পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চলছে নজীরবিহীন প্রচারণা। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশে অসখ্য দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে মাঠে দৃশ্যমান এক দলীয় প্রচারণা। ভোটে অংশ নিয়েছে দু’টি জায়ান্ট শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগের নৌকার জমজমাট প্রচারণা দেখা গেলেও ভোটের তিন দিন আগেও ধানের শীষের প্রচারণা খুবই সীমিত। বিএনপির এই পরিণতির জন্য দায় কার? ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে কার ভুলে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলটির এই পরিণতি? ক্ষমতাসীন দলকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য যেন প্রশাসন-পুলিশ-কিছু বিচারক একাট্ট; এটা সবার জানাই ছিল। এই দৃশ্য দেশী-বিদেশী তথা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এড়ায়নি। তারপরও কেন চাতক পাখির মতো ক্ষমতাসীনদের অনুকম্পার ভরসায় বসে রইলো বিএনপির নেতৃত্ব? শুধুই কী ক্ষমতাসীনদের আবারও যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকার বাসনা এর জন্য দায়ী? অন্য কারো দায় নেই? ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতি চর্চার দেশে কোন দল ক্ষমতায় যেতে না চায়? ২০০৬ সালেও কি বিএনপি ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেনি?
ভোটের রাজনীতি হলো খেলার মাঠ দখলের লড়াইয়ের মতো। নির্বাচনে মাঠ যার ভোট তার। জনগণকে সম্পৃক্ত করার ফ্লাটফর্মই হলো মাঠ। ’৫৪, ’৭০, ৯০, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সে চিত্রই দেখা গেছে। জনতার শ্রোতে ভেসে গেছে স্বৈরশাসক। ফুটবল খেলায় দুই পক্ষ খেলে। গোল দিয়ে জিততে হলে মাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখা চাই-ই। মাঠ দখলে রাখলে সাফল্য আসবেই। প্রতিপক্ষের বাধা-বিপত্তির মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ থাকলে এক সময় গোল হবেই। রাজনীতি এবং নির্বাচনেও ওই একই অবস্থা।
মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ড. সা’দাত হুসাইন প্রায় একটি কথা বলেন, ‘সরকারের হাত অনেক লম্বা। তারাই একমাত্র স্বাধীন যা খুশি তা করতে পারেন।’ অপ্রিয় সত্য কথা। জনগণের ভোটে নয়; যে ভাবেই হোক ক্ষমতাসীন দল আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। সে জন্য কলে-কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রশাসন সাজিয়েছে। মাঠ প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, কিছু বিচারক, নির্বাচন কমিশন সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিবর্তন কিছু দেখা গেল না। জনগণেকে মাঠে না নামানোর চেষ্টা করে বিএনপি থেকে এতোদিন প্রচার করা হলো সেনাবাহিনী নামলেই মাঠ ঠিক হয়ে যাবে। হলো কি? বাস্তবতা কি বলে? ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে যদি জনতাকে মাঠে নামানো হতো তাহলে রাজনীতির দৃশ্য হতো অন্যরকম। ’৬৬ সালে আওয়ামী লীগের অফিসে বাতি জ্বালানো মতো লোক ছিল না। একমাত্র জেলের বাইরে ছিলেন আমেনা বেগম। কিন্তু মাঠ মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় ’৭০ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ঠেকানো যায়নি। এখন যা অবস্থা তাতে পুলিশ, ডিসি-এসপি, আদালতের কিছু দলবাজ বিচারক, নির্বাচন কমিশন মিলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় না বসালে তাদের কি ক্ষমতাসীনরা ছেড়ে কথা বলবে? ইতিহাস বলে জনতাকে নামাতে পারলে সবকিছু ভেসে যেত। জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি মাঠের রাজনীতি করলো না কেন? নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। সে জন্য বিএনপির নিজস্বতা থাকবে না? সারাদেশে যে দলের লাখ লাখ কর্মী বাহিনী, কোটি সমর্থক সে দলকে ভোটের মাঠে অন্ধকারে হাতরে বেড়াতে হবে? বিএনপির সিনিয়র নেতারা কি এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন?
