Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৮

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৮ পিএম, ৭ মে, ২০১৬

ইনকিলাব রিপোর্টার : কেন্দ্র দখল, ভাংচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক ব্যালেটে সিল, দখলে সহায়তা, জালভোটের মাধ্যমে দেশের ৪৬ জেলায় ৭০৩ ইউনিয়নে গতকাল ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মারপিট করে এজেন্ট বের দেওয়া, গোলাগুলি, বোমাবাজি, পুলিশের উপর হামলা, প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৩০০ জন। চতুর্থ ধাপে বেশিরভাগ কেন্দ্রে মেম্বরের ভোট সুষ্ঠু হলেও চেয়ারম্যানের ব্যালট ভোটারদের দেওয়া হয়নি। এ ধাপে অনিয়মের শীর্ষে ছিলেন ভোট কর্মকর্তারা। প্রায় দুই ডজন ভোট কর্মকর্তাকে শাস্তি ও আটক করা হয়েছে। দখল ও বর্জনের চিত্র ছিল প্রায় আগের তিন ধাপের মতোই। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে কোন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলেও ভোটে তারা সন্তুষ্ট। বিএনপি একে তামাশার ভোট বলেছে। সরকারি দলের প্রার্থী ব্যতীত বেশিরভাগ প্রার্থীই ভোট সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ করেছে। এধাপেও ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে সরকারি দল। বেশ কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা।
গতকাল ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে সারাদেশে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৮জন নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জাহেদুল ইসলাম বুলু (৩৫) ও গাংগোপাড়া এলাকার সিদ্দিকুর রহমান (২৮) নামে দু’জন নিহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নে বিজিবির গুলিতে মাহবুব (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে  কুমিল্লায় তাপসচন্দ্র দাস (২৩) নামে বিদ্রোহী প্রার্থীর এক কর্মী এবং নরসিংদীর রায়পুরায় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সুমনসহ ২জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুরের ইউপি সদস্য প্রার্থী মতি মিয়া ও নিজ রাইফেলের গুলিতে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে বিজিবির সদস্য মাহমুদুল হাসান নিহত হয়েছেন।
পাবনার একদন্ত ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান রানা জানান, সকালে সব কেন্দ্রে এজেন্টরা পৌঁছানোর পরপরেই মারপিট করে সবাইকে বের দেওয়া হয়। পুলিশ, বিজিবি, রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের বলেও কোন লাভ হয়নি।
সারাদেশে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০০। এরমধ্যে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউপিতে দায়িত্বরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হামলায় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও এক আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় এসআইয়ের একটি ম্যাগজিন ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়ার শুভপুর ও  মহামায়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এক এসআইসহ ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একই উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নে নিজকুঞ্জরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের হামলায় আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল হক আহত হয়েছেন। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ওলিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মোঃ এয়াসিন নামে পুলিশের এস আই আহত হন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুরে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার সময় আট রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে পুলিশ। রাঙ্গামাটি ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন তালুকদার ও তার মেয়েকে মারধর করেছে। পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে হেদায়েত হোসেন নামের একজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বোরুলিয়া ভোট কেন্দ্রে ২ মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ও ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনিকে (২৭) অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
এদিকে স্বয়ং প্রিসাইডিং অফিসার-সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচনে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। অনিয়মের কারণে অন্তত দুই ডজন ভোটগ্রহন কর্মকর্তাকে আটক ও জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে জাল ভোট দেওয়ার সময় ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কাশেমও রেয়েছেন। এছাড়াও লক্ষীপুরের রায়পুরে ৬জন, কুমিল্লায় ৪, চট্টগ্রামের চৌদ্দগ্রামে ১জন, নোয়াখালির সোনাইমুড়ি ১জন, জামালপুরে ২ জনের নাম রয়েছে। এদিকে ভোটের দুইদিন আগে থেকেই এবারে নির্বাচন বর্জন শুরু হয়েছে। গতকাল সারাদেশে কর্মপক্ষে দুই ডজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এর মধ্যে প্রার্থী ফেনী সদরের লেমুয়ার ফেরদৌস কোরেশী, ধলিয়া জাকের হোসেন জসিম ও ফরহাদনগরের আলমগীর চৌধুরী কেন্দ্র দখল ও তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেন। পাবনার একদন্তের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান রানা, তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রউফ, সাগরকান্দি ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রাথী আব্দুস সালাম ভোট বর্জন করেন। নোয়াখালির সোনাইমুড়ি উপজেলার ৯নং দেওটির বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. দিদার হোসেন। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী শেখ জহুরুল ইসলাম ভুটু নির্বাচন বর্জন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫টি ইউনিয়নের ৭ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। টাঙ্গাইলের মধুপুরে গোলাবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হুমায়ুন ভোটবর্জন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামানের দেওয়া তথ্যমতে, মোট ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। ভোটের আগেই ব্যালট পেপারে সিল দেয়ার অভিযোগে কুমিল্লায় দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। একই অভিযোগে জামালপুরে দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। দিনাজপুরের বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৈকুলকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ায় পার্বতীপুরের একটি ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৮টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রিজাইডিং