পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তালুকদার হারুন : রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্পে সাড়া মিলছে না। তৃতীয় দফায় সময় বাড়িয়েও কাক্সিক্ষত আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না। তিন মাসে আবেদন পড়েছে মাত্র কয়েকশ’। ইতোমধ্যে ফ্ল্যাটের বরাদ্দ পেলেও তা বাতিল করে জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন অনেকে।
রাজউক সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট বরাদ্দে রাজউকের দেওয়া কঠিন শর্ত মেনে একটি ফ্ল্যাট পেতে একজন গ্রাহককে প্রায় কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে। আর এ কারণেই নি¤œ ও মধ্যম আয়ের লোকজন রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রাজউক প্রথম ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয় ৬ হাজার ১০০টি। এরপর ২০১৪ সালে দেওয়া হয় আরও ৫৫০টি। সব মিলিয়ে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে আড়াই হাজার ফ্ল্যাট ফেরত এসেছে। আর্থিক সমস্যার কথা বলে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এই ফ্ল্যাটগুলোই পুনরায় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয়বারের মতো ফ্ল্যাট বরাদ্দের আবেদনপত্র বিক্রি ও গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর। উত্তরা তৃতীয় পর্বে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত প্রতিটি ১৬৫৪ বর্গফুট আয়তনের আড়াই হাজার ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। এজন্য নির্ধারিত ফরমের দাম ধরা হয়েছে অফেরতযোগ্য দুই হাজার টাকা। এই ফরম পূরণ করে জামানত হিসেবে রাজউকে জমা দিতে হবে চার লাখ টাকা। প্রবাসীদের জন্য এই জামানত নির্ধারিত হয়েছে পাঁচ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। বরাদ্দযোগ্য ১৬৫৪ বর্গফুটের মধ্যে ১২৭৬ বর্গফুট হবে মূল ফ্ল্যাটের আয়তন এবং বাকি ৩৭৮ বর্গফুট কমনস্পেস। নিয়মানুযায়ী ক্রেতাদের কমনস্পেসের দামও পরিশোধ করতে হবে।
রাজউকের তৈরি করা প্রসপেক্টাসে দেখা গেছে, ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকা। এ হিসেবে ১৬৫৪ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা। তবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়লে এই দাম আরও বাড়বে। কারও বরাদ্দ বাতিল হলে প্রদানকৃত টাকার ৫ শতাংশ কেটে রেখে বাকি টাকা বিনা সুদে ফেরত দেবে রাজউক।
প্রসপেক্টাসে আরো বলা হয়েছে, নিচতলায় প্রতিটি গাড়ি পার্কিং স্থানের জন্য এককালীন তিন লাখ টাকা এবং বিভিন্ন ইউটিলিটি সংযোগের জন্য দুই লাখ টাকা এককালীন পরিশোধ করতে হবে। এই পাঁচ লাখ টাকা গ্রাহককে দিতে হবে ফ্ল্যাটের দখল বুঝে নেওয়ার আগেই। রেজিস্ট্রেশন বাবদ গ্রাহককে কত টাকা দিতে হবে সে সম্পর্কে প্রসপেক্টাসে কিছু বলা নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রেজিস্ট্রেশন বাবদ গ্রাহককে ফ্ল্যাটের মোট মূল্যের ১০ শতাংশ টাকা দিতে হতে পারে।
রাজউকের শর্ত অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য নির্বাচিত হলে ফ্ল্যাটের মূল্য জামানতের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ প্রদত্ত জামানতের ৪ লাখ টাকা বাদ দিয়ে ফ্ল্যাটের অবশিষ্ট মূল্য দাঁড়াবে ৭৫ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা। নির্মাণ চলাকালে এই অবশিষ্ট মূল্যের ৫০ শতাংশ (৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা) চার বছরে চারটি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। কেউ ব্যর্থ হলে তাকে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ বিলম্ব ফিসহ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে বরাদ্দ বাতিল হবে এবং প্রদানকৃত টাকা থেকে ৫ শতাংশ কেটে বাকিটা আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হবে।ফ্ল্যাটের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার পর সর্বোচ্চ আট বছরে আটটি বার্ষিক সমান কিস্তিতে। তবে এ জন্য কিস্তি মূল্যের ১২ শতাংশ টাকা ‘কিস্তি সুবিধা ফি’ হিসেবে দিতে হবে রাজউককে। এর ফলে অবশিষ্ট মূল্যের ওপর শুধু ‘কিস্তি সুবিধা ফি’ দিতে হবে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৩০৪ টাকা।
হিসাব করে দেখা গেছে, পার্কিং, ইউটিলিটি, রেজিস্ট্রেশন ও কিস্তি সুবিধা ফিসহ রাজউকের ১৬৫৪ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট পেতে গ্রাহককে গুণতে হবে প্রায় ৯৭ লাখ টাকা। এ টাকা দিতে হবে স্বাভাবিকভাবে সবকিছু চললে। আর কোনও গ্রাহক আর্থিক সমস্যার কারণে কিস্তির টাকা দিতে না পারলে তাকে আরও কয়েক লাখ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে।
সূত্রমতে, ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ চলাকালে চার বছরে একজন গ্রাহককে প্রায় ৪০ লাখ টাকা রাজউককে পরিশোধ করতে হবে। এ টাকা দেওয়ার পরও সময়মতো ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ ৪০ লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা হলে ছয়-সাত বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আর কোনো কারণে ফ্ল্যাটের কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে গ্রাহককে গুনতে হবে ১২ শতাংশ টাকা জরিমানা। এভাবে একটি ফ্ল্যাটের দাম প্রায় কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। অথচ রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে বেসরকারি কিছু কোম্পানির ফ্ল্যাট এর চাইতে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজউক সূত্র জানায়, এবার তৃতীয় দফায় ফ্ল্যাট বরাদ্দের কার্যক্রম চললেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন মাসে আবেদন পড়েছে মাত্র কয়েকশ’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এস্টেট শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমবার যখন ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয় তখন প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছিল ৩৫০০ টাকা। এবার তেরশ’ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে দুইবার সময় বাড়িয়েও কাক্সিক্ষত সংখ্যক আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় বার বাড়ানো সময়সীমা ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এর আগে সর্বশেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি ও ২৯ ফেব্রুয়ারি।
প্রকল্প পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। যত দ্রুত সম্ভব ক্রেতাদের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৮৪০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে। ২০১৭ সালের জুন নাগাদ আরও তিন হাজার এবং অবশিষ্ট ফ্ল্যাট ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে হস্তান্তর সম্ভব হবে। ফ্ল্যাটের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের ব্যয় বিশ্লেষণ করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবারের চাইতে এবার প্রতি বর্গফুটের দামও বেড়েছে।
রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্বের ১৮ নম্বর সেক্টরে ২১৪.৪৪ একর জমির ওপর ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘এ, বি এবং সি’Ñএ তিন ব্লকে ফ্ল্যাট হবে ১৫ হাজার ৩৬টি। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রকল্পে ১৭৯টি ষোলতলা ভবন হবে। বর্তমানে চলমান ‘এ’ ব্লকের কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ‘বি’ এবং ‘সি’ ব্লকের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। ‘এ’ ব্লকের ৭৯টি ভবনে ফ্ল্যাট হবে ৬৬৩৬টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।