রাজনীতির মাঠে ‘জোর যার জলা তার’ প্রবাদের মতোই মাঠের দখল যার নির্বাচনের ফলাফল তার। ক্যালে-ারের পাতা উল্টালে আমরা সে চিত্রই দেখি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আগে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। সেই ফ্রন্ট ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে ভোটে ধরাসায়ী করেছিল শুধু মাঠের রাজনীতির জন্যই। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারী লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘৬ দফা দাবি’ পেশ করলেন। ৬ দফার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আমেনা বেগম ও মিজানুর রহমান চৌধুরী ধর্মঘটের ডাক দেন। অতপর মিজানুর রহমান চৌধুরীও গ্রেফতার হন। ওই সময় আমেনা বেগম ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কেনো নেতা কারগারের বাইরে ছিলেন না। দলটির অফিসে বাতি জ্বালানোর মতো লোকও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আন্দোলনের মাঠ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ’৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান ও ৭০ সালের নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানী স্বৈরশাসক। ওই সময় আজকের মতো তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও যোগাযোগ ছিল না। তারপরও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। ’৭০ এর নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং অসহযোগ আন্দোলন একই সঙ্গে চলায় নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ভোটবিপ্লব ঘটায়।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের চিত্রের দিকে তাকালে কি দেখি? এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আগে দুই নেত্রী তথা শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার আবির্ভাব ঘটে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে। শুরু হয় যুগপথ আন্দোলন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দল, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল। সে আন্দোলনের সঙ্গে যুগপথ কর্মসূচি পালন করে আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে জামায়াত। তীব্র আন্দোলনের মুখে এরশাদ উপজেলা নির্বাচন পিছিয়ে দেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে ঘোষণা দেয়া হয় এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যারা যাবেন তারা বেঈমান হবেন। বেগম জিয়া আপোষহীন ঘোষণা দেয় ‘স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচন নয়’। কিন্তু ১৫ দলীয় জোটে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। ১৫ দলীয় জোট থেকে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ৭ দল বের হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের নের্তৃত্বাধীন ৮ দল ও জামায়াত ’৮৬ তৃতীয় জাতীয় সংসদ সালের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। বেগম জিয়ার আন্দোলনের মুখেই সে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং ’৮৮ সালের পুরনায় পাতানো নির্বাচন করা হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠ ছেড়ে যায়নি। সে সময়ও বহু নেতা বছরের পর বছর গ্রেফতারের ভয়ে ঘরে ঘুমাতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠের আন্দোলন ছিল বলেই ছাত্ররা গঠন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পরবর্তীতে ২৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’। রাজপথে নেতৃত্বের আপোষহীন দৃঢ়তায় ’৯০ এর স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। অথচ এরশাদ বিরোধী ওই আন্দোলন রাজধানী ঢাকার বাইরে তেমন ছিল না।
