Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটে যেভাবে কাজ করবে সশস্ত্রবাহিনী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইন্সট্্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্যা সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তারা মূলত জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগ স্থলে (নডাল পয়েন্ট) অবস্থান করবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গত ১৯ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে এ সব কথা বলা হয়েছে। এদিকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এবার প্রায় ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছে কমিশন।
জানা গেছে, যে সব এলাকায় সেনা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হবে সে সব পয়েন্টে গতকাল শনিবার থেকে পরিদর্শন করছেন সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা। আজ রোববার থেকে নির্ধারিত স্থানগুলো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে নেয়া হবে। আগামীকাল থেকে ওই সব স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ডের ৪০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ২২ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল শনিবার কোস্ট গাডের্র সহকারী গোয়েন্দা পরিচালক লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মারুফ এ তথ্য জানান।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবে পুলিশের ১ লাখ ৭০ হাজার সদস্য। ২ লাখ ১০ হাজারের ফোর্সের ৮০ ভাগ সদস্য এদিন ব্যস্ত থাকবে নির্বাচনী দায়িত্বে। পুলিশ সদরদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী/নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে।
অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে, তারা ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারেন। জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে কমিশনড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কমবেশি করা যাবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবে। বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা দেবে।
যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বহন করবেন না, কিন্তু বাহিনীর পোশাকে থাকবেন। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহলদল ও স্থানীয় ক্যাম্প রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ নেবেন।
উপকূলে ৪০ প্লাটুন কোস্ট গার্ড মোতায়েন
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মোতায়েনকৃত এলাকাগুলোর মধ্যে- ভোলা সদরে ১৮ প্লাটুন সদস্য নির্বাচন এলাকায় মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপূর্ণ এলাকাগুলো হলো: ভোলা-১ আসনের ভোলা সদর উপজেলার ১ নং রাজাপুর ও ৪ নং কাচিয়া, ভোলা-২ আসনের দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ও হাজিপুর, ভোলা-৩ আসনের তজুমুদ্দিন উপজেলার ১ নং মলংচরা ও ২ নং সোনাপুর, ভোলা-৪ আসনের মনপুরা উপজেলার মনপুরা ও উত্তর সাকুচিয়া এবং চরফ্যাশন উপজেলার ১৯ নং ঢালচর, ১২ নং চর কুকরীমুকরী ও ১৬ নং মুজিবনগর, বরিশাল-৪ আসনের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং শ্রীপুর, ৯ নং জাঙ্গালীয়া, ১২ নং দড়িরচর খাজুরিয়া, ১৩ নং গোবিন্দপুর, নোয়াখালী-৪ আসনের হাতিয়া উপজেলার হরনী ও চান্দনী, পটুয়াখালী-৪ আসনের রাঙ্গাবালী উপজেলার ২ নং বড় বাইসদিয়া ইউনিয়ন।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের টেকনাফ ইউনিয়নের সেন্টমার্টিন্স, সাবরাং, বাহারছড়া, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, টেকনাফ সদর কক্সবাজার-২ আসনের কুতুবদিয়া ইউনিয়নের আলী আকবর ডেইল, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ, লেমসিখালী, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সন্দ্বীপের ১৪টি ইউনিয়নে। এছাড়াও খুলনা বিভাগে- ১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচন এলাকায় মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপূর্ণ এলাকা হলো: খুলনা-১ আসনের দাকোপে ৯টি ইউনিয়নে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রদান ও সহিংসতা দমনে তৎপর রয়েছে।
মাঠে থাকবে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবে পুলিশের ১ লাখ ৭০ হাজার সদস্য। ২ লাখ ১০ হাজারের ফোর্সের ৮০ ভাগ সদস্য এদিন ব্যস্ত থাকবে নির্বাচনী দায়িত্বে। কাউকে দুই শিফট আবার কাউকে আরও বেশি সময় ডিউটি করতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী, ভোটার, প্রিসাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারসহ প্রত্যেককে নিরাপত্তা দিতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী ছক তৈরি করেছে পুলিশ। নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকলেও নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব থাকবে পুলিশের ওপর।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে নির্বাচন আগেপরে কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। তাদের মধ্যে কেউ ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করবেন, কেউ দুই শিফটে ১৮ ঘণ্টা, আবার কাউকে এর চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ২-১ দিন আগ থেকে নির্বাচনের ২-৩ দিন পর পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, কেন্দ্রে ব্যালট ও ব্যালট বাক্স আনা-নেয়াসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। এ গুরুত্বপূর্ণ সময় অতি জরুরি এবং একান্তই পারিবারিক কোনো সমস্যা না থাকলে কাউকে ছুটি দেয়া হচ্ছে না।



 

Show all comments
  • MD Abu Taher ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৭ এএম says : 0
    দেশের যেকোন প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে
    Total Reply(0) Reply
  • Bablu Bhuiyan ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৮ এএম says : 0
    জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান আজ সর্বজন স্বীকৃত। সশস্ত্রবাহিনী এমনি এক বাহিনী যার প্রতি এদেশের জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা।
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Uddin Ahmed ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:০৯ এএম says : 0
    tader ke tader moto kore kaj korte dea uchit bole ami mone kori
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Al banna ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:১১ এএম says : 0
    সশস্ত্রবাহিনীর উপর সকল দায়িত্ব দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Tuhin Miah ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:১৫ এএম says : 0
    আশা রাখি জাতির ক্লান্তি লগ্নে দেশ ও দশের গর্ব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তার দায়িত্ব পালন করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Khan ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:১৬ এএম says : 0
    সেনাবাহিনীর উপর আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা আছে
    Total Reply(0) Reply
  • hasan ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৪৬ এএম says : 0
    সেনাবাহীনির উপর সমপূর্ন দায়িত্ব দিতে হতো তাহলে সুন্দর একটা নির্বাচন হতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Molla Shahidul ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর দেশের সাধারন জনগনের আস্থা আছে আশা করি তা বজায় থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সিপন ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:০২ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গৌরব। তাই জনগনের ভোটের অধিকার রক্ষায় নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