পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার ও ইসি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করছে : মির্জা ফখরুল
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরও হামলার ঘটনা অপ্রত্যাশিত। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সেনাবাহিনী তাদের নিরপেক্ষ ঐতিহ্য সমুন্নত রাখবে। গতকাল বিকেলে পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী নামলে পরিস্থিতি পাল্টাবে এমনটা আপনারা বলেছিলেন। সেনাবাহিনী নেমেছে, তারপরও বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, তারা (সেনাবাহিনী) এসেছে। এখনো কিছু ঘটনা ঘটছে, এটা একদমই অপ্রত্যাশিত। ড. কামাল হোসেন বলেন, অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত হয়েছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে অতীতের মতো গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বাহিনীর একটা অতীতে যে ইতিহাস আছে। আমরা আশা প্রকাশ করছি, এই মুহূর্তে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। অতীতে তারা যেভাবে একটা নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, সেই ঐতিহ্যকে তারা ধরে রাখবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে নীল নকশা চলছে, সেটা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা হবে আত্মঘাতী। এমনটা হলে দেশ ও জাতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আর মাত্র ২/৩ বছর পর আমরা ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তি পালন করতে যাচ্ছি। সে উদযাপন যাতে কোন অনির্বাচিত সরকারের হাতে না হয়। আমরা যাতে বলতে পারি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার পেয়েছি, যারা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তিনি বলেন, সবাইকে ভোট দিতে যাওয়া উচিৎ। জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। পরিবর্তনের জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকবো।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে সারাদেশে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সারাদেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাড়াতেই দেয়া হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী আচরণ ততই বাড়ছে। ভোট চাওয়াতো দূরের কথা, ঘরেও ঘুমাতে দেয়া হচ্ছে না ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের। তবে আশার কথা, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভ’মিকা পালনকারী আমাদের গর্ব সেনাবাহিনী বিশ্বব্যাপী শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সাথে গৌরবোজ্জ্বল ভ’মিকা পালন করে আসছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে সে ভূমিকাই প্রত্যাশা করে।
নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে কথা বরাবর বলে আসছি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে এই নির্বাচনকে একটা প্রহসনে পরিণত করেছে। যারা একটু ভাবতে পারেন, তারা চিন্তাই করতে পারেন না এ ধরনের একটা নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনকে তারা একটা তামাশায় পরিণত করেছে। সমাবেশে অনুমতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আমরা অনুমতি পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিকল্প ধারা একাংশের চেয়ারম্যান নরুল আমিন ব্যাপারী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, গণদলের গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেন, যারা ভোট দানে নানাভাবে বাধা প্রদান করছে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী। তারা ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সরকারি দলের উদ্দেশে বলেন, হুমকি দাও, তোমাদের হুমকিতে ভিত হয়ে যাব? বাঙ্গালী ভীত নয়। আসো সামনাসামনি, আমি তোমাদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। দেশের মানুষ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। দেশের মানুষ কারও প্রজা নয় উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, দেশের মালিক জনগণ। ৩০ ডিসেম্বর আপনরা ভোট দিয়ে দেখিয়ে দিন দেশের মানুষ কেউ কারো প্রজা না।
ড. কামাল বলেন, যারা বলে দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে আমি বলি তোমাদের মাথা বিভক্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে না। যারা হুমকি দাও তোমরা কাপুরুষ। কাপুরুষরা পেছন থেকে হামলা করে। তিনি বলেন, দেশের মালিক হিসেবে আমাদের ভোটের অধিকার কাজে লাগাতে হবে ।
আইজিপির উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, বেআইনী আদেশ মানা অপরাধ। যারা বেআইনী আদেশ দিচ্ছেন তারা অনেক বড় অপরাধী? ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ৩০শে ডিসেম্বর গুণে গুণে ভোট দিয়ে আসবেন। আপনার ভোট যাতে হাইজ্যাক, জালিয়াতি করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অনির্বাচিতরা এখন দেশ শাসন করছে। এটা মেনে নিতে পারি না। আমাদের যে ঐক্য আছে সেটা এগিয়ে নিতে হবে। কোনো স্বৈরাচারের মালিকের হাতে দেশ দিবো না।
সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, সব দেশে আগে দেশ হয়, তার পর সেনাবাহিনী হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেনাবাহিনী তৈরী হয়েছে আগে। এই সেনাবাহিনীর কাছে একটা চাওয়া জনগণ যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারে। যদি তারা নিরাপদে ভোট দিতে পারে তাহলে ভোট বিপ্লব ঘটে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে নায়ক নায়িকাদের নির্বাচনের প্রচারণায় নামাতে পারে।
বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল খান বলেন, ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে আছেন। ৬ জনকে তফসিল ঘোষণার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ৮ জনকে অবৈধ করা হয়েছে। আর কয়েকজন অবৈধ করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ৮ আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী রইল না।
সংগঠনের সদস্য সচিব ডা. এজডেএম জাহিদ হোসেনের সঞ্চলনা ও ভারপ্রাপ্ত আহŸায়ক এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর মুস্তাহিদুর রহমান, ড্যাবের সভাপতি ডা. একেএম আজিজুল হক, প্রফেসর ড. ছদরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহŸায়ক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে ভোট দিন : ড. কামাল
সিলেট বালাগঞ্জ প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ জানান উন্নয়নের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে ভোট দিয়ে জয়ী করার আহŸান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন। গতকাল সোমবার দুপুরে মোকাব্বির খানের সমর্থনে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে আয়োজিত নির্বাচনী সভায় মুঠোফোনে এই আহŸান জানান তিনি। ঢাকায় ব্যস্ততার কারণে জনসভায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টায় ওসমানীনগরে এবং পরবর্তীতে সময়ে বিশ্বনাথ উপজেলায় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মোকাব্বির খানের নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের। গত রোববার পর্যন্ত তাদের আগমন নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সোমবার তাদের সফর বাতিল করে দেন। পরে গোয়ালাবাজারের জনসভায় দুপুর ২টার দিকে মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন ড. কামাল হোসেন।
সিলেট মহানগর গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনসার খান জানান, ঢাকায় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন থাকায় এবং নির্বাচনী কাজে জাতীয় নেতৃবৃন্দের ব্যস্ততার কারণে ড. কামাল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ জনসভায় উপস্থিত হতে পারেননি। তবে ড. কামাল হোসেন মুঠোফোনে বক্তব্য প্রদান করেছেন।
এদিকে, ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে নির্বাচনী সভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করেন মোকাব্বির খান। বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান সময় নির্বাচনের পরিবেশ হতে পারে না। প্রশাসনের কারণে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করতে পারছে না। পুলিশ নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। গুম খুন হত্যার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জন্য ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দেয়ার অনুরোধ জানান।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মল কান্তি ধর রুনুর সভাপতিত্বে এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী শাহিনের সঞ্চালনায় নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনসার খান, সিলেট জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলেন্দু দেব ও বিএনপি নেতা এমরান রব্বানী প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।