পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোঃ হাফিজুর রহমান মিন্টু, নারায়ণগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মাফিয়াডনেরা পুনরায় তৎপর হয়ে উঠেছে, যেমনটি তৎপর হয়ে উঠেছিল বিগত বিএনপির মহাজোট সরকারের আমলে। মাদকের অবাধ ছড়াছড়িতে যে কেউ হাত বাড়ালেই পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও ঝুঁকে পড়েছে মাদক সেবনে, আতংকিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকমহল। এই অবস্থায় যে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিতে এগিয়ে যাবেন তারও উপায় নেই, কারণ স্বয়ং এই বাহিনীর কিছু সদস্যই সর্বনাশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
গত ২২ মার্চ মঙ্গলবার রাতে আড়াইহাজার উপজেলার মুকুন্দী গাজীপুরা এলাকায় আবুর বাড়িতে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার মডেল থানার এএসআই সালাউদ্দিনসহ তিন পুলিশ সদস্যকে গণপিটুনি দিয়ে আটকে রাখে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে গ্রামবাসীর উপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। বুধবার সকালে এসআই সালাউদ্দীন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২১, তারিখ : ২৩-০৩-২০১৬। গণপিটুনির এই মামলা দায়েরের ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামবাসী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেকে গ্রেফতারের ভয়ে দোকানপাট খুলছে না। ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার মুকুন্দী গাজীপুরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে এক ধরনের ভয় আতঙ্ক। যদিও থানার ওসি মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন কোন নিরীহ লোককে হয়রানি করা হবে না। তার এই কথায় স্থানীয়রা আশ্বস্ত হতে পারছে না। এ ব্যাপারে ওই এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ বশিরউল্লাহ জানান, ২৩ মার্চ বুধবার রাতে পুলিশের গাড়ি এলাকায় টহল দিলে গ্রামের নারী-পুরুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমাকে একের পর এক ফোন দিতে থাকে। মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারের নামে নিরীহ নারী ও পুরুষের উপর পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জের ঘটনায় এমনিতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারে পুলিশকে সবসময় এলাকাবাসী সহযোগিতা করে আসছে। এএসআই সালাউদ্দিনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এই ঘটনা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, আমরা এখন কার কাছে যাব।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকার লোকজন জানিয়েছেন বিষাক্ত মরণ নেশা মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ। থানা এলাকায় মাদকের প্রসার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পাড়ামহল্লায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য। দিন দিন বেড়েই চলেছে মাদকসেবীদের সংখ্যা। মাদকের অবাধ ছড়াছড়িতে যে কেউ হাত বাড়ালেই পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাও ঝুঁকে পড়েছে মাদক সেবনে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রকাশ্যে দাপটের সাথে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় কমপক্ষে দু’শতাধিক নারী-পুরুষ গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, ইয়াবসহ অন্যসব মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। থানার এমন কোন এলাকা বাদ নেই, যে এলাকাতে মাদক বিক্রি হচ্ছে না। মাদক বিক্রেতাদের দাপটে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। কারণ, মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনেরও রয়েছে সখ্যতা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা পাচ্ছে নিয়মিত মাসোহারা। