Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোট দিতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

উপচে পড়া ভিড় বাস-ট্রেন-লঞ্চে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

তফসিল অনুযায়ী আগামী রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় বসবাসরত কর্মজীবীরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে অনেকে ছুটে চলছেন গ্রামের বাড়ি। গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে ভিড় ছিল আরও বেশি। কমলাপুরে
জানা গেছে, দুই কোটি মানুষের বসবাসের এ ঢাকা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। যাদের সিংহভাগই নিজ এলাকায় ভোটার। এর মধ্যে এবার নতুন ভোটার যোগ হয়েছে এক কোটির মতো। ফলে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রাজধানী ছেড়ে তারা নিজ এলাকায় যাচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ দেখা গেছে। স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, দিন যতো যাচ্ছে যাত্রীদের এ ভিড় ততোই বাড়ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ঢাকায় চাকরিজীবীরা অফিস শেষ করে নিজ নিজ বাড়িতে যাচ্ছেন।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে থেকে ছেড়ে যায় রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের যাত্রী হাফিজুুর রহমান বলেন, আমাদের মত সাধারণ জনগণের একবার সুযোগ আসে জাতীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার। আর এই ভোট প্রদান করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। যে কারণে নির্বাচন উপলক্ষে ছুটি পাওয়ায় নিজ এলাকায় যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার পরিবারের ৫ জন ভোটার। সবাই মিলে আগামী ৩০ তারিখে ভোট দিবো বলে আশা করছি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠে বিমান বন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে। ওই দুটি স্টেশনে গার্মেন্টসের শ্রমিকই বেশি। টিকিট না পেয়ে তারা ট্রেনের মধ্যে গাদাগাদি করে উঠছে। অনেকে আবার ট্রেনের ছাদেও উঠছে। তবে শীতের কারণে ট্রেনের ছাদে ওঠার প্রবণতা অনেকটা কমেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিভাগীয় শহরগুলো থেকেও ট্রেনে করে হাজার হাজার যাত্রী নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছে।
কমলাপুরে অগ্রিম টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক কারণে দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করলেও আমরা ভোটার সিলেটের নিজ এলাকায়। যে কারণে আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আগামী শনিবার বাড়ি যাব। তাই অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে আজই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তবে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও গত কয়েকদিন ধরে ভিড় বেড়েছে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ভোর থেকে হাজার হাজার যাত্রী বাসে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। দুপুরে সায়েদাবাদ টার্মিনালে বেশ ভিড় দেকা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। প্রতিটি বাসই যাত্রীপূর্ণ হয়ে টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। গাবতলী বাস টার্মিনালের শ্যামলী কাউন্টারের এক ম্যানেজার জানান, গাবতলী থেকে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীই বেশি যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদের মতো যাত্রীদের চাপ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শনিবার পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহতভাবে বাড়তেই থাকবে।
অন্যদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে থেকে যাত্রীরা যাওয়া শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ। এই সুযোগে বেড়ানোর পাশাপাশি মানুষ ভোট দিতে পারবে। সুন্দরবন লঞ্চের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই লঞ্চের টিকিট বুকিং শুরু হয়েছে। অনেক এলাকায় প্রার্থীরাও নিজেদের ভোটারের জন্য টিকিট বুকিং দিয়েছেন। বেশিরভাগ ভোটার বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে রওনা করবেন। আবার অনেক যাত্রী সরাসরি চলে আসছেন। তারা হয়তো ভালো সীট পাচ্ছেন না। ডেকে বসেই তারা যাবেন। লঞ্চের মধ্যেই এখন ভোটের উৎসব বিরাজ করছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, খুবই আনন্দ করে সময় কাটছে যাত্রীদের।
নির্বাচন উপলক্ষে বহু মানুষ এভাবেই রাজধানী ছেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যস্ত রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। আজকের মধ্যে এ চিত্র আরও পাল্টে যাবে বলে অনেকেরই ধারণা।
নাড়ির টানে নয় মানুষ আসছে ভোটের টানে
দিনাজপুর অফিস জানায়, মানুষ আসছে। তবে নাড়ির টানে নয় আসছে ভোটের টানে। নিজেদের অধিকার আদায়ের সংকল্প নিয়ে ফিরছে নিজ এলাকায়। এ যেন ঈদের পূর্ব মুহূর্তের চিরচেনা দৃশ্য। বাস-ট্রেন ভর্তি হয়ে মফস্বলের জেলাগুলোতে ঢুকছে। কিন্তু ফিরছে একেবারে ফাঁকা হয়ে।
আলাপ হলো দিনাজপুর স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্টের সাথে। উদ্দেশ্য একটি টিকেট পাওয়া যাবে কি না ঢাকা যাওয়ার জন্য। হাসতে হাসতে তিনি বললেন, একটা না, কয়টা লাগবে কাউন্টারেই পাওয়া যাচ্ছে। তার মতে, ঈদের আগে যেমন ফিরতি টিকেট অবিক্রিত পড়ে থাকতো, আবার ঈদের পর থেকেই সকল টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যেত, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ভোটের এক দিন পর থেকেই অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
একই অবস্থা বাসগুলির। ঢাকা থেকে বানের পানির মতো মানুষ ঘরে ফিরছে। আলাপ হলো একজন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া বেকার যুবকের সাথে। মাঠের পরিস্থিতি কী তা নিয়ে চিন্তা থাকলেও জীবনের প্রথম ভোট যেভাবেই হোক দেবেন। তার মতে, জোর করে ভোট আদায়ের চেষ্টা যারা করছে বা করবে তারা ভুল করবে। ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হলে তা হবে আরো বোকামি। কেননা তরুণ ভোটারদের এবার থামাতে পারবে না। তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেই। একইভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগানো মফস্বলের গরীব পিতা-মাতা-ভাইরাও ঘরে বসে থাকবে না। কারণ সন্তানের চাওয়া পাওয়াই তাদের চাওয়া পাওয়া।
দিনাজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোটের সামনে আলাপ হলো কয়েকজন বয়স্ক নারী পুরুষের সাথে। বুধবার ভোরে তাদের উপজেলা চেয়ারম্যানকে ধরে এনেছে পুলিশ। তার মুক্তির জন্য হাজার হাজার গ্রামবাসীর সাথে তারাও এসেছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এসব মানুষ রাজনীতি বুঝে না। তবে ধানের দাম নেই এটা বুঝে। তারা মানতে চায় না খালেদা বা হাসিনা কেউ এতিমের টাকা মেরে খেতে পারে। কিন্তু খালেদা আজ জেলে। এটা মানতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরা। ধর্ম তো আছেই। তাদের কথা, কী করবে করুক পুলিশ। ভোট কেন্দ্রে যাব, ভোট দিব। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও ভোট দিবে। আমরা আমাদের রায় দিব। কেউই ঠেকাতে পারবে না।
#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