পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। আজ সকাল ৮টায় প্রচারণা শেষ হবে। তার আগে গতকাল রাজধানী জুড়ে নৌকার প্রার্থীরা ব্যাপক শো ডাউন করেছে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের অনেকেই প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু সারাদেশে দেখা গেছে নৌকা ও ধানের শীষের ব্যাপক প্রচারণা। প্রচারণায় মূলত ভোটের জোয়ার তোলাই এই মুহূর্তে মূল টার্গেট। রাজধানীর কর্মজীবী ভোটারদের মধ্যেও দেখা গেছে ভোট দেয়ার প্রস্তুতি। অনেকেই ঢাকা ছেড়ে নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছেন। কেউ কেউ পথে রয়েছেন। আর যারা প্রার্থী তারা চালিয়েছেন বিরামহীন প্রচারণা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখা যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ভীতি আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। ইনকিলাবের ব্যুরো, আঞ্চলিক অফিস, জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা জানান, প্রচারণার শেষ দিন দেশব্যাপী চলেছে নির্বাচনী প্রচারণা। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, হাতপাখাসহ বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। সরবার উদ্দেশ্য ভোটারদের আকৃষ্ট করা। বিশেষ করে পুলিশী বাধা আর হামলা-মামলার কারণে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের অনেকেই প্রচারণা থেকে দূরে থাকলেও গতকাল দেখা গেছে সবার স্বর্তস্ফূর্ত প্রচারণা। তবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটের দিন সেনাবাহিনীকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রহরায় রাখার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে সে নিশ্চয়তাও তার চান।
রাজধানীতে বিভিন্ন প্রার্থীর গণসংযোগ ঃ ঢাকা-৬ আসনের মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশিদ নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনে তার নির্বাচনী এলাকায় এক বিশাল গণমিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গণমিছিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, কাজী ফিরোজ ও নগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ খোলা ট্রাকে উঠে হাত নেড়ে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সুত্রাপুর বানিয়ানগর থেকে শুরু হয়ে গণমিছিলটি ধোলাইখাল, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ হয়ে জয়কালী মন্দিরে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
গণমিছিলে প্রায় দুইশতাধিক ট্রাক, পাঁচশতাধিক মোটরসাইকেলসহ সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়া ও ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ, জাতীয় পার্টি ও যুবসংতির অজস্র নেতাকর্মী অংশ নেন। গণমিছিলে মেয়র খোকন ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আবু আহমেদ মান্নাফী, হেদায়াতুল ইসলাম স্বপন, হাজী সাহিদ, আশিকুর রহমান লাভলু, শহিদুল্লাহ মিনু, আইয়ুব আলী খান, গাজী সারোয়ার বাবু, হাজী ফারুক উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে সমাবেশে এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে কাজী ফিরোজ বলেন, এই পুরান ঢাকা থেকেই আমার রাজনীতি শুরু। আমি আপনাদেরই সন্তান। বিগত পাঁচবছরে আপনারা শান্তিতে ছিলেন। আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করলে আবারও শান্তিতে থাকবেন। আমাকে নির্বাচিত করে এলাকার অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ দিন।
ঢাকা-৩ ঃ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের ভূমিকা পালন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। দুপুরে কোন্ডা ইউনিয়নের ইস্টার্ন বাজার এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের সময় তিনি এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত করেছেন। তার ওপর জনগণের আস্থা নেই। একদিন জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আশফাক, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাজী মাসুম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক কাউছার, অ্যাডভোকেট সুলতান নাসের, আলী হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা-১৪ ঃ একপেশে নির্বাচন থেকে বের হয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করার আহবান জানিয়েছেন ঢাকা ১৪ আসনের বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক সাজু। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হলে এবং জনগণ ঠিকমতো ভোট দিতে পারলে সারাদেশে ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরী হয়েছে, সে গণজোয়ারের ঢেউ সামাল দেয়ার সক্ষমতা এই ভোটারবিহীন সরকারের নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দারুস সালামের নিজ বাসভবনের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে পোলিং এজেন্ট কর্মশালা ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেন তিনি। এসময় আবুবকর সিদ্দিক সাজু সরকারী দলের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও পরিকল্পিতভাবে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি ও সঙ্কা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। দুপুরে তিনি দারুস সালাম এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন।
