময় করে দেয়া চান।
তবে এ নির্বাচন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ভোটারসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হবার কথা তা এখনো লক্ষ্যণীয় নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এমনকি অনেক এলাকাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে ভোট প্রদানের আগ্রহের চেয়ে শঙ্কার ছাপ স্পষ্ট বলে মনে করছেন মহলটি। গণগ্রেফতারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলখানাই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দীর ভারে ন্যূব্জ। আবার কোনো কোনো এলাকার প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা ভোটের আগেই বিজয়ের আনন্দ চেপে রাখতে পারছেন না বলেও কথা উঠেছে। ফলে নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ করতে নির্বাচন কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের বক্তব্যকে দক্ষিণাঞ্চলের অনেকেই গুরুত্বহীন বলেও মনে করছেন। অনেকে আবার মাঠ প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও মন্তব্য করছেন।
বরিশাল মহানগরীতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সরোয়ারের এপিএস অ্যাডভোকেট মামুনকেও গতকাল দুপুরে পুলিশ আটক করেছে। এখন তার সাথে চলার মতো আর কেউ অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়ে গত পনের দিনে বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আটকের অভিযোগ করেন তিনি। বরিশাল-১ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন নিজ বাড়ির এলাকার বাইরে প্রচারণা চালাতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তার শরিকলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও বিজিবি ১৯ কর্মীকে আটক করেছে।
বিধি অনুযায়ী সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রচারণার মধ্যভাগ থেকে শেষ পর্যায় পর্যন্ত কৌশলে তা একতরফা করে ফেলা হয়। এমনকি নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে মোটর সাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সামনেই মিছিল হয়েছে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় এ ধরনের বেআইনী মিছিলের নিরাপত্তার লক্ষ্যে পুলিশের গাড়িও পেছনভাগে ছিল।
অপরদিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের অভিযোগ, তাদের পক্ষে কেউ লিফলেট বিতরণ করলেও তাকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এমনকি প্রার্থীর সাথে থাকা কর্মীদের পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে যাবার ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
তবে এসব কিছুর মধ্যেই সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলে একাদশ সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়তে শুরু করেছে। আজ রাত পোহায়ে কাল সকালের বহুল আলোচিত নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ২১টি সংসদীয় আসনে ভোটার ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৩০ লাখ ৯২ হাজার ২০২, আর পুরুষ ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৮। এবারের নির্বচনে বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৬২৯। পটুয়াখালীর ৪টি আসনে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭ জন। ভোলার ৪টি সংসদীয় আসনে ভোটার ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৮২১। পিরোজপুরের ৩টি আসনে ভোটার ৮ লাখ ২৯ হাজার ৫০৩ জন। বরগুনার দুটি আসনে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৮ এবং ঝালকাঠী জেলার ২টি সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৯২।
এ বিপুল সংখ্যক ভোটারের ভোট গ্রহণের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২ হাজার ৬৭৭টি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৩৯৭টি বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে মহিলা ভোটকক্ষ থাকছে ৭ হাজার ৫৮টি। এবারো দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সব জেলা হয়ে উপজেলা সদরে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। এবারের নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২ জন সশস্ত্র পুুলিশ ছাড়াও আনসারের দুজন করে সশস্ত্র পিসি ও এপিসি এবং ১০ জন করে লাঠিধারী আনসার ও মহিলা আনসারসহ প্রয়োজন অনুযায়ী ১-২ জন করে গ্রাম পুলিশ থাকছে।
সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে শুধুমাত্র সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যা দুই-এর স্থলে একজন করে থাকছে। এছাড়া বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার ১৭৪টি কেন্দ্রে সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩ জন করা হয়েছে। তবে নগরীতে কোন গ্রাম পুলিশ থাকবে না। এবারের নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার কোথাও ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ হচ্ছে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এবারের নির্বাচনে প্রশাসনের বিশাল আয়োজন থাকলেও কিছু অতি উৎসাহীর কর্মকান্ডে দক্ষিণাঞ্চলের জনমনে এখনো এ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ-উৎসাহের চেয়ে উৎকন্ঠাই বেশি। এমনকি জনমনে মহাজোট ও তাদের প্রার্থীদের সম্পর্কেও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করেছে অনেক ক্ষেত্রে। তবে এসব কিছুর পরেও দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ এখনো যথেষ্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