পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতার মতোই যেন সবাইকে ছাড়িয়ে হঠাৎ উপরে উঠে গেছেন ইমরান এইচ সরকার। গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের এই মুখপাত্র ৩২/৩৩ বছর বয়সেই পরিচিতিতে তিনি কার্যত আকাশ ছুঁইয়েছেন। শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে তিনি পরিচিত। তালগাছ যেমন সব গাছ ছাড়িয়ে আকাশ ধরার চেষ্টা করে তেমনি দেশের রাজনীতিক, মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, সংস্কৃতি সেবী, এনজিওকর্মী, নায়ক-নায়িকা, ক্রিকেটার, শিক্ষাবিদ পরিচিতিতে সবাই তার নীচে পড়ে গেছেন। রাজনীতিকরা জনসেবা করে বছরের পর বছর কাঠখড় পুড়িয়ে ৪০/৫০ বছরে যে জনপরিচিতি পান না; ইমরান সরকার গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হওয়ায় মিডিয়াগুলোর বদৌলতে রাতারাতিই তাদের চেয়ে শতগুণ বেশি পরিচিত পেয়ে যান। ৩২/৩৩ বছর বয়সে এতো পরিচিতি তাকে চরম ঔদ্ধত্যের পরাকাষ্ঠায় নিয়ে গেছে। হয়ে পড়েছেন এখন বেপরোয়া। দেশের আইন, সরকার কাউকে তোয়াক্কা করেন না। ৩২/৩৩ বছরের যুবক ৭০/৭৫ বছর বয়সী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিকদের ছবক দেন; দেশপ্রেম শেখান। তিনিই যেন একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কেও চোখ রাঙ্গান! প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করার স্পর্ধা দেখান। যাদের অনুকম্পায় এতো পরিচিতি পেয়েছেন সেই আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের ‘চেতনা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
শাহবাগে রাস্তা বন্ধ করে গণজাগরণ মঞ্চ গঠনের পর মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মিডিয়ার কল্যাণে আকাশে উঠেন। হয়ে যান রাজাধিরাজ। তার নির্দেশে রাষ্ট্রের নিয়মনীতি-আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক সুবিধার কারণে ওই সময় মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সরকারের সচিব ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা রাস্তায় নেমে আসেন; মানববন্ধন করেন; পতাকা উড়ান। তার নির্দেশ পালনে মরিয়া হয়ে উঠেন সরকারি দলের লোকজন। মাসব্যাপী শাহবাগে খাবার সরবরাহ করেন; পুলিশী পাহারা বসান। মিডিয়ায় সে দৃশ্য সরাসরি প্রচার করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ‘মুই কি হনুরে’ হাবভাব হওয়ায় ইমরান এখন কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। তিনি এখন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে টক্কর দেন; মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কিছু মিডিয়ার কারণে ইমরান নিজেই যেন হয়ে গেছেন একটা আদর্শ! চলাফেরার স্টাইল, মেকআপ, গেটআপ, জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন যেন রাজা-বাদশাহদের সন্তানদের হার মানায়। প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং ওপর তলার টাকাওয়ালারা যেভাবে চলাফেরা করেন; নিজেদেরকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন; ইমরান ঠিক তারই যেন কার্বনকপি। প্রশ্ন হলো দেশে ইমরান এইচ সরকার চরিত্র কাদের সৃষ্টি? এলাহী জীবন যাপনে তিনি এতো টাকা কোথায় পান? তার আয়ের উৎস কি? তার খুঁটির জোর কোথায়? এটা এখনো দেশবাসীর কাছে রহস্য।
জানা যায়, রংপুর মেডিকেলে ৫ বছরের এমবিবিএস কোর্স করে ইন্টার্নশিপ শেষে চিকিৎসকের সনদ পান ইমরান। কুড়িগ্রামের একটি উপজেলা হাসপাতালে চাকরিতে যোগদানের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী সে চাকরি ছেড়ে দেন। এখন দৃশ্যত তার কোনো পেশা নেই। ব্যবসা করেন এমন খবরও জানা নেই। অথচ জীবনযাপনে এলাহিকা-। মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পেছনে চার কক্ষের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। ওই এলাকায় চার কক্ষের একটি ফ্লাটের ভাড়া প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এখনো বিয়ে করেননি; এ বছর তার বিয়ে হওয়ার কথা। এই ফ্ল্যাটে তার পরিবারের কোনো সদস্য থাকেন না। কয়েকজন শাহবাগী তার সঙ্গে থাকেন। চলাফেরা করেন সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে। সঙ্গে থাকে পাহারাদার। কুড়িগ্রামের সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ইমরান বেড়ে উঠেন আর দশটা নিম্নমধ্যবিত্তের পরিবারের সদস্যদের মতোই। তিনি কি আলাউদ্দিনের চেরাগ পেলেন?
কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারীর বাজারপাড়া গ্রামের মতিউর রহমান সরকার মতিনের ছেলে ইমরান। জন্ম ১৯৮৩ সালে। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করায় তার দাদা খায়ের উদ্দিনকে ১৯৭১ সালের ১৪ জুন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেন। ইমরানের বাবা মতিন সরকার স্বাধীনতার পরে বাম রাজনীতিতে যোগ দেন। বাম রাজনীতি করলেও ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন। ইমরান ১৯৯৯ সালে এসএসসি ও ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০০২ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজে ৩১তম ব্যাচে ছাত্র। ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক, আহ্বায়ক ও ইন্টার্ন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এমবিবিএস পাস করার পর ২০০৯ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর আওয়ামী পন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’ (স্বাচিপ) প্রচার উপ-কমিটিতে সক্রিয় হন। তিনি অ্যাডহক ভিত্তিতে কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে স্বাচিপের নেতা হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানসথেশিয়া বিভাগে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বামপন্থী ও সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা রাজধানীর শাহবাগে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক (বোয়ান) নামে সমবেত হয়। সেখানে তাকে মুখপত্র করা হয়। খুলে যায় ইমরানের ভাগ্যের চাকা।
ওই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে দেশ-বিদেশ থেকে শুভানুধ্যায়ীরা প্রচুর অনুদান আসে। তবে কত টাকা কে দিয়েছেন সে পরিমাণ কখনও প্রকাশ করা হয়নি। দেশেও প্রচুর চাঁদা ওঠে। সংস্কৃতির অঙ্গনের কিছু মুখচেনা মানুষ ওই মঞ্চের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা তোলে। এমনকি যে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন হয় সেই জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের চাঁদা নেয়া হয়। চাঁদা নেয়ার কৌশল হিসেবে ওই সব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণের দাবি করেন। বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলরা মোটা চাঁদা দিয়ে মঞ্চের মুখ বন্ধ করেন। এই টাকা কখন কোথায় খরচ হয়েছে- সেই প্রশ্নে এক সময় মঞ্চের কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয় বিরোধ। দেশপ্রেম চলে যায় চাঁদার টাকা ভাগাভাগিতে। সেই বিরোধে গণজাগরণ মঞ্চ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সংগঠন বিভক্তির সময় কামাল পাশা চৌধুরী তার (ইমরান) বিরুদ্ধে অর্থ তসরুপের অভিযোগ তোলেন। চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সে সময় তিনি কিছু তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন। শুধু ২০১৩ সালের কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনের সময় নয়, সাভারের রানাপ্লাজা ধসের পর হতাহতদের পরিবারের সহায়তার জন্য মঞ্চের নামে চাঁদা তোলা হয়। সেই টাকার ব্যবহার নিয়েও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়ায় মঞ্চের কর্মীরা। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ইস্যুতে লংমার্চ রোডমার্চ করেন। এতো টাকা কোথা থেকে আসে? চাঁদাবাজীর টাকা পয়সা নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চে বিভেদের পর মঞ্চ থেকে আলাদা হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠন। সে সময় নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তির দৃশ্য মানুষ টিভিতে দেখেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সেই আমেজ আর নেই। কিন্তু ইমরানের কর্মকা-ের আমেজ বেশ সক্রিয়। সামাজিক, রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন, নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে মঞ্চের নামে। মিডিয়াগুলো খবর প্রচার প্রচারণায় সিনিয়র মন্ত্রী ও বড় দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের যে গুরুত্ব দেন তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন ইমরানকে। মিডিয়ার প্রচারণায় উপরে উঠতে উঠতে এখন সবাইকে ছাড়িয়ে ইমরান তালগাছের মতো উপরে উঠেছেন। মুক্তিযুদ্ধের এক যুগ পর জন্ম নিয়েও তিনিই এখন মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক ও চেতনাধারী। কার সাধ্য তাকে নীচে নামায়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।