পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বহুল আলোচিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের একদিন বাকি থাকলেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভোট উৎসবের দেখা নেই। সবার মনেই প্রশ্ন, ‘ভোট দিতে পারব তো?’ গত সপ্তাহখানেকের হামলা আর মামলার ভয় এখন সাধারণ মানুষকেও তাড়া করছে। গোটা নির্বাচনী পরিবেশ ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করেছে। আজ (শুক্রবার) মধ্যরাত থেকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল থেকে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক স্পর্শকাতর এলাকাতেই র্যাব-এর রণপাহারা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু এত নিরাপত্তার মধ্যেও মহাজোট ও তাদের পরোক্ষ মিত্রদের মধ্যেই প্রচারণা সীমিত হয়ে আছে গত সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে। ফলে বিজয়ের আগাম আনন্দে যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন অনেক এলাকার মহাজোট প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা।
অনেক নির্বাচনী এলাকাতেই বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বেপরোয়াভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। দুপুর ২টার আগে ও রাত আটটার পরে অনেক প্রার্থীরই প্রচারণা মাইক রাস্তায় নামছে। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। গতকাল দুপুরের পরে বরিশাল মহানগরীতে কয়েক হাজার মোটর সাইকেল নিয়ে বিশাল মিছিল নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলদের মতে, এ ধরনের মিছিল বিধিবিধান পরিপন্থী। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে অতীতের কোন নির্বাচনেই যাদের জামানত ছিল না তাদেরকে দ্বিতীয় স্থানের জন্য পছন্দ করে প্রচারণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। অথচ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাতে করে লিফলেট বিতরণকালে তার সাথে একজন কর্মী থাকলেও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনের দিন কয়েক আগে কয়েকজন প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই প্রচারণার ক্ষেত্রে নৌকার জয়জয়কার। প্রার্থীর সাথে কর্মীরাও যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যে ও ফুরফুরে মেজাজে আছেন অনেক এলাকায়। বাজনার তালে তালে ‘জিতবে এবার নৌকা-নো টেনশন’, ‘জিতে গেছে নৌকা-নো টেনশেন’, মাইক বাজিয়ে প্রচারণা চলছে জেলা-উপজেলা থেকে অনেক হাট-বাজারেও। অপরদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা এতিমের মত একা একা প্রচারণায় নামছেন। তাদের পক্ষে একটি লিফলেট বিতরণের মতো কোন কর্মীরও দেখা মিলছে না।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এসব কিছুর পরেও মহাজোটের অনেক প্রার্থীর মধ্যেই যথেষ্ট টেনশন রয়ে গেছে। নচেৎ এত ধরপাকড় করে ভোটের মাঠ একতরফা করা হচ্ছে কেন? গত এক সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাতে অন্তত দুশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সদরই। এখানে গত তিন দিনেই শতাধিক মানুষ গ্রেফতার হয়েছে। এমনকি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী কোন এলাকায় প্রচারণায় গেলে তার পেছেনে কেউ হাটলেও পুলিশ তাকে তাড়া করেছে। তার সাথে লিফলেট বহনকারীকেও আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। গত বুধবার সদর উপজেলার বিশ্বাসের হাট থেকে ফেলার পথে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী সারোয়ারের সফরসঙ্গী এক কর্মীকে ছিনিয়ে নিতে তার সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হয় পুলিশ। বরিশালের আদালতপাড়া গ্রেফতার হওয়া মানুষের স্বজনদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে গেছে। বিচারকগণ হিমশিম খাচ্ছেন অভিযোগ আর জামিন আবেদন শুনতে।
তবে এসব কিছুর পরও এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের অনেক প্রার্থী ভোটের দিনের চালচিত্র নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর আচরণ নিয়ে এখনো নিশ্চিন্ত নন অনেক প্রার্থী। যদি নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার নিশ্চয়তায় কেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ার সৃষ্টি হয়, তবে ফলাফল যে অনেকের অনুকুলে থাকবে না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আপাতত নিশ্চিত অনেক প্রার্থীর মধ্যেই।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের ৬২ লাখ ৩০ হাজার ভোটার এখনো একটি অনুকূল পরিবেশে ভোট দেয়ার আকঙ্খা পোষণ করছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। ২০০৮ সালের পরে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের মধ্যে এ আকাক্সক্ষা আরো প্রবল। কিন্তু যারা এতদিন তরুণ ভোটারদের আনুক‚ল্য পাবার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন, তাদের দ্বারাই যদি অবাধে ভোট প্রদানের বিষয়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়, তবে সার্বিক জনমত কতটুকু অনুকুলে থাকবে তা নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার আর সমর্থনের পালা
এদিকে নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে দক্ষিণাঞ্চলে নির্বাচনী নানা মেরুকরণ শুরু হয়েছে। কোথাও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, আবার কোথাও মহাজোট প্রার্থীর বিপক্ষে মূল শরিক আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে।
বরিশাল সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মর্তুজা আবেদিন গতকাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও মহাজোট প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামিমের হাতে হাত রেখে তার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
বরিশাল-৩ আসনে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগ মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির মো. টিপু সুলতানের পরিবর্তে স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস এম আতিকুর রহমানকে সমর্থন প্রদান করেছে। অপরদিকে বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আলী তালুকদার ফারুক মহাজোট প্রার্থী জাপার রত্মা আমীনের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছেন। বরিশাল-২ আসনে উজিরপুর উপজেলার নিজ দলের প্রার্থী থাকার পরেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহে আলমকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ঐ আসনে জাপা প্রার্থী মাসুদ পারভেজ এ যাবৎ তার নির্বাচনী এলাকায় আসেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।