বিএনপি নেতার বাসায় পুলিশী তল্লাশী ঃ বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম-সম্পাদক এম. কফিল উদ্দিনের ফায়েদাবাদ চৌরাস্তার দক্ষিণ খানের বাসভবনে পুলিশ ও ডিবি কর্তৃক তল্লাশির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার দিনে-দুপুরে ও মধ্যরাতে বিএনপি নেতা কফিলের খোঁজে তাকে না পেয়ে বাসায় অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের সাথে দূর্ব্যবহার ও নানা ভয় ভীতি প্রদর্শন করাহচ্ছে বলে পারিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
ঢাকা-৮ ঃ আসনে মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরেই মহাজোটের মহাজয় নিশ্চিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসেই আমরা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে ক্ষমতায় যাব। বিজয়ের মাসেই হবে আমাদের আরেক মহাবিজয়।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে বিএনপির মনোভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সেনা মোতায়েনে নড়েচড়ে বসেছিল। তারা ভেবেছিল, আমাদের গৌরবান্বিত সেনাবাহিনী তাদের কোনো অন্যায় আবদারে কান দেবে। কিন্তু সেনাবাহিনী আসাতে তাদের সকল ষড়যন্ত্রই নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা দিয়ে তাদের ভোট কেনার ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যাচ্ছে। এখন তারা উলটো নিজেরা নিজেরাই খুনোখুনি করে নির্বাচন বানচালের নতুন ষড়যন্ত্র করছে। যতই ষড়যন্ত্র করুক, এই দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সেভাবেই এগিয়ে যাবে। এই চলমান উন্নয়ন আর কেউই দমিয়ে রাখতে পারবে না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত হবেই হবে।
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন-১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এনায়েত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন ও তোহিদুল ইসলামসহ অন্য নেতারা। পথসভা শেষে নির্বাচনী মিছিল নিয়ে শান্তিনগর ও মৌচাক এলাকায় গণসংযোগ করেন রাশেদ খান মেনন। এর আগে গতকাল সকালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন রাজধানীর বঙ্গবাজার, আনন্দবাজার হয়ে প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন।
ঢাকা-৫ ঃ আসনে নৌকা প্রতীক সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবে বলে মন্তব্য করেছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আসনের সায়েদাবাদ কেরানী গলিতে নির্বাচনী সভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোল্লা এ মন্তব্য করেন। হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, যে উদ্দীপনা আপনাদের মধ্যে দেখা যায় তা আল্লাহর অশেষ রহমত। ইতিপূর্বে এত উৎসাহ উদ্দীপনা খুবই কমই দেখেছি। উদ্দীপনা অনুসারে যাতে নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দিতে পারে সে জন্য সবার চেষ্টা করতে হবে।
এর আগেও তিন তিন বার আপনাদের অতি মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন। আমি আপনাদের জন্য আশানুরূপ কিছু করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন সময়ে আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কোনো প্রার্থী কোথাও আমার মতো ভালোবাসা পেয়েছে কি-না আমার জানা নেই বলে জানান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোল্লা। তিনি আরও বলেন, নৌকা আমার প্রতীক নয়, এটা জাতীয় প্রতীক, এটা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক। আপনারা এ প্রতীকে ভোট দিলে তা প্রমাণ করবে আপনারা শেখ হাসিনাকে কতটুকু ভালোবাসেন।
ঢাকা-৪ ঃ আসনে বিএনপি প্রার্থী আলহাজ সালাহ উদ্দিন আহমেদ প্রচারণার শেষ দিনে কোনো গণসংযোগের সুযোগ না পেয়ে সারাদিন বাসায় অবরুদ্ধ অবস্থায় দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে সময় কাটিয়েছেন । রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কেমন নির্বাচন হবে জানি না। এখনই ঘর থেকে বের হতে পারছি না। তিনি ভোটের দিন সকালেই কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুর্নরুদ্ধারের আহবান জানান।
