Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার ১০ হাজার ৩২৯ -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ পিএম

গত ৮ নভেম্বর ২০১৮ তফশীল ঘোষনার পর হতে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সময়ে গায়েবী ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৮৪৪টি। মোট হামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬ এবং এসব হামলায় আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৫২ জন। মারা গেছেন ৯ জন নেতাকর্মী। বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, শুধু গতকালই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৩৮টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন নেতাকর্মী, হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে। নির্বাচনী প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানান এবং বিএনপি ও অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন।
রিজভী বলেন, শুধু চর নয়, নির্বাচনে নদীসহ চর দখল করবে বলেই জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বর্তমান শাসকগোষ্টী শুরু করে প্রায় অনেক দিন থেকেই। সেইজন্য বানোয়াট মামলা সাজিয়ে নির্বাচনের প্রায় বছর খানেক আগেই সাজা দিয়ে দেশনেত্রীকে বন্দী করা হয়েছে। কারণ রাষ্ট্রশক্তি সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয়। প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারি সংস্থা, আদালত কারো টু শব্দ করার উপায় নেই। টু শব্দ করলে পরিণতি কি হবে তারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দেশ থেকে তাড়ানো হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনা নাৎসীসূলভ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারি হয়েছেন। শেখ হাসিনা যা চান তার বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রাচীণ পান্ডুলিপি’র অন্তর্ভূক্ত বিষয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে। ন্যায়বিচার থাকলে বেগম জিয়া খালাস পেতেন। আসন্ন নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে যে ঢেউ উঠতো সেটিকে বাধা দেয়ার জন্য সরকার তাঁকে আটকে রেখেছে। ত্রাস সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচন করার জন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে।
বিএনপি'র এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেছেন-পরাজয় বুঝতে পেরে নাশকতার পরিকল্পনায় বিএনপি। সর্বজনবিদিত যে, আওয়ামী লীগ এমন দল যেটি একটি উন্নতমানের মিথ্যা প্রডাকশন কেন্দ্র। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই-বিএনপি মহাসচিবের গাড়ী বহরে হামলা করেছে কে ? বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে কে ? ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করেছে কে ? রোমানা মাহমুদকে গুলি করেছে কে ? হাবিবুর রহমান হাবিবকে আপনি ভালভাবেই চেনেন, তাকে হত্যা করার জন্য তার শরীরে ছুরি ঢুকিয়েছে কে ? মির্জা আব্বাসের মিছিলে, আফরোজা আব্বাসের মিছিলে, ড. মঈন খানের মিছিলে, মওদুদ আহমদের মিছিলে, মেজর হাফিজ, হাসিনা আহমেদের মিছিলে হামলা করেছে কে ? শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ওপর হামলা চালিয়েছে কে ? হাফিজ ইব্রাহিম এর ওপর হামলা করেছে কে ? ধানের শীষের নবীন প্রার্থী ডাঃ সানসিলা প্রিয়াংকার ওপর হামলা চালিয়েছে কে ? তেমনিভাবে সারাদেশে ধানের শীষের শতাধিক প্রার্থীর ওপর রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে ? এখনও বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে অবরুদ্ধ আছেন। গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জে ধানের শীষের প্রার্থীর বাড়ীতে বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদকে হত্যা করেছে কে ? যারা এসব সহিংস অপকর্মে লিপ্ত তাদেরকে কি শান্তির বার্তাবাহক বলতে হবে ?
রিজভী নলেন, ঢাকা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডার’রা তার বাসা ঘিরে রেখেছে। অথচ নৌকা মার্কার প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা গণমিছিল করেছেন। চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নিজ বাড়ীতে অবরুদ্ধ। কেনাকাটা করতে বাজারে লোক যেতে পারছে না। বাসায় যতটুকু আনাজপাতি ছিল সব শেষ। আজ থেকে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। গতরাত ৩টায় তার বাসায় র‌্যাব ঢুকে সবকিছু তছনছ করেছে। গতরাত দেড়টায় বরিশালের গৌরনদীতে ধানের শীষের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনকে প্রার্থীর নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, আপনার নৌকা মার্কার প্রার্থী হাজী সেলিম রাস্তা বন্ধ করে পথসভা করাকে আপনি কি বলবেন ? সে বিষয়ে আপনি চুপ কেন ? বগুড়ায় হোটেল নাজগার্ডেনে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ধানের শীষের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্নাকে পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা কি শান্তি মিশনের কাজ, নাকি সেটিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে, তা আপনার কাছ থেকে জানতে চায় জাতি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডারদের গুন্ডামিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের মিছিলে বাধা দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি’র নির্বাচনী এজেন্ট, কর্মী ও সমর্থকদের এলাকাছাড়া করেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রামে-গ্রামে সশস্ত্র মহড়া চলছে। সারাদেশে এখনও ভীতিকর অবস্থা বিদ্যমান। সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছেন সিইসি। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। এগুলো সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় এবং সিইসি’র তত্ত্বাবধানে।
তিনি বলেন, জেলায় জেলায় বেপরোয়া গ্রেফতার অভিযানে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। আর আপনি বলছেন-বিএনপি নাশকতা করছে। নাশকতাকারিদের ট্রেনিং সেন্টার তো আওয়ামী লীগেই বিদ্যমান। সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য আওয়ামী লীগ ও সরকার। তারপরও আপনাদেরকে সাধু বলতে হবে ? বিগত দশ বছরে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, ব্যাংক-বীমা খেয়ে ফেলার পরও ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাকে বলছেন আপনি বিশ্বের তিনজন সৎ ব্যক্তির একজন। ১/১১-তে ওবায়দুল কাদের আপনাকে নিয়ে কি বলেছিলেন ? সেগুলো তো এই তথ্য প্রযু্িক্তর যুগে শোনা যায়। সরাসরি লেনদেনের বিষয়ে কত কথাই ছিল সেখানে। শেখ সেলিম সাহেব, মরহুম জলিল সাহেব সেসময় কি বলেছিলেন ? সেটিও তো সবার জানা। ওবায়দুল কাদের সাহেব রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট হলো, সেগুলোর দায় কি প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারবেন। অবশ্য আপনি প্রধানমন্ত্রীকে সৎ উপাধী দিয়ে আপনার পদের নিশ্চয়তা থাকবে ঠিকই, কিন্তু এরকম কথা বলে আপনি জাতির কাছে হাস্যকর পাত্রে পরিণত হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