পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মতো বিভাগীয় শহরগুলোর একই চিত্র
স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে নিজ এলাকায় শিক্ষার্থীরা
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ গণতন্ত্রের জন্য সুখবর
ভোটের টানে গ্রামের পানে ছুটছে ভোটের নায়ক-মহানায়করা। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের মালিক এবং নায়ক ভোটাররা। ভোটের এই নায়ক-মহানায়করা নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ক্রেজি হয়ে উঠেছেন। নতুন তরুণ ভোটারদের মধ্যে এই ক্রেজ আরো বেশি। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নিজ এলাকায় চলে গেছেন ভোট দিতে। যারা যেতে পারেননি তারা এখন ছুটছেন গ্রামের পানে। দীর্ঘ ১০ বছর পর ভোট দেয়ার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চান না। বাধা-বিপত্তি-অনিশ্চয়তা-সংঘাত-সংঘর্ষ প্রার্থীর ওপর আক্রমণে লোমহর্ষক রক্তাক্ত দৃশ্য কোনো কিছুই মানুষ ‘ভোটের বাধা’ মনে করছেন না। ভোটজ্বরে আক্রান্ত মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে বাজছে ভোটের ঢোল।
তরুণ ভোটারদের মতোই কর্মজীবী সাধারণ মানুষ নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোট দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে রিকশাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ঠেলাগাড়ি চালক সবাই ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে। অফিস-আদালতে কাজের জন্য গেলে এক জবাব ভাই ভোট শেষ হোক। ঈদের উৎসবের মতোই রাজধানীর কর্মজীবী মানুষগুলোর কেউ একদিনের ছুটি নিয়ে ছুটছেন গ্রামে; ভোট দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে কেউ কাজকর্ম শেষ করে গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সব যানবাহনে প্রচন্ড ভিড়। ঈদ উৎসবের মতোই অনেক পরিবারের সদস্যরা ভোটকে কেন্দ্র করে গ্রামের বাড়িতে একত্রিত হচ্ছেন। ইনকিলাবের আঞ্চলিক অফিস, ব্যুরো অফিস, জেলা সংবাদদাতারা জানান, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের কর্মজীবীরাও ছুটছেন গ্রামের পানে। তারা নিজের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। শুধু তারাই নয়, ‘মা-খালা-ভাই-বোন-চাচা-চাচী-দাদা-দাদী’রা যাতে ভোট দিতে যান সে লক্ষ্যেও আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবারের কর্তারা। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেছেন, মানুষের মধ্যে যে ভোট দেয়ার আগ্রহ সেটাই বলে দেয় দেশের মানুষ নির্বাচনকে কত বড় উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে। দুঃখজনক হলো রাজনীতিকরা সেটাকে কদাকার করছেন। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, পরিস্থিতি যত প্রতিক‚ল হোক না কেন সকলকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দিতে হবে।
চট্টগ্রামে ভোটারদের প্রবল আগ্রহ
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শফিউল আলম জানান, এক যুগ অপেক্ষার পর সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগটি কেউই এবার হাতছাড়া করতে চাইছেন না। ভোটদানে প্রবল ও অদম্য আগ্রহ চট্টগ্রামজুড়ে। ভোটের লড়াইয়ে উত্তেজনা যতই থাকুক ভোটারদের ক্রেজিভাব ও মনোবল দমেনি। সবকিছু তুচ্ছ করে চার দিকে এখন রীতিমতো ‘ভোটের জ্বর’। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটগ্রহণের আগের দু’দিন প্রচার-প্রচারণা যেহেতু বন্ধ তাই মারামারি সন্ত্রাস হাঙ্গামার আর তেমন আশঙ্কা থাকবে না। ভোটারদের ভয়ভীতি কেটে যাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপারে পছন্দের মার্কায় সিল মেরে নিজেই ভোটটি দিয়ে আসার আনন্দ উপভোগের আশায় সর্বস্তরের মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ছে।
