Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনের আগে বিরোধীদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ

আল-জাজিরার প্রতিবেদন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশে বহু প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র একসপ্তাহ পূর্বেও প্রধান বিরোধীদল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পরেও তাদের প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার এ অভিযোগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। জোটটি অভিযোগ এনেছে যে, তারা পুলিশ ও শাসক দল আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দ্বারা সহিংস আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও কর্মীরা বার বার হামলার শিকার হচ্ছেন। ফলে, তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে সমাবেশ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই এত শোচনীয় নির্বাচনকালীন অবস্থা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২২শে ডিসেম্বর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দমনমূলক আখ্যায়িত করে সংস্থাটি বলেছে, এর ফলে আসন্ন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাপক নজরদারি ও বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনের মতো নানা কর্তৃত্ববাদী আচরণ একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি রোববার তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ৫৪টি সংবাদ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারাগারে থাকায় তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এ রায়কে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদল হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। আমরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চাই। কিন্তু এর জন্য ন্যুনতম স্বাধীনতা দরকার, যা বর্তমানে নেই। আমরা প্রচারণা চালাতে পারছি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।
বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। এবারো তারা অভিযোগ করছে, পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। দুদু বলেন, যদি কাল থেকে মাঠে কোনো পুলিশ না থাকে তাহলে নির্বাচন আরো বেশি অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। পুলিশের একমাত্র কাজ নির্বাচন থেকে বিরোধী নেতাদের সরিয়ে দেয়া। ঢাকা-৯ আসনের বিরোধী প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের ওপর হামলার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, তার সমাবেশকে লক্ষ্য করে লাঠি ও ইট-পাটকেল দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। ১২ই ডিসেম্বর তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চারবার হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নির্বাচন কমিশনারদের দেখিয়েছি। তারা বলেছেন, পুলিশকে এ জাতীয় হামলা ঠেকাতে ভালোভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হামলা চলছেই। আমার ড্রাইভার সর্বশেষ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তার ২২টি সেলাই লেগেছে। একইসঙ্গে, এসব হামলার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। তবে বিরোধীদলের তোলা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানিয়েছে, তাদের প্রতি ওপর থেকে আইন অনুযায়ী কর্তব্য পালন করার বিষয়ে সপষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হলে তার প্রতিটা অভিযোগ তদন্ত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল সোহেল রানা। তিনি বলেন, আমরা অস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারি না। যদি কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন। সোমবার দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। আল-জাজিরা নির্বাচন কমিশন ও শাসক দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি। অ্যাসিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল) এর পর্যবেক্ষকদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিসা না দেয়ায় তারা তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি হতাশা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিবৃতিতে বাংলাদেশ মর্মাহত।
ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেছেন, ঘটনাটি পরস্পরবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি প্রণয়নকারীরা যদি বাংলাদেশের এ আচরণকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ইচ্ছার অভাব হিসেবে দেখে থাকেন, তবে আমি অবাক হব না। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারই সবথেকে কম বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন। তিনি আরো বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অনুপস্থিতি, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের গণগ্রেফতার এবং শাসক দলের কর্মীদের সহিংসতার দায় থেকে মুক্তি দেয়ায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।



 