’৯১ সালের নির্বাচনে প্রচারণা ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মাঠের আপোষহীন নেতৃত্বের সাফল্য আসে বিএনপির ঘরে। পঞ্চম জাতীয় সংসদে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর জামায়াত হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একটি বিল সংসদে উত্থাপন করে। কিন্তু সেটা তেমন গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু ’৯৪ সালের মাগুরা-২ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পর ওই আসনে উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ, ৫ দলীয় বাম জোট ও জামায়াত যুগপথ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ফিলিস্তিনের হেবরন মসজিদে ব্যপক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার ‘আওয়ামী লীগ হঠাৎ মুসলমান হয়েছে’ বেফাঁস কথা বলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে মাঠে ঠেলে দেয়। আন্দোলনের মধ্যেই ’৯৬ সালে বিএনপি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে। কিন্তু মাঠ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। আন্দোলনের মুখেই ৬ষ্ট জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেই দেড় মাসের মাথায় সংসদ ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হয় বিএনপি। আন্দোলনে মাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখায় ’৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাফল্য পায়।
ওই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনের চিত্র দেখলে কি দেখি? ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমবঙ্গের বাম জোট সরকারের মতোই প্রশাসনের স্তরে স্তরে নিজেদের লোকজন বসিয়ে দেয়। তারপরও বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ’৯৮ সালে ৭ দলীয় জোট গঠন করে মাটের আন্দোলন শুরু হয়। সেই ৭ দলীয় জোট ধীরে ধীরে মাঠের আন্দোলন গরম করে এবং এক পর্যায়ে ৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। সে আন্দোলনের মধ্যেই ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিপুল সাফল্য পায়। বর্তমানে প্রশাসনযন্ত্র আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। তারপরও দলীয়করণ, আত্মীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন এবং আইন শৃংখলা বাহিনীকে আওয়ামী লীগ কুক্ষিগত করেছে। মাঠের জুলুম-নির্যাতনে এখন পুলিশ আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এর মধ্যেও যারা সক্রিয় তারা ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকরের মধ্যেই ফরিদপুরে নির্বাচনী মাঠ দখলে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন নিক্সন চৌধুরী। তিনি নির্বাচনী এলাকায় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন। প্রশাসন সেখানে জনতার কাছে হয়ে পড়েছে অসহায়।
রাজনীতি হলো ফুটবল খেলার মতো। মাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখতেই হবে। মাঠ ছেড়ে দিলে আপনি ‘নেই’ হয়ে যাবেন। ফুটবল খেলায় যারা সুপার স্টার প্রতিপক্ষ তাদের আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেই। মাঠে মেসি-রোনাল্ডোদের জন্য প্রতিপক্ষ দল দুই/তিনজন খেলোয়াড়কে ব্যতিব্যস্ত রাখেন। তাদের এই কৌশলের কারণে কী মেসি-রোনাল্ডোরা খেলা ছেড়ে দেন? তারা আরো তীব্র বেগে গোল দেয়ার জন্য মাঠে নিজেদের হাজির করেন। পাকিস্তান ও ভারতের সম্প্রতি রাজনীতির দিকে তাকালে কি দেখি? কয়েক বছরে পাকিস্তানে অনেক জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। তারপরও রাজনৈতিক নেতারা মাঠ ছাড়েননি। তারা জনগণকে রাস্তায় নামিয়েছেন, মানুষের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেছেন। সে জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে নতুন সরকার গঠনে সক্ষম হন। আমরাও মাঝে মাঝে পাকিস্তানকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বলে গালি দিয়ে পুলকিত হই। কিন্তু সে পাকিস্তানে বিচার বিভাগ প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে দুর্নীতির দায়ে তাকে শাস্তি দিয়েছে। ক্রিকেট খেলোয়াড় ইমরান খান নতুন দল গঠনের ‘মাঠের রাজনীতি’তে সক্রিয় থাকায় নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতে গান্ধি ফ্যমিলির কংগ্রেসে ভরাডুবি ঘটেছে। লোকসভায় বিরোধী দল গঠনের মতো আসন দলটি পায়নি। আর কট্টরহিন্দুত্ববাদী আরএসএসের ভাবশিষ্য এবং গুজরাটের কসাই খ্যাত নরেন্দ্র দমোদর মোদী ক্ষমতায় বসে গোটা ভারতকে ‘রাম রাজত্ব’ করার ঘোষণা দেন। শুধু সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিতারণ নয়, ভারতের মুক্তমনা দল ও মানুষকে ‘ভারত ছাড়া’ করার স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেন। কিন্তু রাহুল গান্ধি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সারাদেশ ঘুরে মানুষেকে রাস্তায় নামিয়েছেন মোদীর অপশাসনের বিরুদ্ধে। জনগণকে সম্পৃক্ত করায় তিনি কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হন। সম্প্রতি কয়েকটি রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস যে সাফল্য দেখিয়েছে তার মূলে রয়েছে জনতাকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা। ভারতের আসন্ন নির্বাচনে মোদীর বিজেপি কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের চিত্র কি দেখি? ২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচন এবং ২০১৫ সালের লাগাতার অবরোধ-আন্দোলনের পর বিএনপি যেন গর্তে ঢুকে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে নজীরবিহীন জুলুম নির্যাতন করেছে বিএনপির নেতাদের ওপর। মামলার পাহাড়ে তাদের বসবাস। সরকার বিএনপিকে ‘সাইজ’ করতে প্রশাসন এবং আদালতকে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ্যের এই তা-বে ভীত হয়ে ঘরে বসে থাকলে কি সাফল্য আসে? বিগত ৪ বছরের বিএনপির রাজনীতির দিকে তাকালে দলটির নজীরবিহীন ব্যর্থতা চোখে পড়ে। সংবাদ সম্মেলন, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, নালিশ, বিদেশীদের অভিযোগ করা যেন দলটির সংগঠনিক কাজ হয়ে গেছে। পাঁচতারা হোটেল আর ইসি রুমে বসে রাজনীতি করে কি সবাই ক্ষমতায় যেতে পারেন? আন্দোলন এবং জনগণকে মাঠে নামানোর একের পর এক ইস্যু এসেছে; কিন্তু কোনো ইস্যুই কাজে লাগাতে পারেনি বা চেষ্টা করেনি বিএনপি। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিদেশীদের অনাস্থার মধ্যেই শেখ হাসিনা দৃঢ় নেতৃত্বে ৫ বছর সরকার চালাচ্ছেন। একের পর এক সংকট মোকাবিলা করেছেন। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ শ্লোগান তুলেছেন। কিন্তু এ সময় বিএনপি কি করছে? শুধু বিদেশীদের নালিশ জানানো ছাড়া তেমন কিছু করতে পেরেছে কি? দক্ষনেত্রী শেখ হাসিনা বার বার বিএনপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছেন, ‘বিদেশীরা কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না’। প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্ক বার্তা বিএনপির নীতি নির্ধারকরা কর্ণপাত করেননি। ভাবনা যেন বিদেশীরা তাদের ক্ষমতায় বাসিয়ে দেবে। সন্তান না কাঁদলে মা দুধ দেয় না। এই বাস্তবতাও বোঝার অবস্থা বিএনপির নেতৃত্বের হলো না? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে আওয়ামী লীগ কার্যত কোণঠাসা। দুর্নীতি-লুটপাট-ব্যাংক লুট-রাষ্ট্রীয় সম্পদ তসরুফের কারণে সরকার বিব্রত। দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাদের প্রচুর অর্থ-সম্পদ হওয়ায় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে বিপুল সংখ্যক নেতা একাদশ নির্বাচনে প্রার্থীতার জন্য আবেদন করেন। মনোনয়ন কেনা বেচা নিয়ে বিপদে থাকার কথা আওয়ামী লীগের। উল্টো বিএনপিকে শুনতে হচ্ছে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা। আওয়ামী লীগ মিডিয়ায় প্রচার করছে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করায় নির্বাচনের মাঠে দলটির বেহাল অবস্থায় হয়ে গেছে। এ দায় কার? সত্যিই যদি মনোনয়ন বাণিজ্য হয়ে থাকে তা দুঃখজনক। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপি কার্যত হয়ে গেছে বামপন্থী দল। জিয়াউর রহমান দলটিতে সব মত ও পথের ব্যাক্তির ‘সমাহার’ ঘটালেও আদর্শে ইসলামী ধারা থেকে সরে যাননি। একই অবস্থায় রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়াও। কিন্তু এখন দলটি যেন ক্রমান্বয়ে ডান থেকে বায়ে চলে গেছে। বিভিন্ন সময় দিল্লীকে খুশি করার কৌশল নেয়ায় অনেক কিছুতেই নীরব থাকে। আগে জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কিছু হলেই দলটি গর্জে ওঠতো। এখন সেটা দেখা যায় না। পৌষ মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে দেশের নদীগুলোতে পানি নেই। তিস্তা চুক্তি মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বহু বছর ধরে। কিন্তু দলটির ‘রা’ নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে দিল্লির সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মানুষ বোকা নয়। ১০ বছর জুলুম নির্যাতন হামলা মামলায় দলের নেতাকর্মীরা দিশেহারা। আলেম-ওলামারা চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় দিনযাপন করছেন। অথচ তাদের সংগঠিত করে মাঠ দখলের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। মানুষ কি শুধু বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশী নির্যাতনের মধ্যে জীবনের ঝুকি নিয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে?