‘নাড়ির টানে’ যেমন ঈদে বাড়ি ফেরা তেমনি ‘ভোটের টানে’ একটি উৎসবের জন্য মানুষ ঘরমুখী। শহর-নগর-বন্দর ছেড়ে তিন দিনের ছুটির সুবাদে আজ (বৃহস্পতিবার) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শেষে গ্রাম-জনপদে ছুটছে মানুষ। গত কয়েক দিনে রেলস্টেশন ও বাস-কোচ কাউন্টারে টিকিটের জন্য হন্যে হয়ে ছুটতে দেখা গেছে। আবার ৬০ লাখ মানুষের ঠিকানা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যারা ভোটার তারা ভোটাধিকার প্রয়োগের মুহূর্তটির অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় জায়ান্ট জোটের প্রার্থী, তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকরা জনসমর্থন লাভের জন্য ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা-গণসংযোগে এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও উৎসাহিত করছেন।
গতকাল (বুধবার) অনেক জায়গায় চাটগাঁর আঞ্চলিক গানের প্যারোডি করে ভোটের মাইকিং হচ্ছিল ‘মা-খালা-ভাই-বোন-চাচা-চাচী-দাদা-দাদী’ ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যান। দুই প্রধান দল এখন মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে ভোটের একদিনের ‘রাজা-বাদশাহ’, ‘মহানায়ক’ লাখো কোটি ভোটারের মন-মর্জি নিয়েই হিসাব-নিকাশে মনোযোগী। আওয়ামী লীগের মহাজোটে টেনশন বেড়েই চলেছে। সেনাবাহিনী টহলে থাকলে আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ থাকবে এই আশায় বলীয়ান হয়ে ৩০ তারিখ চট্টগ্রামের সড়ক, রাস্তাঘাট আর ভোটকেন্দ্রে ভোটারের ঢল নামবে এমনটি ধারণা ব্যক্ত করেছেন ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার শিপিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের সাথে কথা হয় গতকাল সকালে। ভোটাধিকার প্রয়োগে তার প্রবল ইচ্ছার কথা জানিয়ে বললেন, ‘দশ বছর আগে হয়েও আমি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট দিতে পারিনি। তখন ছিল একদলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচন। এবার বহুদলীয় নির্বাচন হচ্ছে, তাই পাবনায় আমার নিজ গ্রামে প্রথম ভোটটি দিতে যাব। এই সুযোগ মিস করতে চাই না’। চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নোয়াখালীর মো: আবু সালেহ আকবর, ব্যবসায়ী বগুড়ার আফজাল হোসেন, ইপিজেডের শ্রমিক রাঙ্গামাটির মিতুল চাকমা, বন্দরের শ্রমিক ভোলা জেলার মো: আকরাম, সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী বরিশালের শোভন আহমেদ রনি, স্কুলশিক্ষক কক্সবাজারের জাফর আলম, রিকশাচালক রংপুরের সাহাব মিয়াসহ অনেকের সাথেই আলাপকালে জানা গেল তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ভোটদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ কর্মদিবস শেষেই যাবেন বাড়িঘরে। আবার চট্টগ্রাম নগরের ভোটার নিমতলার বাসিন্দা মকবুল, কাজির দেউড়ির জসিম উদ্দিন, চকবাজারের মোহাম্মদ হাসান জানালেন, ৩০ তারিখ ভোটদানে নিজেদের ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ফুচকাওয়ালা বাবুল হোসেন ভোটের দিন জামালখান এলাকায় তার রিকশাভ্যানে বাড়তি বেচা-বিক্রির আশা করছেন, সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
চট্টগ্রামে এবার ৭ লাখেরও বেশি তরুণ-নবীন ভোটার এবং ২৭ লাখেরও বেশি মহিলা ভোটার জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর। গত আগস্টে নিরাপদ সড়ক দাবিতে ছাত্র আন্দোলন, এর আগে কোটা আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিশেষত নতুন প্রজন্মের ভোটারদের রায় গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগে তাদের মাঝে ক্রেজিভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তেমনি উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন যারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটদানের ক্ষুধা মেটাতে পারেননি। একই চিত্র পাহাড়ের তিন জেলার তিনটি নির্বাচনী এলাকায়ও।
ভোট নিয়ে নগর ফিরেছে গ্রামে
