Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভোটার ও কেন্দ্র বাড়লেও কমেছে পর্যবেক্ষক সংখ্যা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২০ পিএম

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।
ইতিমধ্যে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসের (এনফ্রেল) পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। তাদের এ সিদ্ধান্তের পর ১৪৬ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানা গেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ২২৫ জন। এর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ৬০০ জন।
একইভাবে স্থানীয় পর্যবেক্ষকের সংখ্যাও কমছে মারাত্মকভাবে। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশীয় পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার। আর ২০০৮ সালে এক লাখ ৬০ হাজার দেশীয় পর্যবেক্ষক জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। আগের দুই নির্বাচনের তুলনায় এবারই সবচেয়ে কমসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছে।
জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের ৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯২০ জনকে পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) ২২ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ হাজার পর্যবেক্ষক রয়েছেন।
কিন্তু সরকারের এনজিও ব্যুরোর নীতিমালার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় পরিসরে পর্যবেক্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুসারে ২৬ হাজার ৬৬ পর্যবেক্ষক চলতি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছেন। তবে এবারের নির্বাচনে সময়ভেদে ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে।

এদিকে, নির্ধারিত সময়ে ভিসা না দেয়ায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না এনফ্রেল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের দেয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এবার যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি দল আসার কথা ছিল। প্রতিটি দলে দুজন করে মোট ২৪ জন সদস্য ছিল।
মার্কিন সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের দেশের পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু তাদের ভিসা দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সরকারের এমন আচরণের ফলে ব্যাংককভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘দি এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এনফ্রেল)’ তাদের আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) মাধ্যমে এনফ্রেলকে অর্থায়ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপমুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে এনফ্রেলের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে ছাড়পত্র ও ভিসা ইস্যু করতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতায় আমরা হতাশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে-আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিশনের অভাবে বাংলাদেশ সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে একটি নির্বাচনী ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা। এর মধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোকেও রাখতে হবে, যাতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা পরিচালনা করতে পারে।
যে কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ মতামত প্রদান ও সমাবেশ করার সুযোগ থাকতে হবে। স্বাধীন গণমাধ্যমকে নির্বাচনী কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, প্রার্থীদের তথ্য জানার অধিকার আছে এবং কোনো ধরনের ভয়, হয়রানি ও সহিংসতা ছাড়াই তারা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিজ্ঞপ্তির শেষে বলা হয়েছে-প্রত্যেক বাংলাদেশি যাতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন, সে ব্যাপারে তাদের গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারকে যথাযথভাবে পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমরা উৎসাহিত করছি।
এর আগে ১ ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র এক ডজন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। প্রতিটি দলে দুজন করে পর্যবেক্ষক থাকার কথা ছিল। যারা দেশের অধিকাংশ স্থানে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
শুক্রবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে সুশীল সমাজ ও পর্যবেক্ষকদের পূর্ণ সমর্থন দরকার।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেন, বাংলাদেশের কিছু সিভিল সোসাইটিকে পর্যবেক্ষণে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে যে খবর আমি শুনেছি, তাতে উদ্বেগ বোধ করছি।
বৃহস্পতিবার হাউস অব কমনসের বিতর্কে তিনি আরও বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে দেশি ও বিদেশি স্বাধীন সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ১৬ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তরফে ১৭৪ পর্যবেক্ষক আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে ৯৭ জন বিদেশি, যাদের অধিকাংশই ঢাকাস্থ। বাকিরা বাংলাদেশি।
যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ৬৫ পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে, যাদের মধ্যে ৩২ জন বিদেশি। জার্মানী ৬ বিদেশিসহ আট, জাপান চার বিদেশিসহ ৯, সুইজারল্যান্ড দুই বিদেশিসহ ছয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে বলে জানা গেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নেদারল্যান্ডসের চার বিদেশি যুক্ত থাকবেন।
দুই বিদেশিসহ চার পর্যবেক্ষক থাকবে ফ্রান্সের, ডেনমার্কে এক বিদেশিসহ তিন পর্যবেক্ষক। আর নরওয়ের থাকবে দুই পর্যবেক্ষক, যাদের একজন বিদেশি।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ২২ পর্যবেক্ষক পাঠাবে। যাদের মধ্যে দুজন হবেন বিদেশি। এদিকে দুই বিদেশিসহ ২১ পর্যবেক্ষক পাঠাবে এশিয়ান ফাউন্ডেশন।

ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমসের এক বিদেশিসহ চার পর্যবেক্ষক থাকবেন। নেপালভিত্তিক ডিপেন্দ্র কান্ডেল ইনিশিয়েটিভ চার বিদেশি পর্যবেক্ষক পাঠাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট দুই বিদেশিসহ চার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেবে।
এগুলো বাদেও দক্ষিণ এশিয়ার ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজের সদস্য দেশগুলো থেকে দুজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন
এ ছাড়া ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ ও ফিলিপিনসভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়ান ইলেকশন অথরিটিজকে (এএইএ) পর্যবেক্ষক পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৮১টি সংস্থা থেকে তারা ২৫ হাজার ৯২০ জনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
ইসি সূত্র জানায়, ৩৪ হাজার ৬৭১ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক আবেদন করেছিলেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এক লাখ ৬০ হাজার দেশি ও ৬০০ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক। ২০০১ সালের নির্বাচনে যেটি ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার দেশি ও ২২৫ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক। কিন্তু সেই সময়ের চেয়ে বর্তমানে ভোটার ও নির্বাচন কেন্দ্রের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সাড়ে সাত কোটি ভোটারের জন্য ২৯ হাজার ৯৭৮ ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আট কোটি ১০ লাখ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের জন্য ৪০ হাজার ১৮৩ ভোটকেন্দ্র বসানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