Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

থেমে নেই হামলা ধরপাকড়

চট্টগ্রামে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ভোটাররা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে থেমে নেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা আর ধরপাকড়। এ অঞ্চলের ১৯টি সংসদীয় আসনের বেশ ক’টিতে প্রতিদিনই ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ধরপাকড়। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে এমন প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ ভোটারেরা সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর চট্টগ্রামে কিছুটা হলেও উৎসবের পরিবেশে ভোটের প্রচার শুরু হয়। তবে কয়েকটি এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তাতেও ভাটা পড়ে। সরকারি দলের প্রার্থীরা দলবল নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। বেশিরভাগ আসনে হামলার শিকার হন ধানের শীষের প্রার্থীরা। হামলার মধ্যেও নানা কৌশলে প্রচার অব্যাহত রাখেন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। তবে এরমধ্যেই ধরপাকড় ও পুলিশি অভিযান জোরদার হয়।
সরকারি দলের হামলার পর পুলিশ বাসাবাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। দ্বিমুখী এ আক্রমণে দিশেহারা বিএনপির নেতারা। চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেছেন, গত দুইদিন তিনি পূর্ব নির্ধারিত এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করতে পারছেন না। পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গণসংযোগে গিয়ে দেখেন পূর্ব নির্ধারিত স্থানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে সরকারি দলের কর্মীরা। এরপর পুলিশ গিয়ে নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল নগরীর রামপুরায়ও এমন ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করার পর পুলিশ গিয়ে বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তিন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এক নেতার বাসায় ভাঙচুর করে পুলিশ। তবে হালিশহর থানার ওসি ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনেও বিএনপির সমর্থকদের উপর হামলা ও গ্রেফতারের অভিযোগ করা হয়েছে। ওই আসনের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, পুলিশ আর সরকারি দলের কর্মীদের বাধার মুখে তার কর্মীরা মাঠেই নামতে পারছে না। গতকাল নগরীর কাট্টলীতে গণসংযোগের শেষ পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ হামলায় ৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মীরা এ সময় ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিনই তার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গতকাল বোয়ালখালীতে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিএনপি নেতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সীতাকুন্ড আসনে ধানের শীষ ও নৌকার প্রার্থীরা পরস্পরের উপর হামলার অভিযোগ করেছে। নৌকার প্রার্থী দিদারুল আলমের অভিযোগ ভাটিয়ারীতে নৌকার প্রচারে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে। এ হামলার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করলেও ধানের শীষের প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের হামলায় তার ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা একে অপরের ওপর হামলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে কেউ অভিযোগ দিচ্ছেন না। এখনও পর্যন্ত মহানগরী এবং জেলায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কাউকে সাজা দেয়া হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোন অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেয়া যাবে। এতে তাৎক্ষণিক ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তারা আক্রান্ত হয়েও প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল মিলছে না।
এদিকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনা টহল চলাকালে জেলার কোথাও অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় ভোটকেন্দ্রের তালিকা নিয়ে সেনা সদস্যদের কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেখা যায়। ভোটের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন।
নির্বাচনে ভয়ভীতিহীন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথা বলা হলেও তাতে কোন সাফল্য আসেনি। পুলিশের বিশেষ অভিযানের মধ্যেই প্রতিপক্ষের উপর গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটছে। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার সময়সীমা শেষ হলেও বেশিরভাগ অস্ত্র জমা দেয়া হয়নি। চট্টগ্রামের ডিসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। বাঁশখালীতে প্রতিদ্ব›দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে এক প্রার্থীর দেহরক্ষীর গুলিতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও প্রচারে হামলার ঘটনা অব্যাহত থাকায় এখনও নির্বাচনে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে না।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেনা অভিযান জোরদার হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্র যেতে উন্মুখ হয়ে আছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে ভোটকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