রাজশাহী ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা রেজাউল করিম রাজু জানান, ভোট আর শীতের পিঠেপুলি খাওয়ার ছুটিতে শিক্ষানগরী এখন বেশ ফাঁকা। নগরীর বাইরে থেকে এখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে আসে লাখ দেড়েক ছেলে-মেয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ও সাথে আবাসিক হল এবং নগরীর ছাত্রাবাস, ছাত্রী নিবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওরা ফিরেছে নিজ নিজ শহর আর গ্রামে। ওদের চাঞ্চল্যভরা পদচারণায় মুখরিত নগরীকে বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সবাই ফিরেছে বাড়িতে ছুটি কাটানোর পাশপাশি প্রথম বা দ্বিতীয়বারের মতো ভোট দেয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকে ভোট দিতে না পারার বেদনা রয়েছে। এবার তারা নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার উৎসাহ আর শঙ্কা দুটো রয়েছে তাদের মধ্যে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান ফিরছেন তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। বাড়ি যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোট আর নবান্ন দুটো করতে যাচ্ছি। জানি না কি হবে। দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে ফিরে আসতে পারি।
বৃহত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নওরীন থাকেন নগরীর রাজারহাতা এলাকার এক ছাত্রীনিবাসে। তিনিও বাড়ি ফিরছেন। বলেন ছুটি পেলাম বাড়ি যাচ্ছি। তবে ভোট দিতে পারব কি না জানি না। টিভিতে-পত্রিকায় যেসব খবর দেখছি তেমনটি যদি থাকে কেন্দ্রে যাব না। বেশ ক’দিন আগেই এলাকায় ফিরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়–য়া দল করা ছেলেরা। নগর বাদ দিয়ে এখন এলাকায় নিজ নিজ পছন্দের দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। নগরীর বনগ্রামের বাসিন্দা মেহজাবীন বিয়ে সাদী করে এখন ঢাকার বাসিন্দা। ছেলে-মেয়েদের স্কুল ছুটি হয়েছে। সরকারি চাকুরে স্বামী আলিমও সস্ত্রিক চলে এসেছেন শ্বশুরবাড়িতে। কারণ তারা এখানকার ভোটার। ভোট দেয়া আর ছুটি কাটানো দুটোই হবে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভোট নিয়ে যে সংঘর্ষের চিত্র দেখছি তা যদি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চলে তবে ভোট দিতে যাব না। নগরীর বাসিন্দা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা গিনি রায় বলেন, ভোট আমার নাগরিক অধিকার। আমার ভোট আমি দিতে চাই। নির্বিঘেœ সে সুযোগ চাই।
সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা বছরের শেষে একটা ছুটি পেয়ে নিজ নিজ স্বজনদের কাছে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিরইল বাস টার্মিনালে একজন যাত্রীর সাথে ভোট নিয়ে আলাপকালে বলেন, বাড়ি যাচ্ছি দেখি এলাকার অবস্থা কি। অবস্থা বুঝে ভোট দিতে যাব। আগে তো নিজের জীবন। তারপর ভোট। চাকরিজীবীদের মধে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। রেলস্টেশন আর বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জানুয়ারির পাঁচ তারিখ পর্যন্ত টিকিটের চাপ রয়েছে। ছুটির এমন আমেজের মধ্যেও খুব একটা স্বস্তি নেই ব্যাংকারদের। তাদের বছর শেষের ক্লোজিংয়ের কাজ করতে হচ্ছে। রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লার গ্রামের বাড়ি যেতে-আসতে চার দিন লাগবে। তারপর মাঝে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে ঝুঁকি না নেয়াই ভালো। গ্রামের স্বজনরা বলছে অবস্থা ভালো না। আসার দরকার নাই। নগরীর বেশ ক’জন স্থায়ী বাসিন্দা বলছেন, ভোট নিয়ে উৎসাহ অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। বিগত মেয়র ভোটের উদাহরণ টেনে বলেন, ভোট নিয়ে যে ডে-নাইটের খেলা হলো আমার ভোটটা অন্যরা দিয়ে দিলো। এবারো তেমন আলামত দেখছি। অতএব কি করব জানি না।
দক্ষিণ-পশ্চিমে নতুনদের মধ্যে ‘ক্রেজ’
যশোর ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মিজানুর রহমান তোতা জানান, ভোটের জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। ভোটাররা নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চান। বিশেষ করে জেলায় জেলায় লাখ লাখ নতুন ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ‘ক্রেজ’। দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এরকমই মনোভাব পাওয়া গেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম কয়েক বছর আগে ভোটার হয়েছেন। কিন্তু গত ভোটটা দেয়ার সুযোগ হয়নি। তার প্রচন্ড ইচ্ছা এবারের ভোটটা তিনি দেয়ার জন্য তার এলাকা ঝিনাইদহের বাড়িতে যাবেন। তিনি বললেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যে পরিবেশেই হোক না কেন আমি ভোটের দিন আমার এলাকার ভোটকেন্দ্রে যাব।
