পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবং রেলকে আধুনিকায়ন করতে কেনা হয়েছিল ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন। মানও বাড়েনি, আধুনিকতার ছোঁয়াও লাগেনি। বরং যাত্রীদের কাছে এখন যন্ত্রণার নাম ডেমু ট্রেন। এটি পরিচালনা করতে গিয়ে রেলের লোকসানের বোঝা বেড়েই চলেছে। ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ডেমু ট্রেন নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই বিব্রত। অভিযোগ রয়েছে, চীন থেকে কেনার সময়ই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ভর করেছিল ডেমুতে। যে কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় ১০ সেট ট্রেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬৫৪ কোটি টাকায় ১০টি ইঞ্জিন ও উন্নতমানের ১শ’টি কোচ কেনা যেতো। তাতে যাত্রী সেবার মান অনেক বাড়তো।
২০১০ সালে চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০ জোড়া ডেমু ট্রেন ক্রয় করে। এতে সর্বমোট খরচ হয় ৬৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এই ট্রেন উদ্বোধন করেন। দুই পাশে দুইটি ইঞ্জিন ও মাঝখানে বগিসহ ডেমু ট্রেন বাহ্যিকভাবে বেশ সুন্দর। কিন্তু এর ভেতরের অবস্থা অনেকটাই উল্টোধর্মী। আকারে ছোট হওয়ায় ট্রেনের ভেতরে অত্যন্ত গরম। এর দরজাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলে এবং বন্ধ হয়। জানালাগুলো সরু হওয়ায় ভেতরে বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে না। এ কারণে ভিতরে ভয়াবহ তাপের সৃষ্টি হয়। গাদাগাদি করে চলতে গিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চালুর পর পর এরকম ঘটনায় যাত্রীদের রোষানলে পড়ে ডমু ট্রেন চারদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০ জোড়া ট্রেনের মধ্যে অর্ধেকই বন্ধ থাকে। ডেমু ট্রেনে কোনো বাথরুম নেই। এমন বিষয়টি যাত্রীদের অজানা থাকায় প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি যানজট কমাতে ডেমু ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেমু ট্রেনগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, অনুপযোগী, নকশাবহির্ভূত, নিম্নমানের। চলতে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ বগিগুলোও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অথচ কেনার সময় নন এসি জেনেই কেনা হয়। রেল সূত্র জানায়, চালুর পর থেকে ডেমু ট্রেন রেলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসান কমাতে মাঝে মধ্যে ডেমু ট্রেন বসিয়ে রাখা হয়। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের (অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) এই ৪ মাসে ডেমু ট্রেন পরিচালনায় রেলের লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। চলতে গিয়ে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে এই ট্রেন। সে কারণে সব রুটে নিয়মিত পরিচালনা করা সম্ভবও হয় না। নিয়মিত চলাচল না করায় এই ট্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। সূত্র জানায়, অধিক টাকায় অত্যন্ত নিম্নমানের ডেমু ট্রেন কেনায় চলাচল শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই ১০ সেট ট্রেন বিকল হয়ে যায়। রেলের তথ্যমতে, একটি ডেমু ট্রেনের আপ-ডাউন মিলে জ্বালানী ও মেকানিকেল খরচ গড়ে ৭০ হাজার টাকা। ২০ সেট ডেমুর মধ্যে সারাদেশে গড়ে ১৬ সেট ডেমু সচল থাকে। প্রতিদিন এ বাবদ খরচ প্রায় ১২ লাখ টাকা। এর বাইরে লোকো মাস্টারসহ রেলের কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচ মাসে প্রায় ৭ লাখ টাকা। অথচ একটি ডেমু থেকে রেলের আয় হয় দৈনিক গড়ে ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে ১৬ সেট ডেমুতে প্রতিদিন গড়ে লোকসান ৮ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে প্রতিটি ডেমু গড়ে চলাচল করেছে ৫০ দিন। এই সময়ে ডেমু চালাতে গিয়ে রেলের লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ৪ কোটি টাকা। ডেমুর লোকসানের বিষয়টি গত বছরের অক্টোবরে রেলের পূর্বাঞ্চল থেকে রেলভবনকে জানানো হয়। চট্টগ্রামের ৪ রুটে ৪ মাসে ( মে-সেপ্টেম্বর’১৫) ডেমু ট্রেন পরিচালনায় লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। সে সময় রেলের পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে বলা হয় যাত্রী কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে ডেমুর আয়। চট্টগ্রামে যাত্রীদের চাপে ডেমুর স্বয়ংক্রিয় দরজা ভেঙে সার্বক্ষণিক খোলা রাখা এবং জানালা ভেঙে বড় করা হয়। কিন্তু তারপরেও যাত্রী বাড়ানো যাচ্ছে না। সম্প্রতি কয়েক দফা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সারাদেশে ১১ রুটে মোট ১৬ সেট ডেমু চালু আছে। এর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম-লাকসাম, ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, আখাউড়া-কুমিল্লা রুটে ২ সেট, চট্টগ্রাম সার্কুলার রুট, পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও-সৈয়দপুর-রংপুর-লালমনিরহাট, লাকসাম-কুমিল্লা, লাকসাম-নোয়াখালি-কুমিল্লা ও আখাউড়া- সিলেট রুটে এক সেট করে ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। জানা গেছে, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সময় ডেমু ট্রেন ক্রয়ের দরপত্র আহবান করা হলে ১৫টি কোম্পানি দরপত্র কেনে। কিন্তু দরপত্র কমিটির সাথে যোগসাজশ করে দাখিল করা হয় মাত্র ৩টি কোম্পানির দরপত্র। এর মধ্যে চীনের ২টি ও ইন্দোনেশিয়ার ১টি। কাজ পায় চীনের তাংশান কোম্পানি। যা ২০১১ সালের ১১ জুলাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। ডেমু ট্রেন কেনার আগে রেলওয়ের কমপক্ষে ৩০ জন কর্মকর্তা চীন যান। তাঁরা ডেমু তৈরীর কারখানা পরিদর্শন করে আসেন ঠিকই, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তখন এর মান নিয়ে একটুও ভাবেন নি। যে কারণে ডেমুর আজ এই দশা বলে মনে করেন রেল সংশ্লিষ্টরাই।
*************
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।