পুলিশ-প্রশাসন-নি¤œ আদালত এবং নির্বাচন কমিশন সবকিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। উলঙ্গভাবে সেগুলোকে সরকার ব্যবহারও করছে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই তো বিএনপির ভোটে যাওয়া উচিত ছিল। প্রয়োজন ছিল পূর্ব প্রস্তুতিরও। ভোটের আগেই এতোগুলো আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নেই। ধানের শীষের ঘাটি বগুড়া ও নোয়াখালীতে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছে না। বগুড়ায় একাধিক আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নেই। এগুলো নিয়ে কি আগে চিন্তা করে প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল না? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের নামে কি করতে পারে সেটা কি বিগত ১০ বছর তাদের কর্মকা- দেখার পরও বুঝতে বাকি ছিল? এতোগুলো আসনে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা তেমন কঠিন ছিল কি? এখন ইসিতে অভিযোগ দিয়েই কি দায়িত্ব শেষ? সিইসি যেখানে নিজের ভাগনেকে নৌকার প্রার্থী করে ভোটের মাঠে নামিয়েছেন; সেই সিইসির অধীনে নির্বাচন মাঠের শক্তি প্রদর্শন ছাড়া নিরপেক্ষ আশা করা কি বাতুলতা নয়?
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং আ স ম রব, আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসা সফল্যই বৈকি। এতে কিছুটা হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিতের ভীতির সৃষ্টি হয়। দেশ-বিদেশে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। কিন্তু ভোটের তিনদিন আগেও বিএনপির লেজেগোবরে অবস্থায় আওয়ামী লীগ যেন জড়তা কেটে উঠেছে। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে দলটি। প্রশাসনকে কব্জা করে রেখে আওয়ামী লীগ চায় যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে। আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবর্মূতি কোন পর্যায়ে গেল সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ বিএনপি এখনো নালিশ পার্টির ভুমিকায় রয়ে গেছে। এ অবস্থায় মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে মহাসমারোহে গণভবনে গিয়ে যে সংলাপ করলেন সেখান থেকে কি নিয়ে এসেছেন। গণভবন থেকে যে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন? প্রধানমন্ত্রী যে প্রিিতশ্রুতিগুলো দিয়ে পুরণ করেননি তা কি ভালভাবে জনতার সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন? যাদের প্রার্থী করলেন তাদের অনেকেই রাজধানী ঢাকা থেকে বের হচ্ছেন না। হামলা-মামলার ভয়ে তারা নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে ঢাকায় ইসি রুমে সময় কাটাচ্ছেন। যারা হামলা-মামলা যাদের ভয় তাদের মতো সুবিধাবাদীদের মনোনয়ন দেয়ার নেপথ্যের রহস্য কি? কেউ ভুল করলে তার মাসুল তাকে দিতে হয়। পরিবারের কর্তা ভুল করলে প্রায়চিত্ত করতে হয় গোটা পরিবারকে। একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ভুল করলে মাসুল গুনতে হয় দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী ও কোটি কোটি মানুষকে। বিএনপির এই নেতৃত্বের ব্যর্থতার মাসুল গুনতে হবে মানুষকে। প্রশ্ন হলো এই ব্যর্থতার দায় কে দেবে? মানুষ বিশ্বাস করে বিএনপি প্রেস ব্রিফিং, অভিযোগ, বিদেশীদের প্রতি আবদারের কৌশল থেকে বেরিয়ে আসবে। বাকী তিন দিন কেন্দ্রীর নেতৃত্বের কঠোর নেতৃত্বে প্রার্থীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের মাঠে নামবে।
তুরস্কের দিকে তাকালে আমরা কি দেখি? সেনা অভ্যুত্থানের মুখে রজব তাইয়েব এরদোগান দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে এনেছেন। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামায় অভ্যুত্থানকারীরা ভয় পেয়ে যায়। সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে অথচ এরদোগারের ঘোষণায় জনগণে বের হয়ে দখলদার সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে। অন্যায়, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ সব সময় সোচ্চার হয়, এটা ইতিহাসের কথা। বিদেশীদের নালিশ না করে নিজেদের শক্তি নিয়ে নেমে পড়েন সাফল্য এমনিতেই ধরা দেবে। আজীবন কোনো দল ক্ষমতায় থাকে না। একদিন না একদিন ক্ষমতার পালাবাদল ঘটবেই। এটাই বাস্তবতা। বেগম জিয়া কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বিদেশে। বিএনপির নের্তৃত্বে যারা বর্তমানে রয়েছেন তারা কি এই নিদারুণ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।