যশোরের এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ি খুলনার তেরখাদায়। তার নাম সাজিদুল ইসলাম। ভোটের ব্যাপারে কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ব্যাংক আওয়ারের পর বাড়ি ফিরব। আমার খুব আগ্রহ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে বাড়ির কাছের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটটা দেবো। এমনিতে নানামুখী আতঙ্ক, ভয় আছে ভোট নিয়ে, আমার মনে হয় তারপরও ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যাবে। এ অঞ্চলের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের স্টাফ রিপোর্টার, জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এলাকার ভোটারদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশেরই ভোটাধিকার প্রয়োগে বেশ আগ্রহের কথা জানা গেছে। যশোর শহরের চা দোকানের কর্মচারী আব্দুল কাদের তার গ্রামের বাড়ি শহরতলী সুজলপুরে যাবেন ভোট দিতে। বললেন বাড়ি যাব, বেশ মজা করব, সারাদিন থেকে এলাকার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটটা দেবো। সাতক্ষীরার তালার কলেজশিক্ষক ওবায়দুল হক বললেন, প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল গ্যাঞ্জাম হবে ভোটকেন্দ্রে যাব না। বাড়ির লোকজন ছুটিতে বাড়ি গিয়ে ভোটটা দিতে বলছে, তাই কর্মস্থল খুলনা থেকে বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তার মতে, ভোটের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে। প্রবল আকাক্সক্ষা রয়েছে মানুষের ভোট দেয়ার।
বরিশালে ভোট নিয়ে কৌত‚হল
বরিশাল ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা নাছিম উল আলম জানান, দু’দিন পরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে কৌত‚হল ও আগ্রহের চেয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভও বাড়ছে। এমনকি এবার যেসব নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে যাবার আশা করেছিলেন, তাদের মধ্যেও আশাহত হবার হতাশা কাজ করছে ইতোমধ্যে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার সাথে দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিবেকহীন কর্মকান্ডেও হতবাক নতুন ভোটারসহ সাধারণ ভোটাররাও। এমনকি ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই দক্ষিণাঞ্চলে আসার লক্ষ্যে আরো মাসখানেক আগে থেকেই লঞ্চ-স্টিমার, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের একটি টিকিটের জন্য যে চেষ্টা- তদবির চালাচ্ছিলেন গত দু-তিন দিনে তাতেও অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষণীয়। এখনো দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই ৩০ ডিসেম্বর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে অবাধে ভোট দেয়ার ব্যাপারে অনেকের মধ্যেই হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। গত দু’দিনে একাধিক নতুন ও পুরনো ভোটারদের কাছ থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
তবে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ২০০১ সালে ভোটারসংখ্যা ছিল ৫০ লাখ ৯২ হাজার ১০৬। এবার এ সংখ্যা ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৭০ জন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এ হিসাবে গত ১৭ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন ভোটারসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লাখ। তবে ২০০৮ সালের তুলনায় এবার ভোটারসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬ লাখ। কারণ ২০০৮ সালের পূর্ববর্তী সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় একজনের একাধিক স্থানে ভোটার হবার সুযোগ ছিল। ফলে ২০০১-এর চেয়ে ২০০৮-এর নির্বাচনে ভোটার হ্রাস পায় দক্ষিণাঞ্চলে।