অফিসাররা। কেন্দ্রগুলো হলো-বজরা ইউনিয়নের বগাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিলমুদ দারুল উলুম মাদরাসা, নদনা ইউনিয়নের দক্ষিণ শাকতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়াগ ইউনিয়নের বাওরকোর্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অম্বরনগর ইউনিয়নের অম্বরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাপুর ইউনিয়নের মেরিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাষীরহাট ইউনিয়নের কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়নের খালখাড়া কোনোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। জোরপূর্বক কেন্দ্রে ঢুকে জালভোট দেয়ার অভিযোগে সদর উপজেলার ৮নং ওয়ার্ড কালির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। প্রকাশ্যে জাল ভোটের কারণে ৬ নং কেরোয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মানসুরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
এদিকে বেশ কিছু কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে ভোট স্থগিত করা হলেও পরে পরিস্থিতি শান্ত করে আবার ভোট শুরু হয়।
বাগমারায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২
রাজশাহী ব্যুরো ও বাগমারা সংবাদদাতা : গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের হাটগাঙ্গোপাড়া বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে গোলাগুলিতে ২ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল, বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিকেলে আ’লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মদ তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করে। এসময় আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলামের সমর্থকরা জান মোহাম্মাদ বক্্েরর লোকজনকে বাজারে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল  বাকবিতা-া শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষই হাত বোমা ফাটায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাঠি চার্জ শুরু করে। এতে হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বাজারে দোকান পাটে হামলা চালায়। এসময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে। এতে শহিদুল ইসলাম পক্ষের লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে বাজার এলাকা ত্যাগ করে। এর পরে জান মোহাম্মাদের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বাজারের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা শুরু করে। হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করে এবং কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ গুলি চালালে জান মোহাম্মদ গ্রুপের সারন্দি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের পুত্র সিদ্দিকুর রহমান (৩০) ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় এবং মারাত্মক অবস্থায় জাহিদুল ইসলাম বুলু (৩৫) নামে অপর একজনকে  হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পুলিশ ও জান মোহাম্মদ গ্রুপের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি চলে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়।
কুমিল্লায় যুবক নিহত
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, এজেন্ট মারধর, অবাধে জাল ভোট, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যদিয়ে গতকাল কুমিল্লার চার উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট চলাকালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের উত্তর চান্দলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় তাপস চন্দ্র দাস (৩৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগে চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২টি, চান্দিনায় ৪টি এবং মনোহরগঞ্জে ২টি ভোট কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার রাশেদুল ইসলাম জানান, নৌকা প্রতীকে সিল মারায় সহায়তা করাসহ নানা অভিযোগে চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনা ও ব্রাহ্মণপাড়ায় ৪ প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।
নরসিংদীতে নিহত ২ আহত ২০
নরসিংদী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কেন্দ্র দখল, দখল প্রচেষ্টা, সীলমারামারি, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ এবং রক্তপাতের মধ্য দিয়ে রায়পুরা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রতিপক্ষের হামলায় সুমন মিয়া (৩০) ও হোসেন আলী (৬০) নামে দুই ব্যক্তি নিহত এবং বিএনপি প্রার্থীসহ অন্তত: ২০ ব্যক্তি আহত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রীনগর ইউনিয়নের রংপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র দখল নিয়ে সৃষ্ট গোলযোগের সময় নৌকা মার্কার সমর্থকদের কিরিচের আঘাতে সুমন মিয়া (৩০), আজান চৌধুরী নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটকর্মী মারাত্মক আহত হয়েছে। একই সময় আহত হয়েছে এমদাদ ও সোহাগ নামে আরো ২ জন ভোটকর্মী। মারাত্মক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা গেছে বলে ব্যাপক প্রচার হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সুমন মিয়ার মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও পুলিশ মৃত্যুর কথা অস্বীকার করেছে। বিকেল ৩ টায় পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর ভোট কেন্দ্রে সীলমারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৌকা মার্কার সমর্থকদের হামলায় হোসেন আলী (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। বেলা ২টায় উত্তরবাখরনগর ইউনিয়নের উত্তরবাখরনগর ভোট কেন্দ্রে নৌকা মার্কার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে বিএনপি প্রার্থী বিপ্লব মিয়াকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করেছে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ফেনীতে গুলিবিদ্ধ ৯, প্রার্থী আহত
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়ার শুভপুর ও মহামায়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরমধ্যে শুভপুরে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গুলিতে ৪ জন এবং সকাল ১০টার দিকে মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন আহত হন। তাদেরকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে আবাসিক চিকিৎসক সারোয়ার জাহান নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদ খান চৌধুরী। এছাড়া একই উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আজিজুল হক।
বাইরে পুলিশ, ভেতরে আওয়ামী লীগ!