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, মাদকের আগ্রাসনের কারণেই থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণসহ অপরাধমূলক কর্মকা- ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। মাদক বিক্রেতাদের শেল্টারদাতা সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্যাতন হুমকি-ধামকি মাদক বিক্রেতাদের সাজানো মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে পুলিশী হয়রানিসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হয় প্রতিবাদকারীদের। যে কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। পুলিশের সাথে মাদক বিক্রেতাদের গোপন আঁতাত থাকায় পুলিশ তদন্ত ছাড়াই প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রেতাদের সাজানো মিথ্যা মামলা রুজু করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে দেয়। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। মাদক বিক্রেতাদের দাপট এতই বেড়ে গেছে যে, তা দেখে সমাজের গণ্যমান্য ও সমাজ প্রতিনিধিরা লজ্জা পাচ্ছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী বনে গেছে সমাজের মাতবর বা কোন না কোন রাজনৈতিক দলের নেতা।
বন্দর উপজেলার লোকজন জানিয়েছে, বন্দরে প্রায় শতাধিক স্পটে আবারও মাদক ব্যবসা জমে উঠেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে, বন্দর থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান শিথিল থাকায় বন্দর থানার আলীনগর, মদনগঞ্জ, ফরাজিকান্দা, দড়ি সোনাকান্দা, মাহামুদনগর, বেপারীপাড়া, সোনাকান্দা পানির ট্যাংকি, এনায়েত নগর, চৌধুরীপাড়া, রূপলী আবাসিক এলাকা, সালেহনগর, শাহী মসজিদ, রাজবাড়ী, বাবুপাড়া, বাড়ীপাড়া, বন্দর কোটপাড়া, লেজার্রাস, চিতাশাল, স্বল্পের চক, ইস্পাহানী, একরামপুর, কদম রসুল কলেজ মাঠ, সুইপার কলোনী, নবীগঞ্জ কবিলার মোড়, নূরবাগ, রসুলবাগ, ইসলামবাগ, দাশেরগাঁও, কুশিয়ার, কাইতাখালি, বক্তারকান্দী, দেউলী, আমিরাবাদ, চৌরাপাড়া, লক্ষণ খোলা, ধামগড়, নয়ামাটি, ভাংতি, মদনপুর, চাঁনপুর, জাঙ্গাল, লাঙ্গলবন্দ, বিবিজোড়াসহ তার আশপাশের এলাকাগুলোতে আশংকাজনকভাবে মাদক ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। এইসব মাদক স্পটগুলোতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসচ্ছে। এ কারণে উল্লেখিত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটচ্ছে। সে সাথে প্রতিটি এলাকায় চুরি-ছিনতাইসহ বহু অপরাধমূলক কর্মকা- দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাগণ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক স্পট রয়েছে যেখানে অবাদে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের হাট বসে। নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজিগঞ্জ, তল্লা, ব্যাংক কলোনী, মাছুয়াপাড়া, আমলাপাড়া, নন্দীপাড়া, জামতলা, ধোপাপট্টি, নৌ-টার্মিনালের ৫ নং ঘাট, পালপাড়া, জিমখানা, নতুন জিমখানা, বৌ-বাজার, বাবুরাইল, নয়াপাড়া, জল্লারপাড়, সুতার পাড়া, বেপারীপাড়া, নিতাইগঞ্জ, শহীদনগর, শহরের শহীদ মিনার, বালুর মাঠ, নয়ামাটি, ফতুল্লার কুতুবাইল, রেল লাইন, কাঠেরপুল, পৌষার পুকুর, দেওভোগ, পশ্চিম দেওভোগ, শিবু মার্কেট, নতুন স্টেডিয়াম, বাড়ৌভোগ, মাজদাইর, ইজদাইর, সস্তাপুর, জেলা পুলিশ লাইন, পঞ্চবটি এলাকার বিসিক শিল্পাঞ্চল, ভোলাইল, রামারবাগ এ সমস্ত এলাকায় পুলিশ ও স্থানীয় দলীয় ক্যাডারদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশের কিছুসংখ্যক সদস্যের ভূমিকায় বোঝা যাচ্ছে যে, সুযোগ যদি আসে একবা যেখানে যা পাও লুটেপুটে খাও।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাগণ বলছেন, যারা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত তারা যে একটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করছে সেটা সুস্পষ্ট। তবে তারা সেটা খুব সহজে করতে পারছে না। তাদের চেষ্টা সবসময় সফল হচ্ছে না। প্রায়ই তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। আর আমরাও চেষ্টা করছি নারায়ণগঞ্জে প্রকাশ্যে যেন মাদক বিক্রি না হয়। এছাড়া ইয়াবা পাচারের নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেফতারেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রায়ই নানা কৌশলে ইয়াবা বিক্রি করছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।