নোয়াখালীর ভোটাররা উন্মুখ
নোয়াখালী ব্যুরো : ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালীর ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে উন্মুখ হয়ে আছেন। বিশেষ করে এবারের তরুণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। জীবনের প্রথম ভোটে অংশগ্রহণ করছে তারা। তাদের মধ্যে এ যেন বাঁধভাঙা আনন্দ। নির্বাচন উপলক্ষে হাজার হাজার কর্মজীবী নিজ জেলায় আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত নোয়াখালীর প্রতিটি উপজেলায় প্রবাসীরা আসতে শুরু করেছেন।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কথা হয় ইরাক প্রত্যাগত আবদুল জব্বার ও মো: ইদ্রিস নামে দুই ভাইয়ের সাথে। তারা এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে দেশে এসেছেন। তেমনিভাবে ইতালি থেকে সপরিবারে বাড়িতে এসেছেন বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আবদুল বাতেন ও সাহাবুদ্দিনের সাথে তারা ভোট দিতে এসেছে। ঢাকাস্থ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রকৌশলী আবু সাঈদ এবার নুতন ভোটার হয়েছেন। তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটার হলাম। তাই ভোট দিতে পারলে ভীষণ খুশি হব। অর্থাৎ এভাবে নোয়াখালীর লাখ লাখ কর্মজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে বাড়ি ফিরছে। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে ভোট দিতে পারলে আমরা খুশি হব।
বগুড়ায় ঘরে ফিরছে ভোটাররা
বগুড়া ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মহসিন রাজু জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে চতুর্থ বর্ষে পড়ুয়া সাকিব (২২) বুধবার বগুড়ায় ফিরেছেন, উদ্দেশ্য নতুন ভোটার হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করা। সাকিবের পিতা বাদল চৌধুরী এ ঘটনায় বেশ অবাকই হয়েছেন, তার পড়ুয়া ও ঘরকুনো স্বভাবের এই ছেলেটি ছুটির সময় বাড়িতে আসতে চায় না পড়ার ক্ষতি হবে বলে। এ ঘটনায় তিনি বুঝতে পেরেছেন নতুন প্রজন্মের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা ভোটের ব্যাপারে কতটা উন্মুখ হয়ে আছে।
সাকিব জানিয়েছেন, তার অন্য বন্ধুরাও নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। কেননা ভোটের একদিন আগেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে ব্যাংক অফিসার শফিকুল ইসলাম বৃহষ্পতিবার ব্যাংক শেয হলেই বগুড়া ছেড়ে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ যাবেন ভোট দিতে। তিনি জানিয়েছেন, মনের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও তিনি আগ্রহী ভোট দিতে।
বেশ ক’জন ভোটার জানালেন, এখনও সময় আছে সেনাবাহিনীর ভ‚মিকার ওপর ভোটের দিনের পরিস্থিতি নির্ভর করবে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে ভোট কেন্দ্রে ভোটারের ঢল নামবে বলেই মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।
ভোটের টানে সিলেট ছাড়ছে মানুষ
সিলেট ব্যুরো থেকে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আমীন জানান, বহু আঞ্চলিক ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের উপস্থিতিতে সিলেট পরিণত হয়েছে আঞ্চলিক মাল্টিকালচার জেলায়। বিশেষ করে জীবিকার তাগিদে মানুষের আনাগোনাসহ স্থায়ী-অস্থায়ী বসবাস এখন বিভাগীয় নগরী সিলেটে। ঈদ, পূজা উৎসবে মানুষ ছুটে যায় তার নাড়ির টানে। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাক্সিক্ষত ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ছুটছে মানুষ। বলতে হয়, ভোটের টানে নাড়ির পথে ছুটে যাচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন বিভাগের অনেক মানুষ সিলেটে বসেই স্থানীয় প্রার্থীর জন্য মতবিনিময় করে ভোটের মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করেছে। সেই সাথে মোবাইল মেসেজসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে নিজদের সমর্থন জানিয়েছে দলীয় ও সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে।
