পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইন্ট্রাশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী, আজ মাঠে নামবে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। তারা মূলত জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটানিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য অভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এবার প্রায় ৫০ হাজার সদস্য এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহযোগিতার পাশাপাশি অনাকাঙ্খিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। প্রয়োজনে অপরাধীদের গ্রেফতারও করতে পারবেন। নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর দায়িত্ব পালন কোনো বিরল ঘটনা নয়। তবে এবার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বেশ বির্তক হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নাগরিক সমাজসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে তাদের অভিমত দেয়ার ফলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর ওপর দেশের মানুষের বিপুল আস্থা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে এর সদস্যদের মোতায়েন ছিল বহুল প্রত্যাশিত। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের একান্ত প্রত্যাশা, নির্বাচনের মাঠে সেনা সদস্যরা থাকলে চলমান পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। তাদের একটি নিরপেক্ষ ভাবমর্যাদা রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের ভূমিকায় মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে যে, নির্বাচনের মাঠে তারা দায়িত্ব পালন করলে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, ভোটাররা নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা ইতোমধ্যে যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তাতে দেশী-বিদেশী সকল মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর একদিকে যেমন নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান ও হামলা হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি পুলিশ বেপরোয়াভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এব্যাপারে প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। সর্বত্রই একটি ভয়ের বা ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভবনাই দেখা যাচ্ছে না। এমন কি নির্বাচন আদৌ হতে পারবে কিনা তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত দেশ একটা একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর একতরফা নির্বাচন আখেরে ব্যাপক সহিসংতা ডেকে আনতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এমন আশংকার প্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় বড় হয়ে উঠছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। অংশগ্রহণ মানে শুধু সবদলের অংশগ্রহণ নয়, ভোটাদের অংশগ্রহণও বুঝায়। বিরোধী দলের বিশেষ করে বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারছে না। তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণায় নামলেই সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো পুলিশের দ্বারাও তারা আক্রান্ত হচ্ছে। আর মামলার পর মামলা এবং গণগ্রেফতার তো চলছেই। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশ বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রার্থিতা স্থগিত করার ঘটনাও ঘটছে। ইতোমধ্যেই অন্তত ১৩ নির্বাচনী এলাকায় বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থীতা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ১৬ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ইসি, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে একজোট হয়েছে। তার এ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তিনি আরো বলেছেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন একটি তামাশায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে সম্প্রতি একাধিকবার সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন, পুলিশ-র্যাবের তরফেও যেসব কথা বলা হয়েছে, বাস্তব অবস্থার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। তাদের বক্তব্যে সরকার ও সরকারি দলের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। সার্বিক এই পরিস্থিতিকে দেশের মানুষ সশস্ত্রবাহিনীকেই শেষ ভরসার স্থল হিসাবে দেখছে। সশস্ত্র বাহিনী, বলা বাহুল্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীই শুধু নয়, শান্তি, শৃংখলা, জননিরাপত্তা রক্ষায়ও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান অতীতে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সশস্ত্রবাহিনী প্রাকৃতিক দুর্বিপাক-দুর্যোগে এবং উন্নয়ন ও কল্যাণে সব সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা বিশ্বব্যাপী বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের মানুষ মনে করে, বর্তমান কান্তিকালে যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেশজাতির জন্য জরুরি ও অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সশস্ত্রবাহিনী এতে গণইচ্ছা অনুযায়ী যথোচিত ভূমিকা রাখবে। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচনে সব ধরনের সংঘাত-সহিংসতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, পেশীশক্তি প্রদর্শন ও বিশৃংখলা দমনে সেনা সদস্যরা বলিষ্ট ভূমিকা রাখবেন। সরকার, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি। মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস, সশস্ত্রবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। একটা নির্ভয় পরিবেশ সকলের জন্য নিশ্চিত হবে। সশস্ত্রবাহিনীর জন্য নি:সন্দেহে এ প্রত্যাশা পূরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের এ আস্থাও প্রবল যে, সশস্ত্রবাহিনী এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হবে।
দেশের জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি, শান্তি, শৃংখলা, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং দেশের ভাবমর্যাদাসহ অনেক কিছুই এ নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে। আন্তর্জাতিক মহলের তীক্ষè নজর রয়েছে এই নির্বাচনের ওপর। নির্বাচনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাকিদ থেকেই সেটা অনুধাবন করা যায়। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে। জাতিসংঘ নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে। এই বিশ্বসংস্থার ৮জন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বিরোধী রাজনীতিক ও ভিন্নমত প্রকাশকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার ও ভীতি প্রদর্শনের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকরা গ্রেফতার হত্যা ও গুমের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে বিবৃতিতে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে দমনমূলক রাজনৈতিক কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণœ হচ্ছে। এতে আরো বলা হয়েছে, প্রতিদ্ব›দ্বী দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। অথচ বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংগঠনের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক বলেছেন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাসীন দলের বর্ধিতাংশের মতো কাজ করলে চলবেনা। প্রচারণার সময় সহিংসতা, যার প্রধান শিকার বিরোধীরা, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অন্যায্য আচরণেরই বহি:প্রকাশ। পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন, নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদÐে উন্নীত না হলে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পাবে এবং তা এমন কি ‘নিষেধাজ্ঞার’ পর্যায়েও পৌঁছাতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতির এই পটপ্রেক্ষায় নির্বাচনকে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সেনা সদস্যরা সন্দেহাতীতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করলেই নির্বাচনটি যথাযথ হতে পারে বলে মানুষের ধারণা। মানুষের এই ধারণা ও আস্থার যথার্থ মূল্য তারা দেবেন, এটাই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।