নির্বাচনী প্রচারনার শেষদিনে বড়ধরণের শোডাউন করেছেন ঢাকা-৪ আসনের মহাজোটের প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। সকালে ও বিকালে দুই দফায় দোলাইপাড় মোড় থেকে দুটি বিশাল গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সানজিদা খানম এমপি, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও ড. আওলাদ। সকালের গণমিছিলটি জুরাইন হয়ে পোস্তাগোলা গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সমাবেশে শাহে আলম মুরাদ বলেন, বাবলাকে জয়ী করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ এলাকায় পাঠিয়েছে। বাবলা এমপি হলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সমাবেশ শেষে বাবলা ও মুরাদ অত্র এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকালে ট্রাক, ঘোড়ার গাড়ী ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাবলার নেতৃত্বে প্রায় ২০ সহস্রাধিক লোকের গণমিছিলটি জুরাইন, পোস্তাগোলা, লালমসজিদ হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেটে ঢাকা ম্যাচ এলাকায় গিয়ে এক বিশাল জনসমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে কাঠের তৈরী লাঙ্গল, বাদ্যযন্ত্র, ফেস্টুন নিয়ে গণমিছিলে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। মিছিল আরো অংশ নেন বাবলার পত্মী সালমা হোসেন, নির্বাচনী এলাকার কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু, হাজী মাসুদ, হাজী নুর হোসেন, নাসির ভূইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন, তাজুল ইসলাম তাজু প্রমুখ। দুপুরে জুরাইন রেলগেইটে এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন সানজিদা খানম ইকবাল, ড. আওলাদ হোসেন, সালমা হোসেনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাপা নেতারা। এছাড়া সন্ধ্যায় মীরহাজীরবাগ চৌরাস্তায় একটি বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন বাবলা।
ঢাকা ৮ ঃ আসনের ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মুফতি জিয়াউল হক মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে যা বুঝায়, ইসি এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, সকল প্রার্থীর প্রতি প্রশাসন সমান আচরণ করছে না। তাই আজকালের মধ্যে সকল প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি সমান আচরণ, নির্ভয়ে ভোটারদের ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ইসির। তিনি বলেন, দেশ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও মাদক গডফাদারদের নিয়ন্ত্রীত রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দেশের শাসন ব্যবস্থায় ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণ আমাকে মিনার মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সংসদে গিয়ে ইসলামী নেজাম প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবো। গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে নির্বাচনী প্রচারণাকালে সংক্ষিপ্ত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে বক্তব্য রাখেন আলহাজ মুফতি রিয়াজুল ইসলাম মজুমদার, মুফতি হারুনুর রশীদ, মুফতি সাআদ জিয়া, হাজী আমানুল্লাহ, মাওলানা আব্দুর রব প্রমুখ।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, আওয়ামী লীগের মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট ভোটারদের নিজ নিজ পক্ষে রেখে জনসমর্থনের পাল্লা ভারী করতে মরিয়া হয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। এরজন্য উভয় জোট ভোটারবান্ধব কৌশল গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামে দুই জোটের প্রার্থী ও সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আলাপকালে জানান, ৩০ ডিসেম্বর রোববার ভোটগ্রহণের দিনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের আগমনের ক্ষেত্রে জোরালো আগ্রহ তৈরির দিকেই তারা এখন বেশি মনোযোগী।
নির্বিঘœ পরিবেশে ভোটদানে ভোটারদের নিশ্চিন্ত ও আশ্বস্ত রাখতে চায় উভয় পক্ষ। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সাথে আলোচনা করেছেন। আবার তৃণমূল কর্মীদের সংযত আচার-আচরণের পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারি দলের নেতা-এমপিরা। ভোটারদের জনসমর্থন বিগড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউই। সতর্ক দুই জোটের প্রার্থী ও নেতারা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ ভোটারদের এখানে সেখানে আলাপে-আড্ডায় ঘুরেফিরে এখন উঠে আসছে যে প্রশ্ন তা হলো, ভোটের হাওয়া শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়াবে? কার কার ভোটের পাল্লা ভারী হবে? কোথায় কার কী পজিশন? ইত্যাদি। মাঠের প্রচারের দিকে আর মানুষের দৃষ্টি নেই তেমন।
নির্বাচন মানে কৌশলের লড়াই। জোর-জবরদস্তিতে সাধারণ ভোটারদের মন জয় কিংবা সমর্থন আদায় করা যায় না। অবশেষে এই কঠিন বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে বাধ্য হচ্ছে সরকারি জোটের প্রার্থী ও নেতাদের। কেননা গত ১০ ডিসেম্বর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকে এ যাবৎ আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মী-ক্যাডারদের দ্বারা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকসহ বিভিন্ন বিরোধী পক্ষের প্রার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়েছে। হামলায় আহত-রক্তাক্ত করা, প্রচারণা-গণসংযোগকালে নেতা-কর্মীদের বাধা-বিপত্তি, আক্রমণ, হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের কর্মী-ক্যাডারদের হামলা থেকে রেহাই পাননি বিএনপির প্রবীণ সজ্জন রাজনীতিক আবদুল্লাহ আল নোমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, এমনকি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সুফী ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। তাছাড়া ধানের শীষের প্রার্থী, তাদের আত্মীয়-স্জন, নেতা-কর্মীদের ওপর গণহারে পুলিশি হয়রানি, গায়েবি মামলা-হুলিয়া, তল্লাশি ও ধরপাকড় চলে আসছে। আবার গতকালসহ হঠাৎ কয়েকদিন ধরে বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বোমা বা বিস্ফোরক উদ্ধারের দাবি করছে পুলিশ।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণের ‘সহানুভূতির ভোট’ বিএনপি জোটের পাল্লা ভারী করতে পারে কিনা তা নিয়ে এখন নতুন করে ভাবছে আওয়ামী লীগের মহাজোটকে। কারণ ভোটার জনগণের মাঝে এসব কর্মকান্ড নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। অনেকেই এ ব্যাপারে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের কয়েকজন তৃণমূল মহাজোট নেতা একথা স্বীকার করে জানান, নৌকা লাঙলের প্রচারণা-গণসংযোগ, মিছিল-মিটিং-মাইকিং হয়েছে সবখানে একদলীয়। তবুও এখনো তারা চিন্তামুক্ত নন। প্রতিপক্ষকে মাঠে বাধা প্রদান করাই ছিল মস্তবড় ভুল এবং হটকারিতা। বরং গত দশ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে চট্টগ্রামে এমনকি সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার সঠিকভাবে তুলে ধরা হলে ভোটারদের আরও আকৃষ্ট করা সম্ভব ছিল। বর্তমান অবস্থায় অনেক আসনেই নৌকা-ধানের শীষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ফুটে উঠেছে। নৌকা, লাঙলের প্রার্থীদের মাঝে কাটেনি অস্বস্তি। তবে হতাশ নয়।
অন্যদিকে বিএনপি জোটের প্রার্থী, তৃণমূল কর্মীরা গতকাল রাত অবধি ভোটারদের বাড়িঘরে গিয়ে ধানের শীষের প্রতি জোরালো সমর্থন জোরদারের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। বিএনপি জোটের ভরসা জনসমর্থন। তারা আশা করছে মাঠের ক্ষমতাসীন দলের রাজসিক প্রচারণা-মিছিল-মাইকিং একচেটিয়া হলেও ভোটারের মন জয়ে এগিয়ে আছে ধানের শীষ। কেননা চরম বৈরী অবস্থায় তারা স্বাভাবিক প্রচারণা চালাতে পারেননি। যা সচেতন ভোটারের কাছে স্পষ্ট। ভোটারগণ স্বতঃস্ফূর্ত ও নিরাপদে ভোটদানের নিশ্চিত পরিবেশ পেলে সরকারের বিপক্ষে গণরায় দেবেন।
নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষণ গণনার সাথে সাথে এ মুহূর্তে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী এবং তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মী, সমর্থকরা ভোটারদের সমর্থন লাভের জন্য বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ করছেন। সেই সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনে উভয় জোটের প্রার্থী ও নেতারা পোলিং এজেন্টদের তালিকা চূড়ান্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান, কেন্দ্রওয়ারি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিগুলোর সাথে মতবিনিময়, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকের মধ্যদিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। অনেক নির্বাচনী এলাকায় প্রচারের শেষ প্রান্তে এসে ওয়ার্ড, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লাওয়ারি নির্বাচনী সভা-মিছিল শোডাউনে মুখরিত ছিল শহর, গ্রাম-জনপদ। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার-প্রচারণার সুযোগ থাকলেও গতকাল কার্যত তা শেষ হয়। আজ বাদজুমা মুসল্লীদের সাথে কুশল বিনিময় ও দোয়া, সমর্থন কামনা করে প্রার্থী, নেতা-কর্মীরা ছুটবেন এপাড়া থেকে ওপাড়ায়।
