আওয়ামী লীগ এখন জনগণের চোখে শত্রুতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই-সব নোংরা অপপ্রচার বন্ধ করুন। যতো নাটকই করুন, আর কোন লাভ হবে না। আপনারা প্রতারণা, প্রহসন, মিথ্যাচার করতে করতে সব বিশ্বাস চিরতরে হারিয়ে ফেলেছেন। আপনারা জনগণের চোখে এখন গণশত্রু। বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতাকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, “তাদের (ঐক্যফ্রন্ট) দুর্ব্যবহার থেকে কেহই রেহাই পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলা করছে, সহিংসতা চালাচ্ছে। তারা
নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ঝগড়া করছে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে বাজে ভাষা ব্যবহার করছে”। এভাবে অনেক কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী
শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশের মানুষের সাথে সেরা প্রহসন। আওয়ামী সন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে শত শত
ধানের শীষের প্রার্থী ও
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত। পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের নিক্ষিপ্ত গুলিতে
ধানের শীষের সমর্থকদের চোখ অন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে হাজারো নেতাকর্মী আজ পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক হয়ে কারাবন্দী। এর মধ্যেও
বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। শত শত
বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই আচরণ ২৫ মার্চের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসী ও কিছু সংখ্যক রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তান্ডবে বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এবং বিশ্ব মিডিয়ায় এসব খবর প্রচার হচ্ছে ফলাও করে। এখন আওয়ামী প্রধান
শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতারা এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। নিজেরা আক্রমণ করে এখন মিথ্যা গল্প সাজিয়ে নির্যাতিতদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশব্যাপী শত শত সহিংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, সেটি হয় পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদের দ্বারা অথবা পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশ নিজেরাই সন্ত্রাসী কায়দায় ঐক্যফ্রন্টের গণসংযোগে হামলা করছে।
বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সরকার। নৌকা মার্কার পক্ষে প্রকাশ্যে পুলিশের ভোট চাওয়া, নৌকার মঞ্চে বক্তৃতা করা, গোয়েন্দা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে উঁচু তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে
ধানের শীষের কর্মীর জীবন চলে যাওয়া,
ধানের শীষের প্রচারণা মিছিলের ছবি তুলে সেখান থেকে বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বাসা, বাজার, দোকান, এমনকি আত্মীয়স্বজনদের বাসা যেখানে পেরেছে সেখান থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৫০০ জন
ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আওয়ামী সশস্ত্র কর্মীরা প্রতিদিন শত শত হামলা করছে
ধানের শীষের প্রচারণায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে
বিএনপি মহাসচিবের স্ত্রী-কন্যার উপর। গতকাল ইশ্বরদিতে
ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের শরীরে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে ছুরি চালানো হয়েছে। এর আগের দিন বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আক্রমণ করে রক্ত ঝরানো হয়েছে। ড. আব্দুল মঈন খান এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী’র ওপর হামলায় কি পুলিশের ভূমিকা ছিল না ? ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করার পর থানার ওসি’র বীরোচিত কর্মের জন্য আত্মপ্রসাদ লাভের কথা তো গণমাধ্যমে এসেছে, কই তখন তো
নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। সিরাজগঞ্জের
ধানের শীষের প্রার্থী রোমানা মাহমুদ, তাকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে তা কাপুরুষোচিত। শরীয়তপুরের
ধানের শীষের প্রাথী নুর উদ্দিন অপু পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলায় এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এই সংবাদ কি
নির্বাচন কমিশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা জানেন না ? শেরপুরের
ধানের শীষের প্রার্থী ডাঃ সানসিলা প্রিয়াংকার ওপর হামলায় তার আর্তচিৎকার কি
নির্বাচন কমিশন শোনেনি ? কমিশন না শুনলেও সারা দেশবাসী শুনেছে। এ সমস্ত ঘটনা তো অভিযোগ আকারে কমিশনে জানানো হয়েছে। এছাড়া ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, সুব্রত চৌধুরী, আফরোজা আব্বাস, শরীফুল আলমের ওপর দফায় দফায় হামলার অভিযোগ কি জানানো হয়নি কমিশনে, জানানো হয়েছে, কিন্তু তাতে কি প্রতিকার হয়েছে ?
ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাসকে বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, চাঁদপুর
বিএনপি’র আহবায়ক ও
ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নিজ বাসায় অবরুদ্ধ। খুলনা খালিশপুরের
ধানের শীষের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল দুইদিন ধরে নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে, মাঝে মাঝে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এসে বাসার সামনে থাকা গাড়িগুলো ভেঙ্গে চুরমার করছে। নাটোরে
ধানের শীষের প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিনের ওপর বারবার হামলা এবং তাকে প্রতি পদে বাধা দেয়ার ঘটনা কি কমিশন জানে না। অথচ নির্বাচনী পরিবেশকে সহিংস করে তোলার জন্য দায়ী যারা, তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারবে না।
রিজভী বলেন, চোখের সামনে সরকারী দলের হামলা, সংঘাত চলবে নিস্ক্রিয় পুলিশের সামনে. মাথা ফাটবে, পেটে ছুরি ঢুকবে, সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরবে, এমতাবস্থায় কোন বিবেকবান মানুষ ক্ষুদ্ধ না হয়ে কি গালিবের গজল গাইবে। পুলিশের অনাচারের পক্ষে সাফাই গাইছেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা, আর
নির্বাচন কমিশনের সিইসিসহ কতিপয় কমিশনার’রা। তবে হ্যাঁ, কমিশনে এখনও বিবেকবান কমিশনার আছেন, যিনি এইচ টি ইমামের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন এবং আমরা জানি, পুলিশের সবাই এই নির্বাচনী অনাচারের সাথে লিপ্ত নয়, কিন্তু সুবিধাভোগীদের সাথে তারা পেরে উঠছে না। চাকুরী বাঁচাতে নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছে।