Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাটোরে বিএনপির ওপর হামলা চলছেই

বিশেষ সংবাদদাতা, নাটোর থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কাকে বলে এর উত্তর নাটোরে এলে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাবে। যেমনটি পাচ্ছেন নাটোর সদর আসেন বিএনপির সাবেক কারাবন্দী মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। প্রচার প্রচারণায় নেমে বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন। তার সাথে নামা প্রচার নেতাকর্মীরা আহত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তিনি যে এলাকায় গণসংযোগে যাচ্ছেন সেখানে হামলা হচ্ছে। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে। উদাহরণ টেনে বলেন রোববার সদর উপজেলায় কাফুরিয়া এলাকায় তার গণসংযোগ ঠেকাতে সমাবেশ স্থলের আশেপাশে বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিমুলের লোকজন গণহামলা চালায়। সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। তবে পুলিশ বলছে তারা আসামী ধরার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। লুটপাটের খবর জানা নেই। হামলাকারীরা বিএনপির লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে। ধানের শীষের কোন সভা সমাবেশ হলে তাদের দেখে নেবার হুমকি দেয়া হয়।
সোমবার বিএনপি প্রার্থী সাবিনা নাটোর শহরের তেবাড়িয়ায় গণসংযোগ করতে গেলে ফের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজনের হামলার শিকার হন। বিএনপি প্রার্থী সাবিনা অভিযোগ করে বলেন আমি তেবাড়িয়া এলাকায় যাবার আগে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার বিজিবি ক্যাম্প ও সেনা ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসারদের নিরাপত্তার বিষয়টা অবহিত করে বিকেলে তেবাড়িয়া এলাকায় যাই। হুগোল বাড়িয়া ব্রীজ থেকে তেবাড়িয়া হাটের দিকে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা লাঠিসোঠা নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমি পাশের একটা ঔষধের দোকানে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাচাই। হামলায় পাঁচজন আহত হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে গণসংযোগে বের হবার পরও তার উপর হামলা দু:খজনক। আমার প্রচার মাইক পর্যন্ত বের হতে দিচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে নিজ বাড়ির ছাদে মাইক লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি।
সেনা মোতায়েনের পর সোমবার সাহস করে নলডাঙ্গা বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের ভেতরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী বিষয় নিয়ে বৈঠক করছিলেন। এসময় যুবলীগের একটি দল এসে সভা না করার নির্দেশ ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। এক পর্যায়ে শাটার টেনে বাইরে থেকে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রেখে চলে যায়। উপজেলা চেয়ারম্যান সাখাওয়াত মোবাইল করো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে জানালে আধা ঘন্টা পর তারা বাইরে থেকে তালা খুলে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর পর হয়তো তাদের নির্দেশে দুর্র্র্বৃত্তরা তালা খুলে দিয়েছে।
উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন আমরা তালা লাগাইনি। তবে তাদের সভার খবর পেয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলাম।
এদিকে নাটোর সদরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম এমপির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত সোমবার নাটোরের ছাতনী গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার দেয়া ভাষণে বলেন যারা নৌকায় ভোট দেবে শুধু তারা কেন্দ্রে যাবে। ধানের শীষের নেতাকর্মীদের এখনো সময় আছে, নৌকার পক্ষে কাজ করেন। আপনারা যদি ভালো চান, সুস্থ এবং ভালোভাবে এলাকায় বাস করতে চান, তাহলে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। যদি অন্য কোনো পথ অবলম্বন করেন, ৩০ তারিখের পরে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধানের শীষের প্রার্থী বা নেতাকর্মী ও সমর্থক কেউ কেন্দ্রে যাবেন না। যারা নৌকায় ভোট দেবেন, তারা কেন্দ্রে যাবেন। যারা দেবেন না, তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না। আমি শফিকুল ইসলাম শিমুল কি জিনিষ আপনারদের দুলু সাহেব ভাল করেই জানে। পাঁচ বছর সে নাটোরের মাটিতে পা রাখতে পারেনি।
রোববার রাতে ওই বক্তব্যের ভিডিওটি স্থানীয় সাংবাদিকদের দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই আসনের বিএনপির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ভিডিও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে এমপি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, শফিকুল ইসলাম প্রতিদিন তাঁর নির্বাচনী সভায় তাকে ও ভোটারদের প্রকাশ্যে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। নিরাপত্তার কারণে সব বক্তব্যের ভিডিও ও অডিও ধারণ করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। এ কারণেই গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। তার প্রশ্ন, শুধু আওয়ামী লীগের লোকেরা ভোট দিতে গেলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কী প্রয়োজন?
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়ার বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নাটোর থানাকে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এমপি শফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তার নির্বাচনী প্রচারণার সহযোগী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশফাকুল ইসলাম জানান, এমপি প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।
বিএনপির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন আমাকে কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছেনা।
রিটার্নিং অফিসার, সেনা অফিসার, পুলিশ, বিজিবি সবার কাছে গিয়েছি। বলেছি শেষ আর চারটা দিন ভোটারদের কাছে যেতে দিন। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার শুধু চুপ করে শুনছেন। তার নীরবতা অসহায়ত্বের প্রমাণ। অন্যদিকে সেনা সদস্যরা বলছেন রিটার্নিং অফিসার চাইলেই আমরা যে কোন এ্যাকশনে যেতে পারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