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস জানান, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বড়বিলা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। শনিবার দুপুর দেড়টা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের জটলা। বাইরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। কিন্তু ভেতরে ঘটছে অন্য রকম অভিযান। আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সালামের ক্যাডাররা কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছেন। এমন সময়েই পুলিশী অ্যাকশন।
দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি। এক ঘণ্টা বন্ধ থাকলো ভোট। অত:পর আবার কেন্দ্রের দখল নিলো পুলিশ। ঘণ্টা দুয়েক পর আবারো বদলে গেলো পরিবেশ। এবার খোদ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররাই আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন। হাতেনাতে প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কাশেমসহ ১৭ জনকে আটক করলো পুলিশ।
শুধু এ ইউনিয়নেই নয়, উপজেলার ভবানীপুর, দেওখোলা, ৬ নং ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন, আছিম, রাঙ্গামাটিয়া, এনায়েতপুর, বালিয়ানসহ প্রায় সব’কটি ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের ক্যাডারদের জাল ভোটের মচ্ছপ। ফলে দুপুর ১২টার পর বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রই দখলে নিয়ে নেয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের ক্যাডাররা। দুপুরের পর অনেকেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পেরে ফিরে এসেছেন।
বাইরে পুলিশ, ভেতরে আ’লীগ
শনিবার বিকেলে উপজেলার আছিম বাজার এলাকায় স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ও শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হকের নাতি জামাই আখতারুল আলম ফারুক বলেন, নজিরবিহীনভাবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের ক্যাডাররা। উপজেলার প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই বাইরে নিধিরাম সর্দারের মতো দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। আর ভেতরে আ’লীগের ক্যাডাররা ইচ্ছামতো ব্যালটে সিল দিয়েছেন। এতে করে হাজার হাজার ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ঝিনাইদহে জাল ভোটের উৎসব
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, জাল ভোট দেয়া, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার মধ্য দিয়ে শনিবার ঝিনাইদহ সদর ও হরিনাকুন্ডু উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন শেষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদরের ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দুইটিতে আওয়ামীলীগ ও ৫টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। এদিকে ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার একাধিক অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রর্থীরা। তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে এই অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি। তবে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা জানিয়েছেন ভোট সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।  এদিকে সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আজিজুর রহমান মন্ডল ভোটারদের হুমকি, কেন্দ্রে আসতে বাঁধা প্রদান ও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে বেলা ৩ টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে মহিলাসহ চারব্যক্তিকে কারাদ- দেয়া হয়েছে।
রায়পুরে ৬ পোলিং এজেন্ট আটক-জরিমানা
রায়পুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় শনিবার ৫টি ইউনিয়নে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিকে প্রকাশ্যে জাল ভোট প্রদান ও ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের কারণে ৬নং কেরোয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মানসুরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১১টার দিকে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন বিচারিক হাকিম মোঃ মোশারফ হোসেন। এসময় ৬ পোলিং এজেন্টকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ  এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। আটককৃতরা হলেনÑ মোঃ সেলিম, সিরাজ উল্যা, মোঃ মানিক, মোঃ লিটন, মাসুম বিল্লাহ ও মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। এছাড়া ৭নং বামনী ইউপির ৩নং ওয়ার্ডে সাইচা আল-আমিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী ইকরাম হোসেন মুকুলকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় এবং সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থী মহিমা আক্তার শিল্পির এজেন্টদেরও জোর করে বের করে দেয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জহুরুল ইসলাম চৌধুরী ও তার লোকজন।  গুরুতর আহত অবস্থায় ইকরাম হোসেন মুকুল পাটোয়ারীকে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আ’লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর লোকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ৫ জন আহত হয়।
মতলব ও শাহরাস্তিতে সংঘর্ষে আহত ১৭  
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ ও শাহরাস্তি উপজেলার ১০ ইউনিয়নের নির্বাচনে কয়েকটি স্থানে নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোঁড়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাও উত্তর ইউনিয়নের ঘোড়াদাড়ি, নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়নের খরর্গপুর, খিদিরপুর উপাদী ইউনিয়নের কাজিয়ারতে নৌকা ও ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ তালুকদারসহ ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে রহমান নামের একজন। নায়েরগাওয়ের তুষপুর ও বারোগাও কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে ।