একাধিক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল মানুষ রাজনীতিক হয়রানি থেকে রক্ষার চেষ্টায় গা-ঢাকা দিয়ে বসবাস করেছে সিলেটে। সেই মানুষ তেজদীপ্ত হয়ে ছুটছে নাড়ির পথে। হিংসা প্রতি-হিংসার মেজাজ লক্ষ করা গেছে তাদের মধ্যে। বদলে দেয়ার চেষ্টায় গন্তব্যমুখী এখন তারা। আন্তঃজেলা সড়কের বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী সুরমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী গোলজার আহমদ বলেন, সিলেট ছাড়ছে মানুষ। ভোটের জন্যই মূলত চলে যাচ্ছে নিজ নিজ ঠিকানায়। পরিবহন ব্যবসা এখন চাঙ্গা। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত, শুক্রবার ও শনিবারে ব্যাপক মানুষ সিলেট ছাড়বে। অগ্রিম টিকিট অনেকে কেটে নিয়েছে। পরিবার-পরিজনের চেয়ে, দল বেঁধে পুরুষদের রওনা লক্ষণীয়।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ বরাবরই বেশি। কিন্তু গত ২০১৪ ইং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদান করা সম্ভব হয়নি ভোটারদের। দীর্ঘ ১০ বছর পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ মিস করতে চাচ্ছে না বেশিরভাগ ভোটার। এদিকে নগরীতে বসবাসকারী বিরাট সংখ্যক লোক রয়েছেন মফস্বলের। তারাও ছুটছেন একমাত্র ভোটের চিন্তায়। অনেকে স্থানীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ, প্রচারণায় অংশ নিতে আগেভাগেই চলে গেছেন সিলেট নগরী ছেড়ে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা তালিমপুরের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম বদরুল। কিন্তু ব্যবসা সূত্রে বসবাস করছেন নগরীর উপশহরে। তিনি বলেন, শক্রবারে চলে যাব ভোটাধিকার প্রয়োগে। ভোট নিয়ে শঙ্কা, বিদ্যমান আতঙ্ক থাকলেও কাক্সিক্ষত ভোট প্রদানের চেষ্টা মিস করতে রাজি নন তিনি। তিনি বলেন, শহরে বসে পছন্দের প্রার্থীর জন্য এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি। আমি এলাকায় গেলে নিজের মানুষ অন্তত ভোট প্রদানে আরো সাহসী হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, কোনো বাধাই স্থানীয়ভাবে ভোট প্রদানে বিরত রাখতে পারবে না আমাদের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ মানুষের আজন্ম। সময়ের সাথে ভিন্ন ভিন্ন প্রদ্ধতিতে তা প্রয়োগ হয়েছে। সেই ভোটের অধিকার নিয়ে মানুষ লড়াইও করেছে। বাঙালি একই পথের রক্ত ঝরিয়েছে। কিন্তু যারাই লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে, আফসোস তারাই এদেশে পরবর্তীতে ভোটাধিকার হরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু লড়াই থামেনি কখনও। এবারও ভোটাররা তেমন পরিস্থিতির শিকার। তিনি বলেন, তারপরও মানুষ ভোটাধিকার নিয়ে আপোষহীন। চেতনায় চরম দৃঢ়তা নিয়েই যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মানসিকতা নিয়ে ছুটছে ভোটাধিকারের কাক্সিক্ষত বাস্তবতায় নিজকে শরিক করতে নাড়ির পথে। মানুষের গন্তব্যমুখী যাত্রার প্রত্যাশা কোনো অশুভ শক্তি কেড়ে না নেয়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।
ভয় শঙ্কা উপেক্ষায় ময়মনসিংহের ভোটাররা
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মো: শামসুল আলম খান জানান, ভয়, শঙ্কা উপেক্ষা করেই নাড়ির টানে ময়মনসিংহে ফিরতে শুরু করেছেন তরুণ ভোটাররা। পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে এরই মধ্যে অনেকেই জেলার বিভিন্ন গ্রামে চলে এসেছেন। ফলে বাস, ট্রেন স্টেশনগুলোতে দেখা যাচ্ছে বাড়তি ভিড়। তবে বেশিরভাগ তরুণ ভোটারই জানিয়েছেন, ভোটের দিনে তারা কোনো বিশৃঙ্খলা চান না।
তাদের প্রত্যাশা, দেশের জন্য কাজ করবেন এমন প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন। বরাবরের মতো এবারো তারা কেন্দ্র দখলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও ‘না’ জানিয়েছেন।