Show all comments
  • Md farhad hossain ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    আমরা এই সৈরাচার সরকার থেকে মুক্তি চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafizur Rahman ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০১ এএম says : 0
    মাঠ ছাড়া কিন্তু ভোট ছাড়া না। বিএনপি কে বাংলাদেশের ৮৫% মানুষ পছন্দ করে। কুমিল্লাতে সরকার শুধু আওয়ামীলীগ কে ভোট দিতে দিয়েছিল।বিএনপিকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দেওয়া হয়নি।তারপরও বিএনপি পাশ করলো কিভাবে?সেই থেকে শিক্ষা নিয়ে বরিশালে কোন আওয়ামী সমর্থক কেও ভোট দিতে দেয়নি সরকার।ফলাফল বিএনপি মাত্র দশ হাজার আর আওয়ামীলীগ এক লাখ চল্লিশ হাজার। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি সরকার এবং দেশবাসি সবায় জানে জনগন ভোটকেন্দ্রে গেলে আওয়ামীলীগ কে ভোট দিবে না। এখন ঐক্যফ্রন্টের একমাত্র কাজ হলো জনগনকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Charu Hossain ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    বিএনপির তো মেরুদণ্ডহীন একটা দল। যারা মাঠেই নামেনা তাদের কি গ্রেপ্তার করবে।শুধুই অভিযোগ। বিএনপি এখন অভিযোগ দল।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসলিমা বেগম ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    নির্বাচনে থেকে বিএনপি অবশ্যই দেশবাসীকে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার জন্য কতটা মরিয়া হতে পারে এবং খারাপ হতে পারে। ইতিহাস নিশ্চয়ই একদিন তার বিচার করবে ঠিক যুদ্ধাপরাধীরদের মত
    Total Reply(0) Reply
  • MD.ABDUR RAHMAN ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৪ এএম says : 0
    আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আর জনগণের ওপর ভরসা রেখে ভোটের মাঠে থাকুন। ভোটের দিন মানুষ যদি ঘর থেকে দলে দলে বের হয়ে আসে তাহলে সন্ত্রাসীরা পঙ্গপালের মতো পালাবে। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি চায় মানুষ। সেজন্য তারাও ঝুকি নেবে কিন্তু সাহসটা তো আপনাদেরই দেখাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ রানা ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    হানাদারের হাতে ছিল অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র, তবুও হার মানেনি আমাদের পূর্বপুরুষ। আমরাও মানবো না। জনগণের গায়ে হাত তুলে কেউ টিকে থাকতে পারি নি। তবুও সবাই সাবধানে থাকবেন কারণ এটা এদের বাঁচা মরার লড়াই। যেকোনো ভাবে এরা জনগণের বিরুদ্ধে লড়বে ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfiqar Ahmed ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    মানুষ এবার ভোট দিতে যাবে, সিটি নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে যেতে মানুষ যতটা অনিচ্ছুক ছিল এবার ততটাই ইচ্ছুক৷
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    আমি আমার ভোট দিতে সকাল সকাল কেন্দ্রে চলে যাব, যত বাধাই আসুক আমার ভোট আমি দেবই।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Alam Khan ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    ৩০ তারিখ আমরা সবাই যাবো, দলে দলে যাবো, হাজারে হাজারে যাবো, অযুতে নিযুতে লক্ষ কোটিতে যাবো, নৌকা মার্কায় ভোট দিব এবং নৌকায় বিজয় ছিনিয়ে আনবো।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন মুন্সি ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    অবস্থা দৃষ্টে পরিস্কার বুঝা যায়, অভিযোগের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচন পরিস্থিতি নিজেদের অনুকুলে আনার কৌশল অবলম্বন করছে। নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা ব্যর্থ প্রমান করেই ছাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    যেন তেন ভাবেই হোক ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এবং সেটার বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত সিইসি।
    Total Reply(0) Reply
  • MMKhan ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    নিজে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি দয়া করে আপনার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন, সচেতন করুন ও সাহস দিন! এবারের নির্বাচন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার নির্বাচন! এবারের নির্বাচন বাংলাদেশকে বাংলাদেশিদের কাছে ফেরত দেওয়ার নির্বাচন!!! জনগণের চেয়ে বড় শক্তি আর কি আছে! নিউট্রন বোমা চিনেছ, মানুষ চেনোনি!!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    “ভোট কেন্দ্রের উপস্থিতি , বদলে দেবে পরিস্থিতি” “ভয় ছড়ালে ভয় আসবে সাহস ছড়ালে জয় আসবে” “সামনে আসছে শুভ দিন , বাংলাদেশকে ভোট দিন” “৩০ তারিখ ভোট দিন , ভোট ডাকাতদের রুখে দিন” “ভোট দিয়ে পাহাড়া দিন , আপনার ভোট বুজে নিন”।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