এছাড়া শাহরাস্তি উপজেলার চিতশী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে ৭ জন।
চৌদ্দগ্রামে আহত অর্ধশত
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কেন্দ্র দখল, হামলা, সংঘর্ষসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল ১৩টি ইউপির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব হামলা-সংঘর্ষে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক, পুলিশ, আনসারসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছেন।  বিএনপি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রহসনের এ নির্বাচন বাতিলের দাবী জানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিওড়া এলাকায় অবস্থান করে প্রতিবাদ জানান। এছাড়াও বিএনপির ১১ প্রাথী সহ ১৪ প্রাথী নির্বাচন বজন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নির্বাচনের আগের রাতে জোরপূর্বক ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার কারণে উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের যুগিরহাট হোসানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রিজাইডং অফিসারসহ ৫জনকে ৬মাসের কারাদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত। একই রাতে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের মরকটা কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হাসেমের একদল সমর্থক ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে আনতে গেলে আওয়ামীযুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসম্পাদক আবুল হোসেন মজুমদার আহত হন।
মনোহরগঞ্জে প্রিজাইডিং অফিসার আটক
এদিকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ব্যালট বাক্স ছিনতাই এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক নৌকা প্রতীকে অবৈধভাবে সিল মারার অভিযোগে পৃথক ঘটনায় ২টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও হাবিবুর রহমান নামের একজন প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।
ঝিকরগাছায় মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি বেশী
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ কেন্দ্র পুরুষ শূন্য ছিল। দুপুরের আগেই বেশির ভাগ কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা সকাল থেকেই প্রভাব বিস্তার করে অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে নেয়। অনেকে বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে আসলেও তাদেরকে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারতে বাধ্য করা হয়। কেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে প্রভাব বিস্তার করায় বিএনপি ঘরানার ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে একজনকে ছয় মাসের কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাসখোলা ইউনিয়নে বল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ছিল ভোটার শূন্য। হাতেগোনা কয়েকজন নারী ভোটাধিকার প্রয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় ভোট দিতে আসা কাউসার আলী সরদার পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি নেই কেন জিজ্ঞাসা করলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন, ‘দেশে বিটা (পুরুষ) মানুষ নেই। তাই বিটিরা (নারীরা) ভোট দেচ্ছে। দেখতেছেন না কেন্দ্রে বিটিরা বেশি।’
মুন্সীগঞ্জে এসআইকে মারপিট
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর ১২ ও সদর উপজেলার ৩টিসহ একযোগে ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ তিনটি কেন্দ্র ছাড়া সবক’টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। সকাল থেকে উৎসব আমেজের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পুরুষ ও নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে দুপুর একটার পর ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় সদরের রামপালের কাজী কসবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টঙ্গিবাড়ির সেরজাবাদ কেন্দ্র দুইটি স্থগিত করা হয়েছে। এসময় সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত কমপক্ষে ৫জন আহত হয়। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে ৭ জনকে কারাদ- প্রদান করেছে।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার যশলং ইউপির সেরাজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। টঙ্গীবাড়ির ইউএনও তাজিনা সারোয়ার জানান, যশলং ইউনিয়নের সেরাজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়।
এদিকে পানাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪/৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ওই কেন্দ্রের পিজাইডিং অফিসার হৃদয় কৃষ্ণ মন্ডল জানান, সকাল সোয়া ১০টার দিকে একদল যুবক হঠাৎ করে কেন্দ্রে প্রবেশ করে এসআই রবিউলের মাথায় আঘাত করে। এ সময় তাদের আঘাতে আনসার সদস্য সাইদ হোসেন আহত হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেম্বার প্রার্থী ফুলনের পক্ষের লোকজন পার্শ্ববর্তী মিরকাদিম পৌরসভার কাউন্সিলর জলিলের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত নৌকার শ্লোগান দিয়ে কাজী কসবা কেন্দ্রে প্রবেশ করে সিল মারতে থাকে। প্রতিপক্ষ বাধা দিলে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় সিল মারা ব্যালট পেপার বুথের বাইরে মাঠে পরে থাকতে দেখা যায়। এসময় পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রিটার্নিং অফিসার এসে কেন্দ্রটির ভোট গ্রহন স্থগিত করে দেন।
সোনাইমুড়ীতে ৮ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৮টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে প্রিজাইডিং অফিসাররা। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রে দখল ও সরকার দলীয় একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচনের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলো, নদনা ইউনিয়নের দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বাবুল চন্দ্র আচার্য্য, মেম্বারপ্রার্থী সমর্থক নোমান (২২) গুলিবিদ্ধ’সহ ১০ জন। অপর আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