ঢাকা থেকে ফুলবাড়িয়ায় আসা তরুণ ভোটার ইসমাইল হোসেন কথা বলেন ইনকিলাবের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক ভয়-শঙ্কা কাজ করছে ভোটারদের মাঝে। ভোটের দিন প্রত্যেকেই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন কি না? নাকি গতবারের মতো এবারো নিজের ভোটখানা অন্য কেউ দিয়ে দেয়। অনেক বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু আমি নিজের ভোট নিজেই দিতে চাই। সব ভয়-শঙ্কা দূরে ঠেলে আমি ঠিকই ভোটকেন্দ্রে যাব।
খুলনায় ভোটে নতুনদের আগ্রহের শেষ নেই
খুলনা ব্যুরো থেকে স্টাফ রিপোর্টার আবু হেনা মুক্তি জানান, খুলনায় হামলা-মামলা, শোডাউন-পাল্টাশোডাউন, ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে চলছে ভোট উৎসব। নতুন ভোটারদের আগ্রহের শেষ নেই। প্রার্থীরাও নতুন ভোটার বা তরুণ প্রজন্মকেই কাছে টানছে। খুলনার ৬টি আসনে এবার দেড় লক্ষাধিক নতুন ভোটার ফ্যাক্টর হবে ফলাফল নির্ধারণে এমনই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এছাড়া লম্বা ছুটিতে ভোট দিতে নানা কর্মস্থল থেকে মানুষ দলে দলে ফিরছে নিজ এলাকায়। সকলের ইচ্ছা নির্বিঘেœ ভোট প্রদান।
এদিকে প্রতিশ্রæতি দিয়ে ভোটারদের দুয়ারে হাজির হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। খুলনার সংসদীয় ৬টি আসনে লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের। তবে অতীতের তুলনায় এবার ভোটের আগাম হিসাব-নিকাশ কষছেন দুই শিবিরের প্রার্থীরাই। এদিকে, নতুন ভোটার ও পুরনো ভোটাররা কেমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাইছেন এ বিষয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় কয়েক জনের সাথে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাফিস বাতেন জয় বলেন, এবার জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবো। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে কোন রাজনৈতিক দল কী করেছে, তরুণদের কর্মসংস্থান ও সাধারণ মানুষ কিভাবে শান্তিতে থাকতে পারবেন সবকিছু বিবেচনায় এনে তারপর আমার ভোট দেবো।
ঢাকায় গার্মেন্টসে কর্মরত রিপন বলেন, ঢাকা থেকে ভোট দেয়ার জন্য বাড়ি এসেছি। এবার প্রথম ভোট দেবো। তবে যে উৎসাহ নিয়ে এসেছিলাম এখানে এসে তা দেখছি না। কিন্তু নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে যাব এবং যোগ্য লোককেই ভোট দেবো। খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না বেগম বলেন, খুলনা নগরীর উন্নয়নে যিনি আন্তরিক তাকেই সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই। হয়রানি ছাড়া মানুষ উপকৃত হবেÑ এমন মানুষকেই বেছে নিতে চাই। তবে নিরাপদে যেন ভোট দিতে পারি।
ভোট দিতে প্রবল আগ্রহী কক্সবাজারের ভোটাররা
কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শামসুল হক শারেক জানান, ৩০ ডিসেম্বর জোট বেঁধে ভোট দিয়ে কেন্দ্র পাহারা দেবে কক্সবাজারের ভোটাররা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে প্রবল আগ্রহী
কক্সবাজারের তরুণ ও নারী ভোটাররা। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠাতে চায় সংসদে। এ জন্য ভোট দিয়ে কেন্দ্রও পাহারা দিতে চায় তারা।
গত ১০ বছর যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি তারা ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে জোট বেঁধেছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। যত বাধাই আসুক তারা ভোট দিতে যাবে পাড়া-মহল্লায় এমন রবই শোনা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জানা গেছে জোট বেঁধে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে প্রস্তুতির কথাও।
কক্সবাজার শহরের নাঈম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নতুন ভোটার। গত কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। কেন্দ্র দখল করে তার মতো আরো হাজারো তরুণের ভোট দিয়ে দেয় কিছু লোক। এতে তারা প্রচÐভাবে ক্ষুব্ধ।
ওসমান গনি টেকনাফের একজন ভোটার। গত সংসদ নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারার জ্বালা এখনো তার বুকে। রামুর আবু প্রচÐ ক্ষোভের সাথে বলেন, গেল সংসদ নির্বাচনে তাদের অধিকার হরণ করে ভোটছাড়া এমপিরা জনগণকে কোনো ধরনের মূল্যায়ন করেনি। এবার তারা তা হতে দেবে না। জোট বেঁধে তারা ভোট দেবে আর ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে।
