পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের পরিস্থিতি ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীপক্ষের প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের মাঠেই নামতে দিচ্ছে না। নির্যাতন, নীপিড়ন করে পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। এদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে পুলিশ। সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নির্যাতন ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রতিকারের আশায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নালিশ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। উপরন্তু প্রতিপক্ষের মতো আচরণ করছে ইসিও। নির্বাচন উপলক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও কমিশন তাদের মাঠে না নামিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পে বসিয়ে রেখে ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীটির সুনাম নষ্ট করছে। এসব কারণে অংশগ্রহণমূলক এই নির্বাচনটি এরইমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে এসব বিষয় তুলে ধরে ঐক্যফ্রন্ট জরুরিভিত্তিতে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর দাবি জানায়। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন পুলিশ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে সিইসির সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি একটি বাহিনী সম্পর্কে সরাসরি নেতিবাচক মন্তব্য না করতে বলার জেরে বৈঠকেই বাহাস শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী আলোচনার পর সিইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বেও অভিযোগ তুলে বৈঠক বর্জন করে বেরিয়ে আসেন ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, ডা. জাফরুল্লাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ ফ্রন্টের নেতারা। ক্ষুব্ধ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভবন থেকে নেমে দ্রুত নির্বাচন কমিশন থেকে চলে যান। পরে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অপর নেতারা।
বৈঠকে আগামী ২৭ ডিসেম্বরের সমাবেশ সম্পর্কে আলোচনা হওয়ার কথা ছিলো। নির্বাচনি প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং যেসব নেতাকর্মী আটক হয়েছেন সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে তালিকা দেয়া এবং ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতেই বৈঠকটি চেয়েছিলেন নেতারা।
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সিইসি আমাদের কোনো কথাই শোনেন নি। আমরা সারাদেশে পুলিশের হাতে ধরপাকড়, হয়রানির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি তা শোনেননি। তিনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন। তিনি জানান, ড. কামাল হোসেন ‘পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণ করছে’ এমন মন্তব্য করলে তার প্রতিবাদ করেন সিইসি। তিনি ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারের একটি বাহিনীকে নিয়ে তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই পরে সবাই বৈঠক থেকে বের হয়ে আসেন।
ইসি ও সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে মির্জা আব্বাস, মঈন খান আফরোজা আব্বাস, মওদুদ আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপি নেতা কর্মীদের উপর পুলিশের হামলার কথা বললেই সিইসি ক্ষেপে যান। তিনি জানান, বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার, আক্রমণ, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে। সারাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সরকার ও কমিশন মিলে নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ৩ দিন আগে গ্রেফতার, অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ না হলে ভোটাররা কিভাবে ভোট দেবে এমন প্রশ্ন তোলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এখন জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কি করবেন?
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, সেনাবাহিনী ইসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের ক্যাম্পে রেখে পুলিশ দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর নৃশংসতা চালাচ্ছে। এতে সেনাবাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ ভয়ংকর খারাপ। এই অবস্থায় নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানোর দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট। গত রোববার মাঠে নামে সেনাবাহিনী। এরপরেও কেনো নির্বাচনের মাঠের পরিবেশ নিয়ে এতো অভিযোগ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। তাদের ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে। ক্যাম্পে রেখে, নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করলে, সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট হবে।
যে কারণে ইসির বৈঠক থেকে ঐক্যফ্রন্টের ওয়াকআউট
নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার আচরণ সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ করেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তারা জানিয়েছেন, সা¤প্রতিক হামলা ও সহিংসতার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সিইসি বক্তব্য শুরু করবেন এমনটি আশা করেছিলেন। কিন্তু সিইসি শুরুতে তিনি এসব বিষয় এড়িয়ে যান। উপরন্তু ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন যখন প্রার্থীদের ওপর হামলা ও পুলিশের একতরফা আচরণ বন্ধে ইসির হস্তক্ষেপ দাবি করেন তখ উল্টো পুলিশের সাফাই গেয়ে পক্ষপাতমূলক বক্তব্য দেন সিইসি। এতে ক্ষুব্ধ হন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
বৈঠক বর্জনের বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সিইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে ‘ লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী’ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পুলিশ অনেকটা ‘লাঠিয়াল’ বাহিনীর মতো আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা ২টার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের লোকজন নিয়ম-কানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান সিইসি। এসময় তিনি পুলিশের পক্ষেই সাফাই গাইতে থাকেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সিইসির উদ্দেশ্যে বলেন, আমার বয়স হয়েছে। তিন বার আমার উপর আক্রমণ হয়েছে। আমার কর্মীরা মানব ঢাল হয়ে আমাকে রক্ষা করেছে। আমি মারা গেলে কিছু না, কিন্তু আমার কর্মীদেরতো রক্ষা করতে হবে। আপনি পারলে ব্যবস্থা নেন। না হলে বলে দেন আমি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই।
ঐক্যফ্রন্টের অপর নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, বৈঠককালে নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তিনি বলেন, পুলিশ লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এই কথার প্রেক্ষিতে সিইসি ক্ষেপে যান। সিইসি পুলিশের পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন, এটা হতে পারে না। সিইসির আচরণ ভদ্রোচিত ছিলনা। আমরা তার পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে সভা বর্জন করে চলে আসছি। সুষ্ঠু নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভূমিকার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যাতায়াতে বাধা দেয়া থেকে প্রমাণ মিলে কী নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।