বি.বাড়িয়ায় জাল ভোটের মহোৎসব
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও আখাউড়া উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ব্যাপক কারচুরি মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে গতকাল ভোট হয়েছে। নৌকায় ভোট প্রকাশ্যে নেয়া হয়। কোন কোন কেন্দ্রে পুলিশ ও ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেরাই দরজা বন্ধ করে সিল মারেন। অন্তত ১০টি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেন। এদিকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। সংঘর্ষে আহত হয় ৩০ জন। একজনের পেটে তীর বিদ্ধ হয়। সংঘর্ষের সময় দাঙ্গাবাজরা ওই কেন্দ্রের ৬টি ব্যালট বই, ৯টি মার্কিং সিল নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর প্রায় ৪ ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
কুষ্টিয়ায় ভোট গ্রহণের আগেই ভোট
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিভিন্ন অনিয়মের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার ২ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা ও কুমারখালী উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট, প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্র দখল, ভোট শুরুর আগেই সীল মেরে ভোট কারচুপির চেষ্টা করলেও কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। রাতের বেলায় ১৩২৭টি ব্যালটে অফিসিয়াল সীল মারার অভিযোগে এক প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় অস্ত্র মহড়া দেয়ার সময় আলামপুরে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সহকারীকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রাতের বেলায় ১৩২৭টি ব্যালটে অফিসিয়াল সীল মারার অভিযোগে এক প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। আব্দালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশরাফ উদ্দিন  শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ১৩২৮টি ব্যালটের পিছনে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল সিল মারেন।
অপরদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের একটি কেন্দ্রের পাশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাঘুরি করার সময় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর দেহরক্ষী আবদুর রহমান ম-লকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোট চলাকালে কেন্দ্রের পাশ থেকে দেহরক্ষী আটক করা হয়। তার হাতের শটগানটি চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতারুজ্জামানের নামে লাইসেন্স করা।
কুড়িগ্রামে আহত ১১
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুড়িগ্রামে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের বসুনিয়াহাট আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় মহির (৩২), এনামুল (৩১) ও মিলন (২৭) নামে ৩জনকে এবং যাত্রাপুর ইউনিয়নের রশিদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আবু হাসান (২৪) ও খোরশেদ (৩৪) নামে দু’বিএনপি সমর্থককে আটক করে পুলিশ। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের ঘটনায় ১১জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে রোকনুজ্জামান বিদ্যুৎ (৩২) নামে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
হাটহাজারীতে মহানগর ছাত্রলীগ সম্পাদক অস্ত্রসহ আটক
হাটহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হাটহাজারীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (২৭)কে অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও ১৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন সংবাদিকদের জানান।
মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭নং ভোটকেন্দ্র ছইল্যাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে রণিকে আটক করা হয়। তার কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। শনিবার (০৭ মে) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাকে আটক করেন নির্বাচনে দায়িত্বরত একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।  এরপর তাকে হাটহাজারী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নিতে নগর নেতারা রীতিমত তদবির চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে গুলিতে ১ জনের মৃত্যু
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা  জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের কালডাঙ্গা দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে নির্বাচনী সংঘর্ষে আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলিতে ১জন মারা গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৪জন। তাদের মধ্যে গুরুতর একজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শনিবার বেলা ২টায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের কাছে জানা গেছে, বেলা দেড়টার দিকে ভোট চলাকালে তালা প্রতীকে গিয়াসউদ্দিন মেম্বার প্রার্থী ও টিউবওয়েল প্রতীকে মেম্বার প্রার্থী আলম এর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে রাবার বুলেট এবং পরে গুলি চালায়। স্থানীয় লোকজনের মতে কমপক্ষে ৮/১০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। গুলিতে ঘটনাস্থলে মাছখুরিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে মাহবুব হোসেন মারা যায়। সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
গুলিবিদ্ধ ৪ জনের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মোড়লহাট গ্রামের নাজিমউদ্দিন (৫৫)কে রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
একই গ্রামের সহিদুল ইসলাম (৩৫), রহিমুল হক( ৩০) ও কবীর



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