চকরিয়ার ব্যবসায়ী সরওয়ার ও মহেশখালীর নারী ভোটার আয়েশা বেগম ও সদরের এক গৃহিণী ছকিনা বেগম বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে বিকাশে এমপি বানিয়ে তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এবার তারা ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেশে গুম-খুনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান চায়।
শঙ্কার মাঝেও ভোট দিতে আগ্রহী ফেনীর ভোটাররা
ফেনী আঞ্চলিক অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার মো: ওমর ফারুক জানান, ফেনীর সর্বত্র চলছে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ফেনীর নির্বাচনী মাঠে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। এতকিছুর মাঝেও জেলার প্রবীণ এবং নবীন ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায় রয়েছে। তারপরও ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহী। প্রবীণদের ভোটদানের অভিজ্ঞতা থাকলেও নবীনরা এ ক্ষেত্রে প্রথম। ৩ লাখ নবীন ভোটার এবারই সর্বপ্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এ নাগরিক অধিকারটি প্রয়োগের ৫ বছরে একবার সুযোগ আসে।
ফেনীর নতুন ভোটার ও ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান, সোহেল, কলেজছাত্রী হাসিনা আক্তার, ফারহানা ইয়াসমিন ও নাদিয়া জানান, ভোটের ব্যাপারে তাদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। ভোট নাগরিক অধিকার। কলেজছাত্র সুমন, রনি হাসান এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন। তাদের কথায় সরকারই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্র নিরাপদ করবে। অন্যথায় এ ভোটের প্রতি তরুণদের কোনো আগ্রহ থাকবে না।
বিশেষ করে তরুণরা ভোটের ব্যাপারে উৎসাহী হলেও বাংলাদেশের রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি আর দুর্নীতির প্রতি তারা অতিষ্ঠ।
ভোটাররা ফিরতে শুরু করেছে নিজ এলাকায়
ল²ীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, জেলার মানুষ রাজনীতি সচেতন এবং শান্তিপ্রিয়। তারা ভোটের ময়দানে সংঘাত কিংবা রক্তপাত দেখতে চান না, তারা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে জেলার যেসব ভোটার দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন তারা ক্রমেই নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।
ল²ীপুরে ৪টি আসনে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থক নেতা-কর্মীরা। জেলার সবকয়টি আসনে জয়ের ধারা বজায় রাখতে মরিয়া মহাজোটের প্রার্থীরা। হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে প্রচার-প্রচারণায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।
ল²ীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে মহাজোট প্রার্থী শিল্পপতি ড. আনোয়ার হোসেন খান এবং ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। ল²ীপুর-২ রায়পুর আসনে মহাজোট প্রার্থী কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, বিএনপি দলীয় প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়া। ল²ীপুর-৩ সদর আসনে মাহজোট প্রার্থী এ কে এম শাহজাহান কামাল ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। ল²ীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসনে মহাজোটের প্রার্থী মেজর আবদুল মান্নান (অব.) ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর জেলার ৪টি আসেন ৪৪৬টি কেন্দ্র ২৫৪৮টি কক্ষে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জেলার রামগঞ্জ উপজেলার হোটাটিয়া গ্রামের দেওয়ান বাড়ির মোস্তফা দেওয়ান, একই এলাকার আবদুর রহিমসহ কয়েকজন জানান, ভোট দিতে তারা বাড়িতে এসেছেন। ৫ বছর পর জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সবাই ভোট দেবে আমরাও নিজেদের ভোট দিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।