যশোর থেকে মিজানুর রহমান তোতা জানান, ভয়-ভীতি, হামলা-মামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়সহ হাজারো সমস্যা এবং পুরোপুরি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভোটের মাঠে টিকে আছেন দক্ষিণ-পশ্চিমের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও তাদের নেতা-কর্মীরা। যশোর সদরের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের পুত্র অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা দিয়েছেন, যতকিছুই হোক শেষপর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকবো।
তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, আমার আশেপাশের সব নেতা-কর্মীদের আটক করে আমাকে নিঃসঙ্গ করা হয়েছে। তবুও আমি ভয় পাই না, আমাকে গ্রেফতার করলেও আমার স্ত্রী মাঠে থাকবে। একই ধরনের কথা বলেছেন, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, কেশবপুর ও খুলনার ধানের শীষের প্রার্থী। গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩৬টি আসনের অধিকাংশেই খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যেও সাহস নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এর বিপরীতে মহাজোট প্রার্থীরা নির্বাচনের শুরু থেকেই পুরোপুরি অনুকূল পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচনী মাঠ কাঁপাচ্ছেন। ভোটের মাঠের এই চিত্র দেখে সচেতন মানুষ ও পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য ‘ এটি সব দলের অংশগ্রহণমূলক ভোট, কিন্তু মোটেও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নয়-একেবারেই একপক্ষীয় ভোট’।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রার্থী ও ভোট কর্মীর কথা, ‘আমরা তো কারো বাধা দিচ্ছি না, ওরা নিজেরাই ভয়ে ভোটের মাঠে নামছে না, এতে আমাদের কী করার আছে’। যশোর, খুলনা, কুস্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরার বেশ কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে কথা হলো, তারা বললেন, ‘এ ক্যামন ভোট রে ভাই, ভোটের মাঠে নিয়ে যাবার জন্য ভোটারদের কদর থাকে। আর এ দেখছি উল্টো ভোটকেন্দ্রে যেন না যায়, অনেক এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে’। কয়েকজন পুলিশ অফিসারের কথা, ‘আমাদের ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে, আমরা চাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বাড়াবাড়ি করে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে’।
একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা বললেন, ‘নির্বাচন করবেন মাঠে নামবেন না, এটা তো হয় না, দেশের বিভিন্ন স্থানে তো ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে বিরোধী দলের প্রার্থী নেতা-কর্মীরা মাঠে নামার খবর পাচ্ছি বিভিন্ন মাধ্যমে। আসলে এই অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় দেখছি নেতা, কর্মীদের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে। ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে সফল হওয়াটাই তো প্রতিপক্ষদের কাজ। এক্ষেত্রে বলব, যারা ভয় ঢুকাতে পেরেছে তারা লাভবান হয়েছে। সাহস নিয়ে এগিয়ে আসলে ভোটের বর্তমান চিত্র থাকত না। দৃশ্যপট পাল্টে যেত। তিনি বললেন, ‘ভয়কে জয় করে শুধু ভোটযুদ্ধ নয় যে কোনো যুদ্ধ হোক কিংবা প্রতিযোগিতা খেলায়ও মাঠে নামতে হয়।’
নির্বাচনের বাকি আর মাত্র একদিন। শেষমুহূর্তে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। গতকাল দিনভর দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এখন জোর কদমে হাঁটছেন। একদন্ড ফুসরত নেই তাদের। কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বললে তারা প্রায় অভিন্ন সুরে জানান, ‘বলেন ভাই কী বলবেন, হাতে সময় খুব কম, দেখি শেষ চেষ্টা করে, খাওয়া ঘুম নেই ভাই, দৌড়ের ওপর আছি, দোয়া করবেন।’ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ধীরে ধীরে ভোটে উত্তাপ আছে ঠিকই, তবে সংঘাত সহিংসতা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের মাত্রা কমবে বলে সব মহল থেকেই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, নামপ্রকাশ করতে নিষেধ করে একজন সরকারি কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বললেন, গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির স্বার্থে একটা গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া জরুরি দরকার। দেশে ও বিদেশে কোথাও যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আবেগতাড়িত না হয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এই বিষয়টি মাথায় রেখে এখনো সময় আছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে বৃহত্তর স্বার্থে বিশেষ ভ‚মিকা রাখা। তা না হলে বহুমুখী সঙ্কটের আশঙ্কা থাকবে প্রবল। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।